উদ্ধব

ভগবত পুরাণের চরিত্র, শ্ৰীকৃষ্ণের পরামৰ্শদাতা

উদ্ধব (পবনয়াধি হিসেবেও পরিচিত) হিন্দুধৰ্মের পৌরাণিক শাস্ত্ৰসমুহে বৰ্ণিত এক উল্লেখযোগ্য চরিত্ৰ। উদ্ধব ভগবান শ্ৰীকৃষ্ণের পরামৰ্শদাতা ও পরম বান্ধব । ভাগবত পুরাণে উদ্ধবের এক তাৎপৰ্যপূৰ্ণ ভূমিকা আছে যাতে কৃষ্ণই প্ৰত্যক্ষভাবে তাকে যোগনববিধা ভক্তির শিক্ষা প্ৰদান করেছেন। ভগবদ্গীতাতে কৃষ্ণ ও অৰ্জুনের মাঝে কথোপকথনের মত শ্ৰীকৃষ্ণ ও উদ্ধবের মাঝে এই নীতি বিষয়ক আলোচনাসমূহকে উদ্ধব গীতা বলা হয়। [১] কোনো কোনো শাস্ত্ৰ মতে সম্পৰ্কে উদ্ধব শ্ৰীকৃষ্ণের পিতৃব্যপুত্ৰ ও ভ্ৰাতা ছিল। উদ্ধবের পিতা দেবভাগ,শ্রীকৃষ্ণের জন্মপিতা বসুদেব এর ভাই ছিল। শ্রীকৃষ্ণের সাথে উদ্ধবের এমন শারীরিক গঠনগত সাদৃশ্য ছিল যে কেউ কেউ তাকে কৃষ্ণ বলে অনেকে ভুল করত।

জাভার ছায়ানাটকে উদ্ধবের চিত্রায়ণ

বৃন্দাবনে বাৰ্তাবাহী সম্পাদনা

ভাগবত পুরাণে বৰ্ণিত কাহিনী অনুসারে উদ্ধব শ্রীকৃষ্ণের হাতে কংস বধের পরে তার সাথে দেখা করতে আসলে তাদের মধ্যে পরম মিত্রতা হয়েছিল। শ্রীকৃষ্ণই তাকে বৃন্দাবনে যেতে অনুরোধ করেন ও তার মাধ্যমে কৃষ্ণ বিরহে তাপিত গোপী ও গায়ের অন্য অধিবাসীদের উদ্দেশ্যে এক বাৰ্তা প্ৰেরণ করেন। শ্রীকৃষ্ণ উদ্ধবকে দিয়ে বৃন্দাবনবাসীকে এইবলে পাঠান যে তাদের কৃষ্ণকে ভুলে যাওয়া উচিত। তবেই শ্রীকৃষ্ণ ধরাতে নিজ দায়িত্ব সমাপন করতে পারবেন। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্ৰতি রাধা ও গোপীগণের ভক্তি‌ ও প্ৰেমে উদ্ধব এমন মুগ্ধ হন যে ৬ মাস বৃন্দাবনে থাকেন । তিনি গোপীগণকে তার গুরু হিসেবে পেতে নিজের বাঞ্ছা প্ৰকাশ করলেন। গোপীবৃন্দ তাতে বললেন, "যখন অক্রূর বৃন্দাবনে এসেছিল তখন আমাদের কৃষ্ণকে আমাদের কাছ থেকে নিজের সাথে নিয়ে গেল। আর এখন তুমি তার স্মৃতিটুকুও আমাদের কাছ কেড়ে নিতে এসেছো তুমি?" যা শুনএ উদ্ধব নীরব হয়ে পরল। শ্রীকৃষ্ণের দ্বারা প্ৰেরিত বাৰ্তা ও এই বাৰ্তা শোনার পর বৃন্দাবনবাসীর মনে এর দ্বারা জাগৃত অনুভুতিকে গৌডীয় বৈষ্ণবমতে ঈশ্বরের প্ৰতি ভক্তের সৰ্বোচ্চ অন্তৰ্দৃষ্টি হিসেবে গণ্য করা হয়। [২]

উদ্ধব গীতা সম্পাদনা

শ্রীকৃষ্ণ পৃথিবী থেকে তার আসন্ন বিদায়ের আগে উদ্ধবকে সান্ত্বনা দেয়ার উদ্দেশ্যে প্ৰদান করা বাণীসমূহকে বলা হয় উদ্ধব গীতা (হংস গীতা হিসেবেও যা পরিচিত)। ক্ষত্ৰিয় হিসেবে জন্ম ও পরে যদুকুলে বড় হওয়া শ্রীকৃষ্ণের অনুপস্থিতিতে যদুবংশের আসন্ন বিনাশের ভবিষ্যত দেখার পরে উদ্ধবের আবেগ-বিহ্বল ও বিভ্ৰান্তিকর মনোপরিস্থিতিতে কৃষ্ণপ্ৰদত্ত এই উপদেশপূৰ্ণ বাণীসমূহে এই গীতার সূচনা হয়েছে।

উদ্ধব শ্রীকৃষ্ণের একান্ত ভক্ত ও তার পরম সখা হিসেবে প্ৰসিদ্ধ ছিলেন। কিন্তু উদ্ধবেব পক্ষেও বোধগম্য ছিল না কেন শ্রীকৃষ্ণের পক্ষে যদুকুলের আসন্ন পতন রোধ করা সম্ভব নয়। সৃষ্টিকৰ্তা ব্ৰহ্মা ও স্বৰ্গের দেবগণ ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে ধরাতে তার দায়-দায়িত্ব সমাপনের পর স্বৰ্গে পুন আগমনের জন্য অনুনয় বিনয় করেছিল।

শ্রীকৃষ্ণ তাকে যাদবগণের বিনাশের কারণ ব্যাখ্যা করে বলেছিলেণ, "মহাসাগরের তীরে ক্ষমতা, বীরত্ব ও সৌভাগ্যে বলীয়ান সমগ্ৰ বিশ্বকে অধিকার করতে আগ্রহী সুপ্ৰসিদ্ধ যদুবংশকে আমি সংযমী করে রেখেছিলাম। যদি বৃহৎ যদুকুলের বিনাশের আগেই আমি এই ধরা ছেড়ে চলে যাই, তবে উদ্ধত যদুবংশের হাতে সমগ্ৰ মানবজাতি নিঃশেষ হয়ে যাবে "। এই কথাতে অত্যন্ত দুঃখিত হয়ে উদ্ধব তখন শ্রীকৃষ্ণের সাথে পৃথিবী ছেড়ে যেতে চাওয়ার মিনতি করতে লাগলেন। এর ফলশ্ৰুতিতে শ্রীকৃষ্ণ উদ্ধবকে বোঝানোর জন্য উদ্ধব গীতার উদ্ভব করলেন। [১]

তথ্যসূত্ৰ সম্পাদনা

  1. Saraswati, Swami Ambikananda (২০০২-০৯-২৮)। The Uddhava Gita: The Final Teaching of Krishna (ইংরেজি ভাষায়)। Ulysses Press। আইএসবিএন 978-1-56975-320-0 
  2. Desai, Kunal (২০১৭-১০-০৩)। My Affair with Rãdhã (ইংরেজি ভাষায়)। Notion Press। আইএসবিএন 978-1-947851-91-7 

বহিঃ সংযোগ সম্পাদনা