ইসুসের যুদ্ধ বা ইসোসের যুদ্ধ খ্রিস্টপূর্ব ৩৩৩ অব্দের ৫ই নভেম্বর দক্ষিণ আনাতোলিয়ায় সংঘটিত হয়। এটি আলেকজান্ডারের এশিয়া বিজয় অভিযানের দ্বিতীয় বৃহৎ যুদ্ধটি আলেকজান্ডারের নেতৃত্বে হেলেনিয় লীগ এবং তৃতীয় দারিয়ুসের নেতৃত্বে আকিমিনীয় সাম্রাজ্যের মধ্যে ঘটে। আক্রমণকারী ম্যাসেডোনীয় সেনারা পারস্যকে পরাজিত করে। গ্রানিকাসের যুদ্ধে হেলেনিয় লীগ এশিয়া মাইনরের পারস্যের প্রাদেশিক শাসককে (গ্রীক ভাড়াটে সৈনিক রোডসের মেমনোন এর নেতৃত্বে) সম্পূর্ণরূপে পরাজিত করার পর দারিয়াস ব্যক্তিগতভাবে তার সেনাবাহিনীর সেনাপতিত্ব গ্রহণ করেন। তিনি আরও শক্তিবৃদ্ধি করেন এবং তাদের সরবরাহ কাটতে হেলেনীয় অগ্রগামী দলের পিছনে একটি আকস্মিক যাত্রায় তাঁর সৈন্যদের নেতৃত্ব দেন। এটি আলেকজান্ডারকে প্রত্যাবর্তন করতে বাধ্য করে, পিনারুস নদীর মুখ এবং ইসুস শহরের কাছে যুদ্ধের মঞ্চ স্থাপন করা হয়।

ইসুসের যুদ্ধ
মূল যুদ্ধ: মহান আলেকজান্ডারের যুদ্ধ
তারিখ৫ নভেম্বর, ৩৩৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দ
অবস্থান
ইসুস, আকিমিনীয় সাম্রাজ্য (বর্তমানে তুরস্ক)
ফলাফল মেসিডোনিয়ার চূড়ান্ত জয়
অধিকৃত
এলাকার
পরিবর্তন
আলেকজান্ডার দক্ষিণ এশিয়া মাইনর নিয়ন্ত্রণ করে
বিবাদমান পক্ষ
মেসিডোন
করিন্থ লীগ
আকিমিনীয় সাম্রাজ্য
সেনাধিপতি ও নেতৃত্ব প্রদানকারী
মহান আলেকজান্ডার
পারমেনিয়ন
ক্রাটেরস
হেফায়েস্টিয়ন
টলেমি
পান্টোরদানুস
দ্বিতীয় সিতাল্কিস
মেনেস
বালাক্রুস
তৃতীয় দারিয়ুস
আরসামেস 
রিওমিথ্রেস 
অ্যাতিজয়েস 
বুব্যাসেস 
সাবাকাস 
শক্তি
১৩,০০০ পেলটাস্ট,[১]
২২,০০০ শক্তিশালী পদাতিক,[২]
৫,৮৫০ অশ্বারোহী[২]
মোট: ৪০,৮৫০

৩০,০০০–৮০,০০০ হালকা পদাতিক (ব্যাবিলনীয় বর্শা, আয়নীয় পেলটাস্ট)[৩]
১১,০০০ অশ্বারোহী[২]
১০,০০০ অমর পারসিক
১০,০০০ গ্রীক ভাড়াটে সৈনিক[৪]

মোট: ৫০,০০০–৬০,০০০[৫] (আধুনিক উৎস)
২৫০,০০০–৬০০,০০০ (প্রাচীন উৎস)
হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি
৪৫২ নিহত
৫,০০০ আহত[৬][৭]
~২০,০০০-৪০,০০০ হতাহত[৭]

