উইনস্টন টানেল
উইনস্টন টানেল (ইংরেজিতে: Winston Tunnel) হচ্ছে একটি রেলপথ সুড়ঙ্গ যা ইলিনয় এর এলিজাবেথ হতে ৯ মাইল (১৪.৫ কিমি) পশ্চিমে অবস্থিত।
সংক্ষিপ্ত বিবরণ | |
---|---|
রেলপথ | শিকাগো গ্রেট ওয়েস্টার্ন রেলওয়ে |
অবস্থান | জো ডেভিস কাউন্টি, ৯ মাইল (১৪.৫ কিঃমিঃ) পশ্চিমে এলিজাবেথ, ইলিনয় |
অবস্থা | পরিত্যক্ত এবং বিপজ্জনক |
ক্রিয়াকলাপ | |
মালিক | মিনেসোটা এন্ড নর্থ ওয়েস্টার্ন রেলরোড |
কারিগরি বৈশিষ্ট্য | |
রেলপথের দৈর্ঘ্য | ২৪৯৩ ফুট (৭৬০ মি) |
সর্বনিম্ন গভীরতা | ৭৯৭ ফুট (২৪৩ মি) সমুদ্র পৃষ্ঠের উপরে |
টানেল ক্লিয়ারেন্স | ১৮.৫ ফুট (৫.৬ মি) |
নতি | ০.৯২% (পশ্চিমে উত্থান) |
সুড়ঙ্গটি ১৮৮৮ সালে তৈরি করে মিনেসোটা এন্ড নর্থ ওয়েস্টার্ন রেলরোড, যা শিকাগো গ্রেট ওয়েস্টার্ন রেলওয়ের (সিজিডব্লিঊ)র পূর্বসূরি কোম্পানি। সুড়ঙ্গটি সিজিডব্লিঊ প্রধান লাইনে শিকাগোর ১৫২ মাইল (২৪৫ কিলোমিটার) পশ্চিমে ইলিনয়ের উত্তর-পশ্চিমের এক বিচ্ছিন্ন ও পাহাড়ি অসমতল এলাকায় অবস্থিত।
১৯৭২ সালে শিকাগো গ্রেট ওয়েস্টার্ন ও শিকাগো এন্ড নর্থ ওয়েস্টার্ন রেলওয়ে (সিএন্ডএন ডব্লিঊ) একীভূত হবার চার বছর পর সিজিডব্লিঊ’র একটি বিশাল অপ্রয়োজনীয় অংশের সাথে উইনস্টন টানেলটিকেও পরিত্যক্ত ঘোষণা করে। এটি ছিল তৎকালীন ইলিনয়ের সবচেয়ে বড় রেল সুড়ঙ্গ ২,৪৯৩ ফিট (৭৬০ মিটার)।[১][২]
ইতিহাস
সম্পাদনা১৮৮৬ সালে উত্তর ইলিনয় জুড়ে থাকা জনবিচ্ছিন্ন ঊষর পথে নিজস্ব লাইন নির্মাণ করার আগে, নব্যগঠিত মিনেসোটা এবং নর্থওয়েস্টার্ন রেলরোড কোম্পানি আইওয়ার, ডাবাক এবং ইলিনয়ের, ষ্টকটনের মধ্যে থাকা ইলিনয় সেন্ট্রাল রেলপথের ট্র্যাক ব্যবহার শুরু করে। শীঘ্রই প্রকৌশলীরা এই বন্ধুর পথ অতিক্রম করার জন্য একটি সুড়ঙ্গ নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা অণুধাবন করলেন। ১৮৮৭ সালের এক বসন্তে শেপারড, উইনস্টন এন্ড কোম্পানি (যাদের নামে সুড়ঙ্গটির নাম রাখা হয়) ৩৫০ জন শ্রমিকের দল নিয়ে নয় মাস ব্যাপী পলি ও কাদাময় স্তর খনন শুরু করে। কাজটি ছিল প্রচন্ড শ্রমসাধ্য ও বিপজ্জনক। অবশেষে, 'জন হিল' নামক একজন ফিনিশিয় অভিবাসী শ্রমিক মৃত্যুবরণ করেন।[৩] কাজ শেষে নির্মাণ ব্যয় দাঁড়াল $৬০০,০০০, যা ছিল ধারণাকে অতিক্রম করেছিল।[৪]
