ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো সুড়ঙ্গ

পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় অবস্থিত ভারতের প্রথম জলের নিচের মেট্রোরেল সুড়ঙ্গ

ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো সুড়ঙ্গ[১][২] বা পূর্ব-পশ্চিম মেট্রো সুড়ঙ্গ হল ভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ রেল সুড়ঙ্গ পথ, যেটির নির্মাণ কাজ ২০২১ খ্রিস্টাব্দে শেষ হয়েছে। এই সুড়ঙ্গটির একটি অংশ গঙ্গা বা হুগলি নদীর নিচে নির্মিত হয়েছে।[৩] ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত সিইএসসি সুড়ঙ্গ[৪] এর পর এটি হল গঙ্গা বা হুগলি নদীর নীচে অবস্থিত দ্বিতীয় সুড়ঙ্গ। পাশাপাশি, এটি ভারত তথা দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় কোনো জলভাগ বা নদীর নিচে নির্মিত সুড়ঙ্গ, যা মেট্রোরেল চলাচলের জন্য নির্মিত হয়েছে।[৫] এই সুড়ঙ্গটি নির্মাণ হয়েছে কলকাতা মেট্রোর দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ করিডর লাইন ২ বা ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর[৬] রেল চলাচলের জন্য। এই সুড়ঙ্গটি গঙ্গার পূর্ব পাড়ের কলকাতা ও পশ্চিম পাড়ের হাওড়া শহরকে যুক্ত করছে। সুড়ঙ্গটি মোট ১১ কিলোমিটার দীর্ঘ। কলকাতা মহানগর অঞ্চল-এর প্রধান দুটি রেল স্টেশন হাওড়া ও শিয়ালদহ এই মেট্রো সুড়ঙ্গ দ্বারা যুক্ত। ফলে সহজেই যাত্রীরা স্টেশন দুটির মধ্যে চলাচল করতে পারবেন বিনা বাধায়।

ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো সুড়ঙ্গ
ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রো লাইনের মানচিত্রে নীল রং দ্বারা চিহ্নিত লাইনটি হল ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রো সুড়ঙ্গ
সংক্ষিপ্ত বিবরণ
অন্যান্য নামগঙ্গা নদী সুড়ঙ্গ
স্থানকলকাতা, ভারত
অবস্থা২০২১ সালে গঙ্গার নীচে সুড়ঙ্গ নির্মাণ শেষ
শুরুকরুণাময়ী, বিধাননগর, কলকাতা
শেষহাওড়া ময়দান, হাওড়া
ক্রিয়াকলাপ
স্বত্বাধিকারীকলকাতা মেট্রো রেল কর্পোরেশন (কেএমআরসি)
পরিচালককলকাতা মেট্রো
যানবাহনমেট্রো রেল
কারিগরী
দৈর্ঘ্য১১ কিলোমিটার (৬.৮ মা)
০.৫২০ কিলোমিটার (০.৩২৩ মা) (গঙ্গার নিচে)

ইতিহাস সম্পাদনা

ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পের অংশ হিসাবে ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রো সুড়ঙ্গ নির্মাণ করা হয়েছে । কিন্তু ২০০৮ খ্রিস্টাব্দে মেট্রো প্রকল্পের শিলান্যাস ও ২০০৯ খ্রিস্টাব্দে নির্মাণ শুরু হলেও নানা বাধার ফলে সুড়ঙ্গ নির্মাণ শুরু হয় ২০১২ খ্রিস্টাব্দে সুভাষ সরোবরের কাছে।[৭] এটি ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রো টানেল বা সুড়ঙ্গের পূর্ব প্রান্ত। কিন্তু পশ্চিম প্রান্ত অর্থাৎ হাওড়ায় সুড়ঙ্গ নির্মাণ পুরোদমে শুরু হয় আরো চার বছর পর ২০১৬ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাসে। অংশে লাইন পাতা ও সংকেত ব্যবস্থা নির্মাণের কাজ চলছে। হাওড়ার অংশে হাওড়া ময়দান থেকে হাওড়া স্টেশন পর্যন্ত সুড়ঙ্গ খোঁড়া হয়েছে, ২০১৭ খ্রিস্টাব্দের মে মাসের শেষে এই সুড়ঙ্গের মুখ গঙ্গার নিচে যায়।[৮][৯] অবশেষে ২০২১ খ্রিস্টাব্দে নদীর নীচে সুড়ঙ্গ নির্মাণের কাজ সমাপ্ত হয়।

 
হাওড়া ময়দান স্টেশনের নির্মাণ কাজ
 
ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো সুড়ঙ্গের প্রান্তিক স্টেশন হাওড়া ময়দানের অ্যাসেম্বলি পয়েন্ট তৈরি হল শরৎ সদনের সামনে

ইঁদুর যেমন মাটির নিচে গর্ত তৈরি করার জন্যে মাটির ভিতর থেকে মুখে করে নতুন মাটি কেটে টুকরোগুলো তিল তিল করে ঠিক গর্তের মুখে ডাঁই করে, ঠিক একই পদ্ধতিতে গঙ্গার তলা থেকে মাটি কেটে ট্রলিতে করে সেই মাটি অস্থায়ী লাইন দিয়ে একটাই মূল গর্তের মুখ হাওড়া ময়দান দিয়ে বের করা হয়েছে। আর এই পুরো কর্মকাণ্ডতেই ট্রান্সটেলেস্ট্রয়-অ্যাফকন জয়েন্ট ভেঞ্চারের বাহাদুর ইঞ্জিনিয়ারগণ এবং তাদের সুযোগ্য কর্মীগোষ্ঠী বিভিন্ন ধরনের মেশিনারি ব্যবহার করেছেন। হাওড়া ময়দানের মেট্রো ওয়ার্কশপে দিন-রাত এক করে, মানুষজন, গাড়িঘোড়া যাতায়াত যথারীতি বজায় রেখেই ভূতলের যাবতীয় তোলা মাটি পেলোডার দিয়ে লরি বোঝাই করে শহরের আশেপাশে পাচার করা হয়েছে। এর মধ্যে অবশ্য ২০১৭ খ্রিস্টাব্দের শেষে ব্র্যাবোর্ন রোডে যান চলাচল বন্ধ করা হয়েছিল পর পর তিনদিন। কেননা, তখন ব্র্যাবোর্ন রোডের নিচে ভূগর্ভে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজ চলছিল। এছাড়াও মাঝে মধ্যে হাওড়া ময়দানে রাস্তা ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছিল নিবিড় কাজের প্রয়োজনে।

গঙ্গার তলা দিয়ে সুড়ঙ্গ নির্মাণ শেষ হয় ২০২১ খ্রিস্টাব্দে। গঙ্গার নিচে যে দুটি সুড়ঙ্গ তৈরি হয়েছে, তার একটির নাম ‘রচনা’, অন্যটির নাম ‘প্রেরণা’। দুটি সুড়ঙ্গের মধ্যে রচনার কাজ আগে শেষ হয়েছে। এক-একটি সুড়ঙ্গ ৫২০ মিটার লম্বা। গঙ্গার তলদেশের ৩০ মিটার নিচে সুড়ঙ্গ কাটার সময়ে বহু জিনিস উদ্ধার করেছেন কেএমআরসিএল-এর ইঞ্জিনিয়ারেরা। সেগুলির মধ্যে রয়েছে কামানের গোলা, ডুবে যাওয়া জাহাজের খোলের অংশ প্রভৃতি।[১০]

বৈশিষ্ট্য সম্পাদনা

  • দৈর্ঘ্য: প্রায় ১১ কিলোমিটার (৬.৮ মা)
  • পরিধি: বাইরের পরিধি ৬.১০ মিটার এবং ভিতরের পরিধি ৫.৫৫ মিটার।
  • স্টেশন: ৬টি।

