আবু আল-তুবার

আবু তুবার (আক্ষরিক অর্থে হ্যাচেট ম্যান ) বাথ পার্টির শাসনের শুরুর সময়ে বাগদাদে একাধিক ডাকাতি ও হত্যা মামলার তালিকায় তার নাম দেওয়া ছিল। যদিও শেষ পর্যন্ত নাধিম কজারের (সাধারণ সুরক্ষা অধিদপ্তরের প্রধান) পুলিশ বাহিনীর প্রাক্তন সদস্যদের কাছে তিনি দোষী সাব্যস্ত হয়েছিল। সে সময় তার অপরাধের প্রকৃতি সম্পর্কে বাগদাদের জনগণের মধ্যে ব্যাপক ভয় ছিল।

আবু তুবার ১৯৭০-এর দশকের গোড়ার দিকে "হ্যাচেট ম্যান" খেতাব অর্জন করেছেন। তাঁর আসল নাম اتم كاظم هضم (হাতেম কাজেম হাতোম)। ১৯৩২ সালে ইরাকের ব্যাবিলন শহরের হিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ইরাকের বেসামরিক নাগরিকদের মধ্যে ভয় ও সন্ত্রাস নিয়ে এসেছিলেন। তার পরিবারের সদস্যদের তার হ্যাচেট দিয়ে কেটে হত্যা করার জন্য খ্যাতি রয়েছে তার। সাধারণত যখন শিকার বাড়িতে একা থাকেন, তিনি সাধারণত অপরাধের প্রথমদিকে একটি অদ্ভুত ফোন কল দিয়ে শুরু করেন। কলটিতে অকেজো কথোপকথন, হুমকি দেওয়া এবং বিভিন্ন অভিশাপ জাতীয় কথা থাকে। ফোন কল করার পরে, দরজায় একটি কড়া নাড়া হয়, যার পরে তিনি অপরাধ সংগঠিত করেন।

ইরাকের অভিজ্ঞতা

ইরাকের নাগরিকরা সে সময় চিন্তিত ও ভীষণ ভয় পেয়ে গিয়েছিল। বাগদাদের লোকেরা আরও সচেতন হয়েছিল; তারা শক্তিশালী প্রতিরক্ষামূলক গড়ে তোলে। লোকজন কেউ একা বাইরে যেত না। একই সাথে তারা আশেপাশের বিশেষত ছোট ছোট গাছ এবং ঝোপঝাড়গুলো ছাঁটাই শুরু করে কোনও সম্ভাব্য লুকানোর জায়গাগুলোতে প্রখর দৃষ্টি রাখতে শুরু করে। এবং রাতের বেলা সুরক্ষার জন্য তারা পুরো এলাকায় আরও বেশি আলোকসজ্জা যুক্ত করেছিল। ইরাকের নিরাপদ পরিবেশে অভ্যস্ত হয়ে, আবু তুবারের এই কর্মকাণ্ডে আরো উদ্বেগ সৃষ্টি করেছিল। যা দেশকে পঙ্গু করে দিয়েছে। লোকেরা নিজেদের জন্য কথিত কারফিউ তৈরি করে এবং নিয়মিত তাদের বাড়িগুলো তালাবন্ধ করে। টেলিভিশন প্রোগ্রামগুলো দর্শকদের সুরক্ষার জন্য বিভিন্ন নির্দেশনা প্রচার করতে শুরু করেছিল।

প্রথম জীবন এবং ক্যারিয়ার

তিনি হিল্লার ব্যাবিলনে বাস করতেন এবং ইরাকের এক অতি সুপরিচিত ও উদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি ১৯৪৬ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ১৯৪৯ সালে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপরে তিনি ১৯৫১ সালে হিলার পুলিশ কমিশনার পদে স্নাতক শেষ করেন, তবে পেশাগত কারণে ১৯৫২ সালে তিনি বরখাস্ত হন। তিনি তৎক্ষণাত বিমান বাহিনী নিয়ে পড়াশোনা করতে কলেজে ফিরে আসেন। তবে প্রশিক্ষণে বোকামির কারণে ১৯৫৬ সালে তাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। হাতেম আরবি, ইংরেজি, জার্মান, ফার্সি, এমনকি কুর্দিশসহ একাধিক ভাষা জানত। বহিষ্কার হওয়ার পরে, তিনি ১৯৫৭ সালে নিখরচায় ব্যবসায় অধ্যয়নের জন্য কুয়েতে পাড়ি জমান। পরে ১৯৫৯ সালে কিরকুকের সংগ্রাহক হিসাবরক্ষক হিসাবে ইরাকে ফিরে আসেন। তিনি কোম্পানির রাষ্ট্রীয় তহবিলের ক্ষয়ক্ষতির কারণে আড়াই বছরের কারাদণ্ড পেয়েছিলেন। কারাগারে সময় কাটিয়ে তিনি ইউরোপ ঘুরে দেখার জন্য চলে যান, যার বেশিরভাগ সময় তিনি পশ্চিম জার্মানির মিউনিখে কাটিয়েছিলেন। হাতেম বেলজিয়াম, জার্মানি, গ্রীস, সিরিয়া এবং তুরস্ক থেকে অস্ত্র ও গাড়ি পাচার শুরু করে।

পরবর্তীতে

৩০ মার্চ ১৯৭৪ সালে; বিকাল ২:৫৫টায় প্রতিবেশী যে ডাক্তার জোসেফ পল পেড্রোস জাদ্রাজি-র বাড়িতে চোরের প্রবেশের খবর পাওয়া যায়। পুলিশ সময়মতো চোরটিকে ধরতে আসে, তবে তাদের রেকর্ডগুলোতে হাতেমকে বিমান বাহিনীর একজন হিসাবে দেখিয়েছিল। তারা তাকে তার ঘর দেখাতে বলার আগ পর্যন্ত তিনি তার কাজ সম্পর্কে মিথ্যা কথা বলছিলেন। তারা তার বাড়িতে দামি রেডিও থেকে শুরু করে গহনা ও পোশাকসহ অনেক চুরির জিনিস পেয়েছিল। তিনি জাতীয় টেলিভিশনে তার অপরাধসমূহ স্বীকার করেছিলেন এবং পাশাপাশি এও জানান যে, তিনি তার দুই ভাই গালিব এবং হাজিম, তার ভাগ্নে হুসেন এবং তাঁর স্ত্রীর কাছ থেকে সহায়তা পেয়েছিলেন। তার উদ্দেশ্য সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে আবু তুবার বলেছিলেন, লোকদের হত্যা করার তার দুটি কারণ রয়েছে: একটি, ঘরে বসে নির্দ্বিধায় চলাচল করতে দেওয়া এবং তাকে যেকোনও জিনিস চুরি করতে দেওয়া; দুই, তিনি একটি মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা স্বীকার করেছেন যে কখনও কখনও তিনি হত্যার বিষয়টি উপভোগ করেন। এমনকি মাঝে মাঝে শিকারের রক্ত পান করতেন। তাকে ১৯৮০ সালে, আবু ঘরাইব কারাগারে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।