আবদুল হামিদ (ধারাভাষ্যকার)

আবদুল হামিদ (২১ সেপ্টেম্বর ১৯৩৫ - ৪ অগাস্ট ২০১২) ছিলেন একজন বাংলাদেশি ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব, ক্রীড়া ধারাভাষ্যকার ও সাংবাদিক। তিনি বাংলাদেশে বাংলায় ক্রীড়া ধারাভাষ্যের পথিকৃৎ।[১] ক্রীড়ায় বিশেষ অবদানের জন্য তিনি ১৯৭৯ সালে জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার এবং ক্রীড়া বিষয়ক সাংবাদিকতায় অবদানের জন্য ২০০৩ সালে একুশে পদক লাভ করেন।[২]

আবদুল হামিদ
জন্ম(১৯৩৫-০৯-২১)২১ সেপ্টেম্বর ১৯৩৫
মৃত্যু৪ আগস্ট ২০১২(2012-08-04) (বয়স ৭৬)
জাতীয়তাবাংলাদেশি
মাতৃশিক্ষায়তনজগন্নাথ কলেজ
পরিচিতির কারণধারাভাষ্যকার
দাম্পত্য সঙ্গীসাহেরা হামিদ
পিতা-মাতা
  • আবদুর রব (পিতা)
  • বেলেজান বিবি (মাতা)

প্রারম্ভিক জীবন সম্পাদনা

আবদুল হামিদ ১৯৩৫ সালের ২১ সেপ্টেম্বর তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের নদীয়ার নবদ্বীপ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।[২] ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাজনের পর ১৯৫১ সালে পরিবারের সাথে ঢাকা চলে আসেন। তার পিতার নাম আবদুর রব ও মাতা বেলেজান বিবি।[২] এই দম্পতির তিনি পঞ্চম সন্তান ছিলেন।[২] বর্ধমান টাউন স্কুলে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ার পর ১৯৫১ সালে ঢাকার গেন্ডারিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণীতে ভর্তি হন। ১৯৫৩ সালে ঢাকার এ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং পরে তৎকালীন জগন্নাথ কলেজ থেকে উচ্চ শিক্ষা অর্জন করেন।

কর্মজীবন সম্পাদনা

আবদুল হামিদ ছাত্রাবস্থাতেই বিভিন্ন খেলাধুলায় অংশ নেন। ঢাকায় আসার পর ইস্ট এন্ড ক্লাবে যোগদান করে দ্বিতীয় বিভাগ ফুটবল লীগে খেলা শুরু করেন।[৩] ১৯৫২ সালে তিনি দলটির অধিনায়ক ছিলেন ও এসময় ক্লাবটি প্রথম বিভাগে উন্নীত হয়। একই সময়ে ঢাকা ওয়ান্ডারার্স, ইস্পাহানি ক্লাব ও আজাদ স্পোর্টিং ক্লাবে ফুটবল খেলেছেন। ইস্ট পাকিস্তান হোয়াইট টিমে ১৯৫৫-৫৭ সাল পর্যন্ত ফুটবল খেলেছেন। ঢাকায় জাতীয় ফুটবল চ্যম্পিয়নশীপের সময় তিনি এ দলের অন্যতম গোলরক্ষক ছিলেন। ১৯৫৯ সালে ঢাকা ওয়ান্ডারার্সের হয়ে আগা খান গোল্ডকাপে অংশ নেন।[৩]

জগন্নাথ কলেজের শিক্ষার্থী থাকাকালে তিনি প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লীগে অংশ নেন।[৩] ইস্ট এন্ড ক্লাবের হয়ে ১৯৫৫-৫৬ এবং ১৯৫৮-৫৯ মৌসুমে প্রথম বিভাগ ভলিবল লীগেও অংশ নেন।[৩] পরে খেলোয়ারী জীবন থেকে অবসর নিয়ে রেফারি ও ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। ১৯৬০-এর দশকে পাকিস্তান ভলিবল ফেডারেশনের যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৭০ সালে ব্যাংককে অনুষ্ঠিত এশিয়ান গেমসে ভলিবলের রেফারি এবং পাকিস্তান ভলিবল দলের ম্যানাজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।[৩]

১৯৭৬-৮৩ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ ভলিবল ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া দুই দফা তিনি এশীয় ভলিবল কনফেডারেশনের পরিচালক ছিলেন। ১৯৬০-এর দশকে পাকিস্তান বেতারে ক্রিকেট ধারাভাষ্য ইংরেজি দেওয়া হত এবং মাঝে পাঁচ মিনিটের জন্য বাংলা এবং উর্দুতে ধারাভাষ্য প্রচার করা হত।[১] হামিদ বাংলা ধারাভাষ্যটি দিতেন।[১] একইসাথে তিনি অন্যান্য খেলায়ও বাংলাতে ধারাভাষ্য দেওয়া শুরু করেন।[১] ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর তিনি বেতার ও টেলিভিশনে বাংলাতে পূর্ণাঙ্গ ধারাভাষ্য দেওয়া শুরু করেন।[৩]

হামিদ তৎকালীন বিভিন্ন দৈনিকে ক্রীড়া বিষয়ক সংবাদ ও কলাম লিখেছেন।[৩] চ্যানেল আইতে তিনি ক্রীড়া বিষয়ক অনুষ্ঠান ‘আই স্পোর্টস’ ও বাংলাদেশ টেলিভিশনে ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘স্বনামধন্য’ উপস্থাপনা করেছেন।[৩] মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি দৈনিক আমাদের সময় পত্রিকার ক্রীড়া বিভাগের প্রধান ছিলেন।[৪]

সম্মাননা সম্পাদনা

  • বেতারব্যক্তিত্ব সম্মাননা (১৯৭৮)
  • ভলিবলে জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার (১৯৭৯
  • কাজী মাহবুবউল্লাহ ও জেবুন্নেসা স্বর্ণপদক (১৯৮৫)
  • ক্রীড়া সাংবাদিকতায় একুশে পদক (২০০৩ )

ব্যক্তিগত জীবন সম্পাদনা

আবদুল হামিদ ব্যক্তিগত জীবনে সাহেরা হামিদের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।[৩] এই দম্পতি এক পুত্র ও এক কন্যা রয়েছে।[৩] আবদুল হামিদ ২০১২ সালের ৪ আগস্ট ৭৬ বছর বয়সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।[৪]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "ক্রীড়া ধারাভাষ্যকার আবদুল হামিদের মৃত্যু"বিবিসি বাংলা। সংগ্রহের তারিখ ২২ জুন ২০২০ 
  2. "আবদুল হামিদ এক কিংবদন্তি"বাংলানিউজ২৪.কম। সংগ্রহের তারিখ ২২ জুন ২০২০ 
  3. "হামিদ ভাই: বর্ণাঢ্য এক ক্রীড়াব্যক্তিত্ব"বাংলানিউজ২৩.কম। সংগ্রহের তারিখ ২২ জুন ২০২০ 
  4. "বাংলাদেশের ক্রীড়া ধারাভাষ্যকার আব্দুল হামিদ আর নেই"ভিওএ। সংগ্রহের তারিখ ২২ জুন ২০২০