কাজী কামাল উদ্দিন
এই নিবন্ধে যাচাইযোগ্যতার জন্য অতিরিক্ত তথ্যসূত্র প্রয়োজন। |
কাজী কামাল উদ্দিন(জন্ম:১১ জুলাই, ১৯৪৬ - মৃত্যু: ১৫ জানুয়ারি, ২০১২) একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তিনি ঢাকা অঞ্চলে বিভিন্ন অপারেশনে অংশগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন বাস্কেটবল খেলোয়াড়। পূর্ব পাকিস্তান দলেই জায়গা হয়েছিল তার। পরে তিনি বাংলাদেশ জাতীয় দলের কোচ হয়েছিলেন। [১]
কাজী কামাল উদ্দিন | |
---|---|
জন্ম | ১১ জুলাই, ১৯৪৬ |
নাগরিকত্ব | ব্রিটিশ ভারত (১৯৪৭ সাল পর্যন্ত) পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে) বাংলাদেশ |
পরিচিতির কারণ | মুক্তিযোদ্ধা, বীর বিক্রম |
জন্ম ও শৈশব
সম্পাদনাকাজী কামাল উদ্দিন ১৯৪৬ সালের ১১ জুলাই ঢাকার মালিটোলায় জন্মগ্রহণ করেন।
শিক্ষা ও কর্ম
সম্পাদনাকাজী কামাল ১৯৫২ সালে ঢাকার সেন্ট গ্রেগরী বিদ্যালয়ে ইনফ্যান্ট বিভাগে ভর্তি হন। এ স্কুলে তিনি বাস্কেটবল খেলা শুরু করেন এবং এই ক্রীড়ায় তার দক্ষতার কারণে পরবর্তীতে ঢাকা ওয়ান্ডারার্স বাস্কেটবল দলে যোগ দেন। স্কুল শেষে কাজী কামাল ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। বাস্কেটবলে তিনি পাকিস্তানের জাতীয় অলিম্পিকে একাধিকবার অংশগ্রহণ করেছেন এবং নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রেখেছেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার সময় তিনি পাকিস্তানের জাতীয় দলের ট্রায়ালে ডাক পান, কিন্তু সেদিকে না গিয়ে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন।
মুক্তিযুদ্ধে অবদান
সম্পাদনাকাজী কামালকে তার সহযোদ্ধারা ঢাকা অঞ্চলে মুক্তিযুদ্ধের পথপ্রদর্শক হিসেবে পরিগণিত করেন। ১৯৭১ সালের মে মাসে আগরতলার মতিনগর মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে যোগ দেন তিনি। প্রশিক্ষণ শেষে বাংলাদেশে ঢুকে পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করেন। ঢাকায় গেরিলা অপারেশন চালনাকারী ক্রাক প্ল্যাটুনের সদস্য ছিলেন কাজী কামাল। হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টাল অপারেশন, ফার্মগেট অপারেশন, কাচপুর অপারেশনসহ বিভিন্ন অপারেশনে কাজী কামাল তার সাহস ও বীরত্বের নিদর্শন রেখেছিলেন। একাধিক বার পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে ধরা পড়েও কাজী কামাল লড়াই করে তাদের হাত থেকে পলায়ন করেন। সেপ্টেম্বরে তিনি ঢাকার ইস্কাটনের একটি বাড়িতে কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা ও অফিসারের হাতে ধরা পড়ার পর তাদের অস্ত্র ছিনিয়ে সকলকে হত্যা করে পালিয়ে যান। মুক্তিযুদ্ধের সময় কাজী কামাল সেকেন্ড বাংলাদেশ ওয়ার ফোর্স-এ যোগ দেন, কিন্তু বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে যাওয়ার কারণে এই ব্যাচ আর কমিশন পায়নি।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর প্রবাসী জীবন
সম্পাদনা১৯৭৫-এ বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হওয়ার পরদিন ঢাকা স্টেডিয়াম থেকে কয়েকজন সেনা সদস্য কাজী কামালকে হত্যা করতে রামপুরা টিভি স্টেশনের ঝিলের পাড়ে নিয়ে আসে। সেদিন ওই ঝিলপাড়ে আরো তিনজনকে হত্যা করা হয়। কিন্তু তিনি ঘাতকদের ফাঁকি দিয়ে ঝিলের পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে সাক্ষাৎ মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পান। এরপর তিনি দীর্ঘদিন প্রবাসে ছিলেন।[২]
ক্রীড়া সংগঠনে ভূমিকা
সম্পাদনাকাজী কামাল ১৯৭৩ সালে জার্মানির লাইপৎসিগ থেকে এক বছরের কোচিং প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে বাস্কেটবলের জাতীয় কোচ হিসেবে বাংলাদেশ ক্রীড়া নিয়ন্ত্রণ সংস্থায় যোগ দেন। এখানে তিনি তিন বছর চাকরি করেন।
সম্মাননা ও স্বীকৃতি
সম্পাদনামুক্তিযুদ্ধে বীরত্বের কারণে তাকে বীর বিক্রম উপাধিতে ভূষিত করা হয়। কাজী কামালের বীরত্বের কথা জাহানারা ইমামের একাত্তরের দিনগুলি ও আনিসুল হকের মা গ্রন্থে বর্ণিত রয়েছে।
মৃত্যু
সম্পাদনা২০১২ সালের ১৫ জানুয়ারি রাত সোয়া ১১টায় ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ১৬ জানুয়ারি তাকে নিজ গ্রাম গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার সাকাশ্বরে পারিবারিক কবরস্থানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়।
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- ↑ "দৈনিক প্রথম আলো"। ২০১৪-০৪-২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০১-০৩।
- ↑ "ঢাকায় গেরিলাদের পথ-প্রদর্শক কাজী কামাল"। ১৯ এপ্রিল ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ জানুয়ারি ২০১২।