আলহাম্বরা
এই নিবন্ধটির শিরোনাম পরিবর্তন করার অনুরোধ করা হয়েছে ও তা নিয়ে বর্তমানে আলোচনা চলছে। অনুগ্রহ করে, আলোচনা সমাপ্ত হওয়ার আগে এই নিবন্ধটি স্থানান্তর করবেন না। |
আলহাম্বরা (/ælˈhæmbrə/, স্পেনীয়: [aˈlambɾa ]; আরবি: الْحَمْرَاء, প্রতিবর্ণী. Al-Ḥamrāʾ, উচ্চারণ [alħamˈraːʔ], আক্ষ. 'একটি লাল') হলো প্রাসাদ এবং দুর্গ সংবলিত বড় আকারের একটি কমপ্লেক্স যা স্পেনের আন্দালুসিয়ার, গ্রানাডাতে অবস্থিত। গ্রানাডার শহরের দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তের আসসাবিকা পাহাড়ের উপরে অবস্থিত এই পুরাতন দুর্গ ৯ম শতাব্ধীর শেষভাগে একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত রোমান দুর্গের ভিত্তিতে নির্মিত হয় তবে প্রাসাদ এবং সংলগ্ন অন্যান্ন অংশ ১৩শ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে আন্দালুসের গ্রানাডা আমিরাতের মরিশ শাসকদের হাতে সৃদৃশ্য স্থাপনা হিসেবে সম্পূর্নতা পায়। আলহাম্বরা (বা আলহামরা প্রাসাদ)টি নাসরি রাজবংশের শাসনকালে তৈরি করা হয়েছিল, যা তার বাসস্থান এবং রাজসভা হিসেবে ব্যবহার করা হতো। সম্রাট ফার্ডিন্যান্দ এবং রানী ইসাবেলা মুসলিম স্পেন জয় করার পরে এটিকে তাদের প্রাসাদ হিসেবে ব্যবহার করেন।
আলহাম্বরা | |
---|---|
![]() | |
অবস্থান | গ্রানাডা, স্পেন |
স্থানাঙ্ক | ৩৭°১০′৩৯″ উত্তর ০৩°৩৫′২৪″ পশ্চিম / ৩৭.১৭৭৫০° উত্তর ৩.৫৯০০০° পশ্চিম |
ওয়েবসাইট | প্যাট্রোন্যাটো ডি লা আলহাম্বরা |
নির্ণায়ক | সাংস্কৃতিক: i, iii, iv |
মনোনীত | ১৯৮৪ (৮ম সভা) |
যার অংশ | আলহাম্বরা, জেনেরালাইফ এবং অ্যালবায়জিন, গ্রানাদা |
সূত্র নং | ৩১৪-০০১ |
অঞ্চল | ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকা |
ধরন | স্থাবর |
নির্ণায়ক | স্মৃতিস্তম্ভ |
মনোনীত | ১০ ফেব্রুয়ারি ১৮৭০ |
সূত্র নং | আরআই-৫১-০০০০০০৯ |
সমসাময়িক মুসলিম স্থাপত্য কর্মের মধ্যে এটি একটি ব্যতিক্রমধর্মী এবং বাস্তব আকর্ষণ, যা স্থানীয়করণ এবং অভিযোজন মধ্যে একটি নতুন দৃশ্য তৈরি করে যা সম্পূর্ণরূপে তার প্রকৃতিতে বিদ্যমান।স্পেনের মুর কবি ও শিল্পীরা একে সবুজের বুকে এক বিন্দু মুক্তা বলে অভিহিত করতেন। সবুজ উপত্যাকায় রঙিন ভবনের অস্তিত্ব আসলেই দর্শকের দৃস্টিতে ধাধা তৈরী করতো। [১] পাহাড়ি ভূমি প্রকৃতির সাথে সমন্বয় করে প্রাসাদের ভবনগুলো নকশা করা হয়েছিলো এবং তৎকালীন সময়ের উন্নত প্রযুক্তির সমাবেশ ঘটানো হয়েছিলো।
১২৩৮ সালে, মুহাম্মদ ইবনে নাসর (নাজার নামেও পরিচিত), গ্রানাডা দখলের জন্য এলভিয়ার দরজা দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে এবং তিনি এর নাম দেন "আল-হামার" (লাল)। তিনিই হলেন নাসরি রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা। মুহাম্মদ ইবন নাছর বিজয়ী হয়ে গ্রানাডাতে প্রবেশ করে, তখন সেখানকার লোকেরা তাকে স্বাগতম জানায়: "স্রস্টার করুণায় বিজয়ীকে স্বাগতম" (মারহাবান লি-ল-নাসির) বলে, জবাবে তিনি উত্তর দেন: "আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ বিজয়ী নয় " (ওয়া লা গালিব ইল্লা আল্লাহ)। এটি ছিল নাসরি রাজবংশের নীতিবাক্য এবং একে তিনি সম্পূর্ণ আলহাম্বরাতে লিখেন।[২] আলহাম্বরা অনেক লেখক গান এবং গল্প লিখতে অণুপ্রাণিত করেছে।
২রা নভেম্বর, ১৯৮৪ সালে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান আলহাম্বরাকে এবং গ্রানাডার জেনেরালাইফকে মানবতার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা করেন।[৩] ২০১১ সালের, আগস্ট মাস পর্যন্ত ৪০ মিলিয়নেরও বেশি পর্যটক এটিকে পরিদর্শন করেছে।[৪]
নামের উৎপত্তিসম্পাদনা
আলহাম্বরা নামের উৎপত্তি অনেক তত্ত্ব রয়েছে, যেমন কিছু লেখক আছে যারা সমর্থন করে যে, প্রথমিক অবস্থায় এটি সাদা রং ছিল। এর নাম "লাল" হয়, কারণ যখন এটি নির্মাণ করা হচ্ছিল তখন রাতেও কাজ করা হয়েছে, আর রাতে আগুলের আলোতে দূর থেকে একে লাল মনে হতো। আরও লেখক আছে যারা সমর্থন করে যে, "আলহাম্বরা" নামটি হচ্ছে তার স্থাপতি "আবু-আল-আহমার" এর স্ত্রী বাচক নাম, আরবি ভাষায় যার অর্থ "লাল"।
গঠনপ্রণালীসম্পাদনা
আলহাম্বরা নির্মাণের নকশা জন্য কোন মহাপরিকল্পনা ছিল না, তাই এর পূর্ণাঙ্গ গঠনপ্রণালী সমকোণীয় বা সুবিন্যস্ত নয়। স্থানটি বিভিন্ন পর্যায়ের নির্মাণ: ৯ম শতাব্দীর প্রাথমিক শহর থেকে ১৪শ শতাব্দীর মুসলমাদের দুর্গসমূহে, ১৬শ শতাব্দীতে চার্লস V এর প্রাসাদে পরিবর্তিত হয়, যার ফলে কিছু ভবনসমূহ খারাপ অবস্থাতে পরিণত হয়েছে।[৫] যে সোপান বা মালভূমিতে আলহাম্বরা অবস্থিত তার দৈর্ঘ্য ৭৪০ মিটার (২,৪৩০ ফুট) এবং এর সর্বাধিক প্রস্থ ২০৫ মিটার (৬৭০ ফুট)। এটি পশ্চিমে-উত্তরপশ্চিম থেকে পূর্ব-দক্ষিণপূর্ব প্রসারিত এবং প্রায় ১৪২.০০০ বর্গ মিটার (১,৫৩০,০০০ বর্গ ফুট) এলাকা জুড়ে অবস্থিত। আলহাম্বরা পশ্চিমা বৈশিষ্ট্য সম্পূর্ণ আলকাযাবা (দুর্গ), যা দৃঢভাবে সুরক্ষিত অবস্থান রয়েছে। বাকি মালভূমি কিছু সংখ্যাক মরিশ প্রাসাদ ও তেরটি মিনার যা একটি সুরক্ষিত প্রাচীর দ্বারা ঘিরা, কিছু আত্মরক্ষামূলক ব্যবস্থা এবং সেখানকার বাসিন্দাদের জন্য কিছু দৃশ্য দিয়ে গঠিত। দারো নদী উত্তরে একটি গিরিখাত অতিক্রম করে এবং গ্রানাডার আলবাইচিন জেলা থেকে মালভূমিতে বিভক্ত হয়।
রাজকীয় প্রাসাদসম্পাদনা
প্রাসাদ তিনটি অংশের সমন্বয়ে গঠিত। মেক্সয়ার, সেরালো এভং হারেম। মেক্সয়ারে সবচেয়ে সুদৃশ্য এবং গোছালো প্রাসাদ যেখানে রাজকীয় অর্থনৈতিক এবং প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালিত হতো । চিকন ফিতার মতো নমনীয় কারুকাজে সারা দেয়াল অলংকৃত। সাদা প্লাস্টার দেয়ালের বিপরীতে সিলিং, মেঝে এবং ক্ষদ্র অলংকরনগুলি গাড় রংয়ের কাঠের তৈরী। সেরালো ১৪শ শতাব্ধীতে সুলতান ইউসুফের সময়ে তৈরী। মার্থেল প্রাসদের অবস্থান এখানে। হালকা রংয়ের ইন্টেরিয়র। হারেম হচ্ছে মহিলা ও শিশুদের বাসস্থান। সেই সময়েও এখানে ঠান্ডা ও গরম পানির সুবিধা সংবলিত গোসলখানার অস্তিত্ব পাওয়া যায়।
মার্থেল প্রাঙ্গণসম্পাদনা
মুল প্রবন্ধ: কোর্ট অব মার্টল
মার্থেল প্রাঙ্গণ (কোর্ট অব মার্টল) কে কোর্ট অব দ্য ব্লেসিংস, কোর্ট অব দ্য পন্ড ইত্যাদি বিভিন্ন নামেও উল্লেখ করা হয়। বর্তমান নামের কারণ হচ্ছে পুরো উঠোন জুড়ে মার্টেল ঝোপের আধিক্য। আরব প্যালেসের বর্তমান প্রবেশ পথ হচ্ছে করিডোর সহ একটি ছোট দরজা এবং সংলগ্ন করিডোর যা পুকুর থেকে শুরু হয়ে মার্টেল কোর্টে গিয়ে সংযৃক্ত হয়েছে। পরিকল্পিত এ জলাধার প্যালেসের পরিবেশ ঠান্ডা রাখতে সহায়তা করে।৪২ মিটার লম্বা এবং ২২ মিটার প্রশস্ত এ উঠোনের ঠিক মধ্যখানে কৃত্রিম জলাধার। জলাধারে গোল্ড ফিশের বিচরন আর চতুর্দিকে পায়ে হাটা পথের পাশে মার্থেল ফুলেরা বেড়ে উঠেছে। উত্তর এবং দক্ষিণ পাশে গ্যালারী সদৃশ কক্ষের অবস্থান। দক্ষিণ গ্যালারী ৭ মিটার লম্বা মার্বেল পাতরে মোড়ানো পিলারের সাহায্যে ভারমুক্ত। এর নিচ দিয়েই সোজা ডানদিকে প্রধান প্রবেশ পথ এবং উপরে খিলান সমৃদ্ধ তিনটি জানালা এবং মিনার সদৃশ পিলার দেখা যায়। উঠোন থেকে কোমারেস টাওয়ারের দেয়াল দেখা যায়। [৬]
হল অব এ্যাম্বাসাডরসম্পাদনা
হল অব এ্যাম্বাসাডর আলহামরার সবচেয়ে বড় কক্ষ কোমারেস টাওয়ারে এর অবস্থান। বর্গাকৃতির কক্ষের প্রত্যেক বাহুর মাপ ১২ মিটার এবং কেন্দ্রীয় গম্বুজের উচ্চতা ২৩ মিটার। এটি আলহামরার অভ্যর্থনা কস্থ বা দরবার। যে পাশে দরজা দিয়ে তার বিপরীত পাশে সুলতানের সিংহাসন। হলের কাটামো প্রাসাদ থেকে একটু বাইরে বেরিয়ে থাকায় তিন দিকের দৃশ্য পাওয়া যায়। সুতরাং এটা ছিল এক অর্থে টাওয়ারের বর্ধিতাশ যেখানে বসে প্রাসাদের সুদৃশ্য ল্যান্ডস্কেপ উপভোগ করা যায়।