কাটরা মসজিদ
কাটরা মসজিদ মুর্শিদাবাদ রেল স্টেশনের ১৬০০ মিটার পূর্ব দিকে বাজারের মধ্যে অবস্থিত একটি মসজিদ। এটি ১৭২৩ এবং ১৭২৪ সালের মধ্যে নির্মিত হয়।[১] এখানে নওয়াব মুর্শিদ কুলি খাঁন এর সমাধি রয়েছে। এটি ভারতীয় উপমহাদেশের বৃহত্তম কাফেলা কেন্দ্রের একটি। মুর্শিদকুলি খান ঢাকা থেকে ১৭১৭ খ্রিষ্টাব্দে রাজধানী স্থানান্তরিত করেন। তার নিজের নামানুসারে নতুন রাজধানীর নামকরণ করেন মুর্শিদাবাদ। কাটরা মসজিদটি নতুন রাজধানীর জামে মসজিদ হিসেবে নির্মিত হয়। এটির সবচেয়ে লক্ষণীয় বিষয় হল দুই কোনার উঁচু দুটি টাওয়ার, যেগুলোতে বন্দুক স্থাপনের জন্য ছিদ্র রয়েছে।
কাটরা মসজিদ | |
---|---|
ধর্ম | |
অন্তর্ভুক্তি | ইসলাম |
নেতৃত্ব | নবাব মুর্শিদকুলী খাঁ |
পবিত্রীকৃত বছর | ১৭২৫ |
অবস্থান | |
অবস্থান | মুর্শিদাবাদ, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত |
স্থানাঙ্ক | ২৪°১১′০৫″ উত্তর ৮৮°১৭′১৭″ পূর্ব / ২৪.১৮৪৭২২° উত্তর ৮৮.২৮৮০৫৬° পূর্ব |
স্থাপত্য | |
স্থপতি | মুরাদ ফরাশ খান |
ধরন | মসজিদ |
স্থাপত্য শৈলী | ইসলামী |
সম্পূর্ণ হয় | ১৭২৪ |
বিনির্দেশ | |
গম্বুজসমূহ | ৫ |
মিনার | ৪ |
উপাদানসমূহ | নবাব মুর্শিদকুলী খাঁর কবর এবং নশ্বর দেহাবশেষ |
ওয়েবসাইট | |
ওয়েবসাইট |
বর্তমানে এর তত্ত্বাবধান এবং রক্ষণাবেক্ষনের দায়িত্ব ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উপর ন্যস্ত রয়েছে।
নামকরণ
সম্পাদনামসজিদটির নিকটে একটি বাজার ছিল এবং কাটরা মানে হচ্ছে বাজার। কাজেই সম্পূর্ণ অর্থ করলে দাড়ায় কাটরা মসজিদ বা বাজার মসজিদ, বাজারে অবস্থিত একটি মসজিদ।
নির্মাণ
সম্পাদনাবৃদ্ধাবস্থায় মুর্শিদ কুলি খাঁন তার সমাধি একটি মসজিদের পাশে হোক, এ ইচ্ছা প্রকাশ করেন। তিনি মসজিদটি নির্মানের ভার তার বিশ্বস্ত লোক মুরাদ ফরাস খাঁন এর উপর ন্যস্ত করেন, যিনি ছিলেন একজন কারিগর।
স্থাপত্যশৈলী
সম্পাদনামসজিদটি একটি বর্গাকৃতির স্তম্বমূলের উপর নির্মিত। এটি ইট দিয়ে তৈরি এবং মসজিদটি সুদৃশ্য গম্বুজ দ্বারা বেষ্টিত, যা তখনকার দিনে যারা কোরআন শরীফ পড়ত, তাদের জন্য নির্মিত হয়েছিলো। এটিকে মাদ্রাসা হিসাবেও অভিহিত করা যায়। প্রত্যেকটি কক্ষে প্রায় ৭০০ জন লোক কোরআন পড়তে পারত। কক্ষগুলোর সামনে চত্বর বা আঙিনা বিদ্যমান ছিল। চারকোনায় চারটি বিশাল মিনার অবস্থিত। মিনারগুলোর আকৃতি অষ্টাভূজাকৃতি এবং এগুলো ক্রমশ উপরের দিকে সরু হয়ে গিয়েছে। মসজিদের সামনের মিনার বা টাওয়ারগুলো ৭০ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট এবং চওড়ায় প্রায় ২০ ফুট। সম্পূর্ণ মসজিদটি আকারে চতুর্ভূজাকৃতি, পুরো মসজিদটিতে অনেক সুদৃশ্য খিলান রয়েছে। মসজিদটি ১৮৯৭ সালে ভূমিকম্পের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলো। প্রত্যেক মিনারে একটি প্যাঁচানো সিঁড়ি রয়েছে যা ক্রমশ উপর দিকে চলে গিয়েছে, একজন দর্শনার্থী মিনারের উপরের অংশ হতে মুর্শিদাবাদ শহরের অনেকটা অংশ অবলোকন করতে পারে। মসজিদটির দু’পাশের ৭০ ফুট উঁচু মিনারগুলো কালের আবর্তে আজ জরাজীর্ণ, মিনারের গম্বুজগুলো ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ১৭৮০ সালে, একজন ভ্রমণকারী উইলিয়াম হজেস লিখেন যে ৭০০ জন কোরআন তেলওয়াতকারী মসজিদের ভেতর বাস করত।
মসজিদটির প্রবেশদ্বারে পূর্ব দিক হতে চৌদ্দটি সিঁড়ির ধাপ রয়েছে, নওয়াব মুর্শিদ কুলি খাঁন এ সিঁড়িগুলোর নিচে মুর্শিদ কুলি খাঁন এর সমাধি অবস্থিত। এটি নবাব মুর্শিদকুলি খাঁন এর ইচ্ছা অনুসারে করা হয়, যিনি তার জীবনে কৃত পাপকর্মের জন্য অনুতপ্ত ছিলেন এবং এটি তার নিরহঙ্কারতার প্রকাশ। তিনি এমন এক স্থানে সমাহিত হতে চেয়েছিলেন, যেখানে তিনি মসজিদে প্রবেশকারী পূন্যবান লোকেদের পায়ের নিচে নিষ্পিষ্ট হবেন এবং তাদের পদস্পর্শ পাবেন।
মসজিদটি আকৃতিতে চতুর্ভূজাকৃতি। এটি পাঁচটি অংশে বিভক্ত। প্রতিটি অংশে খিলানকৃতি প্রবেশদ্বার রয়েছে এবং কেন্দ্রীয় অংশটি বিশেষভাবে লক্ষণীয় কেননা এ অংশে রয়েছে সুদৃশ্য সরু চূড়া। মসজিদটির পাঁচটি গম্বুজ রয়েছে। এর মধ্যে কিছু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং কিছু ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পের পরও মোটামুটি অক্ষত রয়েছে। ভূমিকম্পটি নির্মানটির অনেক অংশে ক্ষতিসাধন করে। নির্মানটির সম্পূর্ণ আয়তন ১৯.৫ একর এবং ২০০০ জন নামাজ আদায়কারী ধারণ করতে পারে। মেঝেতে ২০০০ টি চতুর্ভূজাকৃতি মাদুর চিত্রিত রয়েছে।
মসজিদটির কুঠুরিগুলো দোতলা বিশিষ্ট এবং ২০ বর্গফুট আকারের। প্রত্যেকটির রয়েছে ৬টি খিলানকৃত দরজার আকৃতি। গেট পর্যন্ত পাথরে বাঁধাই করা ১৫টি সিঁড়ির ধাপ রয়েছে এবং মসজিদের মূল দরজা পর্যন্ত পাথরে বাঁধাই একটি পথ রয়েছে। মসজিদ এবং কুঠুরিগুলোর মধ্যে খোলা জায়গার আকার প্রায় ১৩ ফুট এবং মসজিদের পেছনের অংশে তা ৪২ ফুট। মসজিদের সামনের চত্বর ১৬৬ ফুট লম্বা এবং ১১০ ফুট চওড়া।
চিত্রশালা
সম্পাদনা-
মসজিদ
-
মসজিদ
-
মসজিদের বায়ুচলাচল জানালা
-
খিলান
-
মেঝেতে চিত্রিত বর্গাকার ধরনের মাদুর
-
আরবীয় শিলালিপি
-
ভূমিকম্প ধ্বংস হওয়া মসজিদের ভিতরে ফারসিতে লিখিত পাথর যাতে লেকজা এই মসজিদটি নবাব নাজিম মুর্শিদকুলি খান দ্বারা নির্মিত হয়েছিল।
-
মসজিদ এবং পূর্ব প্রবেশদ্বারের মধ্যবর্তী উন্মুক্ত স্থান বা সোপান।
-
১৯শ শতকের প্রথম দিকের দৃশ্য।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "Katra Masjid"। india9.com। সংগ্রহের তারিখ ১০ আগস্ট ২০১৬।