আল-মুহতাদি
আবু ইসহাক মুহাম্মদ ইবনে আল ওয়াসিক (? – ২১ জুন ৮৭০) ১৪তম আব্বাসীয় খলিফা যিনি তার রাজকীয় নাম আল মুহতাদি বি-ল্লাহ (আরবি: المهتدي) নামে বেশি পরিচিত ছিলেন। ৮৬৯ থেকে ৮৭০ সাল পর্যন্ত তিনি খলিফার পদে আসীন ছিলেন।
আল মুহতাদি Al-Muhtadi المهتدي | |
---|---|
খলিফা আমিরুল মুমিনুন | |
আব্বাসীয় খিলাফতের ১৪শ খলিফা | |
রাজত্ব | ৮৬৯-৮৭০ |
পূর্বসূরি | আল মুতাজ |
উত্তরসূরি | আল মুতামিদ |
মৃত্যু | ২১ জুন ৮৭০ |
রাজবংশ | আব্বাসীয় |
পিতা | আল ওয়াসিক |
মাতা | কুরব |
ধর্ম | ইসলাম |
প্রাথমিক জীবন
সম্পাদনাআল-মুহতাদির মা কুরব ছিলেন গ্রিক দাস ।[১] ৮৪৭ সালের আগস্ট মাসে তার পিতা খলিফা আল-ওয়াসিকের (রাজত্ব. ৮৪২-৮৪৭) মৃত্যুর পর কিছু কর্মকর্তা ছিলেন যারা তরুণ আল-মুহতাদিকে খলিফা হিসেবে নির্বাচিত করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা তার চাচা আল-মুতাওয়াক্কিল (র. ৮৪৭-৮৬১) কে খলিফা হিসাবে গ্রহণ করেন।[২]
খিলাফাত
সম্পাদনাখলিফা আল মুতাজের (রাজত্বঃ৮৬৬-৮৬৯) ১৫ জুলাই ৮৬৯ মৃত্যুর পর তুর্কি প্রহরীর নেতারা ২১/২২ জুলাই তারিখে আল-মুহতাদিকে নতুন খলিফা হিসেবে বেছে নেন।[২] অন্য খলিফাদের তুলনায় তিনি বেশ সফল ছিলেন। তার অধীনে দরবারে সংস্কার করা হয়। গায়িকা ও সঙ্গীতকে দরবার থেকে বিদায় দেয়া হয়। প্রতিদিন খোলা আদালতে বিচার কাজ করা হত। মদ ও জুয়াও নিষিদ্ধ করা হয়।[২][৩] তিনি উমাইয়া খলিফা উমর ইবনে আবদুল আজিজকে তার কাজের আদর্শরূপে স্থির করেন,[২] যা ইসলামী শাসন ব্যবস্থার মডেল বিবেচনা করা হতো।[৪] "শক্তি এবং ক্ষমতা" একত্রিত করে, তিনি খলিফার কর্তৃত্ব এবং ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন,[২] যা তুর্কি সেনাপতিদের ঝগড়ার কারণে চলমান "সামারার নৈরাজ্য" এর সময় ক্ষয় প্রাপ্ত হয়েছিল।[৫]
আল-মুহতাদি প্রদেশগুলোতে আলীয়দের (আলীর বংশধরা) উত্থানের মুখোমুখি হন, কিন্তু তার ক্ষমতার জন্য প্রধান হুমকি ছিল তুর্কি কমান্ডাররা।[২] তার শাসনের প্রথম মাসের প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব ছিলেন সালেহ ইবনে ওয়াসিফ, কিন্তু তিনিও সৈন্যদের অর্থ প্রদানের জন্য পর্যাপ্ত রাজস্ব প্রদান করতে ব্যর্থ হন। যদিও তিনি পূর্ববর্তী উজির আহমাদ ইবনে ইসরাইল এবং সচিবদের (কাতিব) চাঁদাবাজির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছিলেন, তবুও তার ক্ষমতা হ্রাস পেতে থাকে।[৩] তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী মুসা ইবনে বুগা হামাদানে তার আধা-নির্বাসন থেকে ফিরে আসার সুযোগটি ব্যবহার করেন এবং ৮৬৯ সালের ডিসেম্বরে সামারা পৌঁছান। সেখানে তিনি আল-মুহতাদিকে আল-মু'তাজের মা কাবিহার ধন সম্পদ ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য সালিহকে শাস্তি দেওয়ার শপথ নিতে বাধ্য করেন। সালেহ আত্মগোপন করেন, যার ফলে তুর্কিরা আল-মুহতাদিকে বিদ্রোহ করে এবং প্রায় ক্ষমতাচ্যুত করে। যখন তিনি সালিহকে ক্ষমা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তখনই তারা নমনীয় হয়েছিল, কিন্তু যখন সালেহ উপস্থিত হননি, তখন তার সৈন্যরা সামারাকে লুটপাট করতে শুরু করে, যতক্ষণ না মুসা এবং তার সৈন্যরা তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেন। এর পরপরই মুসার লোকেরা সালেহকে খুজে বের করে মৃত্যুদণ্ড দেয়। এভাবে মুসা সরকারের নেতৃস্থানীয় কর্মকর্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন, সুলায়মান ইবনে ওয়াহব তার প্রধান সচিব হিসেবে নিয়োগ দেন।[২]
ইতিহাসবিদ খাতিব বলেন যে তিনি তার নেতৃত্বের দিন থেকে তার হত্যার আগ পর্যন্ত চিরস্থায়ী উপবাস গ্রহণ করেছিলেন।
পতন এবং মৃত্যু
সম্পাদনামুসা যখন খারিজিদের বিরুদ্ধে অভিযান করতে চলে যান, তখন আল-মুহতাদি সুযোগ নিয়ে তার এবং তার ভাই মুহাম্মদের বিরুদ্ধে জনগণকে উস্কানি দেন। আত্মসাতের অভিযোগে মুহাম্মদকে বিচারের আওতায় আনা হয় এবং তাকে নিন্দা জানানো হয়। যদিও আল-মুহতাদি ক্ষমার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, কিন্তু মুহাম্মদকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। এটি মুসার সাথে সম্পর্কের ফাটল কে দৃঢ় করে: মুসা তার সেনাবাহিনী নিয়ে রাজধানীতে আক্রমণ করে এবং খলিফার অনুগত সৈন্যদের পরাজিত করে। তিনি পদত্যাগ করতে অস্বীকার করেছিলেন, কিন্তু খলিফার ধর্মীয় মর্যাদা এবং জনগণের সমর্থনের আশ্রয় নিয়ে তার জীবন ও পদ টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করেছিলেন। তা সত্ত্বেও ৮৭০ সালের ২১ জুন তাকে হত্যা করা হয় এবং তার পরিবর্তে তার চাচাতো ভাই আল-মু'তামিদ (র. ৮৭০-৮৯২) কে খলিফা করা হয়।[২] আল মুহতাদির শাসন এক বছরের মত স্থায়ী হয় । এসময় তার বয়স ছিল আটত্রিশ বছর। প্রাচীন আরব লেখকরা তার ন্যায়বিচার ও মহানুভবতার প্রশংসা করেছেন। নিহত না হলে তিনি সেরা আব্বাসীয় খলিফা হতেন এমন বলা হয়।
জাফর ইবনে আবদুল ওয়াহিদ ইবনে জাফর খলিফা আল-মুহতাদির জানাজায় নামাজের ইমামতি করেন।[৬][৭]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Kennedy 2006, পৃ. 173।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ Zetterstéen ও Bosworth 1993, পৃ. 476–477।
- ↑ ক খ Kennedy 2004, পৃ. 173।
- ↑ Cobb 2000, পৃ. 821–822।
- ↑ Kennedy 2004, পৃ. 169–173।
- ↑ Waines 1992, পৃ. 99, 105।
- ↑ Melchert 1996, পৃ. 331।
উৎস
সম্পাদনা- Cobb, P. M. (২০০০)। "ʿUmar (II) b. ʿAbd al-ʿAzīz" । Bearman, P. J.; Bianquis, Th.; Bosworth, C. E.; van Donzel, E. & Heinrichs, W. P.। The Encyclopaedia of Islam, New Edition, Volume X: T–U। Leiden: E. J. Brill। পৃষ্ঠা 821–822। আইএসবিএন 90-04-11211-1।
- Kennedy, Hugh (২০০৪)। The Prophet and the Age of the Caliphates: The Islamic Near East from the 6th to the 11th Century (Second সংস্করণ)। Harlow: Longman। আইএসবিএন 978-0-582-40525-7।
- Kennedy, Hugh (২০০৬)। When Baghdad Ruled the Muslim World: The Rise and Fall of Islam's Greatest Dynasty। Cambridge, Massachusetts: Da Capo Press। আইএসবিএন 978-0-306814808।
- Waines, David, সম্পাদক (১৯৯২)। The History of al-Ṭabarī, Volume XXXVI: The Revolt of the Zanj, A.D. 869–879/A.H. 255–265। SUNY Series in Near Eastern Studies.। Albany, New York: State University of New York Press। আইএসবিএন 978-0-7914-0763-9।
- Zetterstéen, K. V. & Bosworth, C. E. (১৯৯৩)। "al-Muhtadī" । Bosworth, C. E.; van Donzel, E.; Heinrichs, W. P. & Pellat, Ch.। The Encyclopaedia of Islam, New Edition, Volume VII: Mif–Naz। Leiden: E. J. Brill। পৃষ্ঠা 476–477। আইএসবিএন 90-04-09419-9।
- This text is adapted from William Muir's public domain, The Caliphate: Its Rise, Decline, and Fall.
আল-মুহতাদি জন্ম: ? মৃত্যু: ৮৭০
| ||
সুন্নি ইসলাম পদবীসমূহ | ||
---|---|---|
পূর্বসূরী আল মুতাজ |
ইসলামের খলিফা ৮৬৯–৮৭০ |
উত্তরসূরী আল মুতামিদ |