স্থান সম্পাদনা

 
লুভর জাদুঘরে জ্যান ব্রুঘেল দ্য এল্ডারের আঁকা ইসুসের যুদ্ধের ছবি

এই যুদ্ধটি বর্তমান তুর্কি শহর ইস্কেন্দেরুনের ("আলেকজান্দ্রিয়া" এর তুর্কি উচ্চারণ, আলেকজান্ডার তার বিজয়ের স্মরণে এটি প্রতিষ্ঠিত করেন) নিকটবর্তী প্রাচীন শহর ইসুস এর দক্ষিণে পিনারুস নামক একটি ছোট নদীর দু'পাশে সংঘটিত হয়। এই স্থানে, ইসুস উপসাগর থেকে পার্শ্ববর্তী পর্বতমালার দূরত্ব মাত্র ২.৬ কিমি (২ মাইল), এমন একটি জায়গা যেখানে দারিয়ুস তার অধিক সৈন্য সংখ্যার শ্রেষ্ঠত্বের সুযোগ নিতে পারেননি। পিনারাসের অবস্থান নিয়ে ৮০ বছর ধরে বিতর্ক চলেছে। পূর্বে ঐতিহাসিকগণ এটি ডেলি টেচাই নদী বলে বিশ্বাস করতেন, তবে ঐতিহাসিক এন.জি.এল. হ্যামন্ড এবং এ. এম. ডিভাইন দাবি করেন যে পিনারাস আসলে পায়াস নদী, পরবর্তীতে নদীর গতিপথের তার নিজস্ব অনুসন্ধান করেন, যার ফলে তিনি মনে করেন প্রাচীনকারের পর থেকে এর তাত্পর্যপূর্ণ পরিবর্তন ঘটেনি। তাদের প্রমাণসমূহের ভিত্তি হলো যুদ্ধের পরে দিওদোরাস প্রদত্ত যুদ্ধ এবং দূরত্বের উপস্থাপনে উভয় পক্ষের সেনাবাহিনী দ্বারা যুদ্ধক্ষেত্র এবং দূরত্বের পরিমাপ সম্পর্কে ক্যালিস্থেনাসের বিবরণ।

পটভূমি সম্পাদনা

 
যুদ্ধের ময়দানে গতিবিধি। লাল দাগ পারস্য বাহিনীকে নির্দেশ করে এবং নীল দাগ ম্যাসেডোনীয় বাহিনীকে নির্দেশ করে।

আলেকজান্ডার খ্রিস্টপূর্ব ৩৩৪ অব্দে এশিয়া অভিযানে বের হন এবং গ্রানিকাসের যুদ্ধে স্থানীয় পারস্যের প্রাদেশিক শাসককে পরাজিত করেন। এরপর তিনি সমস্ত উপকূলীয় জনবসতি দখল করার উদ্দেশ্য সমস্ত এশিয়া মাইনর দখল করার জন্য অগ্রসর হন, যাতে উন্নততর পারস্য বহরের শক্তিকে অকার্যকর করা যায়। তিনি খ্রিস্টপূর্ব ৩৩৪ অব্দে মিলেটুসের মতো বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বসতি দখল করেন, এবং একই বছরের ডিসেম্বরের শেষদিকে শুরু করে চার মাস ধরে হালিকারনাসুস অবরোধ করে রাখেন। আলেকজান্ডার তারসুসে অবস্থানকালে জানতে পারেন দারিয়ুস ব্যাবিলনে এক বিশাল সেনাবাহিনী সংহত করেছেন। দারিয়ুস যদি ইসুস উপসাগরে পৌঁছান তবে তিনি তখনও ভূমধ্যসাগরে অবস্থানরত ফার্নাবাজুসের অধীনে থাকো পারস্য নৌবহরের সহায়তা ব্যবহার করতে পারতেন, এভাবে তার সরবরাহ সহজতর হতো এবং শত্রুর পিছনে সৈন্য অবতরণ করা সম্ভব হতো। আলেকজান্ডার তারসুসে তার প্রধান সেনাবাহিনী মোতায়েন করেন তবে ইসুসের আশেপাশের উপকূল দখল করার জন্য পারমেনিয়নকে প্রেরণ করেন। নভেম্বর মাসে আলেকজান্ডার সংবাদ পান যে মহান পারস্য সেনাবাহিনী সিরিয়ায় সোচোই নামক শহরে অগ্রসর হয়েছে। আলেকজান্ডার তার বিক্ষিপ্ত সেনাবাহিনীকে একত্রিত করে জোনা গিরিপথ দিয়ে ইসুস থেকে দক্ষিণে অগ্রসর হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

