আবরুৎসো

ইতালির প্রশাসনিক অঞ্চল; রোমের পশ্চিমে, মধ্য ইতালিতে, আড্রিয়াটিক সাগরের উপকূলে অবস্থিত।

আবরুৎসো (ইতালীয়: Abruzzo) বা আবরুৎসি (Abruzzi) দক্ষিণ ইউরোপের রাষ্ট্র ইতালির দক্ষিণ-মধ্যভাগে অবস্থিত একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। এর রাজধানীর নাম লাকিলা। অঞ্চলটির ভৌগোলিক আয়তন ১০৭৬৩ বর্গকিলোমিটার। এখানে প্রায় ১২ লক্ষ অধিবাসী বাস করে (২০০৭)। প্রশাসনিকভাবে আবরুৎসো অঞ্চলটি চারটি প্রদেশ নিয়ে গঠিত - লাকিলা, কিয়েতি, পেস্কারা এবং তেরামো। প্রদেশগুলির মূল শহর চারটিও একই নামের। অঞ্চলটির পশ্চিম সীমানা ইতালির রাজধানী রোম থেকে ৮০ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত। আবরুৎসোর উত্তরে মার্কে, পশ্চিমে ও দক্ষিণ-পশ্চিমে লাৎসিও, দক্ষিণ-পূর্বে মোলিজে প্রশাসনিক অঞ্চলগুলি এবং পূর্বে আড্রিয়াটিক সাগর অবস্থিত। ভৌগোলিকভাবে মধ্য ইতালিতে পড়লেও ঐতিহ্যগতভাবে ও সাংস্কৃতিকভাবে আবরুৎসোকে দক্ষিণ ইতালীয় সংস্কৃতি বলয়ের অন্তর্ভুক্ত করা হয়, কেননা ঐতিহাসিকভাবে এটি সিসিলি রাজ্যের অধীনে ছিল।[]

আবরুৎসো
Abruzzo

Abbrùzzu / Abbrùzze (নেপোলিটানীয়)
ইতালির প্রশাসনিক অঞ্চল
আবরুৎসো Abruzzo পতাকা
পতাকা
আবরুৎসো Abruzzo প্রতীক
প্রতীক
সঙ্গীত: "ভোলা ভোলা ভোলা"[]
দেশ / রাষ্ট্রইতালি
রাজধানীলাকিলা
সরকার
 • সভাপতিমার্কো মার্সিলিও (মধ্য-ডানপন্থী)
আয়তন
 • মোট১০,৭৬৩ বর্গকিমি (৪,১৫৬ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা (৩১-১০-২০১২)
 • মোট১৩,০৭,৯১৯
 • জনঘনত্ব১২০/বর্গকিমি (৩১০/বর্গমাইল)
বিশেষণআবরুৎসীয়
ইতালীয়: Abruzzese আবরুৎসেজে
সময় অঞ্চলকেইউস (CET) (ইউটিসি+1)
 • গ্রীষ্মকালীন (দিসস)কেইউগ্রীস (CEST) (ইউটিসি+২)
ISO 3166 codeIT-৬৫
স্থূঅউ (জিডিপি) (নামিক)৩ হাজার ২.৬ শত কোটি ইউরো (২০১৭)[]
মাথাপিছু স্থূঅউ (জিডিপি)€২৪,৭০০ (২০১৭)[]
মাউসূ (২০১৭)০.৮৮৩[]
very high · 12th of 21
NUTS RegionITF
ওয়েবসাইটwww.regione.abruzzo.it

আড্রিয়টিক সাগরের পশ্চিম তীরে অবস্থিত অঞ্চলটির সিংহভাগই পাহাড় পর্বতে পূর্ণ। অঞ্চলটির ভেতর দিয়ে আপেন্নিন পর্বতমালা অতিক্রম করেছে। ভূসংস্থানিকভাবে অঞ্চলটি দুইটি স্বতন্ত্র অংশে বিভক্ত। পশ্চিম অংশটি মূলত লাকিলা প্রদেশে পড়েছে, এবং এটি আপেন্নিন পর্বতমালার তিনটি শৃঙ্খল ও এদের উপত্যকা ও নিম্নাঞ্চল (লাকিলা, সুলমোনাফুচিনো) নিয়ে গঠিত। পর্বতশৃঙ্খল তিনটি উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে প্রসারিত হয়েছে। এদের মধ্যে সবচেয়ে পূর্বে অবস্থিত ও সবচেয়ে উঁচু পর্বতশৃঙ্খলটি গ্রান সাস্‌সো দিতালিয়া নামে পরিচিত। এই অংশেই অঞ্চলটির সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গটি অবস্থিত, যার নাম মোন্তে কর্নো (উচ্চতা ২৯১২ মিটার)। আবরুৎসোর পূর্ব অংশটিতে (গ্রান সাসসোর পূর্বদিকে) বেলে ও এঁটেল মাটির পাহাড় ও টিলা ধীরে ধীরে উচ্চতা হ্রাস পেয়ে আড্রিয়াটিক সাগরের কাছে অপ্রশস্ত একটি উপকূলীয় সমভূমিতে পরিণত হয়েছে। এখানেই কিয়েতি, পেস্কারা ও তেরামো প্রদেশগুলি অবস্থিত। উপকূলীয় তটরেখাতে উন্নত মানের প্রাকৃতিক পোতাশ্রয়ের অভাব রয়েছে।

এখানে পেস্কারা নদীটি জলবিদ্যুৎ শক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। অন্যদিকে সাংগ্রো, ত্রিনিও এবং বিফের্নো নদীগুলি নিম্নাঞ্চলীয় উপত্যকাগুলিতে কৃষিকাজের জন্য পানির যোগান দেয়। সবগুলি নদীই আড্রিয়াটিক সাগরে গিয়ে পড়েছে। নদীগুলির ঊর্ধ্বাংশে উজান অঞ্চলের বনজঙ্গল উজাড়ের কারণে বসন্ত ও শরৎকালের বৃষ্টিপাতের সময় সেখানে প্রায়ই বন্যা ও ভূমিধস হয়। তা সত্ত্বেও আবরুৎসোকে ইউরোপের সবচেয়ে সবুজ শ্যামল অঞ্চল হিসেবে বর্ণনা করা হয়, কেননা এর প্রায় অর্ধেকেরও বেশি ভূখণ্ডকে সুরক্ষিত প্রাকৃতিক অঞ্চলের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে, যা ইউরোপের এমন অঞ্চলগুলির মধ্যে বৃহত্তম।[] এখানে ইউরোপের প্রাণীপ্রজাতিগুলির প্রায় ৭৫% ঝুঁকিমুক্তভাবে বাস করে।

আবরুৎসোর রুক্ষ ভূ-প্রকৃতি এর অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য সর্বদাই বাধার সৃষ্টি করেছে। ইতালির পশ্চিমভাগ থেকে পেস্কারা শহর পর্যন্ত একটি মহাসড়ক নির্মাণ করার পর থেকে অঞ্চলটি ইতালির বাকী অংশের সাথে অঞ্চলটির উন্নততর যোগাযোগ স্থাপিত হয়। এছাড়া রোম থেকে পেস্কারা পর্যন্ত একটি রেলপথও আছে। অঞ্চলটির অর্থনীতি মূলত আঞ্চলিক ও কৃষিনির্ভর। উচ্চভূমিগুলিতে ভেড়াগবাদি পশুচারণ করা হয় এবং আলু ও গমের চাষ করা হয়। শূকরও পালন করা হয় এবং এখানকার ধূমায়িত হ্যামসসেজ বিশেষভাবে খ্যাত। উপকূলীয় উপত্যকাগুলিতে ভুট্টা, জলপাই, আঙুর ও লেবু-জাতীয় ফলের চাষ হয়। ফুচিনো হ্রদের জলবিধৌত এলাকাতে মিষ্টি বিট চাষ করা হয়। অন্যান্য অর্থকরী ফসলের মধ্যে তামাক ও জাফরান উল্লেখযোগ্য। এছাড়া লাকিলা প্রদেশে বক্সাইট (অ্যালুমিনিয়ামের খনিজ) খনন করা হয়। উপকূলীয় তটরেখাতে খুবই স্বল্প সংখ্যক প্রাকৃতিক পোতাশ্রয়ের কারণে এখানে কোনও গুরুত্ববহ মৎস্যশিকার ও বাণিজ্যকেন্দ্র নেই। আড্রিয়াটিক উপকূলীয় এলাকার পর্যটনকেন্দ্রগুলিতে পর্যটকদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও তা অর্থনৈতিকভাবে এখনও তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়।

এই অঞ্চলের প্রাচীন ইতালিক গোত্রের অধিবাসীরা দীর্ঘ সময় রোমানদেরকে প্রতিহত করেছিল। কিন্তু খ্রিস্টপূর্ব ৪র্থ শতকে এসে রোমানদের কাছে অঞ্চলটির পতন ঘটে। এলাকাটির রোমান নাম ছিল আপ্রুতিউম (যেটি প্রাচীন গোত্র প্রায়েতুতি-র নাম থেকে এসেছিল বলে ধারণা করা হয়)। রোমান শাসনের সময়েও এখানকার স্থানীয় গোত্রগুলির নিজস্ব চরিত্র বজায় থাকে। মধ্যযুগের প্রথমার্ধে ৬ষ্ঠ থেকে ১১শ শতক পর্যন্ত অঞ্চলটি লোম্বারদীয় রাজ্যের নিয়ন্ত্রণে ছিল। সেসময় এটির স্পোলেতো'র ডিউকদের নিয়ন্ত্রণাধীন ছিল। ১২শ ও ১৩শ শতকে এটি সিসিলি দ্বীপ-ভিত্তিক নরমান রাজ্যের অধীনে আসে। সেসময় অঞ্চলটি পোপরাজ্যের বিরুদ্ধে হোয়েন-ষ্টাউফেনদের পক্ষাবলম্বন করে। ১৩শ শতকে হোয়েনষ্টায়ফেন রাজবংশের পতনের পরে পালাক্রমে অঁজভাঁ, স্পেনীয়, ও বুরবোঁ শাসকদের অধীনে শাসিত হয়। ১২৪০ থেকে ১৮৬১ সাল পর্যন্ত প্রায় ছয় শতাব্দী ধরে অঞ্চলটি নাপোলি রাজ্যের অংশ হিসেবে শাসিত হয় এবং ১৮৬১ সালে অঞ্চলটি (পার্শ্ববর্তী মোলিজে অঞ্চলের সাথে একত্রে) "আবরুৎসি এ মোলিজে" নাম নিয়ে ইতালি রাজ্যের অধীনস্থ একটি অংশে পরিণত হয়। ১৯৬৩ সালে এটিকে আবরুৎসো ও মোলিজে নামের দুইটি পৃথক প্রশাসনিক অঞ্চলে বিভক্ত করে দেওয়া হয়।

২০০৯ সালের ৬ই এপ্রিল একটি ভূমিকম্পে আবরুৎসোর রাজধানী লাকিলা শহরের মধ্যযুগীয় বহু ভবনের ক্ষতি হয় এবং ২৭৫ জনেরও বেশি লোক মারা যায়।[] ২০১৬ সালে আকিলা থেকে অদূরে আবরুৎসোর উত্তর প্রান্তে আরেকটি ভূমিকম্পে আবারও বহু ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি হয়।[]

ছবিতে আবরুৎসো

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Paolo Di Vincenzo (১১ ফেব্রুয়ারি ২০১০)। "'Dialetti d'Italia'. Canzoni regionali in un doppio cd" (Italian ভাষায়)। il Centro। ১২ জানুয়ারি ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ অক্টোবর ২০১৯ 
  2. "Eurostat – Tables, Graphs and Maps Interface (TGM) table"। European Commission। ১২ আগস্ট ২০১১। সংগ্রহের তারিখ ২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ 
  3. "Regional GDP per capita ranged from 31% to 626% of the EU average in 2017" (সংবাদ বিজ্ঞপ্তি)। ec.europa.eu। সংগ্রহের তারিখ ২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ 
  4. "Sub-national HDI - Area Database - Global Data Lab"hdi.globaldatalab.org (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৯-১৩ 
  5. Paradosso evidenziato da Ignazio Silone, cfr. Costantino Felice (২০১০)। "Quadri ambientali e identità regionale"। Donzelli। Le trappole dell'identità: l'Abruzzo, le catastrofi, l'Italia di oggi। Rome। পৃষ্ঠা 41। আইএসবিএন 978-88-6036-436-4 [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  6. "Laquilacapitale"। ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  7. Patrick Jackson (10 October, 2016), Italy earthquake: Life after L'Aquila's heart was ripped out, BBC News  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)