ইসহাক ভাট্টি

ইতিহাসবিদ

মুহম্মদ ইসহাক ভাট্টি ( উর্দু : محمد اسحاق بھٹی ; মুহাম্মদ ইসহাক ভাট্টি; ১৫ মার্চ ১৯২৫ - ২২ ডিসেম্বর ২০১৫) ছিলেন পাকিস্তানি ইসলামিক পণ্ডিত, সাংবাদিক, ইতিহাসবিদ এবং ইসলামিক পণ্ডিতদের জীবনীকার। তিনি ভারতীয় উপমহাদেশের ইসলামী পন্ডিতদের মধ্যে একজন নেতৃস্থানীয় লেখক ছিলেন ।[১]

মুয়ারররিখে আহলে হাদিস

মুহাম্মাদ ইসহাক ভাট্টি
ব্যক্তিগত তথ্য
জন্ম১৫ মার্চ , ১৯২৫
মৃত্যু২২ ডিসেম্বর,২০১৫
ধর্মইসলাম
জাতীয়তাপাকিস্তানী
পিতামাতা
  • আব্দুল মাজিদ (পিতা)
ব্যবহারশাস্ত্রআহলে হাদিস
ধর্মীয় মতবিশ্বাসআছারি
উল্লেখযোগ্য কাজফুকাহায়ে হিন্দ

জন্ম ও শৈশব সম্পাদনা

১৯২৫ সালের ১৫ই মার্চ পূর্ব পাঞ্জাবের পাতিয়ালা রাজ্যের নানার বাড়ীতে ইসহাক ভাট্টির জন্ম। বেড়ে উঠেন দাদার বাড়ী ফরিদকোট জেলার কোটকাপুরায়।[২][৩]

রচনাবলি সম্পাদনা

তিনি চল্লিশেরও বেশি বই লিখেছেন।[৪]যেমনঃ

*আল-ফিহরস্ত :

এই গ্রন্থটি মুহাম্মাদ বিন ইসহাক বিন নাদীম ওয়ারাক বাগদাদীর রচনা, যিনি ৩৯১ হিজরীর দিকে মৃত্যুবরণ করেন। এই গ্রন্থে লেখক তাঁর জীবন অর্থাৎ ৪র্থ হিজরী শতাব্দীর শেষ পর্যন্ত সকল জ্ঞান-বিজ্ঞান ও শিল্প এবং বিভিন্ন গ্রন্থকারের জীবনী আলোচনা করেছেন। এতদ্বিষয়ে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও প্রাচীন গ্রন্থ। এটিকে হাযার হাযার বছর পূর্বের গ্রন্থ ও গ্রন্থকার, মাযহাব ও মাসলাক, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও শিল্পের 'বিশ্বকোষ' বলা যায় ।ভাট্টি সাহেব এটির উর্দু অনুবাদ করেছি এবং প্রয়োজনীয় স্থানসমূহে হাশিয়া বা পাদটীকা লিখেছি। এটিই এই গ্রন্থের প্রথম উর্দু অনুবাদ। যেটি নির্ঘণ্ট, ভূমিকা ও সূচীপত্রসহ সাড়ে নয়শ পৃষ্ঠাব্যাপী। ভাট্টি সাহেবের অনুবাদের পরে এর ফার্সী ও ইংরেজী অনুবাদ প্রকাশিত হয়।

*বারে ছাগীর মেঁ ইলমে ফিক্বহ:

এই গ্রন্থে ঐ ১১টি পুস্তকের পরিচিতি প্রদান করা হয়েছে, ফিক্বহী মাসআলা-মাসায়েল সম্পর্কিত যেসব গ্রন্থ শতশত বছর পূর্বে ভারতীয় আলেমগণ রচনা করেছিলেন। তন্মধ্যে ২টি গ্রন্থ প্রকাশিত এবং ৯টি অপ্রকাশিত। এর মধ্যে কিছু আরবীতে ও কিছু ফার্সীতে রচিত এবং ইবাদত ও মু'আমালাত সম্পর্কিত মাসআলা-মাসায়েল সংবলিত। প্রত্যেকটি গ্রন্থ কয়েকশ পৃষ্ঠাব্যাপী। শত শত বছর পূর্বের মুসলমান বাদশাহদের যুগে ভারতে কোন ধরনের মাসায়েল প্রচলিত ছিল এবং সেগুলো দ্বারা কীভাবে কর্তব্য পালন করা হত তা বর্ণনা করা হয়েছে ।

* ফুকাহায়ে হিন্দ:

এই গ্রন্থটি ১০ খণ্ডে বিভক্ত। এতে ১ম হিজরী থেকে হিজরী এয়োদশ শতাব্দী পর্যন্ত প্রায় আড়াই হাযার আলেম ও ফকীহ-এর জীবনী লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। এদের মধ্যে যারা যে তাদরীসী ও তাছনীফী খিদমত আঞ্জাম দিয়েছেন, তার প্রাপ্ত বিবরণ বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। প্রত্যেকটি খণ্ডে ভূমিকা লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। যেখানে ঐ শতাব্দীর ভারতীয় বাদশাহ ও শাসকদের সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে এবং বর্ণনা করা হয়েছে যে, তিনি তাঁর যুগের আলেম ও ফকীহগণের সাথে কেমন সম্পর্ক রাখতেন এবং তাঁদের সাথে আলেমদের কেমন যোগাযোগ ছিল।

* বারে ছাগীর মেঁ ইসলাম কে আওয়ালীন নুকুশ: সোয়া দু'শ (২২৫) পৃষ্ঠার এই গ্রন্থে বর্ণনা করা হয়েছে যে, উপমহাদেশের বাসিন্দারা হিজরী প্রথম শতকের গোড়ার দিকেই ইসলাম ও তাঁর মনোজ্ঞ সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হয়ে গিয়েছিল। বর্তমান ভৌগলিক হিসাবে মুম্বাইয়ের নিকটবর্তী থানার বন্দর রাস্তায় ইসলামের আলো প্রস্ফুটিত হতে শুরু করেছিল। বিভিন্ন সময়ে এখানে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ২৫ জন ছাহাবী, ৪২ জন উচ্চমর্যাদাসম্পন্ন তাবেঈ এবং ১৮ জন তাবে তাবেঈ আগমন করেন।

*বারে ছাগীর মেঁ আহলেহাদীছ কী আমাদ:

স্বীয় বিষয়বস্তুর দিক থেকে এটি একটি ব্যতিক্রমধর্মী গ্রন্থ। যেটি সাড়ে তিনশ (৩৫০) পৃষ্ঠা সংবলিত।

*বারে ছাগীর কে আহলেহাদীছ খুদ্দামে কুরআন:

সাতশ (৭০০) পৃষ্ঠার এই গ্রন্থে উপমহাদেশের ঐ ১৮৫ জন আহলেহাদীছ আলেম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে যারা আরবী, ফার্সী, উর্দু, ইংরেজী, হিন্দী, সিন্ধী, বাংলা, বালুচী, পশতু, পাঞ্জাবী, সারায়েকী, মুলতানী বা অন্য কোন ভাষায় (গদ্য বা পদ্যাকারে) কুরআন মাজীদের অনুবাদ করেছেন বা তাফসীর লিখেছেন বা তার বিস্তারিত বা সংক্ষিপ্ত হাশিয়া লিপিবদ্ধ করেছেন। প্রত্যেক অনুবাদক, মুফাসসির ও টীকাকারের জীবনী লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। এটিও এই অধমের অগ্রগণ্য কৃতিত্বের শামিল। এর পূর্বে এ জাতীয় খিদমতের দৃষ্টান্ত পাওয়া যায় না।

*তাযকেরায়ে কাযী মুহাম্মাদ সুলাইমান মানছুরপুরী :

কাযী ছাহেব উপমহাদেশের উচ্চমর্যাদাসম্পন্ন গ্রন্থকার ও সীরাত লেখক ছিলেন। উর্দুতে নবী করীম (ছাঃ)-এর পবিত্র জীবনী বিষয়ে তাঁর রচনা 'রহমাতুল্লিল আলামীন' তিন খণ্ডে বিভক্ত। এই গ্রন্থটি দারুণ খ্যাতি ও গ্রহণযোগ্যতা লাভ করে। আরবী ও ইংরেজীতে এটি অনূদিত হয়েছে। কাযী ছাহেবের দুনিয়াবী মর্যাদাও অনেক উঁচু ছিল। তিনি অবিভক্ত পাঞ্জাবের সবচেয়ে বড় শিখ রাজ্য পাটিয়ালার সেশন জজ ছিলেন। আহলেহাদীছ জামা'আতে তাঁর মর্যাদা এত উঁচু ছিল যে, তাঁকে অল ইন্ডিয়া আহলেহাদীছ কনফারেন্সের কতিপয় অধিবেশনে সভাপতির আসনে অধিষ্ঠিত করা হয় এবং তিনি লিখিত স্বাগত ভাষণ পেশ করেন। তাঁর মৃত্যুর ৭৭ বছর পর এই ভাট্টি সাহেব তাঁর জীবনী লিপিবদ্ধ করেছেন। যেটি 'তাযকেরায়ে কাযী মুহাম্মাদ সুলাইমান মানছুরপুরী' নামে পাঁচশত (৫০০) পৃষ্ঠায় বিস্তৃত। গ্রন্থটিতে পাটিয়ালা রাজ্যের ইতিহাসও বর্ণিত হয়েছে।

*তাযকেরায়ে ছুফী আব্দুল্লাহ:

দারুল উলূম তা'লীমুল ইসলাম, উডানওয়ালা এবং জামে'আ তা'লীমুল ইসলাম, মামঁকাঞ্জন (যেলা ফায়ছালাবাদ)-এর প্রতিষ্ঠাতা ছুফী আব্দুল্লাহর জীবনীগ্রন্থ এটি। যেটি সাড়ে চারশ (৪৫০) পৃষ্ঠাব্যাপী।

*কারওয়ানে সালাফ (পূর্বসূরিদের কাফেলা)

*দাবিস্তানে হাদীছ (হাদীছের পাঠশালা)

*গুলিস্তানে হাদীছ (হাদীছের ফুলবাগিচা)

*নুকূশে আযমাত রফতা (বিগত মহান মনীষীদের স্মৃতি)

*বাযমে আরজুমান্দা (জ্ঞানীদের মেলা)

*মাওলানা মুহাম্মাদ হানীফ নাদভীর জীবনী 'আরমাগানে হানীফ' (হানীফের উপহার)

*তাযকেরায়ে মাওলানা গোলাম রাসূল কিল'আবী

*তাযকেরায়ে মাওলানা আহমাদুদ্দীন গোখড়াবী

*রোপড়ী ওলামায়ে হাদীছ

*বারে ছাগীর যে আহলেহাদীছ কী তাদরীসী আওর তানযীমী সারগুযাশত

*তাযকেরায়ে মাওলানা মুহিউদ্দীন লাক্ষাবী

* বারে ছাগীর মেঁ আহলেহাদীছ কী আওয়ালিয়াত

*চামানিস্তানে হাদীছ(হাদীছের পুষ্পোদ্যান)

আরও সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "مولانا محمد اسحق بھٹی کی یاد میں"Daily Pakistan (urdu ভাষায়)। ২০১৯-১২-২২। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০১-১৬ 
  2. At-tahreek, Monthly। "মাওলানা ইসহাক ভাট্টি (১ম ভাগ) - ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব"মাসিক আত-তাহরীক । ধর্ম, সমাজ ও সাহিত্য বিষয়ক গবেষণা পত্রিকা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০১-১৬ 
  3. মুহাম্মদ ইসহাক ভাট্টি (২০১৫)। بر صغیر میں اہل حدیث کی اولیات [ভারতীয় উপমহাদেশে আহলেহাদীছগনের অগ্রণী ভূমিকা]। ইসলাম, নূরুল কর্তৃক অনূদিত। শ্যামলবাংলা একাডেমী। পৃষ্ঠা ১২। 
  4. At-tahreek, Monthly। "মাওলানা ইসহাক ভাট্টির মৃত্যু -"মাসিক আত-তাহরীক । ধর্ম, সমাজ ও সাহিত্য বিষয়ক গবেষণা পত্রিকা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০১-১৬