দারিয়ুস জানতেন যে পারমেনিয়ন জোনা গিরিপথ এবং একইভাবে উত্তরের পথ অগ্রসর হওয়ার জন্য বেছে নিয়েছে। পারস্য বাহিনী কোন ধরনের বাধা ছাড়াই ইসুস দখল করে এবং আলেকজান্ডার যে সমস্ত অসুস্থ ও আহতদের পিছনে ফেলে গিয়েছিলেন তাদের হাত কেটে ফেলে। দরিয়ুস বুঝতে পারেন যে তিনি তার সেনাবাহিনী হেলেনিয় লীগের পিছনে স্থাপন করেছেন এবং তাদের সরবরাহের পথ কেটে দিয়েছেন। এরপর তিনি দক্ষিণে অগ্রসর হন এবং তার অনুসন্ধানকারীদল আলেকজান্ডারের উত্তর দিকে যাত্রা করার বিষয় চিহ্নিত করার আগে পিনারাস নদীর চেয়ে অধিকতর দূরে যেতে পারেননি। দারিয়ুসকে এই সংকীর্ণ উপকূলীয় সমভূমিতে শিবির স্থাপন করতে হয়।

অভিসন্ধি সম্পাদনা

 
পারস্য এবং ম্যাসেডোনিয় বাহিনীর প্রাথমিক অবস্থান

আলেকজান্ডার এবং দারিয়ুসের ইসুসে অগ্রবর্তী হওয়ার অভিসন্ধি নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে। কার্টিয়াসের উপর ভিত্তি করে একটি আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি হ'ল দরিয়ুস আলেকজান্ডারের সহায়ক অঞ্চলগুলিতে শিবির স্থানান্তরিত করতে বাধ্য হন কারণ আলেকজান্ডার তার যুদ্ধ পরিষদ এবং পারমেনিয়নের সুপারিশের কারণে আত্মরক্ষামূলকভাবে লড়ায়ে অবতীর্ণ হন। দারিয়ুসের বিশাল সেনাবাহিনী শীতকালে যুদ্ধক্ষেত্রে সহায়তা করতে পারেনি এবং ইতিমধ্যে ফিনিশিয়ায় তার শহর আলেকজান্ডারের উপনীত হওয়ার শঙ্কায় ছিল। দারিয়ুস তার বিশাল সেনাবাহিনীকে আলেকজান্ডারের ছোট বাহিনীর বিরুদ্ধে বিশেষ সুবিধা লাভের জন্য একটি ছোট যুদ্ধক্ষেত্রের দিকে যেতে বাধ্য করেন।

আলেকজান্ডার দারিয়ুসের আমানুস পর্বতশ্রেণীর কাছাকাছি দক্ষিণে আসার অপেক্ষায় ছিলেন, কারণ দারিয়ুস গিরিপথটি ব্যবহার করত, বেলেন গিরিপথ সোচির কাছাকাছি ছিল এবং এ পথ দিয়ে আলেকজান্ডারের নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে দ্রুত প্রবেশের সুযোগ ছিল। আলেকজান্ডার মেরিয়ানডাসের বেলেন গিরিপথের পশ্চিম দিকে ১৫ কিলোমিটার (৯.৩ মাইল) দূরে দারিয়ুসের উপর একটি ফাঁদে ফেলার জন্য অপেক্ষা করছিলেন যখন দারিয়ুস বেলেন গিরিপথ দিয়ে অথবা জোনার স্তম্ভ পেরিয়ে উত্তর দিকে যাবে তখন সেখানে সংকীর্ণ সংযোগস্থলের মধ্যে দারিয়ুসের সেনাবাহিনীকে বিশৃঙ্খল এবং বিচ্ছিন্ন করা হবে। পরিবর্তে দারিয়ুস সোচি এবং পাহাড়ের কাছাকাছি উত্তর দিকে চলে গিয়েছিলেন এবং আলেকজান্ডারের অবস্থানের পিছনে এবং তার সরবরাহ ও যোগাযোগের রেখার উপর উদয় হন। এইভাবে আলেকজান্ডারকে দারিয়ুসের দিকে যাত্রা করতে বাধ্য করা হয়, যিনি তাকে এক বিশাল রণকৌশলে ধরেছিলেন। আলেকজান্ডার তার দিকে যাত্রা করতে বাধ্য হয়েছিল বলে এই ধারণাটি দেয় যে দারিয়ুস আত্মরক্ষামূলক ভূমিকায় ছিলেন।