সুড়ঙ্গটি শিকাগো গ্রেট ওয়েস্টার্ন এবং তার পূর্বসূরি কোম্পানি গুলোর কাছে একটি বিড়ম্বনা হিসেবে দেখা দিল। শীঘ্রই রেল প্রকৌশলীরা উপলব্ধি করলেন কর্দম শিলার অস্থিতিশীল বৈশিষ্ট্যের কারণে গহ্বরের ভেতর ভূ-গর্ভস্থ পানির চোয়ান শুরু হয়েছে। এবং সুড়ঙ্গটির দূরবর্তী বিচ্ছিন্ন অঞ্চলে অবস্থানের কারণে মেরামতের খরচও ছিল অধিক। জানুয়ারী ১৮৮৮ সালে যখন রেল চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয় তখন সুড়ঙ্গটি মূলত কাঠের বীম দ্বারা আটকানো ছিল। ক্রমেই তা অনুপযোগী প্রমাণিত হয় এবং ১৯০২ সালে তা ইট এবং শক্তিশালী কংক্রিট দ্বারা মেরামত করা হয়। টানেলটির অবস্থার ক্রমাবনতির কারণে ১৯১২, ১৯১৮,১৯৪৪ এবং ১৯৪৭ সালে বড় ধরনের পুনঃ নির্মাণ করা প্রয়োজন হয়।[৫]
প্রথমদিকে গহ্বরের ভেতর বায়ু প্রবাহ অপর্যাপ্ত ছিল। সুরঙ্গের উপরে একটি কুপ খনন করলেও তা পর্যাপ্ত তাজা বাতাস প্রদান করতে ব্যর্থ হয়। বাষ্পীয় ইঞ্জিনের কর্মীরা ও প্রায়শই অপর্যাপ্ত বায়ু সঞ্চালনের কারণে সৃষ্ট প্রচণ্ড গরম ও ধোয়ার ব্যপারে অভিযোগ করত। খন্ডকালীন সমাধান গুলো ব্যর্থ হলে কোম্পানি সুরঙ্গে বায়ু সঞ্চালনের জন্য একটি বিশাল পাখা নির্মাণ করতে বাধ্য হয়, যা ৩১০ অশ্বশক্তির (২৩০ কিলোওয়াট) ডিজেল মোটরে দিনে ও রাতে পরিচালিত হত। ১৯১৬ সালে তৈরি হওয়া এই পাখা ঘরটি ১৯৪৭ সালে সিজিডব্লিঊ ডিজেল ইঞ্জিনের ব্যবহার শুরু করলে পরিত্যক্ত ঘোষিত হয়। [৬]
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় শিকাগো গ্রেট ওয়েস্টার্ন ফেডারেল সরকারের অধীনে আসলে সুড়ঙ্গটিকে রক্ষার জন্য ইলিনয় ন্যাশনাল গার্ডের একটি কন্টিনজেন্ট নিয়োগ করা হয়। [৭]
সুড়ঙ্গটি ব্যবহার উপযোগী রাখতে শুধু মিলিয়ন ডলার ব্যয়ের পরিচালনা খরচ করার দুঃস্বপ্নই ছিলনা, এর হাত থেকে মুক্তি পেতে রেলপথের ব্যবস্থাপনা পরিষদকে বাধ্য হয়ে অনেক ধরনের স্কিম বিবেচনা করতে হয়েছিল। ১৯০৯, ১৯৫১, ১৯৬৪ (যে বছর নর্থ ওয়েস্টার্ন ও গ্রেট ওয়েস্টার্ন একীভূত হবার ঘোষণা করে ) সুরঙ্গের ধার দিয়ে লাইন নির্মাণ, সুড়ঙ্গটি সূর্যালোকিত করন অথবা সম্পূর্ণ নতুন ভাবে নির্মাণ এবং উন্নয়নের জন্য কৌশলপত্র চাওয়া হয়। সকল পরিকল্পনাই শেষ পর্যন্ত গ্রেট ওয়েস্টার্নের অর্থ সংকটের কারণে খুব ব্যয়বহুল প্রমাণিত হয় ।[৮]
শেষ পর্যন্ত, ১৯৬৮ সালে শিকাগো ও নর্থ ওয়েস্টার্ন (সিএন্ডএন ডব্লিঊ) এর একত্রীকরণ উইনস্টন টানেল এর ভবিষ্যৎ এ সীল মোহর এঁকে দেয়। উত্তর ইলিনয়ের মধ্যে গ্রেট ওয়েস্টার্ন এর প্রধান লাইন নর্থ ওয়েস্টার্ন এর নিজস্ব লাইনের সমান্তরালে করা হয়, যদিও তা কম ঘনবসতিপূর্ণ এবং কম বাণিজ্যিকভাবে সক্রিয় এলাকায় ছিল। পাহাড়ি খাড়া লাইন এবং উইনস্টন টানেল রক্ষনাবেক্ষনের সুস্পষ্ট আর্থিক বোঝা গ্রেট ওয়েস্টার্নকে এই ট্র্যাকটিকে সম্পূর্ণ রূপে পরিত্যাক্ত ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নিতে মূল ভূমিকা পালন করে। ১৯৭১ সালে সিএন্ডএনডব্লিঊ এই সুরঙ্গের মধ্য দিয়ে শেষ ট্রেনটি পরিচালনা করে। পরবর্তী বছর লোহা লক্কড় তুলে আনা হয়। পরিত্যাক্ত হবার পর,অবৈধ অণুপ্রবেশকারীদের রুখতে সিএন্ডএনডব্লিঊ গহবরের দুই পাশে তারের বেড়া নির্মাণ করে দেয়। [৯] ১৯৭৩ সালে জো ডেভিস কাউন্টির মধ্য দিয়ে উইনস্টন টানেলকে নিয়ে একটি রেলপথ নির্মাণের পরিকল্পনা পার্শ্ববর্তী জমির মালিকানা পরিবর্তন হবার কারণে ব্যর্থ হয়।[১০]
বর্তমান অবস্থা
সম্পাদনাউইনস্টন টানেলটি এখনও বর্তমান, যদিও বা খুবই বিচ্ছিন্ন একটি এলাকায় এবং চূড়ান্ত ধ্বংসপ্রাপ্ত অবস্থায়। প্রকৃতি তাকে সম্পূর্ণরূপে গ্রাস করেছে; পাখা ঘরটি ১৯৪০ থেকে অব্যবহৃত এবং গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যা ২০০৭ সালে পুরোপুরি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। পূর্ব দিকের গহবরটি যা ব্যক্তিগত সম্পত্তির উপর অবস্থিত সম্পূর্ণ মাটিদ্বারা ভর্তি হয়ে গেছে।
পশ্চিম অংশের অর্ধেক, এ্যাপল রিভার ক্যানিয়ন স্টেট পার্ক এর একটি "স্যাটেলাইট এলাকা" হিসেবে ইলিনয় প্রাকৃতিক সম্পদ বিভাগ কিনে নেয় এবং তারা পশ্চিম গহ্বর আটকে রাখা তারের বেড়ার বদলে একটি স্টিলের গেট নির্মাণ করে । তারা সেখানে প্রাকৃতিক উদ্যান সহ বিবিধ উন্নয়ন সাধন করে। [১১] যাই হোক, সুড়ঙ্গটি বর্তমানে সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্য বন্ধ আছে, কারণ এটি একটি অত্যন্ত বিপজ্জনক জায়গা যেখানে আকস্মিক ধস ও র্যাটল স্ন্যাকের কামড় খাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
রেফারেন্স
সম্পাদনা- ↑ The Historical Guide to North American Railroads, page 99.
- ↑ Hastings, Philip R. Chicago Great Western Railway: Iowa in the Merger Decade, page 16.
- ↑ Grant, H. Roger.
- ↑ Maggie Schweihs, "Essence of Winston Tunnel Lingers", The Galenian, Fall/Winter 2006-2007, p. 60.
- ↑ Finch, C. W. The CGW Winston Tunnel and its Ghost, p. 28-9 and 52-3.
- ↑ Finch, p. 25-6; Schweihs, p. 62.
- ↑ Grant, page 89.
- ↑ Finch, p. 29-31.
- ↑ Huddleston, Jerry.
- ↑ Schweihs, p. 62
- ↑ [১] ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২২ জুন ২০০৬ তারিখে[dead link]
- সূত্র
- Finch, C. W. The CGW Winston Tunnel and its Ghost. Bireline Company (Newell, Iowa), ১৯৮৫.
- Grant, H. Roger. The Corn Belt Route: A History of the Chicago Great Western Railroad Company. Northern Illinois University Press (DeKalb, Illinois), ১৯৮৪.
- Schweihs, Maggie. "Essence of Winston Tunnel Lingers", The Galenian, Fall/Winter ২০০৬-২০০৭