উইকিপিডিয়া:বাংলা বানানের নিয়ম
এই নির্দেশাবলী বাংলা উইকিপিডিয়ার রচনাশৈলী নির্দেশনার একটি অংশ। এইটি ব্যবহার করতে সাধারণ জ্ঞান ব্যবহার করুন। এই পাতাতে যেকোন স্বতন্ত্র সম্পাদনা জনমতের ভিত্তিতে করা উচিত। কোন সন্দেহ থাকলে, প্রথমে তা আলাপ পাতায় আলোচনা করুন। |
রচনাশৈলী নির্দেশনা (রচনি) |
---|
উইকিপিডিয়ায় লিখন বা সম্পাদনার ক্ষেত্রে নিচের বাংলা বানানের নিয়ম[১]গুলো মেনে চলার চেষ্টা করুন।
তৎসম শব্দ
সম্পাদনাতৎসম শব্দের বানানের অপরিবর্তনীয়তা
সম্পাদনা- এই নিয়মে বর্ণিত ব্যতিক্রম ছাড়া তৎসম বা সংস্কৃত শব্দের নির্দিষ্ট বানান অপরিবর্তিত থাকবে।
ই ঈ বা উ ঊ
সম্পাদনা- যে-সব তৎসম শব্দে ই ঈ বা উ ঊ উভয় শুদ্ধ সেসব শব্দে কেবল ই বা উ এবং তার কার-চিহ্ন ি ু ব্যবহৃত হবে। যেমন:
কিংবদন্তি, খঞ্জনি, চিৎকার, চুল্লি, তরণি, ধমনি, ধরণি, নাড়ি, পঞ্জি, পদবি, পল্লি, ভঙ্গি, মঞ্জরি, মসি, যুবতি, রচনাবলি, লহরি, শ্রেণি, সরণি, সূচিপত্র;
উর্ণা, উষা।
রেফের পর ব্যঞ্জনবর্ণের দ্বিত্ব
সম্পাদনা- রেফের পর ব্যঞ্জনবর্ণের দ্বিত্ব হবে না। যেমন:
অর্জ্জন, ঊর্দ্ধ্ব, কর্ম্ম, কার্ত্তিক, কার্য্য, বার্দ্ধক্য, মূর্চ্ছা, সূর্য্য ইত্যাদির পরিবর্তে যথাক্রমে অর্জন, ঊর্ধ্ব, কর্ম, কার্তিক, কার্য, বার্ধক্য, মূর্ছা, সূর্য ইত্যাদি হবে।
ং
সম্পাদনা- সন্ধির ক্ষেত্রে ক খ গ ঘ পরে থাকলে পূর্ব পদের অন্তস্থিত ম্ স্থানে অনুস্বার (ং) লেখা যাবে। যেমন:
অহম্ + কার = অহংকার
এভাবে ভয়ংকর, সংগীত, শুভংকর, হৃদয়ংগম, সংঘটন।
- সন্ধিবদ্ধ না হলে ঙ স্থানে ং হবে না। যেমন:
অঙ্ক, অঙ্গ, আকাঙ্ক্ষা, আতঙ্ক, কঙ্কাল, গঙ্গা, বঙ্কিম, বঙ্গ, লঙ্ঘন, শঙ্কা, শৃঙ্খলা, সঙ্গে, সঙ্গী।
ইন্-প্রত্যয়ান্ত শব্দ
সম্পাদনা- সংস্কৃত ইন্-প্রত্যয়ান্ত শব্দের দীর্ঘ ঈ-কারান্তরূপ সমাসবদ্ধ হলে সংস্কৃত ব্যাকরণের নিয়ম-অনুযায়ী সেগুলিতে হ্রস্ব ই-কার হয়। যেমন:
গুণী → গুণিজন, প্রাণী → প্রাণিবিদ্যা, মন্ত্রী → মন্ত্রিপরিষদ
- তবে এগুলোর সমাসবদ্ধ রূপে ঈ-কারের ব্যবহারও চলতে পারে। যেমন:
গুণী → গুণীজন, প্রাণী → প্রাণীবিদ্যা, মন্ত্রী → মন্ত্রীপরিষদ
- ইন্-প্রত্যয়ান্ত শব্দের সঙ্গে -ত্ব ও -তা প্রত্যয় যুক্ত হলে ই-কার হবে। যেমন:
কৃতি → কৃতিত্ব, দায়ী → দায়িত্ব, প্রতিযোগী → প্রতিযোগিতা, মন্ত্রী → মন্ত্রিত্ব, সহযোগী → সহযোগিতা
বিসর্গ (ঃ)
সম্পাদনা- শব্দের শেষে বিসর্গ (ঃ) থাকবে না। যেমন:
ইতস্তত, কার্যত, ক্রমশ, পুনঃপুন, প্রথমত, প্রধানত, প্রয়াত, প্রায়শ, ফলত, বস্তুত, মূলত।
- এছাড়া নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে শব্দমধ্যস্থ বিসর্গ-বর্জিত রূপ গৃহীত হবে। যেমন:
দুস্থ, নিস্তব্ধ, নিস্পৃহ, নিশ্বাস।
অতৎসম শব্দ
সম্পাদনাই, ঈ, উ, ঊ
সম্পাদনা- সকল অতৎসম অর্থাৎ তদ্ভব, দেশি, বিদেশি, মিশ্র শব্দে কেবল ই এবং উ এবং এদের কার চিহ্ন ি ু ব্যবহৃত হবে । যেমন:
আরবি, আসামি, ইংরেজি, ইমান, ইরানি, উনিশ, ওকালতি, কাহিনি, কুমির, কেরামতি, খুশি, খেয়ালি, গাড়ি, গোয়ালিনি, চাচি, জমিদারি, জাপানি, জার্মানি, টুপি, তরকারি, দাড়ি, দাদি, দাবি, দিঘি, নানি, নিচু, পশমি, পাখি, পাগলামি, পাগলি, পিসি, ফরাসি, ফরিয়াদি, ফারসি, ফিরিঙ্গি, বর্ণালি, বাঁশি, বাঙালি, বাড়ি, বিবি, বুড়ি, বেআইনি, বেশি, বোমাবাজি, ভারি (অত্যন্ত অর্থে), মামি, মালি, মাসি, মাস্টারি, রানি, রুপালি, রেশমি, শাড়ি, সরকারি, সিন্ধি, সোনালি, হাতি, হিজরি, হিন্দি, হেঁয়ালি।
চুন, পুজো, পুব, মুলা, মুলো।
- পদাশ্রিত নির্দেশক টি-তে ই-কার হবে। যেমন:
ছেলেটি, লোকটি, বইটি।
- সর্বনাম, বিশেষণ, ক্রিয়া-বিশেষণ ও যোজক পদরূপে কী শব্দটি ঈ-কার লেখা হবে। যেমন:
এটা কী বই? কী আনন্দ! কী আর বলব? কী করছ? কী করে যাব? কী খেলে? কী জানি? কী দুরাশা! তোমার কী! কী বুদ্ধি নিয়ে এসেছিলে! কী পড়ো? কী যে করি! কী বাংলা কী ইংরেজি উভয় ভাষাতেই তিনি পারদর্শী।
- কীভাবে, কীরকম, কীরূপে প্রভৃতি শব্দেও ঈ-কার হবে।
- যেসব প্রশ্নবাচক বাক্যের উত্তর হ্যাঁ বা না হবে, সেইসব বাক্যে ব্যবহৃত ‘কি’ হ্রস্ব ই-কার দিয়ে লেখা হবে। যেমন:
তুমি কি যাবে? সে কি এসেছিল?
