ইকবাল হুসেন কোরেশি

পাকিস্তানী রসায়নবিদ

ইকবাল হুসেন কোরেশি (উর্দু:اقبال حسين قریشی) ২৭শে সেপ্টেম্বর ১৯৩৭ – ৮ ডিসেম্বর ২০১২) এসআই, এফএপিএস,[১] যিনি আই.এইচ. কোরেশি নামে বেশি পরিচিত, একজন পাকিস্তানি নিউক্লীয় রসায়নবিদ এবং করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নের একজন ইমেরিটাস অধ্যাপক ছিলেন।[২] বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদানের বৈজ্ঞানিক বোধগম্যতার প্রধান অবদানকারী ছিলেন কোরেশি, তিনি মূলত যে উপাদানের কথা বলেছিলেন সেগুলি হল বিসমাথ, কোবাল্ট, স্ট্রনশিয়াম, থ্যালিয়াম, ট্রাইটিয়াম, লোহা, রুবিডিয়াম এবং দস্তা:১-৬৮[৩][৪]

ইকবাল হুসেন কোরেশি
জন্ম(১৯৩৭-০৯-২৭)২৭ সেপ্টেম্বর ১৯৩৭
আজমির, রাজস্থান, ব্রিটিশ ভারত
(বর্তমানে, রাজস্থানে ভারত)
মৃত্যু৮ ডিসেম্বর ২০১২(2012-12-08) (বয়স ৭৫)
সমাধিগিজরি সমাধিস্থান
জাতীয়তাপাকিস্তানি
নাগরিকত্বপাকিস্তান
মাতৃশিক্ষায়তনসিন্ধু বিশ্ববিদ্যালয়
মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়
টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়
পরিচিতির কারণপাকিস্তানের পারমাণবিক ধ্বংসাস্ত্র কার্যক্রম
তেজষ্ক্রিয়-রসায়ন এবং সমস্থানিক পৃথকীকরণ
পুরস্কারসিতারা-ই-ইমতিয়াজ (১৯৯২)
খোয়ারিজমি পুরস্কার (১৯৯৭)
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন
কর্মক্ষেত্রনিউক্লীয় রসায়ন
প্রতিষ্ঠানসমূহপাকিস্তান পারমাণবিক শক্তি কমিশন (পিএইসি)
ফলিত বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠান
পারমাণবিক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ
জাতীয় মান ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান
অভিসন্দর্ভের শিরোনামমিশ্রণ বিনিময় দ্বারা তেজষ্ক্রিয়-রাসায়নিক পৃথকীকরণ (১৯৬৩)
ডক্টরাল উপদেষ্টাতাকাশি মুকাইবো
অন্যান্য উচ্চশিক্ষায়তনিক উপদেষ্টাডব্লিউ. ডব্লিউ. মেইনকে
ওয়েবসাইটএন.এম. বাটের শংসাপত্র

জাতীয় গবেষণাগারে কোরেশির গবেষণার কাজ শেষ হবার পরে, তাঁর কর্মজীবনের বেশিরভাগ সময় পাকিস্তান সরকারের কাজে কেটেছিল। পারমাণবিক নীতি সংক্রান্ত বিষয়ে তিনি সরকারের পরামর্শদাতা ছিলেন। তিনি পারমাণবিক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (পিএনআরএ) এবং পারমাণবিক বিজ্ঞানের শান্তিপূর্ণ প্রয়োগে নিজের প্রভাবশালী ভূমিকাকে কাজে লাগিয়েছিলেন।[২] তিনি নীলোরের ফলিত বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠানে শিক্ষাবিদ এবং গবেষণা বিজ্ঞানী হিসাবে বহু বছর কাটিয়েছেন। এর পরে তিনি করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার পদ গ্রহণ করেছিলেন।[২]

জীবনী সম্পাদনা

ইকবাল হুসেন কোরেশি ১৯৩৭ সালের ২৭শে সেপ্টেম্বর ভারতের রাজস্থানের আজমিরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। সেখানে তিনি তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেছিলেন।[২] ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাজনের পর, তাঁর পরিবার পাকিস্তানে চলে এসেছিল এবং সিন্ধু প্রদেশের হায়দরাবাদে বসতি স্থাপন করেছিল। সেখানে তিনি একটি সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক উত্তীর্ণ হয়েছিলেন।[২] তিনি একজন বিস্ময়কর শিশু ছিলেন, কিশোর বয়সেই সিন্ধু বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন অধ্যয়নের জন্য তাঁর আবেদন গৃহীত হয়েছিল।:৮৮-৮৯[৫] ১৯৫৬ সালে, তিনি সিন্ধু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে স্নাতক (বিএসসি) ডিগ্রি লাভ করেছিলেন। শ্রেণীতে শীর্ষস্থান লাভ করার জন্য তিনি খবরের কাগজগুলিতে চর্চিত হয়েছিলেন এবং রৌপ্যপদক সহ স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেছিলেন।:৮৯[৫] তিনি সিন্ধু বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যান, এবং ১৯৫৮ সালে স্বর্ণ পদক নিয়ে রসায়নে স্নাতকোত্তর (এমএসসি) উত্তীর্ণ হন।:৮৮[২][৫]

