কমলকুমার মজুমদার
কমলকুমার মজুমদার (জন্ম : ১৬ নভেম্বর ১৯১৪ - মৃত্যু : ৯ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৯) ছিলেন সাহিত্যিক ও শিল্পী। [১] বিংশ শতাব্দীর একজন বাঙালি ঔপন্যাসিক যিনি আধুনিক বাংলা কথাসাহিত্যের অন্যতম স্মরণীয় ব্যক্তিত্ব হিসাবে পরিগণিত। তাকে বলা হয় 'লেখকদের লেখক'। তার উপন্যাস অন্তর্জলী যাত্রা এর অনন্যপূর্ব আখ্যানভাগ ও ভাষাশৈলীর জন্য প্রসিদ্ধ। বাংলা কথাসাহিত্য বিশেষ করে উপন্যাস ইয়োরোপীয় উপন্যাসের আদলে গড়ে উঠেছে, কমলকুমার মজুমদার সেই অনুসরণতা পরিহার করেছিলেন।
কমলকুমার মজুমদার | |
---|---|
জন্ম | কলিকাতা, ভারত | ১৬ নভেম্বর ১৯১৪
মৃত্যু | ৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৯ | (বয়স ৬৪)
পেশা | লেখক, সাহিত্যিক, ঔপন্যাসিক |
ভাষা | বাংলা |
জাতীয়তা | ভারতীয় |
উল্লেখযোগ্য রচনাবলি | অন্তজর্লী যাত্রা, গোলাপ সুন্দরী, অনিলা স্মরণে, শ্যাম- নৌকা, সুহাসিনীর পমেটম, পিঞ্জরে বসিয়া শুক ও খেলার প্রতিভা |
দাম্পত্যসঙ্গী | দয়াময়ী মজুমদার |
তিনি ছিলেন বাংলা সাহিত্যের দুরূহতম লেখকদের একজন। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য বিখ্যাত ছিলেন; যেমন সুহাসিনীর পমেটম উপন্যাসে ২৫০ পৃষ্ঠায় যতি-চিহ্ন বিহীন মাত্র একটি বাক্য লক্ষ্য করা যায়। তিনি বাংলা সাহিত্যের দুর্বোধ্যতম লেখক হিসেবেও পরিচিত ছিলেন। দীক্ষিত পাঠকের কাছে কমলকুমার অবশ্যপাঠ্য লেখক হিসেবেই সমাদৃত হলেও অদ্যাবধি তিনি সাধারণ্যে পাঠকপ্রিয়তা লাভ করেন নি।
জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন
সম্পাদনাতিনি ১৬ নভেম্বর, ১৯১৪ সালে উত্তর চব্বিশ পরগনার জেলার, টাকি শহরে জন্ম গ্রহণ করেন।[২] পিতার নাম প্রফুল্লকুমার মজুমদার ও মাতার নাম রেনুকাময়ী। [১] বাবা প্রফুল্লচন্দ্র ছিলেন পুলিশ অফিসার। মা ছিলেন বাড়ির সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের এক নিবেদিত প্রাণ। কমলকুমারের ছোটবেলাটা সেই সাংস্কৃতিক পারিবারিক আবহাওয়াতেই কেটেছে।
তাঁদের পৈতৃক নিবাস ছিল উত্তর ২৪ পরগনার সীমান্ত শহর টাকিতে। তবে তাঁদের কলকাতার রাসবিহারী অ্যাভিনিউতে একটা ভাড়াবাড়ি ছিল। বছর ছয়েক বয়সে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার বিষ্ণুপুরের ‘বিষ্ণুপুর শিক্ষা সংঘ’ স্কুলে কমলকুমার ও তাঁর ভাই নীরদের সঙ্গে একই শ্রেণিতে ভর্তি হন। কয়েক বছর পর সেখান থেকে কলকাতার ক্যাথিড্রাল মিশনারি স্কুলে। এখানেও বেশি দিন তাঁর মন টেকেনি। সংস্কৃত ভাষা শিখতে ভর্তি হলেন ভবানীপুরের এক সংস্কৃত টোলে।[৩] কমলকুমার মজুমদার ছিলেন প্রখ্যাত বাঙালি চিত্রকর নীরদ মজুমদারের (১৯১৬ - ১৯৮২) জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা।[৪] তাঁদের কনিষ্ঠা ভগিনী শানু লাহিড়ী (১৯২৮-২০১৩) ছিলেন প্রখ্যাত চিত্রকর ও চিত্রকলার প্রশিক্ষক। [৫]
কর্ম জীবন
সম্পাদনাব্যক্তিগত জীবনে তিনি বিভিন্ন স্থানে কর্মরত ছিলেন। উল্লেখযোগ্য ভাবে, বাংলা সরকারের জনগণনা বিভাগ, গ্রামীণ শিল্প ও কারুশিল্প, ললিতকলা একাডেমি এবং সাউথ পয়েন্ট স্কুলে। এছাড়াও তিনি ছবি, নাটক, কাঠের কাজ, ছোটদের আঁকা শেখানো, ব্যালেনৃত্যের পরিকল্পনা, চিত্রনাট্য রচনা করেন। বিভিন্ন পত্রিকায় তার লেখা সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়।[২] তিনি নিজে অঙ্কভাবনা নামে একটি পত্রিকার সম্পাদনাও করতেন।
১৯৬৯ সালে তার প্রথম গ্রন্থ 'অন্তর্জলি যাত্রা' প্রকাশিত হয়। ১৯৭০ সালে তার দ্বিতীয় গ্রন্থ 'নিম অন্নপূর্ণা' প্রকাশিত হয়। পরবর্তী গ্রন্থাবলি : গল্পসংগ্রহ, পিঞ্জরে বসিয়া শুক, খেলার প্রতিভা ও দানসা ফকির।
মৃত্যু
সম্পাদনাতিনি ৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৯ খ্রিষ্টাব্দে প্রয়াত হন।
'সৃষ্টির একুশ শতক' পত্রিকার ২০১৫ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর সংখ্যায় প্রখ্যাত গণিতজ্ঞ নারায়ণ চন্দ্র ঘোষের বিখ্যাত নিবন্ধ অঙ্ক ভাবনা প্রকাশিত হয়। পরে নারায়ণ চন্দ্র ঘোষ ও প্রশান্ত মাজীর যৌথ সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় কমলকুমার মজুমদার ও অঙ্ক ভাবনা শীর্ষক গ্রন্থটি আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৯৩৮০-৯০৭-৯ {{আইএসবিএন}} এ প্যারামিটার ত্রুটি: চেকসাম
বিখ্যাত উপন্যাসসমূহ
সম্পাদনাতিনি বিচিত্র বিষয় নিয়ে কাজ করেছেন। তার বিখ্যাত উপন্যাসসমূহ হল:
- অন্তর্জলী যাত্রা,
- গোলাপ সুন্দরী,
- অনিলা স্মরণে,
- শ্যাম-নৌকা,
- সুহাসিনীর পমেটম,
- পিঞ্জরে বসিয়া শুক এবং
- খেলার প্রতিভা।
ছোটগল্প গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে: নিম অন্নপূর্ণা, গল্প সংগ্রহ।
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- কমলকুমার : পাঠোদ্ধার ও মূল্যায়ন....রাহেল রাজিব[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- কালিও কলম, কমলকুমারের উপন্যাসের সুলুকসন্ধান-হামীম কামরুল হক।
পাদটীকা
সম্পাদনা- ↑ ক খ সুবোধ সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, আগস্ট ২০১৬, পৃষ্ঠা ১১১ আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬
- ↑ ক খ www.banglanews24.com[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ] - কমলকুমার মজুমদারের জীবনচিত্র।
- ↑ "আলো কমে আসিতেছে"। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৫-১২।
- ↑ Sunil Gangopadhyay। Ardhek Jibon। Ananda Publishers।
- ↑ "Shanu Lahiri dead"। The Telegraph। Calcutta। ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ২০ আগস্ট ২০১৮।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ১.সুবোধ সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, আগস্ট ২০১৬, পৃষ্ঠা ১১১, আইএসবিএন|978-81-7955-135-6
- শোয়াইব জিবরান (২০১০), কমলকুমার চরিতম্, শুদ্ধস্বর, ঢাকা
- শোয়াইব জিবরান (২০০৯) কমলকুমার মজুমদারের উপন্যাসের করণকৌশল, বাংলা একাডেমী ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৩ জানুয়ারি ২০১১ তারিখে ,ঢাকা
- অর্ঘ্যকুসুম দত্ত গুপ্ত (১৯৯৩) নানা দৃষ্টিতে কমলকুমার মজুমদার, সমতট, কলকাতা
- বীরেন্দ্রনাথ রক্ষিত (১৯৮৬) কাব্যবীজ ও কমলকুমার মজুমদার, নর্াক, কলকাতা
- সুব্রত রুদ্র (১৯৮২) কমলকুমারঃ রচনা ও স্মৃতি, নাথ, কলকাতা
- রফিক কায়সার (১৯৮০) কমলপুরাণ, প্যাপিরাস, ঢাকা
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনাইন্টারনেট মুভি ডেটাবেজে কমলকুমার মজুমদার (ইংরেজি)