ওমানের ইতিহাস

ইতিহাসের বিভিন্ন দিক

ওমানে জনবসতির ইতিহাস প্রায় ১০০,০০০ বছরের পুরনো। এই অঞ্চল বাইরের শক্তির দ্বারা বারবার প্রভাবিত হয়েছে। বহিরাগত শক্তির মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন আরব গোত্র, পর্তুগাল, এবং ব্রিটেন। আফ্রিকার পূর্ব উপকূলের দ্বীপ জাঞ্জিবার একসময় ওমানের নিয়ন্ত্রণে ছিলো, জাঞ্জিবার ছিলো ওমানের একটি উপনিবেশ।[১]

নাখাল দূর্গ, ওমানের একটি শক্তিশালী দূর্গ

প্রাক-ঐতিহাসিক সময়  সম্পাদনা

২০১১ সালে ডক্টর বিন জোভান ওমানে শতাধিক পাথরের তৈরী যন্ত্র আবিষ্কার করেছিলেন, যা সনাতন নুবিয়ান কমপ্লেক্সের বৈশিষ্ট্যবাহী। পূর্বে এই ধরনের নমুনা শুধুমাত্র সুদানে পাওয়া গিয়েছিলো। দুইটি আলোক বিকিরণের দ্বারা আরবিয় নুবিয়ান কমপ্লেক্সের বয়স হিসাব করা হয়েছে প্রায় ১০৬,০০০ বছর। এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে দক্ষিণ আরবে একটি স্বতন্ত্র গতিশীল প্রস্তরযুগীয় প্রযুক্তি ব্যাবস্থার বিকাশ হয়েছিলো, যা মেরিন আইসোটপের পঞ্চম পর্যায়ের প্রথম দিকের নিদর্শন।[২]

 
প্রত্নতত্ত্ববিদরা দোফার পর্বতে খননকার্যে ব্যস্ত। তারা মধ্যবর্তী প্রস্তর যুগীয় নিদর্শন পেয়েছিলেন।

ধারণা করা হয়, আফ্রিকা থেকে মানবজাতির পুরো বিশ্ব ছড়িয়ে যাওয়ার জন্য তাদের বাব-আল-মান্দাবের বাঁধা অতিক্রম করতে হয়েছিলো। সবুজ উপকূল বরাবর হেটে তারা আরব ও তারপর ইউরেশিয়ায় প্রবেশ করেছিলো। এটা সম্ভব হয়ে উঠবে যদি তখন ইয়েমেন ও দক্ষিণ ইরিত্রিয়ার মধ্যবর্তী সমুদ্র স্তর প্রায় ৮০ মিটার পর্যন্ত নিচে নেমে গিয়ে থাকে।   একটি স্তর ছিল যে সময় পৌঁছে একটি হিমবাহের stadial 60 থেকে 70 কা হিসেবে জলবায়ু ঠান্ডা erratically পৌঁছানোর শেষ হিমবাহের সর্বোচ্চ. থেকে 135,000 90,000 বছর আগে, ক্রান্তীয় আফ্রিকা ছিল megadroughts যা ঘটেছে, মানুষের কাছ থেকে জমি এবং সমুদ্রের দিকে shores, এবং তাদের বাধ্য করতে পার থেকে অন্য মহাদেশে.গবেষকরা ব্যবহার রেডিওকার্বন ডেটিং কৌশল পরাগ শস্য আটকে লেক-নিচে কাদা স্থাপন করার গাছপালা বেশি বয়সের মালাউই হ্রদ আফ্রিকা গ্রহণ নমুনা এ 300-বছর-অন্তর. নমুনা এ থেকে megadrought বার ছিল একটু পরাগ বা কাঠকয়লা পরামর্শ বিক্ষিপ্ত গাছপালা সঙ্গে সামান্য বার্ন করার জন্য. কাছাকাছি এলাকা, লেক মালাউই, আজ ব্যাপকভাবে বনভূমি ছিল একটি মরুভূমি প্রায় 135,000 90,000 বছর আগে.[৩]

ইসলাম আগমনের পুর্বের সময়  সম্পাদনা

ওমানের উত্তরাংশের অর্ধেক (আধুনিক বাহরাইন, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বেলুচিস্তান ও পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের পাশে ) সম্ভবতঃ পারস্যের হখামনি সাম্রাজ্যের  মাকা[৪] সাতরপির অংশ ছিল। মহাবীর আলেকজান্ডার দ্যা গ্রেটের শাসনামলে সাতরপির অস্তিত্ব সম্ভবত ছিলো। এর রাজধানী পুরুষ  শহরে তাকে অবস্থান করতে বলা হয়েছিলো। ধারণা করা হয় স্থানটি কেরামান প্রদেশের বাম এলাকায় অবস্থিত। ১ম সহস্রাব্দের (BDE) দ্বিতীয় অর্ধাংশ থেকে সেমিটিক ভাষাভাষী মানুষ মধ্য ও পশ্চিম আরবের পূর্ব দিকে গমন করা শুরু করে। এই জনগোষ্ঠীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপজাতি আযদ নামে বিখ্যাত। পার্থিয়ান ও সাসানীয় উপকূলে তখন উপনিবেশ বজায় ছিল। ১০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ থেকে ৩০০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত সেমিটিক ভাষাভাষীরা ওমানের কেন্দ্রীয় অঞ্চল সামাদ আল-শানে বসবাস করেছে। বর্তমানে এই অঞ্চলের নাম সংযুক্ত আরব আমিরাত[৫] ১৯ শতক পর্যন্ত বেদুঈন আগমের ধারা অব্যাহত ছিলো। তারা এখন উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলো শাসন করছে।