যোদ্ধা সম্পাদনা

পারস্য সেনাবাহিনী সম্পাদনা

কিছু প্রাচীন সূত্র (আরিয়ান এবং প্লুতার্ক), যারা পূর্বতন গ্রীক উৎসগুলির উপর ভিত্তি করে তাদের হিসাবের ভিত্তি ধরেছিল, তাদের অনুমান হচ্ছে মোট ৬০০,০০০[২] পারস্য সৈন্য ছিল, যেখানে ডিওডোরাস এবং জাস্টিন অনুমান করেছিলেন ৪০০,০০০ সৈন্য ছিল এবং কুর্টিয়াস রুফাসের অনুমান ২৫০,০০০ সৈন্য ছিল।

আধুনিক ঐতিহাসিকরা আরিয়ানের ৬০০,০০০ সৈন্যের হিসাবকে খুবই অসম্ভব বলে মনে করেন। তাদের যুক্তি হচ্ছে যুদ্ধে এক লক্ষেরও বেশি সৈন্যকে যুদ্ধক্ষেত্রে রসদ সরবরাহ করা তখনকার সময়ে অত্যন্ত কঠিন ছিল। হান্স ডেলব্রুক হিসাব দেন যে সৈন্য সংখ্যা ২৫,০০০ এর কম ছিল যদিও এঙ্গেলস এবং গ্রিন সহ অধিকাংশের মতে ইসুসে দারিয়ুসের সেনাবাহিনীর মোট আকার ১,০০,০০০ এর চেয়ে বড় হবে না,[৩] যার মধ্যে ১১,০০০ অশ্বারোহী, ১০,০০০ অমর পারসিক সৈন্য[২] এবং ১০,০০০ গ্রীক ভাড়াটে সৈনিক রয়েছে।[৪] ওয়ারি অনুমান করেন মোট ১০৮,০০০ সৈন্য ছিল।

ম্যাসেডোনীয় সেনাবাহিনী সম্পাদনা

আলেকজান্ডারের নেতৃত্বে হেলেনিয় সেনাবাহিনীর আকার তাদের অন্যান্য মিত্রদের সহ ৪০,০০০ সৈন্যের বেশি হবে না। আলেকজান্ডারের সেনাবাহিনীতে প্রায় ২২,০০০ ফ্যালাঙ্গাইট এবং হপলাইট, ১৩,০০০ পেলটাস্ট এবং ৫,৮৫০ অশ্বারোহী থাকতে পারে।[২]

যুদ্ধ সম্পাদনা

গ্রীকরা জোনের স্তম্ভের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয়। আলেকজান্ডার তার সঙ্গী অশ্বারোহীবাহিনীকে ডান দিকের প্রান্তে নিয়ে যান এবং তিনি থেসালিয় মিত্র অশ্বারোহী বাহিনীকে পারমানিয়নের নেতৃত্বে ব্যূহর বাম দিকে স্থাপন করেন।

 
ইসুসের যুদ্ধক্ষেত্র

দারিয়ুস তার ডানদিকে উপকূলের পাশে কেন্দ্রীভূত হয়ে তাঁর বিরাট অশ্বারোহী বাহিনী নিয়ে তার প্রতিরক্ষারেখা তৈরি করেন, তারপরে গ্রীক ভাড়াটে সৈন্য ব্যূহ তাদের অনুসরণ করে (ঐতিহাসিক এ. এম. ডিভাইন এদেরকে আলেকজান্ডারের গ্রীক ব্যূহর ১২,০০০ সৈন্যের শক্তির সাথে তুলনা করেছেন)। পরে গ্রীক ব্যূহ দারিয়ুস তাঁর পারসিক পদাতিক বাহিনী কার্দাকেসকে নদীর তীরে এবং পর্বতের পাদদেশে ছড়িয়ে দেন, যেখানে তারা অন্য পাড়ে আচ্ছাদিত করে এবং আলেকজান্ডারের ডান দিকের ব্যূহকে ভীতিপ্রদর্শন করে (গঠনটি গামা, Γ এর অনুরূপ)। অ্যারিয়ান এই সেনাবাহিনীকে ২০,০০০ এর স্ফীত আকার দেন। দারিয়ুস তাঁর সেরা পদাতিক, গ্রীক ভাড়াটে এবং তাঁর রাজকীয় অশ্বারোহী বাহিনী নিয়ে নিজে কেন্দ্রে অবস্থান করেন। পি. স্ট্র্যাটিকিসের মতো কিছু ঐতিহাসিকের মতে তিনি গ্র্যানিকাসের যুদ্ধে হেলেনিয় যুদ্ধ কৌশলের প্রতিরূপ দেওয়ার চেষ্টা করেন।

 
আলেকজান্ডারের চূড়ান্ত আক্রমণ

পারসিক অশ্বারোহী বাহিনী প্রথমে পারমেনিয়ন এবং মিত্রবাহিনীর অশ্বারোহী বাহিনীকে আক্রমণ করে নদীর তীর পেরিয়ে যুদ্ধ শুরু করে। আলেকজান্ডারের পক্ষে দারিয়ুসের বিরুদ্ধে পূর্বনির্ধারিত অশ্বারোহী বাহিনী আক্রমণ করতে পারমেনিয়ন অধিক সংখ্যক পারসিক বাহিনীর বিপরীতে বামপার্শ্বকে দীর্ঘ সময় ধরে রেখেছিল।[৮] বাম দিকের গ্রীক পদাতিক বাহিনীকে নেতৃত্ব দেন জেনারেল ক্রেটেরাস, তাকে তার পদ থেকে পদোন্নতি দিয়ে গ্রানিকাসে পেজেতাইরোই পদাতিক বাহিনীর একক ব্রিগেডের নেতৃত্ব দেওয়া হয়েছিল।[৯]

 
ইসুসের যুদ্ধে তৃতীয় দারিয়ুসকে রক্ষা করতে গিয়ে মিশরের আকিমিনীয় প্রাদেশিক শাসক সাবেকেস মারা যান।

যুদ্ধের শুরুতে ম্যাসেডোনিয়ানদের অবস্থা ভাল ছিল না। তাদের কেন্দ্রের ব্যূহ নদীর তীর পেরিয়ে এবং একটি শক্তিশালী তীর পর্যন্ত এসেছিল, অন্যদিকে তাদের জন্য অপেক্ষামান গ্রীক ভাড়াটে সৈন্যদের নিকট মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। অ্যারিয়ান উল্লেখ করেছেন যে এখানে একশো বিশ জন ম্যাসেডোনিয় "নোট" (সম্ভবত অফিসার বুঝাতে) কে হত্যা করা হয়, এবং ম্যাসেডোনিয়রা নদীর তীরে পিছু হটতে বাধ্য হয়। বাম প্রান্তে থেসালিয়রা অসংখ্য পারসিক শক্তিশালী ঘোড়ার বিরুদ্ধে লড়াই করে, আক্রমণ প্রতিহত করে এবং সময় বাচাতে আবার পশ্চাদপসরণ করে।

এরপর আলেকজান্ডারের নেতৃত্বে হাইপাস্পিস্টরা পায়ে হেঁটে কার্দেসেসের উপর আক্রমণ চালায় এবং পারস্য লাইনের মধ্য দিয়ে ফাটল ধরাতে সক্ষম হন। এগ্রিয়ানিয়রাও আলেকজান্ডারের ঠিক ডানদিকে কম্প্যানিয়নদের প্রান্তকে সুরক্ষিত করে পারসিক হালকা পদাতিকের এক বিশাল বাহিনীকে পিছু হটিয়ে দেয়। এরপরে আলেকজান্ডার তার কম্প্যানিয়নদের সম্মুখভাগে একটি ঘোড়ায় আরোহণ করেন এবং দারিয়ুস এবং তাঁর দেহরক্ষীদের বিরুদ্ধে সরাসরি আক্রমণে নেতৃত্ব দেন, ফলে তারা যুদ্ধের ময়দান থেকে পালিয়ে যায়। এরপর আলেকজান্ডার তার বাম দিকের প্রান্তে নজর দেন এবং সমস্যাটি দেখতে পান, দারিয়ুসকে পালিয়ে যেতে দিয়ে তিনি গ্রীক ভাড়াটে সেনাদের পিছন দিক থেকে চুরমার করে দেন। গ্রীক ভাড়াটেরা ভেঙে পড়ে এবং যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পিছিয়ে যেতে শুরু করে। পারসিকরা দেখে যে তাদের মহান রাজা চলে গিয়েছেন এবং যুদ্ধে তারা হেরে যাচ্ছে এবং তারা তাদের অবস্থান ত্যাগ করে সম্পূর্ণরূপে পালিয়ে যায়। হেলেনিয় অশ্বারোহী বাহিনী যতক্ষণ আলো ছিল ততক্ষণ পালিয়ে যাওয়া পারসিক বাহিনীকে তাড়া করে। বেশিরভাগ প্রাচীন যুদ্ধের মতোই যুদ্ধের পরে ব্যাপক হত্যালীলার ঘটনা ঘটে, অনুসরণকারী গ্রীকরা তাদের জনাকীর্ণ, বিশৃঙ্খল শত্রুদের হত্যা করে। অ্যারিয়ান টলেমিকে উল্লেখ করে বলেন যে দারিয়ুসকে অনুসরণ করার সময় আলেকজান্ডার এবং তার দেহরক্ষীরা একটি গিরিখাতের উপরে আসেন যা তারা সহজেই মৃত পারসিকদের স্তূপীকৃত দেহের উপর দিয়ে পেরিয়ে যায়। আলেকজান্ডারের পক্ষে এটি ছিল এক চূড়ান্ত জয়।

