মির্জা আবু সা'ইদ বেগ মোহাম্মেদ বা আবু সা'ইদ মির্জা(Chagatay/ফার্সি: میرزا ابو سعید بیگ‎) মুহাম্মাদের পুত্র, যিনি আবার মিরান শাহের পুত্র যিনি আবার আমীর তাইমুরের(হেরাত, ১৪২৪-১৪৬৯) পুত্র  এবং ট্রান্সসোক্সিয়ানা,খুরাসান এবং দক্ষিণ কাস্পিয়ান অঞ্চলের,যা বর্তমানে তুর্কেমিনিস্তান, কাজাখস্তান, উজবেকিস্তান,ইরান, আজারবাইজান ও আফগানিস্তানের অংশ, তৈমুরীয় সাম্রাজ্যের একজন শাসক ছিলেন।তিনি তৈমুরী রাজবংশের একজন সদস্য ছিলেন।

মির্জা আবু সা'ইদ মুহাম্মদ বেগ
মির্জা সুলতান (রাজকীয় উপাধি)
সুলতান আবু সাইদ বেগ মির্জা
রাজত্বসমরখন্দ: ১৪৫১-১৪৬৯
হেরাত: ১৪৫৯-১৪৬৯
জন্ম১৪২৪ (1424)
হেরাত
মৃত্যু১৪৬৯ (1470)
দাম্পত্য সঙ্গীখানজাদে বেগম

রাবিয়া সুলতান বেগম
শাহ সুলতান বেগম
সুলতানাম বেগম
আকা বেগম
রুকাইয়া সুলতান বেগম
তারখান বেগম
আফাক আঘাচা

খাদিজা সুলতান আঘাচা
বংশধরসুলতান আহমেদ বেগ মির্জা

সুলতান মুহাম্মাদ বেগ মির্জা
সুলতান মাহমুদ বেগ মির্জা
উমর শাইখ বেগ মির্জা II
সুলতান মুরাদ বেগ মির্জা
সুলতান ওয়ালাদ বেগ মির্জা
উলুগ বেগ
আবু বাকর বেগ মির্জা
সুলতান খালিল বেগ মির্জা
শাহরুখ বেগ মির্জা
ফাখর জাহান বেগম
বাদি উল-জামাল বেগম
সুলতান বাখত বেগম
গওহার সাদ বেগম
খাদিজা সুলতান বেগম
শাহার বানু বেগম
পায়ান্দা সুলতান বেগম
জায়নাব সুলতান বেগম
আক সুলতান বেগম
খাভান্দ সুলতান বেগম

খানাম সুলতান বেগম
পিতামুহাম্মাদ বেগ মির্জা

পটভূমি সম্পাদনা

আবু সা'ইদ ছিলেন তাইমুরের বড় নাতী,মিরান শাহ'র নাতী এবং উলুঘ বেগের ভাগ্নে। তিনি ছিলেন তার ছেলে উমার শেখ মির্জার পুত্র দক্ষিণ এশিয়ায় মুঘল সম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা বাবরের দাদা। একজন তরুন হিসাবে তার তার পূর্বপুরুষগণ তাকে তাইমুর সম্রাজ্যের অবশিষ্টাংশ নিয়ে তাইমুরের বংশধর ব্ল্যাকশিপ তুর্কোমান এবং হোয়াইটশিপ তুর্কোমানের(১৪০৫-১৫১০) মধ্যকার শতাব্দীব্যাপি যুদ্ধে প্রধান করেছিল।[১]

শাসনকাল সম্পাদনা

বিজয় সম্পাদনা

তিনি একটি সেনাদল গঠন করেছিলেন কিন্তু সমরখন্দ বা বুখারা(১৪৪৮-১৪৪৯) অধিকার করতে ব্যার্থ হন; ইয়াসিতে তার ঘাটি স্থাপন করেছিলেন এবং ১৪৫০ সালে তুর্কেস্তানের অনেক জায়গা জয় করেছিলেন। ১৪৫১ সালে আবুল খায়ের খানের অধীনে উজবেক তুর্কদের সাহায্যে সমরখন্দ দখল করে, তাইমুর সম্রাজ্যের পূর্বাংশে,ট্রানস্কসিয়ানাতে শাসন নিশ্চিত করেছিলেন।[২] তিনি ১৪৫৪ সালে খোরসানার মির্জা আবুল কাশিম বাবুর বিন বায়সনকরের সাথে একটি মীমাংসাহিন লড়াই লড়েছিলেন; ১৪৫৮ সালে হেরাত দখল করতে,১৪৫৭ সালে তার চাচাত ভাইয়ের হেরাত দখলের সুবিধা কাজে লাগিয়েছিলেন, এবং মূল তাইমুরের বাকি অংশ দখল করে  মধ্য এশিয়ার বাকি তাইমুর যুবরাজদের ভেতর সবচেয়ে শক্তিশালী যুবরাজে পরিণত হন।তিনি মার্চ ১৪৫৯ সালে সারাখের যুদ্ধে বাকি তিন তাইমুরিদ যুবরাজের জোটকে পরাজিত করেছিলেন, এবং ইরানকে নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিতে রাজী হয়ে,১৪৬১ সালে পূর্ব ইরান এবং আফগানিস্তানের অধিকাংশ স্থান জয় করেছিলেন; যখন হোয়াইট শিপ তুর্কমান সেনাপতি উজান হাসান, জাহান শাহকে আক্রমণ করে হত্যা করে,আবু সা'ইদ উজান হাসানের শান্তির প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন এবং জাহান শাহ'র পুত্রের সাহায্যের আবেদনে সাড়া দিয়েছিলেন।

বন্দিত্ব সম্পাদনা

আক কুয়ুনলু(হোয়াইট শিপ) তুর্কমানসের [৩] বিরুদ্ধ্যে অভিযানের সময় দূর্ভাগ্যপূর্ন কারাবাঘের(আধুনিক গনপ্রজাতন্ত্রি আজারবাইজানে) যুদ্ধে উজান হাসানের ছোট দল কর্তৃক ধৃত(১১ ফেব্রুয়ারি ১৪৬৯) হওয়ার পর তাকে ১৭ ফেব্রুয়ারি ১৪৬৯ সালে ইয়াদগার মুহাম্মাদ মির্জার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল, আবু সা'ইদ কর্তৃক ইয়াদগার মুহাম্মাদ মির্জার দাদী রানী গাওহার সাদের,[৪] যিনি তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে আসছিলেন মৃত্যুদন্ডের প্রকাশ্য প্রতিশোধ নিতে তিনি তার প্রাণদন্ড দিয়েছিলেন।

রাজনৈতিক সংযোগ সম্পাদনা

আবু সা'ইদ তার শাসনকালে উজবেক,কারা কোয়ুনলু তুর্কমেন এবং বিভিন্ন সুফি দল সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সংযোগ তৈরি করেছিলেন। সমরখন্দ[৫] দখলের সময় (১৪৫১ সিই) তিনি খাজা উবায়দুল্লাহ আহরারের(মৃত্যু ৮৯৫ হি/১৪৯০ সিই) সাথে যুক্ত হয়েছেন। তিনি ইয়াসিতে আহমাদ ইয়াসাভির মাজারেও সমর্থন খুজেছিলেন।[৬]

বিবাহ সম্পাদনা

আবু সা'ইদ মির্জা নয়বার বিয়ে করেছিলেন:

  • খানজাদা বেগম,আবু-আল-খায়ের খান যছির কন্যা;
  • রাবিয়া সুলতান বেগম, মুহাম্মাদ তিমূর মির্জা ও তার স্ত্রী খান্দ সুলতান বিকির কন্যা;
  • তারখান বেগম,ওরদা বুঘা তারখান আরঘুনের কন্যা;
  • সুলতানাম বেগম, বাদাকশানের শাহ সুলতান মুহাম্মাদের কন্যা;
  • আকা বেগম, তাঘায় শাহ, উলুঘ বেগ বিন শাহরুখ মির্জার কন্যা;
  • রুকাইয়া সুলতান বেগম,আলা-উদ-দৌলা মির্জা বিন বায়সুনঘুর বিন শাহরুখ মিরজার কন্যা;
  • শাহ সুলতান বেগম,একজন মহৎ তূর্কি রমনী;
  • আফাক আঘাছা কুকাকতাশ,ইব্রাহিম মির্জা বিন আলা-উদ-দৌলা বিন বায়সুনঘুর মির্জা বিন শাহরুখ মির্জা ও তার স্ত্রী কুতলুঘ বিকি আগার কন্যা;
  • খাদিজা বেগী আঘাছা, আমীর মুহাম্মাদ সারিক বিন আমির মুহাম্মাদ খাওয়াজার কন্যা;

উত্তরাধিকার সম্পাদনা

খাজা আহরারের,[৭] অনুরোধে আবু সা'ইদ কর্তৃক টামঘা কর প্রত্যাহেরর ফলে অনেক পরিবর্তন হয়েছে,কিন্তু এই কর পূর্বের তিমুরিদরাও প্রত্যাহার করেছিল,[৮] এবং এই কাজ সম্ভবত পূর্বের অল্প পরিচিত শাসকের ইসলামিক কর ব্যাবস্থার দিকে নীতি পরিবর্তনের বিপরীতে করা হয়েছে।[৯] খান্ডামির বর্ণনা করেন যে জয়-ই -সুলতানী [১০] নির্মানকারী কুতুব আল-দীন তা'উস সিমনানী সহ সভাসদদের পদচ্যুত করা হয়েছিল এবং অনেকসময় তহবিল আত্মসাৎ এর জন্য হত্যা করা হয়েছিল। মহিলাদেরও প্রাসাদ-ষড়যন্ত্রের জন্য ধরা হতো।আইয়ুবীর উল্লেখ আনুযায়ি ও মানয[১১] এর বিস্তারীত আলোচনা মতে,আবু সা'ইদ কর্তৃক শাহরুখ(৭৭৯-৮৫০/১৩৭৭-১৪৪৭) এর স্ত্রী গাওহর সাদ এর মৃত্যুদন্ডকে সমকালীন কাহিনীকাররা নেতীবাচক হিসাবে দেখেছিল।

