বণ্টনের উপর ভিত্তি করে কাচের ইতিহাসে ইসলামি বিশ্বের প্রভাব সুগভীর। ইউরোপ থেকে চীন এবং রাশিয়া থেকে পূর্ব আফ্রিকা পর্যন্ত এর একটি ঐতিহাসিক প্রভাব রয়েছে। ইসলামী কাচ স্বতন্ত্র্য অভিব্যক্তির বিকাশ ঘটিয়েছে এবং নব প্রযুক্তির সমন্বয়ে পুরাতন প্রথার উপর প্রভাব ফেলেছে।[১]

মিশরীয় মসজিদের বাতি, ১৩৬০
একটি হেডউইগ কাচের । ইউরোপে যে রক ক্রিস্টাল রপ্তানি হয়েছিল তারই একটি নিদর্শন ।

রোমান এবং সাসানিয়ান প্রভাব সম্পাদনা

যদিও ৭ম শতকের মধ্যভাগে মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকায় ইসলাম ছড়িয়ে পড়েছিল; তবুও ইসলামী কাচ ৮ম অথবা ৯ম শতক পর্যন্ত তেমন কোনো বিশেষ অভিব্যক্তি সৃষ্টি করতে পারে নি।[২] যদিও ধর্ম এবং সামাজিক-রাজনৈতিক অবস্থার প্রচুর পরিবর্তন সাধিত হচ্ছিল, তবুও এর ফলে সাধারণ শ্রম শিল্পের জীননব্যবস্থায় তেমন কোনো পরিবর্তন সাধিত হয়নি।[৩] রোমান (লিভ্যান্ট এবং মিশর); সাসনিয়ান (পার্সিয়া এবং মেসোপটেমিয়া)র কাচ তৈরী শিল্প; শত বৎসর ধরে যেভাবে চলে আসছিল; সেভাবেই চলতে থাকলো। ভিন্ন ভিন্ন রাজ্যে যে সব প্রযুক্তি ও ভাবনা ছিল; তার সমন্বয় ও সংমিশ্রণে জন্ম হলো নতুন ভাবনা। যা শেষমেশ ইসলামী কাচ শিল্পের সূচনা করে।[২] রোমান কাচ তৈরীর যে ঐতিহ্য ছিল তা ইসলামী সময়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। সাসানিয়ান সাম্যজ্যের কৌশলী কাচ কাটা শিল্প এখানে সংযোজিত হয়। যা পূর্বে পারস্য এবং মেসোপটেমিয়াতে হস্তখোদাই শিল্প হিসেবে ক্রমবিকশিত হয়েছিল ।[৪][৫] লিভ্যান্টে কাচ তৈরীর জন্য যে চুল্লি প্রযুক্তি ব্যবহৃত হত তা ১০ম ও ১১ শতকে পূর্ব ইসলামী কালেও ব্যবহার করা হত।[৬][৭]

প্রযুক্তিগত পরিবর্তন সম্পাদনা

ইসলামি শাসনামলের প্রথম শতকে পূর্ব ভূমধ্যসাগরের কাচ উৎপাদকরা; রোমান পদ্ধতি ব্যবহার করে কাচ উৎপাদন করতেন। এক্ষেত্রে কাচ তৈরীতে ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ বালু (এখানে সিলিকা ও বালু মিশ্রিত থাকত) ও মিশরের (ওয়াদি এল ন্যট্রোন) তরল ন্যট্রোন (সোডা যৌগ) ব্যবহার করা হত। ঐতিহাসিক পূর্ব-ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের ন্যাট্রোন ভিত্তিক ইসলামি কাচ ৯ম শতক পর্যন্ত পাওয়া যেত।[৮] প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ থেকে দেখা গিয়েছে যে, পরবর্তী বছর গুলোতে ন্যট্রোনের ব্যবহার বন্ধ হয়ে গিয়েছিল এবং সোডার উৎস হিসেবে উদ্ভিজ্জ ছাই ব্যবহার শুরু হয়েছিল।[৯][১০][১১][১২] প্রযুক্তিগত এই পরিবর্তন কেন হয়েছিল, তা স্পষ্ট নয়, তবে এটা অনুমান করা যায় যে, ৯ম শতকে মিশরে সাধারণ মানুষের গোলমালের জন্য ন্যাট্রোনের সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কাচ উৎপাদকরা বাধ্য হয়ে সোডার বিকল্প উৎসের দিকে দ্বারস্থ হয়েছিলেন।[১৩] ৯ম শতকে বেথ সেইরাম (আধুনিক ইসরায়েলে) মূলধারার কাচের প্রণালী দেখে যে ধারণা পাওয়া গিয়েছিল; তা দেখে এ বিষয়টি অনুমান করা হয়েছিল। ট্যাঙ্ক থেকে কাচের পাত তৈরীর সময় প্রচুর পরিমাণে লাইম মিশ্রণ করা হয়। এর সাথে বালু এবং উদ্ভিজ্জ ছাই মিশ্রণ করা হয়।[১৪] যদিও কাচা কাচ তার যৌগের জন্য ব্যবহার করা দুরূহ; তবে এটা প্রস্তাব করা হয় যে; লিভ্যান্টের ইসলামী কাচ উৎপাদকরা সাসানিয়ান এবং রোমান ঐতিহ্যকে সংমিশ্রণ করে তরল ন্যাট্রনের অভাব সংক্রান্ত সমস্যাটা সমাধান করার প্রচেষ্টা করইছিল। হ্যালোফাইটিক উদ্ভিদ থেকে উদ্ভিজ্জ ছাই পাওয়া যেত যা মধ্যপ্রাচ্য প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়।[১৫] এটি পার্সিয়ামেসোপটেমিয়াতেও যথেষ্ট পরিচিত ছিল। ফলে বিতর্কহীনভাবে কাচ উৎপাদকরা তাদের উৎপাদনগত ভুল সংশোধন করে উদ্ভিজ্জ ছাই ব্যবহার শুরু করেন।

ইসলামি কাচের প্রাথমিক যুগ: ৭ম শতকের মধ্যভাগ থেকে ১২ শতকের শেষভাগ সম্পাদনা

 
৯ম শতকের একটি পানপাত্র, নিশাপুর

ইসলামী প্রাথমিক যুগে উমাইয়া খেলাফত কাচ শিল্পে তার পুরাতন ঐতিহ্যই অনুসরণ করেছে (ইজরায়েলী ২০০৩,৩১৯)। পরবর্তীতে ৭৫০ খ্রিষ্ঠাব্দে আব্বাসিদ খলিফার রাজত্বকালে ইসলামী দুনিয়ার রাজধানী লেভ্যান্টের দামেস্কাস থেকে মেসোপটেমিয়ার বাগদাদে স্থানান্তরিত হয়। এর ফলে ধ্রুপদী ঐতিহ্যের যে সংস্কৃতি তা ইসলামী অভিব্যক্তির ক্রমবিকাশ দ্বারা প্রভাবিত হয়।[১৬]

সেই সময়ের কাচের যে উৎপাদন তা তিনটি রাজ্যে বিভক্ত ছিল। প্রথমত, পূর্ব ভুমধ্যসাগর; যা কাচ উৎপাদনের জন্য শত বছরের ক্ষেত্র ছিল। উত্তর সিরিয়া,[৯] লেবাননের টায়ার [১৭] ইসরায়েলের বেথ সেয়ারিম [৭] এবং মিশরের ফুস্টাতে (প্রাচীনকায়রোর) খননকাজ থেকে [১৮] প্রচুরপরিমাণ কাচের তৈরী পাত্র পাওয়া গিয়েছে। পারস্য, প্রাক্তন সাসানিয়ান রাজ্যে নিসাপুর, সিরাফ ও সুসার মত স্থানে খননের পর পূর্ব ইসলামী সময়ের অনেক কাচ পাওয়া গিয়েছে।[১৯] বিভিন্ন চুল্লী থেকে বুঝা যায় নিসাপুর কাচ উৎপাদনের গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র ছিল।[২০] মেসোপটেমিয়ার, সামারাতেও কাচ উৎপাদনের ক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে।

সিরিয়ার রাকাতে প্রমাণ পাওয়া গেছে যে এই অঞ্চলে কাচ উৎপাদন হত।[২১][২২] যদিও এটা নিশ্চিত করা কঠিন যে ঠিক কোথায় উৎপাদনস্থলটি ছিল , যেহেতু বর্জ ও অবশিষ্টাংশ/পরিত্যাক্ত অংশগুলো পাওয়া যায়নি। এছাড়াও , আব্বসিয় খেলাফতের সময় কাচের কারিগর ও কাচশিল্পকে স্থানান্তর করা হয়েছিল। যা উৎসসন্ধানকে কঠিন করে দিয়েছে। ধারণা করা হয় সেলজুকরা ক্ষমতা দখল করার পরও শিল্প টির এই ধারা বজায় রেখে ছিল [২৩]। এসময় কাচ নির্মাণ ও সজ্জা,বিন্যাস করাতে তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি পেয়েছিল তবে তারা এগুলোতে তারিখ বা চিহ্ন সংবলিত করত না সেকারণে এগুলোর উৎপত্তিস্থল চিহ্নিত করা আরও কঠিন হয়ে গেছে। একারণে এগুলোর বয়স নির্ধারণ করা হয় সাধারণত সমকালীন অন্যান্য সজ্জা,বিন্যাস এর সাথে তুলনা করে।[২৪]

পূর্ব ইসলামী সময়ে খোদাইকরণ, মোল্ড ব্লোয়িং এর মাধ্যমে সজ্জাকরণ ঐতিহ্যের জনপ্রিয়তা বজায় ছিল।[১৬] যা পুর্বেও বলা হয়েছে; কাচ খোদাই ও কাচে নানারকম প্রতীক অঙ্কন প্রাচীন সাসানিয়ান ও রোমান ঐতিহ্যেরই ধারাবাহিকতার মাধ্যমে বজায় রাখা হয়। কাচ খোদাইয়ের বিশেষ রুপ হলো উৎকীর্ন মুর্তিপ্রতীক খোদাই; যা স্বচ্ছ কাচে করা হয়। এটি একদম কাচের নীচ থেকে চারপাশ ঘিরে করা হয়[২৫]

 
পালমার কাপে একজন রাজকুমারীর ছবি।

কিছু খোদাইকরণ সজ্জা উত্তপ্ত কাচে করতে হয়।[২৬] গলিত কাচে বিভিন্ন ধরনের সজ্জা,বিন্যাস করা অপেক্ষাকৃত সহজ। এই ধরনের বিন্যাস ৯ম-১১শতকে জনপ্রিয়তার শীর্ষে ছিল,[২৭] আর থ্রেড ট্রেইলিং জনপ্রিয় ছিল ১১-১২ শতকে।[২৮]

প্রথম শতকে রোমান ঐতিহ্যকে অনুসরণ করে ছাচেঁর মাধ্যমে কাচে বিন্যাস তৈরীর প্রথা আরেকটি বিশেষায়িত কৌশল; যা ইসলামী মধ্যযুগের পুরো সময়টিতে দেখা গিয়েছিল। দুই ধরনের ছাচেঁর ব্যবহার; প্রত্নতাত্ত্বিকভাবে এই সময়টিতে দেখা গিয়েছিল; একটি হলোঃ একটাই ছাঁচ যা দুই অংশে বিভক্ত; আর অন্যটি হলো একটাই ছাচঁ এখানে কোনো অংশে বিভক্ত ছিল না; এটি গর্তের মত করে তৈরী করা হত; যার মধ্যে গলিত বা আঠালো কাচ সম্পুর্ণটা ফেলে নির্ধারিত সজ্জ্বা তৈরী করা হত।[২৯] এই ছাচঁ ব্রোঞ্জের নির্মিত ছিল;[৩০] যদিও কিছু সিরামিকের ছিল।[৩১] এই ছাচেঁ কারিগররা কখনো কখনো নানা বিন্যাস তৈরী করে দিতেন। (কার্বনী এবং আদমজী ২০০২) [২৬]

কাচকে সুসজ্জিত করার চূড়ান্ত যে প্রযুক্তি তা পাওয়া যায় পূর্ব ইসলামী সময় ব্যবহৃত হওয়া লুস্ট্রে চিত্রে। যদিও কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন এটি সম্পূর্ণভাবে ইসলামী আবিষ্কার যার সূচনা হয়েছিল ফুস্টাতে,[৩২] রোমান এবং কপটিক মিশরেও এর সূচনা হয়েছিল। কাচের পাত্রে দাগ দেওয়ার ঐতিহ্য তৃতীয় শতাব্দী থেকে চলে আসছে বলে জানা যায়।[৩৩] যদিও প্রকৃত প্রযুক্তি সম্ভবত সূচনা হয়েছিল চতুর্থ থেকে অষ্টম শতকের মধ্যে।[৩৪][৩৫] লুস্টার চিত্রতে কপার এবং সিলভারের বিক্রিয়া ঘটানো হয়। যেখানে আয়নিক Ag+ ও Cu+ বিনিময় হয়; যার ফলে পাত্রে একটা ধাতব আবরণ পরে।[৩৬] লুস্টার সজ্জার সুনির্দিষ্ট উৎসস্থল থাকলেও কাচ উৎপাদনের প্রযুক্তিতে; পূর্ব ইসলামী সময়ে এটাই ছিল অন্যতম প্রযুক্তি। এটা শুধু ভৌগোলিক ভাবেই নয়; অন্যান্য কাচের সিরামিকেও এর বিস্তৃতি ঘটেছে।[৩৩]

 
১৩ শতকের একটি পানপাত্র যাকে বলা হয় "লাক অব এডেনহেল" (ভি&এ জাদুঘর ১৯৫৯

মধ্যযুগীয় ইসলামি কাচ: ১২ থেকে ১৪ শতক সম্পাদনা

ইসলামী দুনিয়া এই যুগে নানাবিধ সমস্যায় পড়লেও এই যুগটিকেই বলা হয় ইসলামী কাচ তৈরীর স্বর্ণযুগ[৩৭]পারস্য এবং মেসোপটেমিয়া (যা কিছু সময়ের জন্য সিরিয়ার অংশ ছিল) সেলজুক তুরস্কের নিয়ন্ত্রণে এবং পরবর্তীতে মঙ্গোলীয়দের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। একইসাথে ক্রুসেডের কারণে এই সময় মধ্যপ্রাচ্যে ইউরোপীয়দের হস্তক্ষেপ দেখা যায়।[৩৭][৩৮] কাচেঁর উৎপাদন খুব সম্ভবত পারস্য এবং মেসোপটেমিয়াতে বন্ধ হয়ে যায় এবং কেন তা হয় তার কারণ সম্পর্কে খুব কমই জানা গিয়েছে।[৩৭] যাইহোক, এই সময়ের প্রথমার্ধে মধ্য-এশিয়া; উদাহরণস্বরুপ কুভাতে (যা বর্তমানে আধুনিক উজবেকিস্তান) কাচ তৈরীর প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে।[৩৯] সম্ভবত এই ঐতিহ্যের সমাপ্তি ঘটে মঙ্গোলীয়দের ১৩ শতকের মধ্যভাগে আক্রমণের পর।[৪০]

কাচ তৈরীর এলাকা সিরিয়া এবং মিশরে; সেসময় পুরোদমে কাজ চলেছিল। এটা বলা যাচ্ছে কারণ, কাচ তৈরীর উপাদান সমূহ; উত্তর তুরস্কের সামসাটে[৪১] সিরিয়ার আলেপ্পোদামাস্কাসে,[৪২]লিভ্যান্টের হারবোর্নে [৪৩] এবং কায়রোতে[৪৪][৪৫] খনন করে পাওয়া গিয়েছিল। এইজন্যই এই সময়টিকে ইসলামী কাচ তৈরীর স্বর্ণযুগ বলা হয়। মধ্যযুগীয় ইসলামী কাচ বিভিন্ন রকমের পলিক্রোমিক সজ্জ্বা দিয়ে সজ্জিত করা হয়। এখানে মার্ভারিং এনামেলের প্রলেপগিল্ডিং করা হত। যেখানে বিভিন্ন খোদাই ও লুস্ট্রে চিত্রকলা একপ্রকার ফ্যাশনের রুপ হয়ে দাঁড়ায়।[৪৬] মার্ভারিং এ বিভিন্ন অস্বচ্ছ কাচের (শুভ্র,হলুদ এবং হালকা নীল রঙ কাচ পাত্রে মিশ্রিত) সমাহার ঘটে। এখানে বিভিন্ন তরঙ্গায়িত বিন্যাস সজ্জিত করা হত।[৪৭] ১২ শতকের দিকে এই প্রযুক্তি পাত্র এবং বোতল থেকে শুরু করে দাবার গুটিতে পর্যন্ত ব্যবহার করা হত।[৪৭][৪৮]

 
ইয়েমেনের সুলতান নামে একটি ঘড়া,সম্ভবত সিরিয়া অথবা মিশরের, ১২৯০

এই সময়ে গিল্ডিং ব্যবহার করা হত; তা কাচে খুব অল্প পরিমাণে স্বর্ণ কণা মিশ্রিত করা হত; যার ফলে কাচে তৈরী হত উজ্জ্বলতা। এই প্রযুক্তি বাইজেন্টাইন ঐতিহ্য থেকে অনুপ্রাণিত।[৪৯] এই প্রযুক্তিতে নানা রংয়ের ধাতুর প্রলেপ দেয়া হতো ।[৫০] এনামেলিংবা কাচের ওপর প্রলেপ দেওয়ার এই কৌশল ১২ শতকে প্রথম রাক্কা (সিরিয়াতে) ব্যবহার করা হয়েছিল,কিন্তু মামলুকের শাসনামলে তা ছড়িয়ে পড়েছিল কায়রো অবধি।[৪৪] বিভিন্নী এনামেলীয় পাত্র যেমন পানপাত্র ও মসজিদ বাতির ওপর গবেষণা করে এটা বুঝা গিয়েছে যে; এগুলো তৈরিতে আলাদা আলাদা স্বতন্ত্র দুটি আগুন-কুন্ডলী ব্যবহার করা হতো। অর্থাৎ এটা খুব সম্ভব যে এজন্য কাচ উৎপাদন ক্ষেত্র আলাদা আলাদা ছিল।[৫১] এনামেলীয় কাচের প্রচুর চাহিদা থাকায় সে সময় তা ইসলামী বিশ্ব তো বটেই এমনকি ইউরোপ ও চায়না পর্যন্ত রপ্তানি হতো।[৫২] ১৩ শতক থেকে ১৫ শতকে বিভিন্ন মঙ্গোলীয়দের আক্রমণের পর এনামেলের ব্যবহার সিরিয়া এবং মিশরে সমাপ্তি হয়।[৫৩]

ইসলামী সাম্রাজ্যের মধ্যযুগে; কাচ প্রযুক্তি ইউরোপ আর মধ্যপ্রাচ্যের প্রযুক্তির সাথে মিলেমিশে নব প্রযুক্তির উন্মেষ ঘটায়। এর অন্যতম কারণ ছিল ক্রুসেড। যার ফলে ইউরোপীয়রা ইসলামী গিল্ডেড ও এনামেলীয় পাত্র আবিষ্কার করে। 'গবলেট অব দ্য এইট প্রিন্স' যা এই প্রযুক্তির প্রথম দিকের উদাহরণ; তা লিভ্যান্ট থেকে ফ্রান্সে নিয়ে আসা হয়।[৫২] উপরন্তু কাচা উদ্ভিজ্জ ছাই ভেনিসে রপ্তানী করা হয়।[৫৪] ইসলামী দুনিয়ায় কাচের উপর প্রলেপ বা এনামেল এর শিল্প প্রত্যাখ্যান হবার পরে ভেনিসে এর পুনরুজ্জীবন ঘটে।[৫১]

ইসলামি কাচের শেষ যুগ: ১৫ থেকে ১৯ শতক সম্পাদনা

পরবর্তী ইসলামী কাচের সময়টি শাসিত হয়েছে ৩টি প্রধান রাজ্যের মাধ্যমে। তুরস্কের অটোম্যান দ্বারা; রাজবংশীয় পারস্য সাফাভিদ (পরবর্তীতে জান্ড এবং কাজার) ও উত্তর ভারতের মুঘল দ্বারা।[৫৫] এই সময়ে ইউরোপীয় কাচ শিল্প বিশেষ করে ভেনিস, বোহেমিয়া (১৮ শতকে) এবং ডাচ দের কাচ শিল্প ইসলামী কাচ শিল্পকে তীব্রভাবে প্রভাবিত করেছিল।[৫৬] উচ্চ প্রযুক্তি সম্পন্ন কাচের উৎপাদন মিশর, সিরিয়া এবং পারস্যে সমাপ্ত হয়েছিল এবং শুধুমাত্র ভারতে ১৭ শতকে ইসলামী কাচ পুনরায় ইউরোপের ন্যায় শিল্পের মাধ্যমে পুনঃবিকাশ লাভ করে।[৫৬][৫৭] পর্যাপ্ত ব্যবস্থাপনার অভাবে এবং ইউরোপীয় কাচ শিল্পের প্রত্যক্ষ প্রভাবে ইসলামী কাচ শিল্প ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে থাকে।[৫৫]

 
১৯ শতকের পারস্যের বৃহদাকৃতি কয়েকটি মগ

ঐতিহাসিক দলিল থেকে দেখা যায়, ইস্তাম্বুলে কাচের চিহ্ন উপস্থিত এবং গ্লাসমার্কের গিল্ডের পাশাপাশি অটোমান সাম্রাজ্যের বোসোফোরাস, উপকূলের বায়োকোজে উৎপাদনের চিহ্নও প্রদর্শন করে। এই কেন্দ্রে তৈরি কাচসমুহ শুধুমাত্র মানের দিক থেকেই অসাধারণ ছিল না সেগুলো ভেনিতিয়ান ও বোহিমিয়ান কৌশলগুলির দ্বারা অত্যন্ত প্রভাবিত হয়েছিল।[৫৮] কাচ তৈরীর প্রমাণ থেকে দেখা যায় ১৩ শতকের সময় পারস্যে মঙ্গোলীয়দের আক্রমণের পর, সাফাভিদের সময়কাল (১৭ শতক) এর আগপর্যন্ত কাচ তৈরীতে প্রায় ভাটাই পরে। ইউরোপীয় পর্যটক লিখেছেন, সিরাজের কাচ উৎপাদন দেখে এটা ভাবা হয়, ইতালীয় কারিগরদের হাতে কাচ উৎপাদন পুনরুজ্জীবিত হয়েছে।[৫৯] পারস্যতে তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য বা শিল্পসৌন্দর্যমণ্ডিত, ও কৌশলগত প্রযুক্তি ছিল না বা পুনঃর্জাগরিত হয় নি, বোতল এবং জগ তৈরী করা হত রঙিন কাচ থেকে এবং সিরাজ মদের কারখানার সাথে যুক্ত ছিল[৬০]

পক্ষান্তরে ভারতের মুঘল কাচ প্রস্তুতকারকরা; মধ্যীয় ইসলামী সময়ের ন্যায় কাচের উপর এনামেল ও গিল্ডিং ঐতিহ্য বলবৎ রাখে। কাচের উপর খোদাই করার প্রযুক্তি পার্সিয়াতে পূর্ব ইসলামী শতকে ব্যবহৃত হত।[৬১] কাচ তৈরীর কারখানা প্রাথমিকভাবে মুঘলদের রাজধানী আগ্রা, পাটনা (পূর্ব ভারত) এবং পশ্চিম ভারত শাসিত রাজ্য গুজরাটে পাওয়া গিয়েছিল পরবর্তী ১৮ শতকে তা পশ্চিম ভারতের অন্যান্য স্থানে ছড়িয়ে পরে।[৬২] পুর্বের কৌশলকে কাজে লাগিয়ে নতুন ধরনের ইসলামী কাচের শিল্পের শুরু হয়। এর অন্যতম উদাহরণ হলোঃ নারগিলাহ (পানির পাইপ)।[৬৩] ডাচ গঠনাকৃতি চতুষ্কোণাকৃতি বোতলে ভারতীয় সংস্কৃতির সাথে মিল রেখে এনামেল ও গিল্ডিং করা হত; যা মুঘল অভিব্যক্তি প্রকাশের আরেকটি চিহ্ন। এটি ভুজ, কুচ এবং গুজরাটে দেখা গিয়েছিল।[৬৪][৬৫] জালাসারে সাম্প্রতিক কাচের নৃকুলবিদ্যার পাঠ থেকে দেখা যায়,লিভ্যান্টে প্রাপ্ত কাচের উৎপাদনের চুল্লীর সাথে গঠনগত ভিন্নতা থাকলেও এর মৌলিক মিল রয়েছে; যার দ্বারা এটাই প্রতীয়মান হয় যে; কাচ উৎপাদনের প্রযুক্তি ইসলামী সময় জুড়েই ক্রমবিকশিত হয়েছে।[৬৬]

ইসলামি কাচের গুরুত্ব সম্পাদনা

 
কোবাল্ট নীল কাচ; যা সম্রাট ব্যবহার করতেন

পুর্বের অনুচ্ছেদগুলোতে ইসলামী কাচের বিভিন্ন ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। যেমনঃ মধ্যযুগের মসজিদ বাতি থেকে শুরু করে সাফাভিদ পারস্যে সুরার বোতল, মুঘল ভারতের নারগিলা ইত্যাদি। অর্থাৎ এ থেকে বুঝা যায়; ইসলামী ইতিহাসে কাচ বিরাট ভূমিকা পালন করেছে। বিভিন্ন ধরনের কাচ পাত্র বিভিন্ন দ্রব্য রাখার জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। (পাতিল, গবলেট, থালা, পারফিউমের বোতল ইত্যাদি) এবং অনেক ইসলামী কাচঁ বিশেষজ্ঞ এর উপর গবেষণা করেছেন (কার্বনী ২০০১, ইসরায়েল ২০০৩, ক্রোগার ১৯৯৫, পিন্দার উইলসন ১৯৯১, স্ক্যানলন এবং পিন্দার উইলসন ২০০১)। ইসলামী সময়ে এই কাচ দ্বারা আরো কিছু স্বতন্ত্র্য দ্রব্য উৎপাদন করা হত; যেমনঃ কালিদানি, কুমকুম অথবা পারফিউম স্প্রিংকলার[৬৭][৬৮][৬৯] এবং পাত্র যা ইসলামীক বিজ্ঞান ও মেডিসিনের সাথে জড়িত যেমনঃ পাতন যন্ত্র, টেস্ট-টিউব ও কাপার ইত্যাদি।[৭০][৭১][৭২][৭৩] কাচ দ্বারা অনেক নান্দনিক ও নানা সজ্জায় সজ্বিত ক্ষুদ্র মুর্তি তৈরী করা হত;[৭৪][৭৫] তৈরী করা হত ব্রেসলেট ও জপমালার মত জুয়েলারী (কার্বনী ১৯৯৪, স্পেয়ার ১৯৯২)।[৪৩][৭৬] বিশেষ করে এই ব্রেসলেট প্রত্নতাত্ত্বিকতার দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ; কারণ এটা থেকে ডেটিং এর মাধ্যমে তৎকালীন উৎপাদনের সময়সীমা জানা গিয়েছে।[৭৭] কাচের আরো নানা উপযোগিতা সেসময় দেখা গিয়েছিল; তা জানালা হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে;[৭৮][৭৯] মুদ্রার ওজন হিসাবেও ব্যবহৃত হয়েছে।[৮০][৮১] খনন কাজে পাওয়া এসমস্ত কাচ দেখে এবং তার উপযোগিতা গুলো জানার পর এটাই প্রমাণিত হয় যে; ইসলামী বিশ্বের পুরোটা জুড়েই এই কাচ শিল্প রয়েছে এবং সেসময়ে এর নানা উথ্থান পতন ঘটেছে।

ইসলামি কাচ নিয়ে অধ্যয়ন সম্পাদনা

ইসলামী কাচ নিয়ে গবেষণায় বিশেষজ্ঞদের তেমন কোনো আগ্রহ দেখা যায় নি। তবে কার্ল জে. ল্যাম (১৯০২-১৯৮৭) এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ছিলেন। তিনি এই বিষয়ে কাজ করেছেন।[৮২] ল্যাম গুরুত্বপূর্ণ ইসলামী স্থান থেকে কাচ কে শ্রেণিবিন্যাসিত করেছেন; উদাহরণস্বরুপ: ইরানের সুসা (ল্যাম ১৯৩১) এবং ইরাকের সামারা (ল্যাম ১৯২৮)। ১০৩৬ খ্রিষ্ঠাব্দের কাছাকাছি সময়ে তুরস্কের উপকূলীয় এলাকা সের্চ লিম্যানে জাহাজডুবি হয়; যা পরবর্তীতে আবিষ্কৃত হয়। এটি ইসলামী কাচের ইতিহাসের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই কার্গোতে সিরিয়া থেকে রপ্তানীকৃত কাচের টুকরো পাওয়া গিয়েছিল।[৮৩] এই তথ্যটার গুরুত্ব হলো, এই তথ্যের উপর ভিত্তি করে বলা যায়, ইসলামী কাচের উৎপাদন এবং বণ্টন ব্যবস্থা কেমন ছিল। তাসত্ত্বেও এই বিষয়ে বেশিরভাগ মনোযোগ ছিল এই ধরনের কাচের সজ্জ্বা কেমন ছিল তা নিয়ে; তার শ্রেনিবিন্যাস নিয়ে (কার্বনী ২০০১; ক্রোগার ১৯৯৫; ল্যাম ১৯২৮; ল্যাম ১৯৩১; স্ক্যানলন এবং পিণ্ডার-উইলসন ২০০১), এবং একইসাথে কারখানায় কাচ তৈরির যে প্রযুক্তি তা নিয়ে ও কাচের তৈরী অসজ্জিত পাত্রের উপরও মনোযোগ দেওয়া হয়েছিল। তবে যে বিষয়টা হতাশাজনক তা হলো ইসলামী সময়ে যে সমস্ত কাচ পাওয়া গেছে তার অধিকাংশই অসজ্জিত।[৮৪]

আরও দেখুন সম্পাদনা

টিকা সম্পাদনা

  1. পিন্দার- উইলসন ১৯৯১, ১১২
  2. ইসরায়েলী ২০০৩, ৩১৯
  3. স্কিচ ১৯৯৮, ৭৫
  4. কার্বনি ২০০১, ১৫-১৭
  5. পিন্দার- উইলসন ১৯৯১, ১১৫-১২২
  6. অল্ডসওঅর্থ et al. ২০০২, ৬৫
  7. ফ্রিস্টোন ২০০৬, ২০২
  8. হোয়াইটহাউস ২০০২, ১৯৩-১৯৫
  9. দুসার্ত et al. ২০০৪
  10. ফ্রিস্টোন ২০০২
  11. ফ্রিস্টোন ২০০৬
  12. হোয়াইটহাউজ ২০০২
  13. হোয়াইটহাউজ ২০০২, ১৯৪
  14. ফ্রি স্টোন এবং গরিন-রজিন ১৯৯৯,১১৬
  15. বারকুদাহ এবং হেন্ডারসন ২০০৬, ২৯৭-২৯৮
  16. ইসরায়েলী ২০০৩,৩২০
  17. অল্ডসওঅর্থ et al. ২০০২
  18. স্কানলন এবং পিন্দার-উইলসন ২০০১
  19. ক্রুগার ১৯৯৫, ১-৬
  20. ক্রুগার ১৯৯৫, ৫-২০
  21. ফ্রিস্টোন ২০০৬, ২০৩
  22. ক্রুগার ১৯৯৫, ৬-৭
  23. রাগিব ২০১৩
  24. লুকেন্স ২০১৩, ১৯৯
  25. পিন্দার- উইলসন ১৯৯১, ১১৬
  26. জেঙ্কিন্স ২০১৩,২৮
  27. লুকেন্স ২০১৩, ২০০
  28. লুকেন্স ২০১৩,২০৭
  29. কার্বনি ২০০১,১৯৮
  30. কার্বনি ২০০১,১৯৭
  31. ভন ফলসাচ এবং হোয়াইটহাউস ১৯৯৩,১৪৯
  32. পিন্দার- উইলসন ১৯৯১, ১২৪
  33. কার্বনি ২০০১, ৫১
  34. সেইগার-স্মিথ ১৯৮৫,২৪
  35. প্রাডেল et al. ২০০৮,১২০১
  36. Pradell et al. 2008, 1204
  37. ইসরায়েলি ২০০৩,৩২১
  38. পিন্দার-উইলসন ১৯৯১,১২৬
  39. আইভানভ ২০০৩, ২১১-২১২
  40. আনারবেইভ এবং রেহরিন ২০০৯
  41. রেডফোর্ড১৯৯৪
  42. পিন্দার-উইলসন 1991, 131
  43. স্পেইর ১৯৯২,৪৬
  44. কার্বনি2001, 323
  45. ইসরায়েলী 2003, 231
  46. পিন্দার-উইলসন 1991, 126–130
  47. কার্বনি2001, 291
  48. Tatton-Brown and Andrews 1991, 26
  49. পিন্দার-উইলসন 1991, 130
  50. কার্বনি2001, 323–325
  51. Gudenrath 2006, 47
  52. পিন্দার-উইলসন 1991, 135
  53. ইসরায়েলী 2003, 376
  54. Jacoby 1993
  55. পিন্দার-উইলসন 1991, 136
  56. কার্বনি2001, 371
  57. মার্কেল1991, 82–83
  58. পিন্দার-উইলসন 1991, 137
  59. কার্বনি2001, 374
  60. কার্বনি2001, 374–375
  61. পিন্দার-উইলসন 1991, 138
  62. মার্কেল1991, 83
  63. মার্কেল1991, 84
  64. কার্বনি2001, 389
  65. মার্কেল1991, 87
  66. Sode and Kock 2001
  67. কার্বনি2001, 350–351
  68. ইসরায়েলী 2003, 378-382
  69. পিন্দার-উইলসন 1991, 128–129
  70. কার্বনি2001, 375
  71. ইসরায়েলী 2003, 347
  72. Kröger 1995, 186
  73. পিন্দার-উইলসন 2001, 56–60
  74. কার্বনি2001, 303
  75. ইসরায়েলী 2003, 383
  76. Scanlon and পিন্দার-উইলসন 2001, 119–123
  77. Spaer 1992, 54
  78. Kröger 1995, 184
  79. Scanlon and পিন্দার-উইলসন 2001, 61
  80. Schick 1998, 95
  81. হোয়াইটহাউজ 2002, 195
  82. ইসরায়েলী 2003, 322
  83. পিন্দার-উইলসন 1991, 114
  84. কার্বনি2001, 139

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  • Aldsworth, F., Haggarty, G., Jennings, S., হোয়াইটহাউজ, D. 2002. "Medieval Glassmaking at Tyre". Journal of Glass Studies 44, 49–66.
  • Anarbaev, A. A. and Rehren, T. 2009. Unpublished Akhsiket Research Notes.
  • Barkoudah, Y., Henderson, J. 2006. "Plant Ashes from Syria and the Manufacture of Ancient Glass: Ethnographic and Scientific Aspects". Journal of Glass Studies 48, 297–321.
  • Caiger-Smith, A. 1985. Lustre Pottery: Technique, Tradition and Innovation in Islam and the Western World. New York: New Amsterdam Books.
  • কার্বনি, S. 1994. "Glass Bracelets from the Mamluk Period in the Metropolitan Museum of Art". Journal of Glass Studies 36, 126–129.
  • কার্বনি, S. 2001. Glass from Islamic Lands. London: Thames & Hudson, Ltd.
  • কার্বনি, S. and Adamjee, Q. 2002. "Glass with Mold-Blown Decoration from Islamic Lands". In Heilbrunn Timeline of Art History. New York: The Metropolitan Museum of Art, 2000–.
  • Dussart, O., Velde, B., Blanc, P., Sodini, J. 2004. "Glass from Qal'at Sem'an (Northern Syria): The Reworking of Glass During the Transition from Roman to Islamic Compositions". Journal of Glass Studies 46, 67–83.
  • ফ্রিস্টোন, I. C. 2002. "Composition and Affinities of Glass from the Furnaces on the Island Site, Tyre". Journal of Glass Studies 44, 67–77.
  • ফ্রিস্টোন, I. C. 2006. "Glass Production in Late Antiquity and the Early Islamic Period: A Geochemical Perspective". In: M. Maggetti and B. Messiga (eds.), Geomaterials in Cultural History. London: Geological Society of London, 201–216.
  • ফ্রিস্টোন, I. C., Gorin-Rosin, Y. 1999. "The Great Slab at Bet She'arim, Israel: An Early Islamic Glassmaking Experiment?" Journal of Glass Studies 41, 105–116.
  • Gudenrath, W. 2006. "Enameled Glass Vessels, 1425 BCE – 1800: The Decorating Process". Journal of Glass Studies 48, 23–70.
  • ইসরায়েলী, Y. 2003. Ancient Glass in the Israel Museum: The Eliahu Dobkin Collection and Other Gifts. Jerusalem: The Israel Museum.
  • Ivanov, G. 2003. Excavations at Kuva (Ferghana Valley, Uzbekistan). Iran 41, 205–216.
  • Jacoby, D. 1993. Raw Materials for the Glass Industries of Venice and the Terraferma, about 1370 – about 1460. Journal of Glass Studies 35, 65–90.
  • Jenkins, M. 1986. "Islamic Glass: A Brief History". Metropolitan Museum of Art Bulletin. JSTOR, 1–52.
  • Kröger, J. 1995. Nishapur: Glass of the Early Islamic Period. New York: The Metropolitan Museum of Art.
  • Lamm, C. J. 1928. Das Glas von Samarra: Die Ausgrabungen von Samarra. Berlin: Reimer/Vohsen.
  • Lamm, C. J. 1931. Les Verres Trouvés à Suse. Syria 12, 358–367.
  • Lukens, M. G. 1965. "Medieval Islamic Glass". Metropolitan Museum of Art Bulletin 23.6. JSTOR, 198–208.
  • Markel, S. 1991. "Indian and 'Indianate' Glass Vessels in the Los Angeles County Museum of Art". Journal of Glass Studies 33, 82–92.
  • পিন্দার-উইলসন, R. 1991. "The Islamic Lands and China". In: H. Tait (ed.), Five Thousand Years of Glass. London: British Museum Press, 112–143.
  • Pradell, T., Molera, J., Smith, A. D., Tite, M. S. 2008. "The Invention of Lustre: Iraq 9th and 10th centuries AD". Journal of Archaeological Science 35, 1201–1215.
  • Ragab, A. 2013. "Saladin (d. 1193) and Richard Lionheart (d. 1199): The Story of the Good Rivals". History of Science 113 Lecture. Science Center 469, Cambridge. Lecture.
  • Redford, S. 1994. "Ayyubid Glass from Samsat, Turkey". Journal of Glass Studies 36, 81–91.
  • Scanlon, G. T., পিন্দার-উইলসন, R. 2001. Fustat Glass of the Early Islamic Period: Finds Excavated by the American Research Center in Egypt 1964–1980. London: Altajir World of Islam Trust.
  • Schick, R. 1998. "Archaeological Sources for the History of Palestine: Palestine in the Early Islamic Period: Luxuriant Legacy". Near Eastern Archaeology 61/2, 74–108.
  • Sode, T., Kock, J. 2001. Traditional Raw Glass Production in Northern India: The Final Stage of an ancient Technology. Journal of Glass Studies 43, 155–169.
  • Spaer, M. 1992. "The Islamic Bracelets of Palestine: Preliminary Findings". Journal of Glass Studies 34, 44–62.
  • Tatton-Brown, V., Andrews, C. 1991. "Before the Invention of Glassblowing". In: H. Tait (ed.), Five Thousand Years of Glass. London: British Museum Press, 21–61.
  • von Folasch, K., হোয়াইটহাউজ, D. 1993. "Three Islamic Molds". Journal of Glass Studies 35, 149–153.
  • হোয়াইটহাউজ, D. 2002. "The Transition from Natron to Plant Ash in the Levant". Journal of Glass Studies 44, 193–196.

আরো পড়ুন সম্পাদনা