ফলাফল সম্পাদনা

 
আলেকজান্ডারের সামনে দারিয়ুসের পরিবার, জাস্টাস সাস্টারম্যানস কর্তৃক চিত্রিত এবং বিবিলিওটেকা মিউজু ভিক্টর বালাগুয়ারে প্রদর্শিত

ইসুসের যুদ্ধ ছিল একটি চূড়ান্ত হেলেনিয় বিজয় এবং এটি পারস্য শক্তির শেষ হওয়ার সূচনা করেছিল। এই প্রথম পারসিক সেনাবাহিনী রাজার (এ সময় তৃতীয় দারিয়ুস রাজা ছিলেন) উপস্থিতিতে পরাজিত হয়েছিল। যুদ্ধের পর হেলেনিয়রা দারিয়ুসের স্ত্রী প্রথম স্টেটিরা, তাঁর কন্যা দ্বিতীয় স্টেটিরা এবং ড্রাইপেটিস এবং তাঁর মা সিসিগাম্বিসকে গ্রেপ্তার করে, দারিয়ুস এদের সবাইকে নিয়ে তার অভিযানে এসেছিলেন। আলেকজান্ডার পরে দ্বিতীয় স্টেটিরাকে বিয়ে করেছিলেন, তিন বন্দী মহিলাদের সাথে অত্যন্ত শ্রদ্ধার সাথে আচরণ করেন।

পরবর্তীকালে স্পার্টান রাজা তৃতীয় অ্যাগিস গ্রীক ভাড়াটে সৈন্যদের মধ্যে বেঁচে থাকা লোকদের নিয়োগ করেছিলেন যিনি ইসুস যুদ্ধে আট হাজার অভিজ্ঞ সৈন্যদের সমন্বয়ে পারস্য সেনাবাহিনীতে কাজ করেছিলেন এবং ম্যাসেডোনিয়দের বিরুদ্ধে তাঁর যুদ্ধে তাদের ব্যবহার করেন। খ্রিস্টপূর্ব ৩৩১ অব্দের গ্রীষ্মে অ্যাগিস পেলোপনিজ এবং করিন্থের গ্যারিসন কমান্ডার ম্যাসেডোনিয়ার জেনারেল করাগাসকে পরাজিত করেন, তবে শেষ পর্যন্ত মেগালোপোলিসের যুদ্ধে তিনি পরাজিত হন।

