উগ্রতারা দেবালয়

ভারতের একটি হিন্দু মন্দির

উগ্রতারা দেবালয় গুয়াহাটির লতাশিল অঞ্চলে অবস্থিত দশমহাবিদ্যার দ্বিতীয় দেবী তারার উগ্র স্বরূপ উগ্রতারার নামে উৎসর্গিত মন্দির। এই মন্দিরের পিছনে জোড়পুখুরী নামে একটি পুষ্করিণী আছে। গুয়াহাটির পঞ্চতীর্থর অন্যতম উগ্রতারা দেবালয় গুরুত্বপূর্ণ শক্তিপীঠ। লোকবিশ্বাস মতে, এখানে ভগবান শিব-এর পত্নী দেবী সতীর নাভি পড়েছিল। তিব্বতীয় বৌদ্ধ বিশ্বাস মতে, আসামের উগ্রতারাকে তীক্ষ্ণকণ্ঠ একজটা হিসাবে গণ্য করা হয়।[১][২] তারা শব্দটি সংস্কৃতের "তার্" মূল থেকে এসেছে, এর অর্থ "পার করানো" এবং উগ্র মানে ভয়ানক।[৩]

উগ্রতারা দেবালয়

বর্তমান উগ্রতারা দেবালয় আহোম রাজা শিব সিংহ ১৭২৫ খ্রীষ্টাব্দে নির্মান করেছিলেন। এর পূর্ব দিকে অবস্থিত জোড়পুখুরী তিনি মন্দির নির্মাণের তিনবছর আগে খুড়িয়েছিলেন। এখানে বিভিন্ন প্রজাতির কাচকে সংরক্ষিত অবস্থায় রাখা হয়েছে। ভূমিকম্পের ফলে মন্দিরের বিস্তর ক্ষতি হয়েছিল যদিও পরে নাগরিকগণ পুনরায় নির্মাণ করে।

কালিকা পুরাণে উল্লিখিত মতে, দিক্করাবাসিনী নামক একটি শক্তিপীঠ ছিল। দিক্করাবাসিনীর দুটি রূপ বিদ্যমান, তীক্ষ্ণকণ্ঠ এবং ললিতকণ্ঠ। তীক্ষ্ণকণ্ঠের দেহের বরণ কালো এবং পেট ঘটির মতো। এইরূপকে উগ্রতারা বা একজটা বলে। ললিত কণ্ঠ ধুনীয়া ও আকর্ষণীয় এবং তাঁকে তাম্রেশ্বরী বলা হয়।

উগ্রতারা দেবালয়ের গর্ভগৃহে দেবী উগ্রতারার কোনো মূর্তি বা আকৃতি নেই। জলে পূর্ণ কুণ্ডকে দেবী হিসাবে গণ্য করা হয়। এর সঙ্গে এখানে পাল সাম্রাজ্যের সময়ের অষ্টধাতুর উগ্রতারার মূর্তি আছে। মন্দিরের কাছে শিবের মন্দির শিবালয় অবস্থিত। দুটি মন্দিরের পিছনে জোড়পুখুরী অবস্থিত।

ধর্মীয় আখ্যান সম্পাদনা

স্থলপুরাণের মতে, একসময় মৃত্যুর দেবতা যমরাজ ব্রহ্মার কাছে অভিযোগ দাখিল করেন যে কামরূপ অঞ্চল থেকে কেউ নরকে যাচ্ছে না। পবিত্র কামরূপ অঞ্চলের পাপীগণ নরকে যাবার থেকে বিরত ছিল। ব্রহ্মা তখন এই অভিযোগ বিষ্ণুকে এবং শেষে বিষ্ণু শিবকে জানান। তখন ভগবান শিব দেবী উগ্রতারাকে কামাখ্যা অঞ্চলে বাস করা লোকগণকে বেঁধে পাঠাতে আদেশ দেন। দেবী নিজের সেনার সঙ্গে কামরূপ আসেন। সেইসময়ে ঋষি বশিষ্ঠ সন্ধ্যাঞ্চল পাহাড়ে শিবের দর্শনের জন্য তপস্যা করছিলেন। দেবীর উগ্র আগ্রাসনের জন্য বশিষ্ঠ মুনির তপস্যা ভঙ্গ হয়। এর জন্য তিনি ক্রোধে দেবী উগ্রতারা এবং ভগবান শিবকে অভিশাপ দেন। তখন থেকে কামরূপে সকল বৈদিক সাধনা ত্যাগ করা হয় ও দেবী উগ্রতারা বামাচারী সাধনার দেবীতে পরিণত হন, এবং এর সঙ্গে দেবীর সেনাগণ ম্লেচ্ছে পরিগণিত হন।

তারা দেবী সম্পাদনা

 
উগ্রতারা

তারা দশমহাবিদ্যার দ্বিতীয় দেবী। কালীর মতই তারাও ভীষণ উগ্র এবং রুদ্রস্বরূপা। তাঁর বিভিন্ন রূপান্তর যেমন: উগ্রতারা,একজটা,নীলসরস্বতী ইত্যাদি বিদ্যমান। উগ্রতারা দেবী তারার অত্যন্ত উগ্র রূপ। তন্ত্র সাধনার জন্য তান্ত্রিকগণ দেবী তারার পূজা করেন।

সাধনা সম্পাদনা

উগ্রতারা দেবীকে কামাখ্যার মতোই পূজা করা হয়। ধূপ-দীপ, নৈবেদ্যর সঙ্গে এখানে বলি বিধানেরও আয়োজন করা হয়। তান্ত্রিক সাধনায় দেবীর মদ, মাংস, মোদক, নারিকল এবং কুঁহিয়ার প্রিয়।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Reflections on the Tantras। S̄udhakar Chattopadhyaya। পৃষ্ঠা 76। 
  2. The social function of art by Radhakamal Mukerjee। Philosophical Library। ১৯৫৪। পৃষ্ঠা 151। 
  3. David Gordon White The Alchemical Body: Siddha Traditions in Medieval India, (Kindle Locations 1613–1615). University of Chicago Press. Kindle Edition. "This coastal location reminds us of what may have been Tārā’s original role: she was a goddess of navigation, of sea crossings— tārā is generated from the verb tṛ, to cross over the sea."