আলিমুল ইসলাম (বীর প্রতীক)
আলিমুল ইসলাম (জন্ম: অজানা - মৃত্যু: ২০১০) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে। [১]
আলিমুল ইসলাম | |
---|---|
মৃত্যু | ২০১০ |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
নাগরিকত্ব | পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে) বাংলাদেশ |
পরিচিতির কারণ | বীর প্রতীক |
জন্ম ও শিক্ষাজীবন
সম্পাদনাআলিমুল ইসলামের পৈতৃক বাড়ি বরিশাল জেলার আগৈলঝারা উপজেলার রত্নপুর ইউনিয়নের রত্নপুর গ্রামে। তার বাবার নাম আবদুল করিম হাওলাদার এবং মায়ের নাম আমেনা বেগম। তার স্ত্রীর নাম রাজিয়া বেগম। তাদের দুই ছেলে ও তিন মেয়ে।
কর্মজীবন
সম্পাদনাআলিমুল ইসলাম পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আর্টিলারি রেজিমেন্টে কর্মরত ছিলেন। ১৯৭১ সালে তার ইউনিটের অবস্থান ছিল ঢাকা সেনানিবাসে। জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি থেকে তিনি আড়াই মাসের ছুটিতে ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে ৯ নম্বর সেক্টরের টাকি সাবসেক্টর এলাকায় যুদ্ধ করেন।
মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা
সম্পাদনা১৯৭১ সালের অক্টোবর মাসের প্রথম দিক। বৃহত্তর বরিশাল জেলার ঝালকাঠি, নলছিটি ও রাজাপুর এলাকায় যুদ্ধরত মুক্তিযোদ্ধারা যৌথভাবে ভান্ডারিয়া থানা আক্রমণের পরিকল্পনা করেন। এরপর মুক্তিযোদ্ধাদের কয়েকটি দল ঝালকাঠির গাবখান চ্যানেলের তীরে সেহাঙ্গল গ্রামে মিলিত হয়। একটি দলের নেতৃত্বে ছিলেন আলিমুল ইসলাম। তাদের সার্বিক নেতৃত্বে ছিলেন মোহাম্মদ শাহজাহান ওমর (বীর উত্তম)। মুক্তিযোদ্ধাদের সেহাঙ্গল গ্রাম থেকে ভান্ডারিয়া থানা আক্রমণে যাওয়ার কথা ছিল। নির্দিষ্ট দিন (সঠিক তারিখ জানা যায়নি) তারা ভান্ডারিয়ায় আক্রমণের জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকেন। এমন সময় খবর আসে, গাবখান চ্যানেলের কাউখালী প্রান্ত থেকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি গানবোট সেহাঙ্গলের দিকে এগিয়ে আসছে। এ অবস্থায় আলিমুল ইসলামসহ মুক্তিযোদ্ধারা ভান্ডারিয়ায় যাওয়ার পরিকল্পনা বাতিল করেন। তারা দ্রুত অবস্থান নেন সেহাঙ্গল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আশপাশে। গানবোটটি তাদের অবস্থানের কাছে আসামাত্র তারা আক্রমণ চালান। প্রথমে তারা গানবোট লক্ষ্য করে একটি দুই ইঞ্চি মর্টার ছোড়েন। নিখুঁত নিশানায় সেটি গানবোটে পড়ে, কিন্তু কোনো এক কারণে বিস্ফোরিত হয়নি। এরপর পাকিস্তানি সেনারা তাদের পাল্টা আক্রমণ করে। পাকিস্তানিরা গানবোট থেকে একের পর এক শেল ছোড়ে। সেখানে ছিল অনেক খেজুরগাছ। শেলের আঘাতে কয়েকটি বড় খেজুরগাছ ভেঙে পড়ে। একটির ভাঙা অংশ একজন মুক্তিযোদ্ধার গায়ের ওপর পড়ে। তিনি সঙ্গে সঙ্গে মারা যান। এ ছাড়া শেলের স্প্লিন্টারের আঘাত ও গুলিতে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা আহত হন। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর তীব্র আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকে ছত্রভঙ্গ হয়ে পেছনে চলে যান। আকস্মিক এই বিপর্যয়ে আলিমুল ইসলাম মনোবল হারাননি, বিচলিতও হননি। তার দলের সহযোদ্ধাদের সঙ্গে নিয়ে মাটি কামড়ে নিজেদের অবস্থানে থেকে বিপুল বিক্রমে পাকিস্তানি আক্রমণ মোকাবিলা করেন। তাদের বীরত্বে উজ্জীবিত হন অন্যান্য দলের মুক্তিযোদ্ধারা। দুই পক্ষে তুমুল যুদ্ধ চলতে থাকে। এর মধ্যে ছত্রভঙ্গ হয়ে যাওয়া মুক্তিযোদ্ধারাও পুনঃসংগঠিত হয়ে আক্রমণে অংশ নেন। এতে মুক্তিযোদ্ধাদের শক্তি বৃদ্ধি হয়। তারা সবাই সাহসিকতার সঙ্গে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। মুক্তিযোদ্ধাদের নতুন পাল্টা তীব্র আক্রমণের মুখে পাকিস্তানিরা আর টিকতে পারেনি। একপর্যায়ে বেশ ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করে তারা পিছু হটে পালিয়ে যায়। এদিন যুদ্ধের একপর্যায়ে আলিমুল ইসলামও পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ছোড়া শেলের স্প্লিন্টারের আঘাতে আহত হন। এর পরও তিনি যুদ্ধক্ষেত্র ছেড়ে যাননি। যুদ্ধক্ষেত্রেই প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে পুনরায় যুদ্ধ করেন। [২]
পুরস্কার ও সম্মাননা
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ: ২৬-০৯-২০১২[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (দ্বিতীয় খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। মার্চ ২০১৩। পৃষ্ঠা ১৯৪। আইএসবিএন 9789849025375।