যুদ্ধের চিত্র সম্পাদনা

 
অ্যাল্টডর্ফের এর চিত্রকর্ম ইসুসে আলেকজান্ডারের যুদ্ধ
  • জার্মান রেনেসাঁর চিত্রশিল্পী এবং প্রিন্ট মেকার অ্যালব্রেক্ট অ্যাল্টডর্ফের (আনু. ১৪৮০-১৫৩৮) তাঁর ১৫২৯ সালে আঁকা ইসুসে আলেকজান্ডারের যুদ্ধ চিত্রে যুদ্ধটিকে শৈল্পিকভাবে চিত্রিত করেছেন।.
  • জ্যান ব্রুঘেল দ্য এল্ডারের (১৫৬৮–১৬২৫) আঁকা ইসুসের যুদ্ধ (আনু. ১৫৯৯–১৬০০) লুভর জাদুঘরে ঝোলান।
  • মার্কিন বিমূর্ত অভিব্যক্তিবাদী চিত্রশিল্পী সাই টোম্বলি ১৯৬৮ সালে তার আঁকা যুদ্ধের সংক্ষিপ্তসার রেখাচিত্রে যুদ্ধটি চিত্রিত করেছেন।[১০]
  • ২০০৪ সালে অলিভার স্টোন পরিচালিত চলচ্চিত্র আলেকজান্ডার এ গ্রানিকাস, ইসুস এবং গুগামেলা যুদ্ধের উপাদানগুলিকে একত্রিত করে গগামেলার যুদ্ধ হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়।
  • সমকালীন চারুকলা শিল্পী রোসি ডি’প্রভিডেন্স রোড আইল্যান্ডের প্রোভিডেন্সের ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রীক ত্ত ল্যাটিন ভাষার রচনা বিভাগের জন্য ইসুসের যুদ্ধের একটি তৈল চিত্র তৈরি করেছেন।[১১]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Warry (1998) estimates Alexander's army to be 31,000 in total.[পৃষ্ঠা নম্বর প্রয়োজন]
  2. Moerbeek (1997).[পৃষ্ঠা নম্বর প্রয়োজন]
  3. "pothos.org - Major Battles"। ১৬ অক্টোবর ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ আগস্ট ২০১৬ 
  4. Welman.
  5. Clark, Jessica H.; Turner, Brian (২০১৭)। Brill’s Companion to Military Defeat in Ancient Mediterranean Society (ইংরেজি ভাষায়)। BRILL। পৃষ্ঠা 78। আইএসবিএন 9789004355774। সংগ্রহের তারিখ ৩০ আগস্ট ২০১৯ 
  6. Curtius Rufus also tells that, except for about 4,500 wounded, 150 Macedonians were killed in action, and 302 were missing. This means that the army had lost about one tenth of its strength.
  7. Barry Potter (সেপ্টেম্বর ৩০, ২০১৮)। "Battle of Gaugamela: Alexander Versus Darius"HistoryNet। সংগ্রহের তারিখ আগস্ট ১৮, ২০১৯ 
  8. Siculus, Diodorus। Bibliotheca Historica। পৃষ্ঠা 17.33–34। 
  9. Heckel, W (১৯৯৩)। The Marshalls of Alexander's Empire। London। পৃষ্ঠা 109। 
  10. "Virginia Museum of Fine Arts - Richmond, Virginia"। ২০১৩-০৩-১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ আগস্ট ২০১৬ 
  11. Battle of Issus View the 275 cm × 120 cm (9 feet by 4 feet) painting ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত জানুয়ারি ১৬, ২০০৮ তারিখে

সূত্র সম্পাদনা

প্রাচীন সম্পাদনা

আধুনিক সম্পাদনা

  • হ্যান্স ডেলব্রুক (১৯২০)। যুদ্ধের শিল্পের ইতিহাস। নেব্রাস্কা বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনি। পুনর্মুদ্রণ সংস্করণ, ১৯৯০। অনুবাদ করেছেন জে. ওয়াল্টার। ৪ খণ্ড।
  • ডব্লিও. ডোনাল্ড এঙ্গেলস (১৯৭৮)। আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট অ্যান্ড লজিস্টিকস অফ ম্যাসেডোনিয়ান আর্মি। বার্কলে/লস অ্যাঞ্জেলেস/লন্ডন।
  • ফুলার, জন এফ. সি. (১৯৬০)। দ্য জেনারেলশিফ অব আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট। নিউ জার্সি: দে ক্যাপো প্রেস
  • পিটার গ্রিন (১৯৭৪)। আলেকজান্ডার অফব ম্যাসিডোন: একটি ঐতিহাসিক জীবনী
  • মোয়ারবিক, মার্তিজন (১৯৯৭)। ইসুসের যুদ্ধ, ৩৩৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দ। ইউনিভার্সিটেইট টোয়েন্টে।
  • গাই রজারস (২০০৪) আলেকজান্ডার: দ্য অ্যাম্বিগুইটি অব গ্রেটনেস। নিউ ইয়র্ক: রেন্ডম হাউস
  • জে. ওয়ারি (১৯৯৮), ওয়ারফেয়ার ইন দ্য ক্লাসিকাল ওয়ার্ল্ডআইএসবিএন ১-৮৪০৬৫-০০৪-৪.
  • নিক ওয়েলম্যান। Army. Fontys University.

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা