আমির হামজা (কবি)

বাংলাদেশী কবি
(আমির হামজা (সাহিত্যিক) থেকে পুনর্নির্দেশিত)

আমির হামজা (৩ মে ১৯৩১ - ২৩ জানুয়ারি ২০১৯) ছিলেন একজন বাংলাদেশী কবি ও মুক্তিযোদ্ধা[ক]। সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২২ সালে তিনি মরণোত্তর বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পদক স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেছিলেন। তিনি একটি হত্যা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় তাঁকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে তিন দিন পর তার পুরস্কার বাতিল করা হয়।[২]

আমির হামজা
জন্ম(১৯৩১-০৫-০৩)৩ মে ১৯৩১
শ্রীপুর উপজেলা, মাগুরা জেলা
মৃত্যু২৩ জানুয়ারি ২০১৯(2019-01-23) (বয়স ৮৭)
জাতীয়তাবাংলাদেশী
উল্লেখযোগ্য রচনা
  • বাঘের থাবা
  • পৃথিবীর মানচিত্রে একটি মুজিব তুমি
দাম্পত্যসঙ্গীদুলজান বেগম

তার জীবদ্দশায় শুধুমাত্র বাঘের থাবা নামে একটি বই প্রকাশিত হয়েছিলো।[৩]

প্রারম্ভিক জীবন

আমির হামজা ১৯৩১ সালের ৩ মে, মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলার বরিশাট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।[৩] তিনি বরিশাট কাজীপাড়া সরকারি বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা ও মহেশচন্দ্র পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা লাভ করেন। ছোটবেলায় পিতা মারা যাওয়ায় তিনি অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা চালিয়ে যান। তার পিতা ইমারত সরদার ও মাতা অবিরন।[৪]

কর্মজীবন

আমির হামজা ব্যবসা ও কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এছাড়াও, তিনি পালাগান ও কবিগান করতেন বলেও জানা যায়। তার প্রকাশিত প্রথম কবিতার বই বাঘের থাবা যেটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে লেখা। পরবর্তীতে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ’পৃথিবীর মানচিত্রে একটি মুজিব তুমি’ শীর্ষক গানের বইটি কবির প্রকাশিত দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ। বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবন ও তার অবিনাশী রাষ্ট্রদর্শন এখানে উঠে এসেছে। বইটিতে মোট গানের সংখ্যা ৫২টি।[৪] এছাড়াও, ২০২১ সালে তার লেখা একুশের পাঁচালি নামে আরও একটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। তিনি ১৯৭১ সালে ৮ নম্বর সেক্টরে আকবর বাহিনীর হয়ে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।[৩]

সাহিত্যকর্ম

আমির হামজার তিনটি কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে:

  1. বাঘের থাবা
  2. পৃথিবীর মানচিত্রে একটি মুজিব তুমি
  3. একুশের পাঁচালি‌‌

সম্মাননা

বিতর্ক

১৫ মার্চ ২০২২ সালে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের পক্ষ থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়, যাতে জানানো হয় যে বাংলাদেশ সরকার আমির হামজাসহ দেশের ১০ জন ব্যক্তি ও এক প্রতিষ্ঠানকে ‘স্বাধীনতা পুরস্কার ২০২২’ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।[৫] আমির হামজা স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য মনোনীত হওয়ার পর থেকেই সাহিত্যিকমহল ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিশ্র-প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেয়।[৬] কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেন, “উনি কে? আমি তো তাঁকে চিনি না।”[৩] আমির হামজা সম্পর্কে কথাসাহিত্যিক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, “একজন মৃত ব্যক্তি সম্পর্কে মন্তব্য করা ঠিক নয়। যাঁরা তাঁকে পুরস্কার দিয়েছেন, নিশ্চয়ই ভালোবেসেই দিয়েছেন। তবে আমি তাঁর কোনো বই পড়িনি বা নামও শুনিনি। এ আমার অপূর্ণতা। আমি চেষ্টা করব, তাঁর বই সংগ্রহ করার।”[৩] ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “এ পুরস্কারের জন্য ব্যক্তি নির্বাচন করেন প্রধানত আমলারা। এখানে বিষয়ভিত্তিক বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিরা নির্বাচক হিসেবে না থাকায় এমন ধরনের কাণ্ড ঘটে।”[৩]

অভিযোগ উঠে, তার মেজো ছেলে যিনি একজন উপসচিব ও খুলনা জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী, বাবাকে নির্বাচিত হতে সাহায্য করেন।[৭] ছেলে সরকারের কাছে নাম প্রস্তাব করেন এবং সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ প্রস্তাবটি সমর্থন করেন ও তাতে স্বাক্ষর করে সুপারিশ করেন।[৮][৯]

মরণোত্তর পুরস্কার পাওয়ার পর আমির হামজার খুনের মামলায় আসামি হওয়ার বিষয়টি উঠে আসে। ১৯৭৮ সালে মাগুরার শ্রীপুরের বরিশাট গ্রামে এক খুনের মামলায় আমির হামজাসহ ছয়জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়।[১০] যেখানে, তিনি নয় বছর জেল খাটার পর ১৯৯১ সালে বিএনপির আমলে রাজনৈতিক ভাবে সাধারণ ক্ষমা পেয়ে মুক্তি পান। তবে তার বড় ছেলে আলী মর্তুজা খুনের মামলায় বাবার আসামি হওয়ার কথা স্বীকার করলেও দণ্ড পাওয়ার কথা অস্বীকার করেন।[১১]

পুরস্কার বাতিল

পুরস্কারের তালিকা প্রকাশের পর থেকে আমির হামজা ও পুরস্কার বাছাই কমিটিকে নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। ‘জাতীয় পুরস্কারসংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’র প্রধান ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘যদি আমির হামজার নাম নিয়ে বিতর্ক ওঠে, তবে এ নিয়ে নতুন করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।’[৯]

ব্যাপক সমালোচনার পর বাংলাদেশ সরকার ১৮ মার্চ তার পুরস্কারটি বাতিল ঘোষণা করে।[১২][১৩] এ ঘটনায় আমির হামজার নাম প্রস্তাবকারী তার ছেলে আসাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করে। হামজার ফৌজদারি মামলার দণ্ডপ্রাপ্তির তথ্য গোপন করায় তাকে শাস্তি প্রদান করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তবে একই ঘটনায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ এর সুপারিশ থাকা সত্ত্বেও তার বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।[১৪]

ব্যক্তিগত জীবন

ব্যক্তিগত জীবনে আমির হামজা ছিলেন ছয় ছেলে ও তিন মেয়ের জনক। তার ছেলে আছাদুজ্জামান একজন সরকারি কর্মকর্তা যিনি এ পুরস্কার প্রস্তাবের সময় খুলনা জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন।[৩]

মৃত্যু

২০১৯ সালের ২৩ জানুয়ারি বার্ধক্যজনিত কারণে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।[৩]

টীকা

  1. “পৃথিবীর মানচিত্রে একটি মুজিব তুমি” গ্রন্থের লেখক পরিচিতিতে বলা হয়েছে, তিনি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে শ্রীপুর বাহিনীতে যোগ দিয়ে গৌরবময় ভূমিকা পালন করেন।[১]

তথ্যসূত্র

  1. "'আমির হামজা' কে?"যমুনা টেলিভিশন। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৩-১৮ 
  2. "আমির হামজাকে বাদ দিয়ে স্বাধীনতা পুরস্কারের নতুন তালিকা"দৈনিক ইত্তেফাক। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৩-১৮ 
  3. "সাহিত্যে স্বাধীনতা পুরস্কার পাওয়া কে এই আমির হামজা?"। প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ১৫ মার্চ ২০২২ 
  4. "সাহিত্যে স্বাধীনতা পুরস্কার পাওয়া কে এই আমির হামজা"। বাংলা ট্রিবিউন। ১৫ মার্চ ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ মার্চ ২০২২ 
  5. "স্বাধীনতা পুরস্কার পাচ্ছেন ১০ ব্যক্তি ও এক প্রতিষ্ঠান"কালের কণ্ঠ। ১৫ মার্চ ২০২২। সংগ্রহের তারিখ ১৮ মার্চ ২০২২ 
  6. "আমির হামজার 'স্বাধীনতা পুরস্কার' প্রাপ্তি নিয়ে মুখর নেটিজেনরা"সমকাল। সংগ্রহের তারিখ ১৬ মার্চ ২০২২ 
  7. "আমির হামজা: বাংলার বব ডিলান!"দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড (বাংলাদেশ)। ১৬ মার্চ ২০২২। সংগ্রহের তারিখ ১৮ মার্চ ২০২২ 
  8. "সাহিত্যে স্বাধীনতা পদক নিয়ে আপত্তির পর সরকার বলছে তদন্ত করবে"বিবিসি বাংলা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ মার্চ ২০২২ 
  9. "আমির হামজার স্বাধীনতা পুরস্কার বাতিল"দৈনিক প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ১৮ মার্চ ২০২২ 
  10. "স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত আমির হামজা 'যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি'"যুগান্তর। সংগ্রহের তারিখ ১৬ মার্চ ২০২২ 
  11. রহমান, কাজী আশিক। "সাহিত্যে স্বাধীনতা পুরস্কার পাওয়া আমির হামজা ছিলেন খুনের মামলার আসামি"প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ১৬ মার্চ ২০২২ 
  12. "আমির হামজাকে বাদ দিয়ে স্বাধীনতা পুরস্কারের নতুন তালিকা"দৈনিক ইত্তেফাক। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৩-১৮ 
  13. বিল্লাহ, মাসুম। "'অসত্য তথ্যে' বাদ আমির হামজা: মোজাম্মেল"bangla.bdnews24.com। ১৮ মার্চ ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ মার্চ ২০২২ 
  14. "সেই আমির হামজার উপসচিব ছেলেকে লঘুদণ্ড"যুগান্তর। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৮-২৫