১৯৬০ সালে পাকিস্তান পারমাণবিক শক্তি কমিশন (পিএইসি) থেকে বৃত্তি অর্জনের পরে, কুরেশি মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিতে আমেরিকা গিয়েছিলেন এবং ১৯৬২ সালে নিউক্লীয় রসায়নে স্নাতকোত্তর (এমএসসি) করেছিলেন।:৯৭[৬] তিনি ডক্টরাল করার জন্য জাপানে গিয়েছিলেন, সেখানে তিনি টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। ১৯৬২ সালে তিনি তাঁর গবেষণাপত্র, "মিশ্রণ বিনিময় দ্বারা তেজষ্ক্রিয়-রাসায়নিক পৃথকীকরণ" প্রকাশ করেছিলেন, যার মধ্যে রাসায়নিক মিশ্রণের প্রয়োগে তেজষ্ক্রিয়-রসায়ন নিয়ে মৌলিক কাজ ছিল।[৭] ১৯৯৪ সালে, তাঁর জীবনী লেখা হয়েছিল এবং সেটি প্রকাশ করেছিল মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়। এটি প্রকাশিত হয়েছিল আমেরিকান মেন অ্যান্ড উইমেন অফ সায়েন্স: এ বায়োগ্রাফিক্যাল ডিরেক্টরি অফ টুডে'স লিডারস ইন ফিজিক্যাল, বায়োলজিক্যাল, অ্যান্ড রিলেটেড সায়েন্সেস পত্রিকায়।:১২[৮]

১৯৬৭ সালে, কোরেশি যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে এসে অল্প দিনের জন্য ডক্টরাল পরবর্তী গবেষক হিসাবে মার্কিন জাতীয় মান ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজ করেছিলেন। তারপরে ১৯৬৯ সালে তিনি ডেনমার্ক চলে গিয়েছিলেন।:২১০[৯]:৯৬[২] ডেনমার্কে, তিনি ইউরেনিয়াম এবং প্লুটোনিয়াম সমস্থানিক পৃথকীকরণ ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ পেয়েছিলেন, ১৯৭১ সালে তিনি যখন পাকিস্তানে ফিরে এসেছিলেন তখন এই দক্ষতা এবং জ্ঞান তাঁর যথেষ্ট কাজে লেগেছিল।[২]

পাকিস্তান পারমাণবিক শক্তি কমিশন সম্পাদনা

১৯৬০ সালে, কোরেশি পাকিস্তান পারমাণবিক শক্তি কমিশনের (পিএইসি) সাথে যুক্ত হয়েছিলেন, এবং লাহোরের পারমাণবিক শক্তি কেন্দ্রে তাঁর কর্মস্থল ছিল। সেখানেই তেজষ্ক্রিয়-রসায়ন নিয়ে তাঁর আগ্রহ তৈরি হয়েছিল।:৯৬[১০] ১৯৭১ সালে ডেনমার্ক থেকে পাকিস্তানে ফিরে এসে, তিনি নীলোরের পাকিস্তান প্রকৌশল ও ফলিত বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠানে (জাতীয় পরীক্ষাগার) যোগ দেন। তিনি সেখানে নিউক্লীয় রসায়ন বিভাগে (এনসিডি) যুক্ত ছিলেন।:৯৬[১০]

১৯৭২ সালে, কোরেশি যে বিজ্ঞানীদের দলে যোগ দিয়েছিলেন তাঁরা তেজস্ক্রিয় উপাদান প্লুটোনিয়ামের দশার সমীকরণ নিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন। ১৯৭৩ সালে তিনি পাকিস্তান পারমাণবিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ইনস্টিটিউটে কম্পিউটার দ্বারা বিকিরণ শনাক্তকরণ রাসায়নিক বিশ্লেষণ পরীক্ষাগার প্রতিষ্ঠা করেন।:৯৬[১০] ১৯৭৪ সালে, কুরেশি এবং তাঁর দল যখন জাতীয় পরীক্ষাগারে গবেষণা করছিলেন, তখন কোরেশি ভারতের রাজস্থান থেকে আগত তড়িৎ-চৌম্বকীয় বিকিরণ শনাক্ত করার বিষয়টি প্রথম নিশ্চিত করেছিলেন। তিনি নিউট্রন সক্রিয়করণ বিশ্লেষণ ব্যবহার করে, প্রথম ভারতীয় পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষা স্মাইলিং বুদ্ধ নিশ্চিত করেছিলেন, পরে ভারত ঘোষণা করেছিল যে সত্যই পোখরান পরীক্ষা সীমায় পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষা হয়েছিল।:৯৬[১০] উল্লেখযোগ্যভাবে, যে দলটি বিভাজন যন্ত্রে তাপমোচী রাসায়নিক বিক্রিয়ার জন্য রাসায়নিক সমীকরণের প্রয়োজনীয় সমতা এনেছিল সেই দলটিকে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।:৫৭-৫৮[১১] ১৯৭৭ সালের মধ্যে, তিনি একটি বর্ধিত শক্তি বিভাজন অস্ত্রে নিউক্লীয় কিউ-মান এবং শক্তির ভারসাম্য রক্ষার কৌশল আবিষ্কার করেছিলেন।[১২][১৩]

অবশেষে, কোরেশি পারমাণবিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ইনস্টিটিউটে পারমাণবিক রসায়ন বিভাগের (এনসিডি) প্রধান হন, ইউরেনিয়াম থেকে ঘন এবং বিচ্ছিন্ন প্লুটোনিয়ামকে পৃথক করার জন্য বহু-পর্যায়ের রাসায়নিক প্রক্রিয়াটি এই বিভাগেই সংঘটিত হয়েছিল।[১৩] এনসিডিতে, সাম্প্রতিক এবং আধুনিকতম প্রযুক্তি সমন্বিত বিশ্লেষণযোগ্য রসায়ন পরীক্ষাগার নিয়ে বিশ্লেষণধর্মী রসায়নবিদ গোষ্ঠী তৈরিতে তদারকির ভূমিকাও তিনি পালন করেছিলেন। তাঁদের অধীনে ছিল বিশ্লেষণযোগ্য রসায়ন গবেষণাগার, পারমাণবিক শোষণ বর্ণালীবীক্ষণ পরীক্ষাগার, বিকিরণ বর্ণালীবীক্ষণ পরীক্ষাগার, ক্রোমাটোগ্রাফি পরীক্ষাগার, তড়িৎ রাসায়নিক বিশ্লেষণ পরীক্ষাগার এবং তেজষ্ক্রিয় সমস্থানিক উৎপাদন পরীক্ষাগার।:৯৬[১০]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Deceased Fellows"Pakistan Academy of Sciences। ১৫ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ ডিসেম্বর ২০১৩ 
  2. Butt, Noor M.। "Obituary: Dr. Iqbal Hussain Qureshi" (পিডিএফ)। N.M. Butt, Pakistan Academy of Sciences। ২০ জুন ২০১৫ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ ডিসেম্বর ২০১৩ 
  3. Qureshi, Iqbal Hessain (১৯৬৩)। Radiochemical Separation by Amalgam Exchange (ইংরেজি ভাষায়)। United States Atomic Energy Commission, Technical Information Service Extension। সংগ্রহের তারিখ ১১ মে ২০২০ 
  4. "Search for All Records | OSTI.GOV"www.osti.gov। সংগ্রহের তারিখ ১১ মে ২০২০ 
  5. Staff (১৯৭০), Biographical Encyclopedia of Pakistan, Islamabad: National Archives of Pakistan, zWxmAAAAMAAJ 
  6. Michigan, University of (১৯৬২)। "Master of Science"। Commencement Programs (googlebooks) (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১১ মে ২০২০ 
  7. Nuclear Science Abstracts, 1, 17, Ann Arbor, Michigan: University of Michigan at Ann Arbor, ১৯৬৩, পৃষ্ঠা 4552, ukohAAAAMAAJ 
  8. Kalte, Pamela M.; Nemeh, Katherine H.; Schusterbauer, Noah (২০০৫)। American Men & Women of Science: A Biographical Directory of Today's Leaders in Physical, Biological, and Related Sciences (ইংরেজি ভাষায়)। Thomson Gale। আইএসবিএন 978-0-7876-7398-7 
  9. Sciences, Pakistan Academy of (১৯৯৫)। Proceedings of the Pakistan Academy of Sciences (ইংরেজি ভাষায়)। Pakistan Academy of Sciences.। 
  10. "Eulogy by Dr. NM Butt" (পিডিএফ)। Eulogy by Dr. NM Butt। সংগ্রহের তারিখ ১২ মে ২০২০ 
  11. Rehman, Shahidur (১৯৯৯)। Long Road to Chagai। Islamabad: Printwise Publications। 
  12. Dr. Iqbal Hussain Qureshi (I. H. Qureshi) was one of the leading scientists who were involved in the development of a nuclear weapon in early 1970s. Qureshi had led NCD in the physio-chemical development of fissionable materials in the device. Qureshi had discovered the 6
    3
    Li
    +2
    1
    H
    4
    2
    He
    +22.4 MeV equation for balancing the Q-value and energy balance in a fission device.
  13. Khan, Feroz Hassan (২০১২)। Eating grass the making of the Pakistani bomb। Stanford, California: Stanford Security Studies, an imprint of Stanford University Press। আইএসবিএন 978-0804784801 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা