অঙ্গামি নাগা

ভারতের নাগল্যান্ডের স্থানীয় নাগা জনজাতি
(আঙ্গামী নাগা থেকে পুনর্নির্দেশিত)

অঙ্গামি উত্তর-পূর্ব ভারতের নাগাল্যান্ড রাজ্যে বসবাস করা একটি স্থানীয় নাগা জনজাতি৷ তাঁদের ভারতীয় সংবিধানের পঞ্চম সূচী অনুসারে অনুসূচিত জনজাতিরূপে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে৷ [৩] এই জনজাতির লোকরা ফেব্রুয়ারি মাসে পালন করা ’চেক্রেনী’ (Sekrenyi) নামের উৎসবটির জন্য প্রখ্যাত৷

আবেল অঙ্গামি
মোট জনসংখ্যা
প্রায় ২,০০,০০০[১]
ভাষা
অঙ্গামি ভাষা
ধর্ম
খ্রিস্ট (৯৮.২২%),
হিন্দু (০.৭৪%),
অ্যানিমিজম (0.71%).[২]
অঙ্গামিদের একটি নৃত্য উৎসব

বিভাগ সম্পাদনা

অঙ্গামিদের মূল বাসস্থান বর্তমানের কোহিমা জেলা, যদিও মূলত চারটি বিভাগ দেখা পাওয়া যায়৷

  • দক্ষিণ অঙ্গামি: এরা কোহিমার দক্ষিণে মাউন্ট জাফু নামের পর্বতর নিচে বাস করে৷ প্রধান অঞ্চলসমূহ হল – জাফুফিকি (Japfüphiki ), বিশ্বেমা (Viswema), খুজামা (Khuzama), কিদিমা (Kidima), কিগোয়েমা (Kigwema), জখমা (Jakhama), ফেসামা (Phesama), মিমা (Mima), মিটেলেফে (Mitelephe), ফুচামা (Pfuchama), কেজমা (Kezoma), চাজুবা (Chazuba), চখাবা (Chakhaba) এবং কেজ’ টাউন৷
  • পশ্চিম অঙ্গামি: কোহিমার পশ্চিমদিকে বাস করে৷ মূলত: জোটসোমা (Jotsoma), টিমা (Khonoma), মেজোমা (Mezoma), সেচ্ছুমা (Sechuma), জুবজা (Secü-zubza), কিরুফেমা (Kiruphema), পেডুচ্ছা (Peducha), মেনগোজুমা (Mengoujuma), থেকরেজু (Thekrejü), জুলেকে (Dzüleke) গ্রামের অধিবাসী সকল৷
  • উত্তর অঙ্গামি: কোহিমার উত্তরে কিউহিমা (Kewhima), চিডিমা (Chedema), মেরিমা (Meriema), চিকামা (Chiechama),নেরহেমা (Nerhema), চিফোবোজু (Chiephobozou), টুফেমা (Tuophema), গরিফেমা (Gariphema), দিহোমা (Dihoma), রুসোমা (Rusoma) ইত্যাদি গ্রামসমূহের অধিবাসীরা ৷
  • চাখ্রো অঙ্গামি: মূলত ডিমাপুরের আশে পাশে থাকা গ্রাম এবং ছোট টাউনসমূহ যেমন মেডজিফেমা (Medziphema), চুমুকেডিমা (Chumukedima), সোভিমা (Sovima), রাজাফে (Razaphe), পিফিমা (Piphema) ইত্যাদির অধিবাসীগণ৷

আগের পূর্ব অঙ্গামিরা বর্তমানে পৃথক হয়ে চাকেসাং (Chakhesang) নামের জনজাতি গঠন করেছে৷

সংস্কৃতি সম্পাদনা

অঙ্গামিরা মূলত চাষ এবং পশুপালনের ওপরে নির্ভরশীল পার্বত্য জনজাতি৷ তাঁরা ধাপ চাষের জন্য পরিচিত৷ মূল সতেরোটা নাগা জনজাতির মধ্যে এমন চাষ করা দুটি জনজাতির অন্যতম এই অঙ্গামিরা৷ এর ফলে তাঁরা একই মাটিতে প্রতিবছর ধানের চাষ করতে পারে এবং সেজন্য ঝুম চাষের ওপর তাঁরা তুলনামূলকভাবে কম নির্ভরশীল৷

সামাজিক শ্রেণিবিভাজন অঙ্গামি সমাজে দেখা পাওয়া যায় না৷ পরম্পরাগতভাবে, সন্তান-সন্ততির মধ্যে সম্পত্তির সমানভাবে ভাগ করে দেয়া হয়৷ পরিবারের অন্যতম নুমলীয়া পুত্রই পিতৃ-মাতার ঘর কিথোকি লাভ করে৷ তাঁদের বৃদ্ধাবস্থাত চোবাচিতা করার দায়িত্বও এর সঙ্গে তিনি পালন করে৷

ধর্ম সম্পাদনা

অঙ্গামিরা পরম্পরাগতভাবে যুদ্ধপ্রিয় জনজাতি ছিল৷ আগে অঙ্গামি পুরুষেরা শত্রু গ্রামের সঙ্গে যুদ্ধ করে এবং মাথা কেটে সময় অতিবাহিত করত৷ ১৮৭৯ সালে ব্রিটিশ সরকার তাদের অঞ্চলসমূহ হস্তগত করে এমন যুদ্ধ-বিগ্রহের অন্ত ঘটায়৷ খ্রিস্টধর্মপ্রচারের ফলশ্রুতিতে প্রায়ভাগ অঙ্গামি লোক ধর্মান্তরিত হয়ে আগেকার রীতি-নীতি ত্যাগ করে৷ খ্রিস্টধর্মী অঙ্গামিদের মূলসুতো পাঁচটা- ব্যাপ্টিস্ট, খ্রিস্টান রিভাইভেল, রোমান কেথোলিক, পেন্টিকোষ্টেল এবং সপ্তম দিনের এডভেন্টিষ্ট (Seventh-day Adventist)৷ অবশ্য খ্রিস্টধর্মী অঙ্গামিদের প্রায় ৮০% একটি ব্যাপ্টিস্ট৷

বর্তমানে প্রায় ৯৮% অঙ্গামি লোকই খ্রিস্টধর্মী যদিও আগেকার এনিমিষ্ট ধর্ম জীইয়ে রাখা অন্তিম নাগা জনজাতিগুলির একটি এই অঙ্গামিরা৷ এই এনিমিষ্ট অঙ্গামিদের পালন করা ধর্মকে ’ফুটসানা’ (Pfutsana religion) বলে পরিচিত৷ ১৯৯১ সালের জনগণনা অনুসারে এই ধর্মাবলম্বী অঙ্গামির সংখ্যা ছিল ১৭৬০ জন, কিন্তু দশবছর পরে এই সংখ্যা ৮৮৪ এ হ্রাস পায়৷ বর্তমান এই ধর্মী লোকরা কোহিমার দক্ষিণে নটি গ্রামে সমাকীর্ণ হয়ে আছে৷ [৪][৫]

প্রখ্যাত ব্যক্তি সম্পাদনা

  • Metsülhou Angami (১৯৯০-২০১৫): হাস্যরসিক (Comedian), নৃত্যশিল্পী তথা সামাজিক কমেন্টেটর (social commentator)৷ নাগা মুক্তিযুদ্ধর দাবীতে প্রতিষ্ঠিত ঐতিহাসিক সাইমন কমিশনের তিনি একজন signatory ছিলেন৷
  • Angami Zapu Phizo (১৯১৩-১৯৯০): নাগা ন্যাশনাল কাউন্সিলের নেতা৷
  • Kevichüsa Angami (1903-1990): সর্বপ্রথম নাগা স্নাতক৷ নাগা ন্যাশনাল কাউন্সিলর সাধারণ সম্পাদক৷
  • T. N. Angami (১৯১৩-১৯৮৬): নাগাল্যান্ড Nagaland Legislative Assembly র সর্বপ্রথম মুখপত্র (speaker) তথা ১৯৬৬ থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত নাগাল্যান্ডের মুখ্যমন্ত্রী৷
  • Vizol Angami (১৯১৪-২০০৮): প্রথম নাগা বিমানচালক (Indian Air Force during World War II) এবং পরবর্তী কালে নাগাল্যান্ডের মুখ্যমন্ত্রী (১৯৭৪-১৯৭৫; ১৯৭৭-১৯৮০)
  • Samuel Mezhür Sekhose (১৯১৮-১৯৮৯): ব্রিটিশ এম্পায়ার মেডেল (British Empire Medal) লাভ করা একমাত্র ভারতীয় ৷
  • Dr. Khrielieü Kire (১৯১৮-২০১৩): প্রথম মহিলা নাগা ডাক্তার এবং নাগাল্যান্ডে চিকিৎসাবিদ্যার অগ্রগতির ক্ষেত্রে বাটকটীয়া৷

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ৭ সেপ্টেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ 
  2. Table ST-14, Indian Census of 2001
  3. "The Constitution (Scheduled Tribes): Order, 1950"Ministry of Law and Justice (India)। ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ 
  4. Table ST-14, Table ST-14a, Census of India 2001
  5. "nscn: Japfuphiki Pfutsana annual feast"। Nscn.livejournal.com। ২০০৬-০৩-২৬। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৬-১০ 

আরও দেখুন সম্পাদনা

  • Alban von Stockhausen: Imag(in)ing the Nagas: The Pictorial Ethnography of Hans-Eberhard Kauffmann and Christoph von Fürer-Haimendorf. Arnoldsche, Stuttgart 2014, ISBN 978-3-89790-412-5.
  • Durkheim, E. and Mauss, 1963. Primitive Classification. (trans. R. Needham), London, Free Press.
  • Edsman, C.M., 1987. ‘Fire’, The Encyclopaedia of Religion, vol. 5, ed. by M. Eliade. pp. 340–46. New York, Macmillan Publishing Company.
  • Hutton, J.H., 1969. The Angami Nagas, Bombay, Oxford University Press. (first published in 1921 by Macmillan & Co. London).
  • Joshi, Vibha. A Matter of Belief: Christian Conversion and Healing in North-East India (Berghahn Books; 2012) 298 pages; a study of Christian conversion and the revival of traditional animist culture among the Angami Naga.
  • Rudhardt, J., 1987. ‘Water’, The Encyclopaedia of Religion, vol. 15, ed. by M. Eliade, pp. 350–61. New York, Macmillan Publishing Company.
  • Stirn, Aglaja & Peter van Ham. The Hidden world of the Naga: Living Traditions in Northeast India. London: Prestel.
  • Oppitz, Michael, Thomas Kaiser, Alban von Stockhausen & Marion Wettstein. 2008. Naga Identities: Changing Local Cultures in the Northeast of India. Gent: Snoeck Publishers.
  • Kunz, Richard & Vibha Joshi. 2008. Naga – A Forgotten Mountain Region Rediscovered. Basel: Merian.

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা