আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞান অলিম্পিয়াড
আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞান অলিম্পিয়াড (আইএও) একটি আন্তর্জাতিক স্বিকৃতিপ্রাপ্ত জ্যোতির্বিজ্ঞান সম্পর্কিত বাৎসরিক ইভেন্ট যা মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য (১৪-১৮ বছর বয়স) আয়োজন করা হয়। এখানে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে বুদ্ধিমত্তার যাচাইয়ের জন্য প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। এটি আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান অলিম্পিয়াডগুলোর মধ্যে একটি।
ইউরেশীয়ান অ্যাস্ট্রোনমিকাল সোসাইটি ১৯৯৬ সালে প্রতিযোগিতার পর্বসমূহ প্রতিষ্ঠা করে।
প্রতিযোগিতার পর্বসমূহসম্পাদনা
আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞান অলিম্পিয়াডের পর্বসমূহ ৩টি ভাগে বিভক্তঃ তত্ত্বীয়, পর্যবেক্ষণীয় এবং ব্যবহারিক। তত্ত্বীয় পর্বের সমস্যাগুলো সাধারণত জ্যোতির্বিজ্ঞান, জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞান, স্থান এবং গ্রহ বিষয়ক পদার্থবিদ্যা অথবা কাল্পনিক পরিস্থিতি বিষয়ক ক্লাসিক্যাল সমস্যা থেকে দেয়া হয়। পর্যবেক্ষণীয় পর্বে থাকে তারকা, তারকামণ্ডলী, তারকার আপেক্ষিক ঔজ্জ্বল্য এবং কৌণিক দূরত্ব নির্ণয়, দূরবীক্ষণ যন্ত্র ব্যবহার অথবা অন্যান্য পর্যবেক্ষণীয় কৌশল। ব্যবহারিক পর্বে থাকে পর্যবেক্ষণলব্ধ তথ্যের উপর ভিত্তি করে সমস্যা এবং তার প্রস্তাবকৃত সমাধান।
লক্ষ্যসম্পাদনা
আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞান অলিম্পিয়াডের সমস্যাগুলো কল্পনাশক্তি, সৃজনশীলতা এবং মুক্তচিন্তার বিকাশের লক্ষ্যে সাজানো হয়। সমস্যাগুলো শিক্ষার্থীদেরকে সমস্যাগুলো স্বতন্ত্রভাবে শনাক্ত করতে, মডেল নির্বাচন করতে, প্রয়োজনীয় অনুমান, বিবেচনা, বহুমাত্রিক হিসাব বা লজিক অপারেশন পরিচালনার জন্য উদ্দীপ্ত করে। পর্বগুলো দ্রুততা বা স্মৃতিশক্তি অথবা আনুষ্ঠানিক তথ্য বা যুক্তি জ্ঞানের পরীক্ষা নয়। বরং এখানে সকল মৌলিক তথ্য এবং আনুষ্ঠানিক তথ্য দিয়ে দেয়া হয়। অংশগ্রহণকারীদের উত্তরপত্র মূল্যায়নের সময় সমাধানের পদ্ধতিকেই বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়, সেখানে আনুষ্ঠানিক এবং চূড়ান্ত সঠিক উত্তর (সূত্র বা সংখ্যাসূচক মান) কোন মৌলিক ভূমিকা পালন করে না। শুধুমাত্র কঠোর নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সমাধান নয় বরং অংশগ্রহণকারীদের বিশ্লেষণাত্মক ক্ষমতা প্রদর্শন করতে পারার একটি সুযোগ থাকে। তাছাড়া জুরি বোর্ড সমস্যা প্রনয়নকারী কর্তৃক প্রদেয় সমাধান অনুসরণ করতে বাধ্য করে না। আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিদ্যা অলিম্পিয়াড বন্ধুত্ব এবং সহনশীল মনোভাব নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে প্রতিযোগিতা অংশগ্রহণকারীদের দক্ষতা দেখানোর জন্য একটি উদ্দীপক। কিন্তু পরিচিতি, বিভিন্ন দেশের ছাত্র, শিক্ষক এবং বিজ্ঞানীদের মধ্যে ধারণা, মতবিনিময় এবং সহযোগিতা বিনিময়ের গুরুত্ব এখানে মুখ্য। প্রতিযোগিতাই প্রোগ্রামটির একমাত্র উদ্দেশ্য নয়।
অংশগ্রহণকারীসম্পাদনা
অংশগ্রহণকারী দেশগুলোতে জাতীয় অলিম্পিয়াড এবং ক্যাম্প আয়োজনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞান অলিম্পিয়াডের অংশগ্রহণকারীদের বাছাই করা হয়।
প্রথাগতভাবে আমেরিকা , ব্রাজিল, বুলগেরিয়া, চিন, এস্তোনিয়া, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইতালি , কোরিয়া , লিথুয়ানিয়া, মস্কো, রুমানিয়া, রাশিয়া, সুইডেন, সার্বিয়া, এবং থাইল্যান্ড এর দলগুলো আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণ করে। বাংলাদেশ, ক্রিমিয়া, ইরান, কিরগিজস্তান, ইউক্রেন এবং বেলারুশ অনিয়মিতভাবে অংশগ্রহণ করে। ক্রোয়েশিয়া, চেক প্রজাতন্ত্র এবং কাজাখস্তান সম্প্রতি আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে যোগদান করেছে। আরো কয়েকটি দেশ ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে যোগদানের পরিকল্পনা করছে।
মস্কো এবং ক্রিমিয়া রাশিয়া এবং ইউক্রেন থেকে আলাদাভাবে দল পাঠায়। উন্মুক্ত জ্যোতির্বিজ্ঞান অলিম্পিয়াড এবং প্রতিযোগিতার সবচেয়ে পুরাতন আয়োজনকারী (১৯৪০ সাল থেকে) হিসাবে, এবং আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞান অলিম্পিয়াডের প্রতিষ্ঠা এবং উন্নয়্নে তাদের ঐতিহাসিক ও উল্লেখযোগ্য অবদানের কথা বিবেচনা করে আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে তাদেরককে সকল অধিকার এবং কর্তব্যসহিত স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
সারমর্মসম্পাদনা
এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় জ্যোতির্বিদ্যা অলিম্পিয়াডসম্পাদনা
এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় জ্যোতির্বিদ্যা অলিম্পিয়াড (এপিএও) এশিয়ান দেশগুলির উচ্চ বিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের জন্য আয়োজিত একটি আঞ্চলিক বাৎসরিক জ্যোতির্বিজ্ঞান ইভেন্ট। যেসকল দেশের দলসমূহ আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞান অলিম্পিয়াড (আইএও)-এ বাছাই হতে পারেনি তারা এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় জ্যোতির্বিদ্যা অলিম্পিয়াড (এপিএও)-তে অংশগ্রহণ করতে পারে। এবং এপিএও আইএও-এর সময়সূচি অনুসরণ করে। এপিএও এপ্রিল ২৫, ২০০৫ সালে আইএও চেয়ারম্যান কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশ, কম্বোডিয়া, গণচীন, ইন্দোনেশিয়া, কাজাখস্তান, কির্গিজস্তান, কোরিয়া, নেপাল, পাকিস্তান, রাশিয়াএর এশিয়ান অংশ, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড এবং ভিয়েতনাম থেকে দল এপিএওতে অংশ নেয়।
এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় জ্যোতির্বিদ্যা অলিম্পিয়াডের ছকসম্পাদনা
ক্রম | বছর | তারিখ | সময় অঞ্চল | শহর | দেশ | অংশগ্রহণকারী দেশ |
নিরীক্ষক দেশ |
---|---|---|---|---|---|---|---|
১ | ২০০৫ | ডিসেম্বর ৪–১১ | ইউটি+৮ | ইরখুটস্ক | রাশিয়া | ৫ | - |
২ | ২০০৬ | ডিসেম্বর ৪–১১ | ইউটি+১০ | ভ্লাদিভস্তক | রাশিয়া | ৬ | - |
৩ | ২০০৭ | নভেম্বর ২১–২৯ | ইউটি+৮ | জিয়মেন | চিন | ৪ | - |
৪ | ২০০৮ | নভেম্বর ১৬–২৩ | ইউটি+৬ | বিশকেক | কির্গিজস্তান | ৬ | - |
৫ | ২০০৯ | অক্টোবর ৭–১৪ | ইউটি+৯ | দামইয়াং | কোরিয়া | ৯ | - |
৬ | ২০১০ | নভেম্বর ২৪ – ডিসেম্বর ৫ | ইউটি+৭ / ইউটি+৯ | টোলিকারা | ইন্দোনেশিয়া | 8 | ১ |
৭ | ২০১১ | নভেম্বর ৭–১৫ | ইউটি+৫ | আকটুবিনক্স | কাজাকস্থান | ৬ | - |
৮ | ২০১২ | নভেম্বর ২৬ – ডিসেম্বর ৪ | ইউটি+৬ | কক্সবাজার | বাংলাদেশ | ৬ | - |
৩ | ২০১৩ | নভেম্বর ২৩ – ডিসেম্বর ২ | ইউটি+৮ | টমোহন | ইন্দোনেশিয়া | ৬ | - |
১০ | ২০১৪ | নভেম্বর ২৪ – ডিসেম্বর ২ | ইউটি+৮ | ইরখুটস্ক, লিস্টভিয়াংকা | রাশিয়া | ৫ | - |
১১ | ২০১৫ | নভেম্বর ১৩–২২ | ইউটি+৬ | ঢাকা | বাংলাদেশ | ৪ | - |
১২ | ২০১৬ | নভেম্বর ১৭–২৫ | ইউটি+৯ | গোহং | কোরিয়া | ৭ | - |
১৩ | ২০১৭ | নভেম্বর ২২–৩০ | ইউটি+৭ | নোভোসিবিরস্ক | রাশিয়া | - |
আরো দেখুনসম্পাদনা
অন্যান্য অলিম্পিয়াডসমূহ:
- আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড ( আইএমও, ১৯৫৯ সাল থেকে)
- আন্তর্জাতিক পদার্থবিজ্ঞান অলিম্পিয়াড (আইপিএইচও, ১৯৬৭ সাল থেকে)
- আন্তর্জাতিক রসায়ন অলিম্পিয়াড (আইসিএইচও, ১৯৬৮ সাল থেকে)
- আন্তর্জাতিক ইনফরমেটিক্স অলিম্পিয়াড ( আইওআই, ১৯৮৯ সাল থেকে)