ইউজিন ওনিল
ইউজিন গ্ল্যাডস্টোন ওনিল (ইংরেজি: Eugene Gladstone O'Neill; ১৬ অক্টোবর ১৮৮৮ - ২৭ নভেম্বর ১৯৫৩) ছিলেন একজন মার্কিন নাট্যকার। সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী ওনিলের কাব্যিক শিরোনামের নাটকগুলোর মধ্য দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাটকে বাস্তবতাবাদের কৌশলের ধারণার সূত্রপাত ঘটে, যা পূর্ববর্তী রুশ নাট্যকার আন্তন চেখভ, নরওয়েজীয় নাট্যকার হেনরিক ইবসেন ও সুয়েডীয় নাট্যকার আউগুস্ট স্ট্রিন্ডবের্গের কৌশলের সাথে সম্পর্কিত। তার লং ডেস জার্নি ইনটু নাইট নাটকটিকে প্রায়ই টেনেসি উইলিয়ামসের আ স্ট্রিটকার নেমড ডিজায়ার ও আর্থার মিলারের ডেথ অব আ সেলসম্যান নাটকের সাথে বিংশ শতাব্দীর অন্যতম চমৎকার মার্কিন নাটকের তালিকায় দেখা যায়।[১]
ইউজিন ওনিল | |
---|---|
স্থানীয় নাম | ইংরেজি: Eugene O'Neill |
জন্ম | ইউজিন গ্ল্যাডস্টোন ওনিল ১৬ অক্টোবর ১৮৮৮ নিউ ইয়র্ক সিটি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র |
মৃত্যু | নভেম্বর ২৭, ১৯৫৩ বস্টন, ম্যাসাচুসেট্স, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র | (বয়স ৬৫)
পেশা | নাট্যকার |
জাতীয়তা | মার্কিন |
উল্লেখযোগ্য পুরস্কার | সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার (১৯৩৬) নাটকে পুলিৎজার পুরস্কার (১৯২০, ১৯২২, ১৯২৮, ১৯৫৭) |
দাম্পত্যসঙ্গী | ক্যাথলিন জেনকিন্স (বি. ১৯০৯–১৯১২) অ্যাগনেস বোল্টন (বি. ১৯১৮; বিচ্ছেদ. ১৯২৯) ক্যারলট্টা মন্টারি (বি. ১৯২৯) |
সন্তান |
|
আত্মীয় |
|
স্বাক্ষর |
ওনিলের নাটকগুলোতে প্রথম মার্কিন ইংরেজির উপভাষা সংলাপ ব্যবহার করা হয় এবং সমাজের কম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রাবলির মিশ্রণ দেখা যায়। তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণের সংগ্রাম, কিন্তু পরিশেষে মোহমুক্তি ও নৈরাশ্যকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। তার অল্প সংখ্যক হাস্যরসাত্মক নাটকের মধ্যে আহ! ওয়াইল্ডারনেস!-ই সর্বাধিক পরিচিত।[২][৩] তার প্রায় অন্য সকল নাটকেই কিছু বিয়োগান্ত ও ব্যক্তিগত হতাশার চিত্র দেখা যায়।
প্রারম্ভিক জীবন
সম্পাদনাওনিল ১৯৮৮ সালের ১৬ই অক্টোবর নিউ ইয়র্ক সিটির তৎকালীন লংএকর স্কয়ারের (বর্তমান টাইমস স্কয়ার) ব্যারেট হাউজ নামক এক হোটেলে জন্মগ্রহণ করেন।[৪] ১৯৫৭ সালে সেখানে একটি স্মারক ফলক স্থাপন করা হয়।[৪][৫] স্থানটি বর্তমানে ১৫০০ ব্রডওয়ের অধিকারে রয়েছে, যেখানে অফিস, দোকান ও এবিসি স্টুডিওজ অবস্থিত।[৬]
তার পিতা আইরিশ অভিবাসী অভিনেতা জেমস ওনিল এবং মাতা আইরিশ বংশোদ্ভুত ম্যারি এলেন কুইনলান। তার পিতার মদ্যাসক্তি ছিল এবং তার মায়ের মরফিনে আসক্তি ছিল, ইউজিনের জন্মের সময় জন্মদানে জটিলতার কারনে ব্যথার উপশমে তাকে মরফিনের ব্যবস্থাপত্র দেওয়া হয়েছিল।[৭] তার পিতার নাট্য কোম্পানির সাথে প্রায়ই সফরের কারণে ১৮৯৫ সালে ইউজিনকে দ্য ব্রংক্সের রিভারডেল শাখার ক্যাথলিক বোর্ডিং স্কুল সেন্ট অ্যালোয়সিয়াস অ্যাকাডেমি ফর বয়েজে ভর্তি করা হয়।[৮] ১৯০০ সালে তাকে ম্যানহাটনের ৫৯ স্ট্রিটের দ্য লা সাল ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়।[৯]
কর্মজীবন
সম্পাদনাওনিলের প্রথম প্রকাশিত নাটক বিয়ন্ড দ্য হরাইজন ১৯২০ সালে ব্রডওয়েতে মঞ্চস্থ হয় ও সমাদৃত হয়। নাটকটি নাটকে পুলিৎজার পুরস্কার অর্জন করে। তার প্রথম আলোচিত সফল নাটক হল দি এম্পেরার জোন্স। এটি ১৯২০ সালে ব্রডওয়েতে মঞ্চস্থ হয়। এটি হাইতিতে মার্কিন দখল নিয়ে রচিত, যা সেই বছরের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের বিতর্কের বিষয়বস্তু ছিল।[১০] তার রচিত অ্যানা ক্রিস্টি ১৯২২ সালে পুলিৎজার পুরস্কার অর্জন করে। এরপর তিনি ডিজায়ার আন্ডার দি এলমস (১৯২৪) নাটক লিখেন। তার স্ট্রেঞ্জ ইন্টারলুড নাটকটি ১৯২৮ সালে পুলিৎজার পুরস্কার অর্জন করে।
১৯৩০-এর দশকে তার উল্লেখযোগ্য নাটক হল মোর্নিং বিকামস ইলেক্ট্রা ও হাস্যরসাত্মক আহ, ওয়াইল্ডারনেস।[১১] ১৯৩৫ সালে তিনি আমেরিকান ফিলোসফিক্যাল সোসাইটির সদস্য নির্বাচিত হন।[১২] ১৯৩৬ সালে সুয়েডীয় একাডেমির সদস্য হেনরিক শুক ওনিলকে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত করেন এবং ১৯৩৭ সালে তিনি এই পুরস্কার অর্জন করেন।[১৩]
মৃত্যু
সম্পাদনাওনিল ১৯৫৩ সালের ২৭শে নভেম্বর ৬৫ বছর বয়সে বস্টনের বে স্টেট রোডের শেরাটন হোটেলে (বর্তমান বস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের কিলাচান্দ হল) মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তিনি বলছিলেন, "আমি জানতাম। আমি জানতাম। হোটেলের কক্ষে জন্মেছি এবং হোটেলের কক্ষেই মারা যাব।"[১৪] তাকে বস্টনের জামাইকা প্লেইনের ফরেস্ট হিল সেমেটারিতে সমাহিত করা হয়।
তার স্ত্রী ক্যারলট্টা মন্টারি ১৯৫৬ সালে আত্মজীবনীমূলক নাটক লং ডেস জার্নি ইনটু নাইট প্রকাশের ব্যবস্থা করেন। এটি ১৯৫৭ সালে পুলিৎজার পুরস্কার অর্জন করে।[১৫]
সৃষ্টিকর্ম
সম্পাদনাপূর্ণ নাটক
সম্পাদনা- ব্রেড অ্যান্ড বাটার (Bread and Butter, ১৯১৪)
- সেরভিটিউড (Servitude, ১৯১৪)
- দ্য পারসোনাল ইকুয়েশন (The Personal Equation, ১৯১৫)
- নাউ আই আস্ক ইউ (Now I Ask You, ১৯১৬)
- বিয়ন্ড দ্য হরাইজন (Beyond the Horizon, ১৯১৮) - পুলিৎজার পুরস্কার ১৯২০ বিজয়ী
- দ্য স্ট্র (The Straw, ১৯১৯)
- ক্রিস ক্রিস্টোফারসেন (Chris Christophersen, ১৯১৯)
- গোল্ড (Gold, ১৯২০)
- অ্যানা ক্রিস্টি (Anna Christie, ১৯২০) - পুলিৎজার পুরস্কার ১৯২২ বিজয়ী
- দি এম্পেরার জোন্স (The Emperor Jones, ১৯২০)
- ডিফরেন্ট (Diff'rent, ১৯২১)
- দ্য ফার্স্ট ম্যান (The First Man, ১৯২২)
- দি হেয়ারি এপ (The Hairy Ape, ১৯২২)
- দ্য ফাউন্টেন (The Fountain, ১৯২৩)
- মার্কো মিলিয়ন্স (Marco Millions, ১৯২৩–২৫)
- অল গড্স চিলুন গট উইংস (All God's Chillun Got Wings, ১৯২৪)
- ওয়েল্ডেড (Welded, ১৯২৪)
- ডিজায়ার আন্ডার দি এমস (Desire Under the Elms, ১৯২৪)
- ল্যাজারুস লাফড (Lazarus Laughed, ১৯২৫–২৬)
- দ্য গ্রেট গড ব্রাউন (The Great God Brown, ১৯২৬)
- স্ট্রেঞ্জ ইন্টারলুড (Strange Interlude, ১৯২৮) - পুলিৎজার পুরস্কার বিজয়ী
- ডায়নামো (Dynamo, ১৯২৯)
- মোর্নিং বিকামস ইলেক্ট্রা (Mourning Becomes Electra, ১৯৩১)
- আহ, ওয়াইল্ডারনেস! (Ah, Wilderness!, ১৯৩৩)
- ডেজ উইদাউট এন্ড (Days Without End, ১৯৩৩)
- দি আইসম্যান কামেথ (The Iceman Cometh, রচিত ১৯৩৯, প্রকাশিত ১৯৪০, প্রথম মঞ্চস্থ ১৯৪৬)
- লং ডেস জার্নি ইনটু নাইট (Long Day's Journey into Night, রচিত ১৯৪১, প্রথম মঞ্চস্থ ১৯৫৬) - পুলিৎজার পুরস্কার ১৯৫৭ বিজয়ী
- আ মুন ফর দ্য মিসবিগটেন (A Moon for the Misbegotten, রচিত ১৯৪১-৪৩, প্রথম মঞ্চস্থ ১৯৪৭)
- আ টাচ অব দ্য পোয়েট (A Touch of the Poet, সমাপ্ত ১৯৪২, প্রথম মঞ্চস্থ ১৯৫৮)
- মোর স্টেটলি ম্যানসন্স (More Stately Mansions, ওনিলের নথিপত্রে দ্বিতীয় পাণ্ডুলিপি পাওয়া গিয়েছিল, প্রথম মঞ্চস্থ ১৯৬৭)
- দ্য কামস অব ক্যাপ্রিকর্ন (The Calms of Capricorn, প্রকাশিত ১৯৮৩)
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ব্লুম, হ্যারল্ড (২০০৯)। Tennessee Williams, Updated Edition (ইংরেজি ভাষায়)। ইনফোবেজ পাবলিশিং। আইএসবিএন 9781438113494। সংগ্রহের তারিখ ১১ জুন ২০১৯।
- ↑ দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস, ২৫ আগস্ট ২০০৩। "'Next year Playwrights Theater will present an unproduced O'Neill comedy, Now I Ask You, a comic spin on Ibsen's Hedda Gabler।"
- ↑ দি ইউজিন ওনিল ফাউন্ডেশন নিউজলেটার। "Now I Ask You, along with The Movie Man, ... is the only surviving comedy from O’Neill’s early years."
- ↑ ক খ গেলব, আর্থার (১৭ অক্টোবর ১৯৫৭)। "O'Neill's Birthplace Is Marked By Plaque at Times Square Site"। দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস। পৃষ্ঠা ৩৫। সংগ্রহের তারিখ ৫ অক্টোবর ২০২৪।
- ↑ সিমনসন, রবার্ট (২৩ জুলাই ২০১২)। "Ask Playbill.com: A Question About Eugene O'Neill's Birthplace, in a Broadway Hotel"। প্লেবিল। সংগ্রহের তারিখ ৫ অক্টোবর ২০২৪।
- ↑ হেন্ডারসন, ক্যাথি (২১ এপ্রিল ২০০৯)। "The Tragic Roots of Eugene O'Neill's Desire Under the Elms"। ব্রডওয়ে। সংগ্রহের তারিখ ৫ অক্টোবর ২০২৪।
- ↑ লঁদ্রে, ফেলিসিয়া (২০১৬)। "Eugene O'neill: A Life in Four Acts by Robert M. Dowling, and: Eugene O'neill: The Contemporary Reviews ed. by Jackson R. Bryer and Robert M. Dowiling (review)"। থিয়েটার হিস্ট্রি স্টাডিজ। ৩৫: ৩৫১–৩৫৩। এসটুসিআইডি 193596557। ডিওআই:10.1353/ths.2016.0027।
- ↑ "Eugene O'Neill"। আমেরিকান সোসাইটি অব অথরস অ্যান্ড রাইটার্স। সংগ্রহের তারিখ ৫ অক্টোবর ২০২৪।
- ↑ ডাউলিং, রবার্ট এম. (১ জানুয়ারি ২০১৪)। Eugene O'Neill: A Life in Four Acts (ইংরেজি ভাষায়)। ইয়েল ইউনিভার্সিটি প্রেস। আইএসবিএন 978-0-300-17033-7। সংগ্রহের তারিখ ৫ অক্টোবর ২০২৪।
- ↑ রেন্ডা, ম্যারি (২০০১)। Taking Haiti: Military Occupation and the Culture of U.S. Imperialism । চ্যাপেল হিল: ইউনিভার্সিটি অব নর্থ ক্যালিফোর্নিয়া প্রেস। পৃষ্ঠা ১৯৮–২১২। আইএসবিএন 0-8078-4938-3।
- ↑ ভ্যান গেল্ডার, লরেন্স (২৫ আগস্ট ২০০৩)। "Arts Briefing"। দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ৫ অক্টোবর ২০২৪।
- ↑ "APS Member History"। আমেরিকান ফিলোসফিক্যাল সোসাইটি (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ৫ অক্টোবর ২০২৪।
- ↑ "Nomination Database" (ইংরেজি ভাষায়)। নোবেল পুরস্কার। সংগ্রহের তারিখ ৫ অক্টোবর ২০২৪।
- ↑ শিফার, লুইস (১৯৭৩)। O'Neill: Son and Artist । লিটল, ব্রাউন অ্যান্ড কো.। আইএসবিএন 0-316-78337-4।
- ↑ "Long Day's Journey into Night | play by O'Neill"। এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ৫ অক্টোবর ২০২৪।
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- ইউজিন ওনিলের দাপ্তরিক ওয়েবসাইট
- ক্যাসা গ্যানোট্টার দাপ্তরিক ওয়েবসাইট
- গুটেনবের্গ প্রকল্পে Eugene O'Neill-এর সাহিত্যকর্ম ও রচনাবলী (ইংরেজি)
- ইন্টারনেট আর্কাইভে ইউজিন ওনিল কর্তৃক কাজ বা সম্পর্কে তথ্য
- লিব্রিভক্সের পাবলিক ডোমেইন অডিওবুকসে ইউজিন ওনিল
- ওপেন লাইব্রেরিতে ইউজিন ওনিল-এর সৃষ্টিকর্ম
- ইন্টারনেট অফ-ব্রডওয়ে ডেটাবেজে ইউজিন ওনিল (ইংরেজি)
- ইন্টারনেট ব্রডওয়ে ডেটাবেজে ইউজিন ওনিল (ইংরেজি)
- ইন্টারনেট মুভি ডেটাবেজে ইউজিন ওনিল (ইংরেজি)
- Eugene O'Neill | PlaybillVault.com
- নোবেল ফাউন্ডেশনে ইউজিন ওনিলের জীবনী ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১ ডিসেম্বর ২০১১ তারিখে
পুরস্কার ও স্বীকৃতি | ||
---|---|---|
পূর্বসূরী ওয়ারেন এস. স্টোন |
টাইম ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদ ১৭ মার্চ ১৯২৪ |
উত্তরসূরী রেমোঁ পোয়াঁকারে |