এ, অ্যা
সম্পাদনা- বাংলায় এ বর্ণ বা ে-কার দিয়ে এ এবং অ্যা এই উভয় ধ্বনি নির্দেশিত হয়। যেমন:
কেন, কেনো (ক্রয় করো); খেলা, খেলি; গেল, গেলে, গেছে; দেখা, দেখি; জেনো, যেন।
- তবে কিছু তদ্ভব এবং বিশেষভাবে দেশি শব্দ রয়েছে যেগুলির ্যা-কার (য-ফলা + আ-কার) যুক্ত রূপ বহুল পরিচিত। যেমন:
ব্যাঙ, ল্যাঠা।
এসব শব্দে ্যা (য-ফলা + আ-কার) অপরিবর্তিত থাকবে।
- বিদেশি শব্দে ক্ষেত্র-অনুযায়ী অ্যা বা ্যা-কার (য-ফলা + আ-কার) ব্যবহৃত হবে। যেমন:
অ্যাকাউন্ট, অ্যান্ড (and), অ্যাসিড, ক্যাসেট, ব্যাংক, ভ্যাট, ম্যানেজার, হ্যাট।
ও
সম্পাদনা- বাংলা অ-ধ্বনির উচ্চারণ বহু ক্ষেত্রে ও-র মতো হয়। শব্দশেষের এসব অ-ধ্বনি ও-কার দিয়ে লেখা যেতে পারে। যেমন:
কালো, খাটো, ছোটো, ভালো;
এগারো, বারো, তেরো, পনেরো, ষোলো, সতেরো, আঠারো;
করানো, খাওয়ানো, চড়ানো, চরানো, চালানো, দেখানো, নামানো, পাঠানো, বসানো, শেখানো, শোনানো, হাসানো;
কুড়ানো, নিকানো, বাঁকানো, বাঁধানো, ঘোরালো, জোরালো, ধারালো, প্যাঁচানো;
করো, চড়ো, জেনো, ধরো, পড়ো, বলো, বসো, শেখো, করাতো, কেনো, দেবো, হতো, হবো, হলো;
কোনো, মতো।
- ভবিষ্যৎ অনুজ্ঞায় শব্দের আদিতেও ও-কার লেখা যেতে পারে। যেমন:
কোরো, বোলো, বোসো।
ং, ঙ
সম্পাদনা- শব্দের শেষে প্রাসঙ্গিক ক্ষেত্রে সাধারণভাবে অনুস্বার (ং) ব্যবহৃত হবে। যেমন:
গাং, ঢং, পালং, রং, রাং, সং।
- তবে অনুস্বারের সঙ্গে স্বর যুক্ত হলে ঙ হবে। যেমন:
বাঙালি, ভাঙা, রঙিন, রঙের
- বাংলা ও বাংলাদেশ শব্দে অনুস্বার থাকবে।
ক্ষ, খ
সম্পাদনা- অতৎসম শব্দ খিদে, খুদ, খুর (গবাদি পশুর পায়ের শেষ প্রান্ত), খেত, খ্যাপা ইত্যাদি লেখা হবে।
জ, য
সম্পাদনা- বাংলায় প্রচলিত বিদেশি শব্দ সাধারণভাবে বাংলা ভাষার ধ্বনিপদ্ধতি-অনুযায়ী লিখতে হবে। যেমন:
কাগজ, জাদু, জাহাজ, জুলুম, জেব্রা, বাজার, হাজার।
- ইসলাম ধর্ম-সংক্রান্ত কয়েকটি শব্দে বিকল্পে ‘য’ লেখা যেতে পারে। যেমন:
আযান, ওযু, কাযা, নামায, মুয়ায্যিন, যোহর, রমযান, হযরত।
মূর্ধন্য ণ, দন্ত্য ন
সম্পাদনা- অতৎসম শব্দের বানানে ণ ব্যবহার করা যাবে না। যেমন:
অঘ্রান, ইরান, কান, কোরান, গভর্নর, গুনতি, গোনা, ঝরনা, ধরন, পরান, রানি, সোনা, হর্ন।
- তৎসম শব্দে ট ঠ ড ঢ-য়ের পূর্বে যুক্ত নাসিক্যবর্ণ ণ হয়। যেমন:
কণ্টক, প্রচণ্ড, লুণ্ঠন।
- কিন্তু অতৎসম শব্দের ক্ষেত্রে ট ঠ ড ঢ-য়ের আগে কেবল ন হবে। যেমন:
গুন্ডা, ঝান্ডা, ঠান্ডা, ডান্ডা, লন্ঠন।
শ, ষ, স
সম্পাদনাবিদেশি শব্দের ক্ষেত্রে ‘ষ’ ব্যবহারের প্রয়োজন নেই। যেমন:
কিশমিশ, নাশতা, পোশাক, বেহেশ্ত, শখ, শয়তান, শরবত, শরম, শহর, শামিয়ানা, শার্ট, শৌখিন;
আপস, জিনিস, মসলা, সন, সাদা, সাল (বৎসর), স্মার্ট, হিসাব;
স্টল, স্টাইল, স্টিমার, স্ট্রিট, স্টুডিয়ো, স্টেশন, স্টোর।
ইসলাম, তসলিম, মুসলমান, মুসলিম, সালাত, সালাম;
এশা, শাওয়াল (হিজরি মাস), শাবান (হিজরি মাস)।
- ইংরেজি ও ইংরেজির মাধ্যমে আগত বিদেশি s ধ্বনির জন্য স এবং -sh, -sion, -ssion, tion প্রভৃতি বর্ণগুচ্ছ বা ধ্বনির জন্য শ ব্যবহৃত হবে। যেমন:
পাসপোর্ট, বাস;
ক্যাশ;
টেলিভিশন;
মিশন, সেশন;
রেশন, স্টেশন।
- যেখানে বাংলায় বিদেশি শব্দের বানান পরিবর্তিত হয়ে স ছ এর রূপ ধারণ করেছে সেখানে ছ-এর ব্যবহার থাকবে। যেমন:
তছনছ, পছন্দ, মিছরি, মিছিল।
বিদেশি শব্দ ও যুক্তবর্ণ
সম্পাদনা- বাংলায় বিদেশি শব্দের আদিতে বর্ণবিশ্লেষ সম্ভব নয়। এগুলো যুক্তবর্ণ দিয়ে লিখতে হবে। যেমন:
স্টেশন, স্ট্রিট, স্প্রিং।
- তবে অন্য ক্ষেত্রে বিশ্লেষ করা যায়। যেমন:
মার্কস, শেকসপিয়র, ইসরাফিল।
হস্-চিহ্ন
সম্পাদনা- হস্-চিহ্ন যথাসম্ভব বর্জন করতে হবে। যেমন:
কলকল, করলেন, কাত, চট, চেক, জজ, ঝরঝর, টক, টন, টাক, ডিশ, তছনছ, ফটফট, বললেন, শখ, হুক।
- তবে যদি অর্থবিভ্রান্তি বা ভুল উচ্চারণের আশঙ্কা থাকে তাহলে হস্-চিহ্ন ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন:
উহ্, বাহ্, যাহ্।
ঊর্ধ্ব-কমা
সম্পাদনা- ঊর্ধ্ব-কমা যথাসম্ভব বর্জন করা হবে। যেমন:
বলে (বলিয়া), হয়ে (হইয়া), দুজন (দুইজন), চাল (চাউল), আল (আইল)।
বিবিধ
সম্পাদনাসমাসবদ্ধ পদ
সম্পাদনা- সমাসবদ্ধ পদগুলি যথাসম্ভব একসঙ্গে লিখতে হবে। যেমন:
অদৃষ্টপূর্ব, অনাস্বাদিতপূর্ব, নেশাগ্রস্ত, পিতাপুত্র, পূর্বপরিচিত, বিষাদমণ্ডিত, মঙ্গলবার, রবিবার, লক্ষ্যভ্রষ্ট, সংবাদপত্র, সংযতবাক, সমস্যাপূর্ণ, স্বভাবগতভাবে।
- বিশেষ প্রয়োজনে সমাসবদ্ধ শব্দটিকে এক বা একাধিক হাইফেন (-) দিয়ে যুক্ত করা যায়। যেমন:
কিছু-না-কিছু, জল-স্থল-আকাশ, বাপ-বেটা, বেটা-বেটি, মা-ছেলে, মা-মেয়ে
বিশেষণ পদ
সম্পাদনা- বিশেষণ পদ সাধারণভাবে পরবর্তী পদের সঙ্গে যুক্ত হবে না। যেমন:
ভালো দিন, লাল গোলাপ, সুগন্ধ ফুল, সুনীল আকাশ, সুন্দরী মেয়ে, স্তব্ধ মধ্যাহ্ন।
সর্বনাম পদ
সম্পাদনা- উদ্ধৃতি ব্যতিরেকে ব্যক্তি, পদবি ও মর্যাদা নির্বিশেষে সকল ক্ষেত্রে তিনি, তার ও তাকে ব্যবহার করা হবে। যেহেতু উইকিপিডিয়া কোনো ব্যক্তি মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে না, তাই কোনো সর্বনামের ওপর চন্দ্রবিন্দু ব্যবহার করা যাবে না।
- আলাপ পাতায় বয়স, পদবি নির্বিশেষে 'আপনি' সম্বোধন ব্যবহার্য।
ক্রিয়াপদের রূপ
সম্পাদনা- (তিনি) করেন, করেছেন, করতেন, করান, করবেন ইত্যাদি।
- আলাপ পাতার ক্ষেত্রে: (আপনি) করুন, করেছেন, করতেন, করান, করবেন ইত্যাদি।
না-বাচক শব্দ
সম্পাদনা- না-বাচক না এবং নি-এর প্রথমটি (না) স্বতন্ত্র পদ হিসেবে এবং দ্বিতীয়টি (নি) সমাসবদ্ধ হিসেবে ব্যবহৃত হবে। যেমন:
করি না, কিন্তু করিনি।
- এছাড়া শব্দের পূর্বে না-বাচক উপসর্গ ‘না’ উত্তরপদের সঙ্গে যুক্ত ধাকবে। যেমন:
নাবালাক, নারাজ, নাহক।
- অর্থ পরিস্ফুট করার জন্য কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রয়োজন অনুভূত হলে না-এর পর হাইফেন ব্যবহার করা যায়। যেমন:
না-গোনা পাখি, না-বলা বাণী, না-শোনা কথা।
অধিকন্তু অর্থে ‘ও’
সম্পাদনা- অধিকন্তু অর্থে ব্যবহৃত ‘ও’ প্রত্যয় শব্দের সঙ্গে কার-চিহ্ন রূপে যুক্ত না হয়ে পূর্ণ রূপে শব্দের পরে যুক্ত হবে। যেমন:
আজও, আমারও, কালও, তোমারও।
নিশ্চয়ার্থক ‘ই’
সম্পাদনা- নিশ্চয়ার্থক ‘ই’ শব্দের সঙ্গে কার-চিহ্ন রূপে যুক্ত না হয়ে পূর্ণ রূপে শব্দের পরে যুক্ত হবে। যেমন:
আজই, এখনই।
উদ্ধৃতি
সম্পাদনা- উদ্ধৃতি মূলে যেমন আছে ঠিক তেমনি লিখতে হবে। কোনো পুরাতন রচনায় যদি বানান বর্তমান নিয়মের অনুরূপ না হয়, উক্ত রচনার বানানই যথাযথভাবে উদ্ধৃত করতে হবে। যদি উদ্ধৃত রচনায় বানানের ভুল বা মুদ্রণের ত্রুটি থাকে, হুবহু সেটাই উদ্ধৃত করে তৃতীয় বন্ধনীর মধ্যে শুদ্ধ বানানটির উল্লেখ করতে হবে। এক বা দুই ঊর্ধ্ব-কমার দ্বারা উদ্ধৃত অংশকে চিহ্নিত করতে হবে। তবে উদ্ধৃত অংশ যদি ইনসেট করা হয় তাহলে ঊর্ধ্ব-কমার চিহ্ন ব্যবহার করতে হবে না। তাছাড়া কবিতা যদি মূল চরণ-বিন্যাস অনুযায়ী উদ্ধৃত হয় এবং কবির নামের উল্লেখ থাকে সেক্ষেত্রেও উদ্ধৃতি-চিহ্ন দেয়ার প্রয়োজন নেই। ইনসেট না হলে গদ্যের উদ্ধৃতিতে প্রথমে ও শেষে উদ্ধৃতি-চিহ্ন দেওয়া ছাড়াও প্রত্যেক অনুচ্ছেদের প্রারম্ভে উদ্ধৃতি-চিহ্ন দিতে হবে। প্রথমে, মধ্যে বা শেষে উদ্ধৃত রচনার কোনো অংশ যদি বাদ দেওয়া হয় অর্থাৎ উদ্ধৃত করা না হয়, বাদ দেওয়ার স্থানগুলিকে তিনটি বিন্দু বা ডট্ (অবলোপ চিহ্ন) দ্বারা চিহ্নিত করতে হবে। গোটা অনুচ্ছেদ , স্তবক, বা একাধিক ছত্রের কোনো বৃহৎ অংশ বাদ দেওয়ার ক্ষেত্রে তিনটি তারকার একটি ছত্র রচনা করে ফাঁকগুলিকে চিহ্নিত করতে হবে।[২]
- কোনো পুরাতন অভিযোজিত বা সংক্ষেপিত পাঠে অবশ্য পুরাতন বানানকে বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী পরিবর্তিত করা যেতে পারে।[২]
ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার নাম
সম্পাদনা- ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার নাম এই নিয়মের আওতাভুক্ত নয়।
বাংলা যুক্তবর্ণের তালিকা
সম্পাদনাযুক্তবর্ণ বলতে একাধিক ব্যঞ্জনবর্ণের সমষ্টিকে বোঝানো হয়েছে। বাংলা লিখনপদ্ধতিতে যুক্তবর্ণের একটি বিশেষ স্থান আছে। এগুলো বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই উপাদান বর্ণগুলোর চেয়ে দেখতে ভিন্ন, ফলে নতুন শিক্ষার্থীর এগুলো লেখা আয়ত্ত করতে সময়ের প্রয়োজন হয়।
যুক্তবর্ণগুলি বাংলা লিখন পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য। যুক্তবর্ণগুলোর উপাদান ব্যঞ্জনবর্ণের নির্দেশিত ধ্বনির সাথে এগুলোর উচ্চারিত ধ্বনির সরাসরি সম্পর্ক না-ও থাকতে পারে। যেমন - পক্ব -এর উচ্চারণ পক্কো; বানানে ব-ফলা থাকলেও উচ্চারণে ব ধ্বনিটি অনুপস্থিত। রুক্ষ-এর উচ্চারণ রুক্খো; বানানের নিয়ম অনুযায়ী ক্ষ যুক্তবর্ণটি ক ও ষ-এর যুক্তরূপ হলেও উচ্চারণ হয় ক্খ। বানান ও ধ্বনির এই অনিয়মও শিক্ষার্থীর জন্য যুক্তবর্ণের সঠিক ব্যবহারে একটি বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
নিচের যুক্তবর্ণের তালিকাটি বাংলা সঠিকভাবে লিখতে সহায়ক হতে পারে। এখানে বাংলায় ব্যবহৃত ২৮৫টি যুক্তবর্ণ দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে কোনো যুক্তবর্ণ সম্ভবত বাংলায় প্রচলিত নয়।
- ক্ক = ক + ক; যেমন: আক্কেল, টেক্কা
- ক্ট = ক + ট; যেমন: ডক্টর (মন্তব্য: এই যুক্তাক্ষরটি মূলত ইংরেজি/বিদেশি কৃতঋণ শব্দে ব্যবহৃত)
- ক্ট্র = ক + ট + র; যেমন: অক্ট্রয়
- ক্ত = ক + ত; যেমন: রক্ত
- ক্ত্র = ক + ত + র; যেমন: বক্ত্র
- ক্ব = ক + ব; যেমন: পক্ব, ক্বণ
- ক্ম = ক + ম; যেমন: রুক্মিণী
- ক্য = ক + য; যেমন: বাক্য
- ক্র = ক + র; যেমন: চক্র
- ক্ল = ক + ল; যেমন: ক্লান্তি
- ক্ষ = ক + ষ; যেমন: পক্ষ
- ক্ষ্ণ = ক + ষ + ণ; যেমন: তীক্ষ্ণ
- ক্ষ্ব = ক + ষ + ব; যেমন: ইক্ষ্বাকু
- ক্ষ্ম = ক + ষ + ম; যেমন: লক্ষ্মী
- ক্ষ্ম্য = ক + ষ + ম + য; যেমন: সৌক্ষ্ম্য
- ক্ষ্য = ক + ষ + য; যেমন: লক্ষ্য
- ক্স = ক + স; যেমন: বাক্স
- খ্য = খ + য; যেমন: সখ্য
- খ্র = খ+ র; যেমন: খ্রিস্টান
- গ্ণ = গ + ণ; যেমন - রুগ্ণ
- গ্ধ = গ + ধ; যেমন: মুগ্ধ
- গ্ধ্য = গ + ধ + য; যেমন: বৈদগ্ধ্য
- গ্ধ্র = গ + ধ + র; যেমন: দোগ্ধ্রী
- গ্ন = গ + ন; যেমন: ভগ্ন
- গ্ন্য = গ + ন + য; যেমন: অগ্ন্যাস্ত্র, অগ্ন্যুৎপাত, অগ্ন্যাশয়
- গ্ব = গ + ব; যেমন: দিগ্বিজয়ী
- গ্ম = গ + ম; যেমন: যুগ্ম
- গ্য = গ + য; যেমন: ভাগ্য
- গ্র = গ + র; যেমন: গ্রাম
- গ্র্য = গ + র + য; যেমন: ঐকাগ্র্য, সামগ্র্য, গ্র্যাজুয়েট
- গ্ল = গ + ল; যেমন: গ্লানি
- ঘ্ন = ঘ + ন; যেমন: কৃতঘ্ন
- ঘ্য = ঘ + য; যেমন: অশ্লাঘ্য
- ঘ্র = ঘ + র; যেমন: ঘ্রাণ
- ঙ্ক = ঙ + ক; যেমন: অঙ্ক
- ঙ্ক্ত = ঙ + ক + ত; যেমন: পঙ্ক্তি
- ঙ্ক্য = ঙ + ক + য; যেমন: অঙ্ক্য
- ঙ্ক্ষ = ঙ + ক + ষ; যেমন: আকাঙ্ক্ষা
- ঙ্খ = ঙ + খ; যেমন: শঙ্খ
- ঙ্গ = ঙ + গ; যেমন: অঙ্গ
- ঙ্গ্য = ঙ + গ + য; যেমন: ব্যঙ্গ্যার্থ, ব্যঙ্গ্যোক্তি
- ঙ্ঘ = ঙ + ঘ; যেমন: সঙ্ঘ
- ঙ্ঘ্য = ঙ + ঘ + য; যেমন: দুর্লঙ্ঘ্য
- ঙ্ঘ্র = ঙ + ঘ + র; যেমন: অঙ্ঘ্রি
- ঙ্ম = ঙ + ম; যেমন: বাঙ্ময়
- চ্চ = চ + চ; যেমন: বাচ্চা
- চ্ছ = চ + ছ; যেমন: ইচ্ছা
- চ্ছ্ব = চ + ছ + ব; যেমন: জলোচ্ছ্বাস
- চ্ছ্র = চ + ছ + র; যেমন: উচ্ছ্রায়
- চ্ঞ = চ + ঞ; যেমন: যাচ্ঞা
- চ্ব = চ + ব; যেমন: চ্বী
- চ্য = চ + য; যেমন: প্রাচ্য
- জ্জ = জ + জ; যেমন: বিপজ্জনক
- জ্জ্ব = জ + জ + ব; যেমন: উজ্জ্বল
- জ্ঝ = জ + ঝ; যেমন: কুজ্ঝটিকা
- জ্ঞ = জ + ঞ; যেমন: জ্ঞান
- জ্ব = জ + ব; যেমন: জ্বর
- জ্য = জ + য; যেমন: রাজ্য
- জ্র = জ + র; যেমন: বজ্র
- ঞ্চ = ঞ + চ; যেমন: অঞ্চল
- ঞ্ছ = ঞ + ছ; যেমন: লাঞ্ছনা