[৭] চতুরদিকের দেয়ালে চার ফিট পর্যন্ত উচ্চতায় টাইলস করা। একটু পর পর রঙের পরিবর্তন আছে। e tiles are nearly 4 ft (1.2 m) high all round, and the colours vary at intervals. এর উপরে মেডাল আকৃতির কারুকাজের অবিছিন্ন সারি যাতে ফুল লতাপাতার জড়াজড়ি। তিন দিকে তিনটি করে মোট নয়টি জানালা আছে। সিলিংয়ে সাদা, নিল এবং সোনালী রংয়ের গোরাকৃতির প্রলেপ। বিভিন্ন স্টাকো টাইপের কাজে দেয়াল ঢেকে দেয়া। [৮]
হল অব লায়নসম্পাদনা
কোর্ট অব লায়ন বা সিংহ চত্বর একটি চারকোনা, ১১৬ ফিট লম্বা এবং ৬৬ ফিট চওড়া চত্বর। ১২৪টি শ্বেত মার্বেলের পিলারের সমর্থনে দাড়িয়ে থাকা কম উচ্চতার গ্যালারী দ্বারা চতুর্দিকে ঘেরা। প্রত্যেক দিকের গ্যালারী থেকে একটি করে প্যাভিলিয়ন চত্বরের দিকে বাড়তি এগিয়ে আছে। প্যাভিলিয়নের দেয়াল অলংকৃত এবং ছাদ অনুচ্চ গম্বুজ সমৃদ্ধ। রঙিন টাইলস দিয়ে চত্বরের মেঝে পাকা করা। দেয়ালগুলো মেঝে থেকে পাঁচ ফিট পর্যন্ত নীল এবং হলুদ টাইলসে ঢাকা। টাইলসের উপরে এবং নিচে নীল এবং সোনালী রংয়ের লাইন টানা। পিলারগুলো একটু অনিয়মিতভাবে অবস্থিত এবং নানা রকমের ফুল লতাপাতার নকশায় জড়ানো।
তথ্যসূত্রসম্পাদনা
- ↑ Chisholm, Hugh, ed. (1911). "Alhambra, The" . Encyclopædia Britannica. 1 (11th ed.). Cambridge University Press. pp. 656–658.
- ↑ ইতালীয় উইকিপিডিয়া
- ↑ "Alhambra, Generalife and Albayzín, Granada"। World Heritage List। UNESCO। সংগ্রহের তারিখ ১৩ জানুয়ারি ২০১৩।
- ↑ La Alhambra, uno de los monumentos españoles preferidos por los europeos, según la comunidad 'Qype', EUROPA PRESS. 29.11.2011
- ↑ Irwin 2004, পৃ. 5–6.
- ↑ Mirmobiny, Shadieh। "The Alhambra"। Smarthistory at Khan Academy। ৪ মার্চ ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৩।
- ↑ Ruggles (1992)
- ↑ Mirmobiny, Shadieh. "The Alhambra". Smarthistory at Khan Academy. Retrieved 26 February 2013.
বহিঃসংযোগসম্পাদনা
- Alhambra in turgranada.es Official site for tourism of the province of Granada
- The Alhambra in Granada, Spain Masterpieces of Islamic Architecture
- Web Site Official of Patronato of Alhambra and Generalife
- Paul F. Hoye, 1967, The Alhambra, Saudi Aramco World