সম্ভবত অভিযানে সময় ব্যয় করার কারণে,আবু সা'ইদ কে ব্যক্তিগত ভাবে বৃহৎ নির্মান প্রকল্পে নিযুক্ত হতে দেখা যায় না। [১২] আবু সা'ইদের একজন উজির কুতুব আল-দীন তাউস হেরাতে,[১৩] জায়-ই-সুলতানী নালা নির্মান করেছিল, যা সুলতান হুসাইন বায়কারার অধীনে ভবিষ্যত নির্মান কাজের সম্ভবনা তৈরী করেছিল যেহেতু এটা আজারবাইজানে[১৪] আবু সা'ইদ এর শেষ অভিযানের সময় সমাপ্ত হয়েছিল।এটা এবং আক সারা(সাদা প্রাসাদ) অভিজাত বসবাসের জায়গা পরিবর্তন করেছিল যদিও "অতীতের সাথে সচেতন ব্যাতয় ঘটিয়ে" শাসকরা নগর প্রাচীরের বাইরে হেরাতে থেকে গিয়েছিল। [১৫] আবু সা'ইদ অন্য যেসব গণমুখী কাজ করেছিলেন তা হলো গুলিস্তান বাধের মেরামত ও একই সাথে জলমগ্ন করা জমি উপযুক্ত করা।[১৬] হেরাতের মুসাল্লায় আইয়ানসহ ইমারত,[১৭] শিলালীপিসহ ঘার-ই-কারুখ মেরামত,[১৮] উবাতে(ওবেহ) স্পা ও গোসলখানা, গ্রীষ্মকালিন নিবাসে "তাইমুরিদদের জন্য রিসোর্ট" নির্মান[১৯]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Jean Aubin, "Abū Saʿīd", in Encyclopaedia of Islam, 2nd ed., vol. I (1960), pp. 147–148.
  2. Soucek, Svat, A History of Inner Asia (2000), page 136.
  3. Jean Aubin, "Abū Saʿīd", in Encyclopaedia of Islam, 2nd ed., vol. I (1960), page 148.
  4. Aubin, "Encyclopaedia of Islam", 2nd ed., 1:148
  5. Jo-Ann Gross, Khoja Aḥrār. A Study of the Perceptions of Religious Power and Prestige in the Late Timurid Period. New York University Ph.D dissertation 1982, p. 102; Khwāndamīr, "Habibu’s-siyar. Tome Three. The Reign of the Mongol and the Turk." Trans. W. M. Thackston. Edited by Şinasi Tekin and Gönül Alpay Tekin. 2 vols. Sources of Oriental Languages and Literatures. Cambridge, MA, 1994, p. 208
  6. Gross p. 99-102, Beatrice Forbes Manz. "Power, Politics and Religion in Timurid Iran." Edited by David Morgan, Cambridge Studies in Islamic Civilization. Cambridge / New York 2007, p. 215 n.33
  7. V. V. Bartold. "Four Studies on the History of Central Asia." 3 vols. Leiden 1956-1963; Aubin 1:148; H. R Roemer, "The Successors of Tīmūr", In "The Cambridge History of Iran. Volume 6. The Timurid and Safavid Periods", edited by Peter Jackson and Laurence Lockhart. (Cambridge 1986) 117
  8. Manz "Power" 81-2
  9. Manz "Power" 267
  10. Khwandamir/Thackston, 203, 204
  11. Beatrice Forbes Manz, "Women in Timurid Dynastic Politics", in "Women in Iran from the Rise of Islam to 1800", edited by G. Nashat and L. Beck (Urbana / Chicago 2003), 134-5
  12. Terry Allen, "Timurid Herat", Beihefte zum Tübinger Atlas des Vorderen Orients. Reihe B, Geistwiss. Weisbaden 1983, p. 24
  13. Allen "Timurid Herat" 49, 53; Terry Allen, "A Catalogue of the Toponyms and Monuments of Timurid Herat", Studies in Islamic Architecture. Cambridge 1981, p. 20-21
  14. Allen "Timurid Herat" 23-4
  15. Allen "Timurid Herat" 49, 52-3
  16. Bernard O'Kane, "Timurid Architecture in Khurasan", Islamic Art and Architecture. Costa Mesa, CA 1987 15
  17. O’Kane 20
  18. O’Kane 251-2; Lisa Golombek and Donald Wilber, "The Timurid Architecture of Iran and Turan". 2 vols, Princeton Monographs in Art and Archeology. Princeton, NJ 1988 1:327
  19. Allen "Timurid Herat" p. 24