- ঞ্জ = ঞ + জ; যেমন: কুঞ্জ
- ঞ্ঝ = ঞ + ঝ; যেমন: ঝঞ্ঝা
- ট্ট = ট + ট; যেমন: চট্টগ্রাম
- ট্ব = ট + ব; যেমন: খট্বা
- ট্ম = ট + ম; যেমন: কুট্মল
- ট্য = ট + য; যেমন: নাট্য
- ট্র = ট + র; যেমন: ট্রেন (মন্তব্য: এই যুক্তাক্ষরটি মূলত ইংরেজি/বিদেশি কৃতঋণ শব্দে ব্যবহৃত)
- ড্ড = ড + ড; যেমন: আড্ডা
- ড্ব = ড + ব; যেমন: অন্ড্বান
- ড্য = ড + য; যেমন: জাড্য
- ড্র = ড + র; যেমন: ড্রাইভার, ড্রাম (মন্তব্য: এই যুক্তাক্ষরটি মূলত ইংরেজি/বিদেশি কৃতঋণ শব্দে ব্যবহৃত)
- ড়্গ = ড় + গ; যেমন: খড়্গ
- ঢ্য = ঢ + য; যেমন: ধনাঢ্য
- ঢ্র = ঢ + র; যেমন: মেঢ্র (ত্বক) (মন্তব্য: অত্যন্ত বিরল)
- ণ্ট = ণ + ট; যেমন: ঘণ্টা
- ণ্ঠ = ণ + ঠ; যেমন: কণ্ঠ
- ণ্ঠ্য = ণ + ঠ + য; যেমন: কণ্ঠ্য
- ণ্ড = ণ + ড; যেমন: গণ্ডগোল
- ণ্ড্য = ণ + ড + য; যেমন: পাণ্ড্য
- ণ্ড্র = ণ + ড + র; যেমন: পুণ্ড্র
- ণ্ঢ = ণ + ঢ; যেমন: ষণ্ঢ
- ণ্ণ = ণ + ণ; যেমন: বিষণ্ণ
- ণ্ব = ণ + ব; যেমন: স্হাণ্বীশ্বর
- ণ্ম = ণ + ম; যেমন: চিণ্ময়
- ণ্য = ণ + য; যেমন: পূণ্য
- ত্ত = ত + ত; যেমন: উত্তর
- ত্ত্র = ত + ত + র; যেমন: পুত্ত্র (মন্তব্য: যুক্তবর্ণটি সঠিক আকৃতিতে দেখা নাও যেতে পারে। এজন্য (ত + ্ + ত + ্ + র) সমর্থিত ফন্ট প্রয়োজন। যুক্তবর্ণটি বর্তমানে ব্যবহৃত না হলেও ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও তৎকালীন লেখকেরা এই বানানটি ব্যবহার করেছেন।)
- ত্ত্ব = ত + ত + ব; যেমন: সত্ত্ব
- ত্ত্য = ত + ত + য; যেমন: উত্ত্যক্ত
- ত্থ = ত + থ; যেমন: অশ্বত্থ
- ত্ন = ত + ন; যেমন: যত্ন
- ত্ব = ত + ব; যেমন: রাজত্ব
- ত্ম = ত + ম; যেমন: আত্মা
- ত্ম্য = ত + ম + য; যেমন: দৌরাত্ম্য
- ত্য = ত + য; যেমন: সত্য
- ত্র = ত + র যেমন: ত্রিশ, ত্রাণ
- ত্র্য = ত + র + য; যেমন: বৈচিত্র্য
- ৎল = ত + ল; যেমন: কাৎলা
- ৎস = ত + স; যেমন: বৎসর, উৎসব
- থ্ব = থ + ব; যেমন: পৃথ্বী
- থ্য = থ + য; যেমন: পথ্য
- থ্র = থ + র; যেমন: থ্রি (three) (মন্তব্য: এই যুক্তাক্ষরটি মূলত ইংরেজি/বিদেশি কৃতঋণ শব্দে ব্যবহৃত)
- দ্গ = দ + গ; যেমন: উদ্গম
- দ্ঘ = দ + ঘ; যেমন: উদ্ঘাটন
- দ্দ = দ + দ; যেমন: উদ্দেশ্য
- দ্দ্ব = দ + দ + ব; যেমন: তদ্দ্বারা
- দ্ধ = দ + ধ; যেমন: রুদ্ধ
- দ্ব = দ + ব; যেমন: বিদ্বান
- দ্ভ = দ + ভ; যেমন: অদ্ভুত
- দ্ভ্র = দ + ভ + র; যেমন: উদ্ভ্রান্ত
- দ্ম = দ + ম; যেমন: ছদ্ম
- দ্য = দ + য; যেমন: বাদ্য
- দ্র = দ + র; যেমন: রুদ্র
- দ্র্য = দ + র + য; যেমন: দারিদ্র্য
- ধ্ন = ধ + ন; যেমন: অর্থগৃধ্নু
- ধ্ব = ধ + ব; যেমন: ধ্বনি
- ধ্ম = ধ + ম; যেমন: উদরাধ্মান
- ধ্য = ধ + য; যেমন: আরাধ্য
- ধ্র = ধ + র; যেমন: ধ্রুব
- ন্ট = ন + ট; যেমন: প্যান্ট (মন্তব্য: এই যুক্তাক্ষরটি মূলত ইংরেজি/বিদেশি কৃতঋণ শব্দে ব্যবহৃত)
- ন্ট্র = ন + ট + র; যেমন: কন্ট্রোল (মন্তব্য: এই যুক্তাক্ষরটি মূলত ইংরেজি/বিদেশি কৃতঋণ শব্দে ব্যবহৃত)
- ন্ঠ = ন + ঠ; যেমন: লন্ঠন
- ন্ড = ন + ড; যেমন: গন্ডার, পাউন্ড
- ন্ড্র = ন + ড + র; যেমন: হান্ড্রেড
- ন্ত = ন + ত; যেমন: জীবন্ত
- ন্ত্ব = ন + ত + ব; যেমন: সান্ত্বনা
- ন্ত্য = ন + ত + য; যেমন: অন্ত্য
- ন্ত্র = ন + ত + র; যেমন: মন্ত্র
- ন্ত্র্য = ন + ত + র + য; যেমন: স্বাতন্ত্র্য
- ন্থ = ন + থ; যেমন: গ্রন্থ
- ন্থ্র = ন + থ + র; যেমন: অ্যান্থ্রাক্স (মন্তব্য: এই যুক্তাক্ষরটি মূলত ইংরেজি/বিদেশি কৃতঋণ শব্দে ব্যবহৃত)
- ন্দ = ন + দ; যেমন: ছন্দ
- ন্দ্য = ন + দ + য; যেমন: অনিন্দ্য
- ন্দ্ব = ন + দ + ব; যেমন: দ্বন্দ্ব
- ন্দ্র = ন + দ + র; যেমন: কেন্দ্র
- ন্ধ = ন + ধ; যেমন: অন্ধ
- ন্ধ্য = ন + ধ + য; যেমন: বিন্ধ্য
- ন্ধ্র = ন + ধ + র; যেমন: রন্ধ্র
- ন্ন = ন + ন; যেমন: নবান্ন
- ন্ব = ন + ব; যেমন: ধন্বন্তরি
- ন্ম = ন + ম; যেমন: চিন্ময়
- ন্য = ন + য; যেমন: ধন্য
- প্ট = প + ট; যেমন: পাটি-সাপ্টা, ক্যাপ্টেন (মন্তব্য: এই যুক্তাক্ষরটি মূলত ইংরেজি/বিদেশি কৃতঋণ শব্দে ব্যবহৃত)
- প্ত = প + ত; যেমন: সুপ্ত
- প্ন = প + ন; যেমন: স্বপ্ন
- প্প = প + প; যেমন: ধাপ্পা
- প্য = প + য; যেমন: প্রাপ্য
- প্র = প + র; যেমন: ক্ষিপ্র
- প্র্য = প + র + য; যেমন: প্র্যাকটিস (মন্তব্য: এই যুক্তাক্ষরটি মূলত ইংরেজি/বিদেশি কৃতঋণ শব্দে ব্যবহৃত)
- প্ল = প + ল; যেমন:আপ্লুত
- প্স = প + স; যেমন: লিপ্সা
- ফ্র = ফ + র; যেমন: ফ্রক, ফ্রিজ, আফ্রিকা, রেফ্রিজারেটর (মন্তব্য: এই যুক্তাক্ষরটি মূলত ইংরেজি/বিদেশি কৃতঋণ শব্দে ব্যবহৃত)
- ফ্ল = ফ + ল; যেমন: ফ্লেভার (মন্তব্য: এই যুক্তাক্ষরটি মূলত ইংরেজি/বিদেশি কৃতঋণ শব্দে ব্যবহৃত)
- ব্জ = ব + জ; যেমন: ন্যুব্জ
- ব্দ = ব + দ; যেমন: জব্দ
- ব্ধ = ব + ধ; যেমন: লব্ধ
- ব্ব = ব + ব; যেমন: ডাব্বা
- ব্য = ব + য; যেমন: দাতব্য
- ব্র = ব + র; যেমন: ব্রাহ্মণ
- ব্ল = ব + ল; যেমন: ব্লাউজ
- ভ্ব =ভ + ব; যেমন: ভ্বা
- ভ্য = ভ + য; যেমন: সভ্য
- ভ্র = ভ + র; যেমন: শুভ্র
- ম্ন = ম + ন; যেমন: নিম্ন
- ম্প = ম + প; যেমন: কম্প
- ম্প্র = ম + প + র; যেমন: সম্প্রতি
- ম্ফ = ম + ফ; যেমন: লম্ফ
- ম্ব = ম + ব; যেমন: প্রতিবিম্ব
- ম্ব্র = ম + ব + র; যেমন: মেম্ব্রেন (মন্তব্য: এই যুক্তাক্ষরটি মূলত ইংরেজি/বিদেশি কৃতঋণ শব্দে ব্যবহৃত)
- ম্ভ = ম + ভ; যেমন: দম্ভ
- ম্ভ্র = ম + ভ + র; যেমন: সম্ভ্রম
- ম্ম = ম + ম; যেমন: সম্মান
- ম্য = ম + য; যেমন: গ্রাম্য
- ম্র = ম + র; যেমন: নম্র
- ম্ল = ম + ল; যেমন: অম্ল
- য্য = য + য; যেমন: ন্যায্য
- র্ক = র + ক; যেমন - তর্ক
- র্ক্য = র + ক + য; যেমন: অতর্ক্য (তর্ক দিয়ে যার সমাধান হয় না)
- র্গ্য = র + গ + য; যেমন - বর্গ্য (বর্গসম্বন্ধীয়)
- র্ঘ্য = র + ঘ + য; যেমন: দৈর্ঘ্য
- র্চ্য = র + চ + য; যেমন: অর্চ্য (পূজনীয়)
- র্জ্য = র + জ + য; যেমন: বর্জ্য
- র্ণ্য = র + ণ + য; যেমন: বৈবর্ণ্য (বিবর্ণতা)
- র্ত্য = র + ত + য; যেমন: মর্ত্য
- র্থ্য = র + থ + য; যেমন: সামর্থ্য
- র্ব্য = র + ব + য; যেমন: নৈর্ব্যক্তিক
- র্ম্য = র + ম + য; যেমন: নৈষ্কর্ম্য
- র্শ্য = র + শ + য; যেমন: অস্পর্শ্য
- র্ষ্য = র + ষ + য; যেমন: ঔৎকর্ষ্য
- র্হ্য = র + হ + য; যেমন: গর্হ্য
- র্খ = র + খ; যেমন: মূর্খ
- র্গ = র + গ; যেমন: দুর্গ
- র্গ্র = র + গ + র; যেমন: দুর্গ্রহ, নির্গ্রন্হ
- র্ঘ = র + ঘ; যেমন: দীর্ঘ
- র্চ = র + চ; যেমন: অর্চনা
- র্ছ = র + ছ; যেমন: মূর্ছনা
- র্জ = র + জ; যেমন: অর্জন
- র্ঝ = র + ঝ; যেমন: নির্ঝর
- র্ট = র + ট; যেমন: আর্ট, কোর্ট, কম্ফর্টার, শার্ট, কার্টিজ, আর্টিস্ট, পোর্টম্যানটো, সার্টিফিকেট, কনসার্ট, কার্টুন, কোয়ার্টার (মন্তব্য: এই যুক্তাক্ষরটি মূলত ইংরেজি/বিদেশি কৃতঋণ শব্দে ব্যবহৃত)
- র্ড = র + ড; যেমন: অর্ডার, লর্ড, বর্ডার, কার্ড (মন্তব্য: এই যুক্তাক্ষরটি মূলত ইংরেজি/বিদেশি কৃতঋণ শব্দে ব্যবহৃত)
- র্ণ = র + ণ; যেমন: বর্ণ
- র্ত = র + ত; যেমন: ক্ষুধার্ত
- র্ত্র = র + ত + র; যেমন: কর্ত্রী
- র্থ = র + থ; যেমন: অর্থ
- র্দ = র + দ; যেমন: নির্দয়
- র্দ্ব = র + দ + ব; যেমন: নির্দ্বিধা
- র্দ্র = র + দ + র; যেমন: আর্দ্র
- র্ধ = র + ধ; যেমন: গোলার্ধ
- র্ধ্ব = র + ধ + ব; যেমন: ঊর্ধ্ব
- র্ন = র + ন; যেমন: দুর্নাম
- র্প = র + প; যেমন: দর্প
- র্ফ = র + ফ; যেমন: স্কার্ফ (মন্তব্য: মূলত ইংরেজি ও আরবি-ফারসি কৃতঋণ শব্দে ব্যবহৃত)
- র্ভ = র + ভ; যেমন: গর্ভ
- র্ম = র + ম; যেমন: ধর্ম
- র্য = র + য; যেমন: আর্য (মন্তব্য দেখুন)
- র্ল = র + ল; যেমন: দুর্লভ
- র্শ = র + শ; যেমন: স্পর্শ
- র্শ্ব = র+ শ + ব; যেমন: পার্শ্ব
- র্ষ = র + ষ; যেমন: ঘর্ষণ
- র্স = র + স; যেমন: জার্সি, নার্স, পার্সেল, কুর্সি (মন্তব্য: মূলত ইংরেজি ও আরবি-ফারসি কৃতঋণ শব্দে ব্যবহৃত)
- র্হ = র + হ; যেমন: গার্হস্থ্য
- র্ঢ্য = র + ঢ + য; যেমন: দার্ঢ্য (অর্থাৎ দৃঢ়তা)
- ল্ক = ল + ক; যেমন: শুল্ক
- ল্ক্য = ল + ক + য; যেমন: যাজ্ঞবল্ক্য
- ল্গ = ল + গ; যেমন: বল্গা
- ল্ট = ল + ট; যেমন: উল্টো
- ল্ড = ল + ড; যেমন: ফিল্ডিং (মন্তব্য: এই যুক্তাক্ষরটি মূলত ইংরেজি/বিদেশি কৃতঋণ শব্দে ব্যবহৃত)
- ল্প = ল + প; যেমন: বিকল্প
- ল্ফ = ল + ফ; যেমন: গল্ফ (মন্তব্য: এই যুক্তাক্ষরটি মূলত ইংরেজি/বিদেশি কৃতঋণ শব্দে ব্যবহৃত)
- ল্ব = ল + ব; যেমন: বিল্ব, বাল্ব
- ল্ভ = ল + ভ; যেমন: প্রগল্ভ
- ল্ম = ল + ম; যেমন: গুল্ম
- ল্য = ল + য; যেমন: তারল্য
- ল্ল = ল + ল; যেমন: উল্লাস
- শ্চ = শ + চ; যেমন: পুনশ্চ
- শ্ছ = শ + ছ; যেমন: শিরশ্ছেদ
- শ্ন = শ + ন; যেমন: প্রশ্ন
- শ্ব = শ + ব; যেমন: বিশ্ব
- শ্ম = শ + ম; যেমন: জীবাশ্ম
- শ্য = শ + য; যেমন: অবশ্য
- শ্র = শ + র; যেমন: মিশ্র
- শ্ল = শ + ল; যেমন: অশ্লীল
- ষ্ক = ষ + ক; যেমন: শুষ্ক
- ষ্ক্র = ষ + ক + র; যেমন: নিষ্ক্রিয়
- ষ্ট = ষ + ট; যেমন: কষ্ট
- ষ্ট্য = ষ + ট + য; যেমন: বৈশিষ্ট্য
- ষ্ট্র = ষ + ট + র; যেমন: রাষ্ট্র
- ষ্ঠ = ষ + ঠ; যেমন: শ্রেষ্ঠ
- ষ্ঠ্য = ষ + ঠ + য; যেমন: নিষ্ঠ্যূত
- ষ্ণ = ষ + ণ; যেমন: কৃষ্ণ
- ষ্প = ষ + প; যেমন: নিষ্পাপ
- ষ্প্র = ষ + প + র; যেমন: নিষ্প্রয়োজন
- ষ্ফ = ষ + ফ; যেমন: নিষ্ফল
- ষ্ব = ষ + ব; যেমন: মাতৃষ্বসা
- ষ্ম = ষ + ম; যেমন: উষ্ম
- ষ্য = ষ + য; যেমন: শিষ্য
- স্ক = স + ক; যেমন: মনোস্কামনা
- স্ক্র = স + ক্র; যেমন: ইস্ক্রু (মন্তব্য: এই যুক্তাক্ষরটি মূলত ইংরেজি/বিদেশি কৃতঋণ শব্দে ব্যবহৃত)
- স্খ = স + খ; যেমন: স্খলন
- স্ট = স + ট; যেমন: স্টেশন (মন্তব্য: এই যুক্তাক্ষরটি মূলত ইংরেজি/বিদেশি কৃতঋণ শব্দে ব্যবহৃত)
- স্ট্র = স + ট্র; যেমন: স্ট্রাইক (মন্তব্য: এই যুক্তাক্ষরটি মূলত ইংরেজি/বিদেশি কৃতঋণ শব্দে ব্যবহৃত)
- স্ত = স + ত; যেমন: ব্যস্ত
- স্ত্ব = স + ত + ব; যেমন: বহিস্ত্বক
- স্ত্য = স + ত + য; যেমন:অস্ত্যর্থ
- স্ত্র = স + ত + র; যেমন: স্ত্রী
- স্থ = স + থ; যেমন: দুঃস্থ
- স্থ্য = স + থ + য; যেমন: স্বাস্থ্য
- স্ন = স + ন; যেমন: স্নান
- স্প = স + প; যেমন: আস্পর্ধা
- স্প্র = স + প +র; যেমন: স্প্রিং (মন্তব্য: এই যুক্তাক্ষরটি মূলত ইংরেজি/বিদেশি কৃতঋণ শব্দে ব্যবহৃত)
- স্প্ল = স + প + ল; যেমন: স্প্লিন (মন্তব্য: এই যুক্তাক্ষরটি মূলত ইংরেজি/বিদেশি কৃতঋণ শব্দে ব্যবহৃত)
- স্ফ = স + ফ; যেমন: আস্ফালন
- স্ব = স + ব; যেমন: স্বর
- স্ম = স + ম; যেমন: স্মরণ
- স্য = স + য; যেমন: শস্য
- স্র = স + র; যেমন: অজস্র
- স্ল = স + ল; যেমন: স্লোগান
- হ্ণ = হ + ণ; যেমন: অপরাহ্ণ
- হ্ন = হ + ন; যেমন: চিহ্ন
- হ্ব = হ + ব; যেমন: আহ্বান
- হ্ম = হ + ম; যেমন: ব্রাহ্মণ
- হ্য = হ + য; যেমন: বাহ্য
- হ্র = হ + র; যেমন: হ্রদ
- হ্ল = হ + ল; যেমন: আহ্লাদ
র্য-কে যুক্তবর্ণ ধরা হয়েছে, কেননা এটি র ও য-এর সমষ্টি। অন্যদিকে র্যাব, র্যাম, র্যাঁদা, ইত্যাদিতে উপস্থিত র্য-কে যুক্তবর্ণ হিসেবে ধরা হয়নি, কেননা এটি আসলে র্যা-এর অংশ, আর র্যা হল র ব্যঞ্জনধ্বনি এবং অ্যা স্বরধ্বনির মিলিত রূপ।
যতিচিহ্ন
সম্পাদনা- যথাস্থানে সেমি কোলন (;) ব্যবহার করুন। সেমি কোলন-এর পূর্বে অর্ধ-স্পেস দেয়ার রীতি উনিশ শতক থেকে চলে আসছে। তবে ইউনিকোডে অর্ধ-স্পেস দেয়া যায় না। পূর্ণ স্পেস ব্যবহার করা সঠিক।
- কোলন ড্যাশ (:—)। এখনো এটি ইউনিকোডে লেখা যায় না।
- ড্যাশ (—)। কিবোর্ডের সাধারণ অবস্থানে ড্যাশ লেখা যায় না। এটিকে চিহ্ন থেকে নির্বাচন করতে হয়। অভ্র কীবোর্ডের লেআউট সম্পাদনা করে ড্যাশ সংযুক্ত করা যায়।
- হাইফেন (-)। হাইফেন দৈর্ঘ্যে ড্যাশের অর্ধেক পরিমাণ।
পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমির বানান-বিষয়ে সিদ্ধান্ত
সম্পাদনাঅ-তৎসম শব্দের সংজ্ঞা ও নির্দেশিকা
সম্পাদনাপশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি প্রকাশিত আকাদেমি বানান অভিধান গ্রন্থে "বাংলা অ-তৎসম শব্দ"-এর সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, "বাংলা অ-তৎসম শব্দ বলতে, সংস্কৃত তৎসম শব্দের ধ্বনি-পরিবর্তনে জাত অর্ধতৎসম/ভগ্নতৎসম শব্দ, ধারাবাহিক পরিবর্তনে রূপান্তরিত তদ্ভব, অস্ট্রিক বা দ্রাবিড়মূল শব্দ, অজ্ঞাতমূল শব্দ অথবা দেশি অথবা অ-ভারতীয় বিদেশি অথবা ঋণশব্দ ইত্যাদি বিবিধ শব্দশ্রেণিকেই বোঝায়।"[৩] এই জাতীয় শব্দগুলির বানান বিষয়ে আকাদেমির নির্দেশিকাটি নিম্নরূপ:[৩]
এগুলির মধ্যে উত্তরাধিকার-সূত্রে আগত তদ্ভব শব্দের মূল ধ্বনি, স্বর বা ব্যঞ্জন, উভয়ক্ষেত্রেই পরিবর্তন ঘটে গেছে। সুতরাং এই সব শব্দের বানানে মূলের বর্ণরূপের প্রতি বিশ্বস্ত থাকার বা সারূপ্য রক্ষার প্রশ্নটি অধিকাংশ স্থলে নিছক সংস্কার মাত্র। এই জাতীয় শব্দের বানানকে উচ্চারণের সমীপবর্তী বা অনুকূল করাই বানান-সংস্কারের তথা সমতাবিধানের মূল সূত্র হওয়া উচিত। তবে ব্যতিক্রম ঘটলে সেই সেই ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমের স্বতন্ত্র কারণ বা ব্যাখ্যা থাকতে পারে।
হিন্দি ভাষা থেকে আগত বাংলা শব্দগুলি উক্ত প্রকারের ঋণশব্দের অন্তর্গত এবং হিন্দি স্থান ও ব্যক্তিনামগুলিও তাই। সুতরাং এগুলিকে আকাদেমি-প্রদত্ত অতৎসম বানানবিধির অন্তর্গত করা যায়।
পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমির নির্দেশিকা অনুযায়ী, অতৎসম শব্দে সর্বত্রই দীর্ঘ ঈ-কারের পরিবর্তে হ্রস ই-কার (উদাহরণ "হিন্দী" বা "দিল্লী" শব্দের পরিবর্তে "হিন্দি" বা "দিল্লি"),[৪], দীর্ঘ ঊ-কারের পরিবর্তে হ্রস উ-কার (উদাহরণ "কপূর" শব্দের পরিবর্তে "কপুর"),[৫] এবং "ণ" অক্ষরের পরিবর্তে "ন" (উদাহরণ "হরিয়াণা" নামের পরিবর্তে "হরিয়ানা")[৬]। অন্য ভাষা থেকে বাংলা বানানের প্রতিবর্ণীকরণের ক্ষেত্রে "বাংলা-উচ্চারণের কাছাকাছি আনাই বানান-সমতার উদ্দেশ্য"।[৭]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ বাংলা একাডেমি প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম
পরিমার্জিত সংস্করণ ২০১২ - ↑ ক খ বাংলা একাডেমী প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম
সংশোধিত সংস্করণ ২০০০ - ↑ ক খ আকাদেমি বানান উপসমিতি (সম্পাদিত) (২০০৮), "বানান-বিষয়ে সিদ্ধান্ত : অতৎসম শব্দ", আকাদেমি বানান অভিধান, পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি, পৃষ্ঠা ৫৫৩
- ↑ আকাদেমি বানান অভিধান, পৃ. ৫৫৪
- ↑ আকাদেমি বানান অভিধান, পৃ. ৫৫৫
- ↑ আকাদেমি বানান অভিধান, পৃ. ৫৫৮
- ↑ আকাদেমি বানান অভিধান, পৃ. ৫৫৮
গ্রন্থপঞ্জি
সম্পাদনা- বিশ্বভারতীর বাংলা বানানের নিয়ম (১৯২৫; ১৩৩২ বঙ্গাব্দ)
- কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়: বাংলা বানানের নিয়ম (১৯৩৬)
- জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের বানানরীতি (১৯৮৪)
- আনন্দবাজার পত্রিকা: বানানবিধি (১৯৯১)
- বাংলা একাডেমি প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম (১৯৯২, সংশোধিত সংস্করণ ২০০০, পরিমার্জিত সংস্করণ ২০১২ )
- পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমির বানানরীতি (১৯৯৫)
- শিশু সাহিত্য সংসদ ও সাহিত্য সংসদ প্রকাশনা সংস্থার বাংলা বানানবিধি (অনির্ণীত)
আরও দেখুন
সম্পাদনাবহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- সরকারি কাজে ব্যবহারিক বাংলা শব্দ, বাংলাদেশ সরকার
- প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম, বাংলা একাডেমি
- বাংলা ভাষার ব্যাকরণ (৯ম-১০ম শ্রেণি)