গঙ্গার নিচের সুড়ঙ্গ সম্পাদনা

  • গঙ্গার নিচে ৫২০ মিটার (১,৭১০ ফু) দীর্ঘ সুড়ঙ্গ।
  • গঙ্গার গভীরতা ১৩ মিটার মতো। তারও ৩০ মিটার নিচে রয়েছে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর সুড়ঙ্গ।
  • গঙ্গার নিচে থাকা সুড়ঙ্গের বাইরের পরিধি ৬.১০ মিটার এবং ভিতরের পরিধি ৫.৫৫ মিটার।
  • যখন কাজ শুরু হয়, স্থানীয় ও জাতীয় সংবাদ মাধ্যম এই মাইলফলকটিকে ভারতের প্রথম "জলের নীচে" এবং "নদীর নীচে" মেট্রো লাইন হিসাবে ঘোষণা করেছিল, কিন্তু এটি সত্য থেকে অনেক দূরে। যদিও হুগলির প্রস্থ চিত্তাকর্ষক এবং এর নীচে সুড়ঙ্গ তৈরি করা কোনও রসিকতা নয়, সত্যটি হল যে ভারতের চারপাশে অন্যান্য লাইন রয়েছে যা উপরের শিরোনামগুলি দাবি করতে পারে কলকাতার বিদ্যমান লাইন -1 প্যাকে নেতৃত্ব দিচ্ছে:

° কলকাতার লাইন-১: শ্যামবাজার এবং বেলগাছিয়া স্টেশনের মধ্যে সার্কুলার খালের নীচ দিয়ে যায় (৯০ এর দশকের আগে নির্মিত)।

° দিল্লির লাইন-২ (হলুদ): উত্তর দিল্লির নাজফগড় ড্রেন (২০০৭ সালে নির্মিত) এবং দক্ষিণ দিল্লিতে কুশাক ড্রেন (২০০৯ সালে নির্মিত)।

° চেন্নাইয়ের লাইন-1 (নীল): গভর্নমেন্ট এস্টেট এবং সেন্ট্রাল স্টেশনগুলির মধ্যে মধ্য চেন্নাইয়ের কুম নদীর নীচ দিয়ে যায় (2015 সালে নির্মিত)।[৫]

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "জলের নিচে ছুটবে মেট্রো! গঙ্গার তলায় কীভাবে তৈরি হচ্ছে সুড়ঙ্গ--১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দে দেশের প্রথম মেট্রো রেল চালু হয়েছিল কলকাতায়। এবারে আরো এক ইতিহাসের মুখে দাঁড়িয়ে কলকাতা"এবেলা 
  2. "এপ্রিলের তৃতীয় সপ্তাহে নদী ছুঁতে পারে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর সুড়ঙ্গ"এবেলা 
  3. "ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো গঙ্গায় সুড়ঙ্গের কাজ শুরুই হচ্ছেনা তিন মাসের আগে"এবেলা [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  4. Apr 18, TNN /; 2017; Ist, 06:24। "Kolkata Metro: 87 years on, boring re-creates CESC feat | Kolkata News - Times of India"The Times of India (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৯-২২ 
  5. "Kolkata Metro's TBM S639 Crosses Halfway Mark Under Hooghly"The Metro Rail Guy (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৭-০৫-০৫। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০২-০৯ 
  6. "ইস্ট-ওয়েস্ট প্রথম শিয়ালদহ থেকে সেক্টর ৫" 
  7. "ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রায় শেষ সুড়ঙ্গ, তবু সমস্যা"আনন্দবাজার প্রত্রিকা  line feed character in |শিরোনাম= at position 20 (সাহায্য)
  8. "সাততলা বাড়ির সমান নিচে দিয়ে এগোচ্ছে সুড়ঙ্গ, গঙ্গা আর মাত্র ৩০০ মিটার!"আনন্দবাজার প্রত্রিকা 
  9. "ইস্ট-ওয়েস্টের গঙ্গার তলদেশ স্পর্শ করল" 
  10. "গঙ্গার নিচে প্রস্তুত সুড়ঙ্গ"