ইসলাম গ্রহণ সম্পাদনা

 
ধ্বংসাবশেষ, নিযওয়া

ওমানে ৬৩০ সালেই ইসলাম প্রবেশ করে। তখন মোহাম্মাদ (সা) জীবিত ছিলেন। ৬৩২ সালে রিদ্দার যুদ্ধ এর মাধ্যমে ওমানের একত্রীকরণ ঘটে।

৭৫১ সালে ইবাদি মুসলমান, যারা খারেজিদের একটি মধ্যপন্থী শাখা, ওমানে একটি মতাদর্শ প্রতিষ্ঠা করে। অনেক বাঁধা সত্ত্বেও ইবাদি মতাদর্শ বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ পর্যন্ত স্থায়ী ছিলো।[৬]

বর্তমানে ওমান হলো পৃথিবীর একমাত্র মুসলিম দেশ যেখানে ইবাদি মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। "মধ্যপন্থী রক্ষণশীলতা"র জন্য ইবাদি মতাদর্শ বিখ্যাত। এই আদর্শের এক স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য হলো এখানে শাসক পছন্দ করা হয় সাম্প্রদায়িক ঐক্যমত্য এবং সম্মতির দ্বারা।[৭] একজন ইমাম বা নেতার কাছে সমস্ত ক্ষমতা অর্পণ করা হয়, ওলামা বা জ্ঞানী ব্যক্তি সেই নেতা নির্বাচন করে থাকেন। একজন  ব্যক্তি তখন নেতা হিসেবে চূড়ান্ত হয়ে যান যখন, তিনি উপজাতি নেতাদের বশ্যতা লাভ করেন এবং সাধারণ জনগণের কাছ থেকে বাইয়াত (আনুগত্যের শপথ) অর্জন করেন।

বিদেশী আক্রমণ সম্পাদনা

বহিরাগত শক্তি বারবার ওমানে আক্রমণ করেছে। ৯৩১ ও ৯৩২ সালে কারমাটিয়ানরা ওমান শাসন করে। এরপর আবার ৯৩৩ ও ৯৩৪ সালে শাসন করে তারা। ৯৬৭ সাল থেকে ১০৫৩ সাল পর্যন্ত ইরানের শাসনে ছিলো। ১০৫৩ সাল থেকে ১১৫৪ সাল পর্যন্ত সেলজুকরা ওমান শাসন করেছে। সেলজুক ক্ষমতা ওমানের মধ্য দিয়ে দক্ষিণ ভারত পর্যন্ত ছড়িয়ে গিয়েছিলো।

 
জাব্রিন প্রাসাদের দেওয়াল 

১৯৯০ এর দশক সম্পাদনা

১৯৯৬ সালের নভেম্বর মাসে সুলতান কাবুস "রাষ্ট্রের মৌলিক বিধি" উপস্থাপন করেন। এটিই হলো ওমানের প্রথম লিখিত "সংবিধান"। এই সংবিধান ইসলামি আইন ও প্রচলিত আইনের কাঠামোয় বিভিন্ন অধিকারের নিশ্চয়তা দিয়েছে। এই সংবিধানের মাধ্যমে, মন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে কোন সরকারী শেয়ারহোল্ডিং সংস্থার কর্মকর্তা হওয়া যাবে না, এই আইনের কারণে দীর্ঘকাল ধরে চলে আসা দ্বন্দ্বের আংশিক সমাধান হয়েছে। এর সবচেয়ে বড় সফলতা হলো সুলতানের উত্তরাধিকার আইন বিধিবদ্ধ করা।

হরমুজ প্রাণালীর ওপর ওমানের কৌশলগত অবস্থান আছে। যা পারস্য উপসাগরের প্রবেশপথে প্রায় ৩৫ মাইল পর্যন্ত বিস্তৃত।আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার ব্যাপারে ওমান সর্বদা সচেতন থাকে। এ অঞ্চলের কাছাকাছি যেকোন আঞ্চলিক উত্তেজনা, ইরাক-ইরান দ্বন্দ্ব, রাজনৈতিক  ইসলামের সম্ভাব্য হুমকি ইত্যাদি বিষয়ে ওমানের উদ্বেগ রয়েছে। ইরাকের সাথে ওমান একটি কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রেখেছিলো যখন তারা একই সাথে উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় জাতিসংঘ জোটকেও সমর্থন দিচ্ছিলো। তারা উক্ত জোটে সৈন্য পাঠিয়েছিলো এবং তাদের দেশকে অস্ত্র ও রসদ সরবাহের জন্য উন্মুক্ত রেখেছিলো।

২০০০ এর দশক সম্পাদনা

২০০৩

সালের সেপ্টেম্বর মাসে ওমানের মজলিস আল-শুরার জন্য প্রায় ১ লক্ষ ওমানী নারী ও পুরুষ মিলে দুই জন নারীসহ মোট ৮৩ জন প্রার্থী নির্বাচিত করেন। ২৩০০ সালের ডিসেম্বর মাসে সুলতান কাবুস ৪৮ জনকে মজলিস আল  দাউলায় নিযুক্ত করেন। এটা তাদের দেশের রাষ্ট্রীয় পরিষদ। এই পরিষদে পাঁচজন নারী সদস্যও ছিলেন। পরিষদটি ওমানের দ্বিকক্ষীয় প্রতিনিধি পরিষদের উচ্চ কক্ষ হিসেবে কাজ করে।

আল সাইদের ব্যাপক আধুনিকায়ন প্রকল্পের ফলে দেশটি বাইরের দুনিয়ার জন্য উন্মুক্ত হয়ে যায় এবং যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্য দেশের সাথে একটি দীর্ঘ-স্থায়ী রাজনৈতিক ও সামরিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। ওমানের মধ্যপন্থী, স্বাধীন পররাষ্ট্র নীতির লক্ষ্য হলো সব মধ্যপ্রাচ্যের দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা।

ওমানের শাসক সম্পাদনা

 
ওমানের সুলতানের পতাকা 
  • সাইদ ইবনে সুলতান (২০ নভেম্বর ১৮০৪ – জুন ৪, ১৮৫৬) – (জাঞ্জিবার এবং ওমান এর সুলতান)
  • তুবানি বিন সাইদ (অক্টোবর ১৯, ১৮৫৬ – ফেব্রুয়ারি ১১, ১৮৬৬)
  • সালেম বিন তুবানি (ফেব্রুয়ারি ১১, ১৮৬৬ – অক্টোবর ১৮৬৮)
  • আজ্জান বিন কাইস (অক্টোবর ১৮৬৮ – জানুয়ারি ৩০, ১৮৭১)
  • তুরকী বিন সাইদ (জানুয়ারি ৩০, ১৮৭১ – জুন ৪, ১৮৮৮)
  • ফয়সাল বিন তুর্কি (জুন ৪, ১৮৮৮ – অক্টোবর ১৫, ১৯১৩)
  • তৈমুর বিন ফয়সাল (১৫ অক্টোবর, ১৯১৩ – ফেব্রুয়ারি ১০,১৯৩২)
  • সাইদ বিন তৈমুর (১০ ফেব্রুয়ারি, ১৯৩২ – জুলাই ২৩, ১৯৭০)
  • কাবুস বিন সাইদ, (২৩ জুলাই ১৯৭০ থেকে বর্তমান)

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Benjamin Plackett (৩০ মার্চ ২০১৭)। Omani Music Masks A Slave Trading Past। Al-Fanar Media। 
  2. Rose, JI; Usik, VI; Marks, AE; Hilbert, YH; Galletti, CS; Parton, A; Geiling, JM; Cerný, V; Morley, MW; Roberts, RG (২০১১)। "The Nubian Complex of Dhofar, Oman: an African middle stone age industry in Southern Arabia"PLoS ONE6: e28239। ডিওআই:10.1371/journal.pone.0028239পিএমআইডি 22140561পিএমসি 3227647  
  3. Mari N. Jensen (৮ অক্টোবর ২০০৭)। "Newfound Ancient African Megadroughts May Have Driven Evolution of Humans and Fish. The findings provide new insights into humans' migration out of Africa and the evolution of fishes in Africa's Great Lakes." (English ভাষায়)। The University of Arizona। সংগ্রহের তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭ 
  4. Dan Potts, The Booty of Magan, Oriens anticuus 25, 1986, 271-85
  5. Paul Yule, Cross-roads – Early and Late Iron Age South-eastern Arabia, Abhandlungen Deutsche Orient-Gesellschaft, vol. 30, Wiesbaden 2014, আইএসবিএন ৯৭৮-৩-৪৪৭-১০১২৭-১
  6. "Oman"। অক্টোবর ২৮, ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ডিসেম্বর ১, ২০০৮ Fourth line down from the top of the history section: "In 751 Ibadi Muslims, a moderate branch of the Kharijites, established an imamate in Oman. Despite interruptions, the Ibadi imamate survived until the mid-20th century". 2009-10-31.
  7. Donald Hawley, Oman, pg. 201. Jubilee edition. Kensington: Stacey International, 1995. আইএসবিএন ০৯০৫৭৪৩৬৩৬

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা