ইন্দিরা গান্ধীর গুপ্তহত্যা

১৯৮৪ সালের ৩১ অক্টোবর, ভারতের তদনীন্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী আততায়ীর গুলিতে নিহত হন।[১] এই ঘটনা ভারতের ইতিহাসে ইন্দিরা গান্ধী হত্যাকাণ্ড নামে পরিচিত। শ্রীমতী গান্ধীর দুই শিখ দেহরক্ষী [২] সৎবন্ত সিংহবিয়ন্ত সিংহ অপারেশন ব্লু স্টার চলাকালীন "স্বর্ণমন্দির" নামে পরিচিত শিখদের সর্বোচ্চ তীর্থ হরমন্দির সাহিবে সেনা অভিযানের প্রতিশোধকল্পে তাকে হত্যা করে।[৩]

ইন্দিরা গান্ধী স্মৃতিস্থল; ১, সফদরজঙ্গ রোড, নতুন দিল্লি। এখানেই নিহত হয়েছিলেন ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী।
নিহত হওয়ার সময় এই পথ ধরেই হেঁটে যাচ্ছিলেন ইন্দিরা গান্ধী।
নিহত হওয়ার সময় ইন্দিরা গান্ধীর পরিহিত শাড়ি এবং অন্যান্য ব্যবহৃত সামগ্রী; নতুন দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী স্মৃতি সংগ্রহশালায় সংরক্ষিত।

প্রেক্ষাপটসম্পাদনা

অপারেশন ব্লু স্টার হলো ইন্দিরা গান্ধীর নির্দেশনায় ভারতীয় সেনাবাহিনী কর্তৃক শিখ ধর্মাবলম্বিদের তীর্থস্থান হরমন্দির সাহিব দখলের জন্য পরিচালিত একটি সামরিক অভিযান। সরকারি সূত্র মতে কয়েকজন শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী পালিয়ে হরমন্দির সাহিবে আশ্রয় নেয়। তাদের ধরতেই সরকার এই অভিযান চালায়। অভিযান কালে এক পর্যায়ে সেনাবাহিনী মন্দিরটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। ফলে বিচ্ছিন্নতাবাদীসহ আরো ৪৯২[৪][৫] বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হয় এবং মন্দিরটি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর পরই ভারত জুড়ে শিখ সম্প্রদায় ইন্দিরা গান্ধী সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন-দাঙ্গা শুরু হয়ে যায়।

হত্যাকাণ্ডসম্পাদনা

আইরিশ টেলিভিশনের জন্য নির্মীয়মান একটি তথ্যচিত্রের প্রয়োজনে ব্রিটিশ অভিনেতা পিটার উস্তিনভকে সাক্ষাৎকার দেওয়ার কথা ছিল শ্রীমতী গান্ধীর। নতুন দিল্লির ১ নং সফদরজঙ্গ রোডস্থ প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের উদ্যানপথ ধরে হেঁটে যাচ্ছিলেন তিনি। সৎবন্ত ও বিয়ন্ত সিংহের দ্বারা রক্ষিত একটি ছোটো দরজার ভিতর দিয়ে যাওয়ার সময় তারা সরাসরি ইন্দিরা গান্ধীকে গুলি করে। বিয়ন্ত সিংহ ধার থেকে তিন রাউন্ড এবং সৎবন্ত সিংহ নিজের স্টেনগান থেকে তার প্রস্টেট লক্ষ্য করে ত্রিশ রাউন্ড গুলি ছোঁড়ে। অন্যান্য দেহরক্ষীরা বিয়ন্তকে ঘটনাস্থলেই গুলি করে হত্যা করে এবং সৎবন্তকে গ্রেফতার করে।

মৃত্যুসম্পাদনা

গুলিচালনার অব্যবহিত পরেই শীঘ্রাতিশীঘ্র দিল্লির জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় শ্রীমতী গান্ধীকে। অস্ত্রোপচার করে তার শরীরের উনিশটি বুলেটের সাতটি বের করে নেওয়া হয়। কিন্তু গুলিচালনার এক ঘণ্টার মধ্যেই তার মৃত্যু হয়। ৩ নভেম্বর মহাত্মা গান্ধীর সমাধিস্থল রাজঘাটের নিকটস্থ শক্তিস্থল নামক স্থানে তার সৎকারক্রিয়া সম্পন্ন হয়।

পরবর্তী ঘটনাসমূহসম্পাদনা

পরবর্তী চার দিনে ব্যাপক হিংসাত্মক ঘটনায় প্রাণ হারান সহস্রাধিক শিখ। এই ঘটনা ঘটে মূলত দিল্লি ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে। ইন্দিরা-হত্যার তদন্তের জন্য গঠিত জাস্টিস ঠক্কর কমিশন ষড়যন্ত্রের জন্য পৃথক তদন্তের পরামর্শ দেয়। সৎবন্ত সিংহ ও ষড়যন্ত্রকারী কেহার সিংহ মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হন। ১৯৮৯ সালের ৬ জানুয়ারি তাদের দণ্ডাদেশ কার্যকর করা হয়। সৎবন্ত সিংহই শেষ ব্যক্তি যাকে দিল্লির তিহার জেলে ফাঁসি দেওয়া হয়।[৬][৭]

আরও দেখুনসম্পাদনা

তথ্যসূত্রসম্পাদনা

  1. "Assassination in India: A Leader of Will and Force; Indira Gandhi, Born to Politics, Left Her Own Imprint on India"। নভেম্বর ১, ১৯৮৪।  অজানা প্যারামিটার |accessed= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য)
  2. "1984: Assassination and revenge"  অজানা প্যারামিটার |accessed= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য)
  3. "1984: Indian prime minister shot dead"  অজানা প্যারামিটার |accessed= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য)
  4. Martha Crenshaw (১৯৯৫)। Terrorism in ContextPenn State Press। পৃষ্ঠা 385 of 633। আইএসবিএন 978-0-271-01015-1 
  5. Singh, Pritam (২০০৮)। Federalism, Nationalism and Development: India and the Punjab Economy। Routledge। পৃষ্ঠা 44। আইএসবিএন 978-0-415-45666-1। সংগ্রহের তারিখ ২৯ জুলাই ২০১০ 
  6. http://www.nytimes.com/1989/01/06/world/india-hangs-two-sikhs-convicted-in-assassination-of-indira-gandhi.html
  7. http://news.bbc.co.uk/onthisday/hi/dates/stories/october/31/newsid_2464000/2464423.stm