কলামন্ডলম সত্যভামা

(কলামণ্ডলম সত্যভামা থেকে পুনর্নির্দেশিত)

কলামন্ডলম ভি. সত্যভামা (৪ঠা নভেম্বর, ১৯৩৭ – ১৩ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫) ছিলেন একজন ভারতীয় শাস্ত্রীয় নৃত্যশিল্পী, প্রশিক্ষক এবং কোরিওগ্রাফার। তার মূল পরিচিতি ছিল মোহিনীঅট্টম নৃত্যধারার জন্য। তিনি মোহিনীঅট্টম নৃত্যধারার একজন মহীরুহ রূপে বিবেচিত হন। তিনি কেরলের অন্যান্য ধ্রুপদী নৃত্যতেও পারদর্শী ছিলেন। ভারত সরকার, কলা ও সংস্কৃতিতে অবদানের জন্য ২০১৪ সালে তাঁকে পদ্মশ্রী পদকে ভূষিত করে।[১][২]

কলামন্ডলম সত্যভামা
জন্ম৪ নভেম্বর, ১৯৩৭
মৃত্যু (বয়স ৭৭)
সমাধিশোর্নুর, পালক্কাড়, কেরালা, ভারত
দাম্পত্য সঙ্গীকলামন্ডলম পদ্মনাভম নায়ার
সন্তানদুই পুত্র এবং দুই কন্যা
পুরস্কার

জীবনী সম্পাদনা

'আমার মনে হয় যে আমার স্বামী পদ্মশ্রী পুরস্কারের জন্যে আমার থেকেও অধিকতর যোগ্য, আমি এই সম্মান তাকেই উতসর্গ করলাম--পদ্মশ্রী পুরস্কার প্রাপ্তির অনুষ্ঠানে কলামন্ডলম সত্যভামা,[৩]

 
কেরালা কলামন্ডলমে কুঠাম্বলম

সত্যভামা ১৯৩৭ সালে দক্ষিণ ভারতের রাজ্য কেরালার পালক্কাড়ে, শোর্নুর শহরের নিকটবর্তী ভারতপুজার উপকূলে এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী কৃষ্ণান নায়ার এবং গৃহবধূ আম্মিনী আম্মার ঘরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি খুব কম বয়সে, কেরালা কলামন্ডলমের একজন খণ্ডকালীন ছাত্রী হিসাবে কলামন্ডলম অচ্যুত ওয়ারিয়র এবং কলামন্ডলম কৃষ্ণকুট্টির অধীনে নৃত্য প্রশিক্ষণ গ্রহণ শুরু করেছিলেন। একই সাথে শোর্নুরের সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রথাগত পড়াশোনা করছিলেন তিনি। সেখান থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা সম্পূর্ণ করে, পূর্ণ সময়ের শিক্ষার্থী হিসেবে কলামন্ডলমে যোগ দেন তিনি[২]।এরপরেই তিনি কলামন্ডলমের মূল কান্ডারি, কলামন্ডলমের প্রধান দীর্ঘকালীন নৃত্যশিক্ষক থোটাসেসি চিন্নাম্মু আম্মার অধীনে, মোহিনীঅট্টম নৃত্যধারা শিখতে শুরু করেছিলেন; যদিও অধ্যয়নের মূল লক্ষ্য ছিল ভারতনাট্যম সম্বন্ধে জ্ঞান লাভ করা[৪]। চিন্মাম্মু আম্মা চঞ্চুড়ুট্টি এবং টোড়িতে বিভিন্ন নাচের কৌশল যেমন আদাভু (মৌলিক চলন), চোলকেতু, জাতিস্বরম (শিরোনাম এবং বাদ্য নোট) ইত্যাদি শেখাতে থাকেন তরুণী সত্যভামাকে।

শীঘ্রই, এই কন্যা কিংবদন্তি মালায়ালাম কবি, কেরালা কলামণ্ডলামের প্রতিষ্ঠাতা, ভাল্লাথল নারায়ণ মেননের চোখে পড়েন; যিনি সত্যভামাকে বিদ্যালয়ের সম্মাননী প্রদানের জন্যে, আর্থিক বৃত্তি দিয়ে তার দক্ষতা লালন করেন।

প্রধান মঞ্চে সত্যভামার আত্মপ্রকাশ ১৯৫৫ সালে, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর সামনে কলামন্ডলমের রজতজয়ন্তী উদযাপনের সময় হয়েছিল।এছাড়া, এই প্রতিষ্ঠানে পরবর্তী ছয় বছরের অধ্যয়নের ফলে কলমন্ডলাম ট্রুপের অংশ হিসাবে তিনি সিঙ্গাপুর এবং মালয়েশিয়া ভ্রমণ করার সুযোগ পেয়েছিল, যেখানে তিনি ভরতনাট্যম, মোহিনীঅট্টম এবং কথাকলি পরিবেশন করেছিলেন। কোর্স শেষ করার পরে তিনি নবীন শিক্ষক হিসাবে কলামণ্ডলামে যোগদান করেন। ক্লাসিকাল নৃত্যের ডায়ন, কলমন্দলাম কল্যাণিকুট্টি আম্মা থেকেও তিনি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছিলেন। তিনি ধ্রুপদী নৃত্যের মহীরুহ গুরু কলামন্ডলম কল্যাণীকুট্টি আম্মার থেকেও কিছুদিন প্রশিক্ষণ নিয়েছিল[৫]

এই সময়েই, সত্যভামার সাথে কথাকলি ব্যাকরণের গুরু হিসাবে বিবেচিত বিশিষ্ট কথাকলি গুরু কালামণ্ডলম পদ্মনাভন নায়ারের দেখা হয়েছিল। তাদের পরিচিতি শীঘ্রই একটি রোম্যান্টিক মোড় নেয় এবং তারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন[৫]। সত্যভামা এবং পদ্মনাভান নায়ারের চার সন্তান ছিল, যাদের মধ্যে দুই কন্যা মোহিনীঅট্টম নৃত্যশিল্পী। তিনি ২০১৫ সালের ১৩ই সেপ্টেম্বর, পালক্কড়ের এক হাসপাতালে চিকিতসাধীন অবস্থায় ৭৭ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন[৬]

কর্মজীবন সম্পাদনা

কলামণ্ডলম সত্যভামা কেরালা কলামন্ডলমের প্রথম মহিলা উপাধ্যক্ষ ছিলেন এবং পরে তিনি এর অধ্যক্ষ হন। ১৯৯২ সালে অবসর গ্রহণের আগে পর্যন্ত অধ্যক্ষ পদেই আসীন ছিলেন তিনি[২][৭]। তিনি বার্ষিক কলামণ্ডলাম বৃত্তি সিদ্ধান্ত নেওয়ার বাছাই পরিষদেরও সদস্য ছিলেন[৮]। তিনি কেরালার কলমন্ডলমের ডিন হিসাবেও কাজ করছিলেন।

উত্তরাধিকার সম্পাদনা

 
সত্যভামাকে রবি বর্মার চিত্রকর্মে দেখা পোশাক-পোশাক এবং কেশবিন্যাসের রীতি পরিবর্তনের কৃতিত্ব দেওয়া হয় [৫]

শিক্ষক ও কোরিওগ্রাফার দায়িত্ব পালনের জন্যে মাত্র ২৪ বছর বয়সেই কলামণ্ডলম সত্যভামা নীরবে প্রকাশ্য নৃত্যানুষ্ঠান থেকে অবসর নেন। এমনিতেও মঞ্চে তার নৃত্য পরিবেশনার তুলনায় নাচের কৌশলের উতকর্ষ বৃদ্ধিতে তার অবদানের জন্য তিনি বেশি সম্মানিত।

সত্যভামাকে বাহ্যিক প্রভাব ছাড়িয়ে নাচের রূপকে বিশুদ্ধ করার কৃতিত্ব দেওয়া হয়। তিনি নৃত্য নিবেদনের কৌশলগুলি এমনভাবে পরিবর্তন করেছেন যাতে পরিবেশনের আবেগীয় দিকটি লাস্যর সাথে দৃঢ়ভাবে স্ম্পৃক্ত থাকে। কথিত আছে যে তিনি কেরালা কলামন্ডলমে মোহিনীঅট্টম পাঠ্যক্রমেও বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন, যা থেকে কলামণ্ডলাম রীতির মোহিনীঅট্টমের বিবর্তন ঘটেছিল। তিনি মুদ্রা (করতল এবং আঙুলের অঙ্গভঙ্গি), ভঙ্গি এবং পদক্ষেপের মাধ্যমে অতিরঞ্জিত শারীরিক গতিবিজ্ঞানের মাধ্যমে নাটক রচনা করে নৃত্যের রূপের উপস্থাপনায় আরও মশলা যুক্ত করার চেষ্টা করেছিলেন, যা মাঝে মাঝে সমালোচনাও আকৃষ্ট করেছিল[৫][৭]

সত্যভামার আর একটি বড় অবদান হ'ল মোহিনীঅট্টমের পোশাক এবং কেশবিন্যাসে পরিবর্তন আনয়ন[৭]। তিনি যে নকশাগুলি তৈরি করেছেন তা রঙ, প্যাটার্ন এবং অন্যান্য গয়নাতে কেরালার ঐতিহ্য অনুসরণ করে বানানো এবং এটিই কলামণ্ডলম নৃত্যধারার স্বাক্ষর হয়ে উঠেছে। তিনি নৃত্যশিল্পীদের কেশবিন্যাসের রীতিও বদলেছিলেন, যা রাজা রবি বর্মার চিত্রকর্ম থেকে অস্পষ্টভাবে অনুপ্রাণিত বলে মনে করা হয়।.[৫]

তিনি ৩৫ টি মোহিনীঅট্টম নৃত্যরচনার সমৃদ্ধ উত্তরাধিকার রেখে গেছেন, এই নৃত্যরচনাগুলির সম্পূর্ণ বিবরণ তাঁর বই, মোহিনীঅট্টম - ইতিহাস, কৌশল এবং পারফরম্যান্সে বর্ণিত রয়েছে[৯]

পুরস্কার ও স্বীকৃতি সম্পাদনা

সত্যভামাকে আঞ্চলিক ও জাতীয় সংস্থাগুলি একাধিক পুরস্কার এবং স্বীকৃতি দিয়ে সম্মানিত করেছিলেন[২]। মর্যাদাপূর্ণ পদ্মশ্রী পুরস্কার ব্যতীত তিনি ২০০৫ সালে কেরালা সরকারের নৃত্য নাট্য পুরস্কারম প্রাপ্ত প্রথম ব্যক্তি[১০] । এছাড়া ২০০৬ সালে কোল্লাম কথাকলি ক্লাব এবং ট্রুপের দ্বারা প্রথম স্বাতী তিরুনাল পুরস্কারমেও ভূষিত হন তিনি[১১]।কিছু উল্লেখযোগ্য পুরস্কারের তালিকা:

কেরালা কলামন্ডলমে বর্তমানে সত্যভামার সম্মানে একটি পুরস্কার বিতরণ করা হয়, যা মোহিনীঅট্টম শিক্ষার্থীদের, একটি বার্ষিক বৃত্তিরূপে প্রদান করা হয়[১৪]

প্রকাশনা সম্পাদনা

সত্যভামা মালায়ালামে মোহিনীঅট্টমের উপর একটি গ্রন্থ প্রকাশ করেছেনঃ মোহিনীঅট্টম-ইতিহাস, কৌশল এবং কর্মক্ষমতা (মালয়ালম: മോഹിനിയാട്ടം - ചരിത്രം, സിദ്ധാന്തം, പ്രയോഗം), যা মোহিনীঅট্টমের বিষয়ে একটি প্রামাণ্য গ্রন্থ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বইটিতে ১১টি অধ্যায়ে ৩৫টি রচনা রয়েছে.[৯]

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Govt announcement"। ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জুলাই ২০১৪ 
  2. "The Hindu"। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জুলাই ২০১৪ 
  3. "Times of India"। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জুলাই ২০১৪ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  4. "Chinnammu Amma"। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জুলাই ২০১৪ 
  5. "Book Review"। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জুলাই ২০১৪ 
  6. "Mohiniyattam Exponent Kalamandalam Satyabhama Passes Away"। New Indian Express। ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫। ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ 
  7. "Kerala Tourism"। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জুলাই ২০১৪ 
  8. "Committee"। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জুলাই ২০১৪ 
  9. "Book"। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জুলাই ২০১৪ 
  10. "Recognition for a Guru - The Hindu"। ৪ আগস্ট ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জুলাই ২০১৪ 
  11. "Swati"। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জুলাই ২০১৪ 
  12. "Kendra Akademi"। ৩০ মে ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জুলাই ২০১৪ 
  13. "Shadkala award"। ১৩ আগস্ট ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জুলাই ২০১৪ 
  14. "Satayabhama Award"। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জুলাই ২০১৪ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা