আইনস্টাইন ক্ষেত্র সমীকরণ
আইনস্টাইন ক্ষেত্র সমীকরণ (ইএফই; "আইনস্টাইন সমীকরণ" নামেও পরিচিত) হল আলবার্ট আইনস্টাইন এর সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্বে বর্ণিত ১০ টি সমীকরণ এর একটি সেট যা ভর ও শক্তি[১][২] দ্বারা স্থানকাল-এ সৃষ্ট বক্রতার ফলাফল হিসেবে মহাকর্ষের মৌলিক বল বর্ণনা করে। টেনসর সমীকরণ হিসেবে ইএফই আইনস্টাইন কর্তৃক প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯১৫[৩] সালে, যা স্থানকাল বক্রতাকে (আইনস্টাইন টেনসর দ্বারা প্রকাশিত) সেই স্থানকাল (স্ট্রেস-এনার্জী টেনসর দ্বারা ব্যক্ত)[৪] এর স্থানীয় শক্তি ও ভরবেগ এর সাথে সমীকরণে প্রকাশ করে।
ম্যাক্সওয়েল সমীকরণের মাধ্যমে আধান ও তড়িৎ প্রবাহ ব্যবহার করে যেমন তড়িৎ-চুম্বকীয় ক্ষেত্র নির্ধারণ করা হয়, তেমনি ভর-শক্তি এবং রৈখিক ভরবেগের উপস্থিতির ফলাফলস্বরূপ স্থানকাল জ্যামিতি নির্ধারণে ইএফই ব্যবহৃত হয়, অর্থাৎ, তারা স্থানকালে একটি নির্দিষ্ট সজ্জার স্ট্রেস-এনার্জীর জন্য স্থানকালের মেট্রিক টেনসর নির্ধারণ করে। এভাবে ব্যবহৃত হওয়ায়, মেট্রিক টেনসর এবং আইনস্টাইন টেনসর এর মধ্যকার সম্পর্কই ইএফইকে অরৈখিক আংশিক ব্যবকলনীয় সমীকরণ এর একটি সেট হিসেবে লেখার অনুমোদন দেয়। ইএফইয়ের সমাধানগুলোই হল মেট্রিক টেনসরের উপাদানসমূহ। পরবর্তীতে জিওডেসিক সমীকরণ ব্যবহার করে কণাসমূহ এবং বিকিরণ(জিওডেসিক) এর প্রাথমিক জ্যামিতিক সঞ্চারপথ হিসেব করা হয়।
স্থানীয় শক্তি-ভরবেগ নিত্যতা মেনে চলার সাথে সাথে, যেখানে মহাকর্ষ ক্ষেত্র দুর্বল এবং গতিবেগ আলোর বেগ[৫] অপেক্ষা অনেক কম, সেখানে ইএফই নিউটনের মহাকর্ষ আইনে পরিণত হয়ে যায়।
প্রতিসাম্যতার মত কিছু অনুমিত জিনিস সরলীকরণ করার মাধ্যমেই ইএফই এর সঠিক সমাধান পাওয়া সম্ভব। ঘূর্ণায়মান কৃষ্ণগহ্বর এবং প্রসারণশীল মহাবিশ্ব এর মত অনেক মহাকর্ষীয় ঘটনার মডেল উপস্থাপনের জন্য অনেকসময়ই প্রকৃত সমাধান এর কিছু বিশেষায়িত শাখা অধ্যয়ন করা হয়ে থাকে। এছাড়াও সামান্য বিচ্যুতিতে বক্র স্থানকালকে প্রায় সমতল ধরে নিয়ে ইএফই এর আরো সরলীকরণ করা সম্ভব যা একে রৈখিক ইএফইতে রূপান্তর করে। এই ধরনের সমীকরণ মহাকর্ষীয় তরঙ্গের মত কিছু ঘটনা বুঝতে ব্যব্যহৃত হয়।
গাণিতিক রূপ
সম্পাদনা
আইনস্টাইন ক্ষেত্র সমীকরণ (ইএফই) এভাবে লেখা যেতে পারেঃ[৬]
যেখানে Rμν হল রিক্কি টেনসর, R হল স্কেলার কার্ভেচার, gμν হল মেট্রিক টেনসর, Λ মহাজাগতিক ধ্রুবক, G নিউটনের মহাকর্ষ ধ্রুবক,c শূণ্যস্থানে আলোর বেগ এবং Tμν হল স্ট্রেস-এনার্জী টেনসর
ইএফই একসেট ৪x৪ মাত্রার প্রতিসাম্য টেনসর এর সাথে সম্পর্কযুক্ত একটি টেনসর সমীকরণ। প্রতিটি টেনসরেরই ১০টি স্বাধীন উপাংশ রয়েছে। চার বিয়াংকী অভেদ ১০টি স্বাধীন উপাংশকে কমিয়ে ৬টি তে নিয়ে আসে, যা মেট্রিকে চারটি গজ ফিক্সিং ডিগ্রী অফ ফ্রীডম রাখে, যা স্বাধীনভাবে স্থানাঙ্ক পদ্ধতি বেছে নেওয়ার সাথে সম্পর্কিত।
যদিও প্রথমদিকে চতুর্মাত্রিক তত্ত্ব প্রসঙ্গে আইনস্টাইন ক্ষেত্র সমীকরণ গঠন করা হয়, তাত্ত্বিকগণ উচ্চ মাত্রার ক্ষেত্রেও এর ফলাফল বিশ্লেষণ করেছেন। সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্বের প্রাসঙ্গিকতার বাইরের এসব সমীকরণকেও এখন আইনস্টাইন ক্ষেত্র সমীকরণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। শূণ্যস্থানে ক্ষেত্র সমীকরণ(যখন T অভিন্নরূপে শূণ্য) আইনস্টাইন বহুধার কে বর্ণনা করে।
দেখতে সাদামাটা হওয়া সত্ত্বেও সমীকরণগুলো আসলে কিছুটা জটিল। স্ট্রেস-এনার্জী টেনসরের আকারে শক্তি ও ভরের একটি নির্দিষ্ট বণ্টনব্যবস্থায়, মেট্রিক টেনসর gμν এর সমীকরণ থেকে ইএফই বোঝা যায়, যেহেতু রিক্কি টেনসর এবং স্কেলার কার্ভেচার উভয়েই জটিল ও অরৈখিকভাবে মেট্রিকের উপর নির্ভর করে। প্রকৃতপক্ষে, পুরোপুরি লেখলে, ইএফই ১০ টি যুগ্ম, অরৈখিক, অধি-উপবৃত্তীয় আংশিক ব্যবকলনীয় সমীকরণের একটি ব্যবস্থা।
আইনস্টাইন টেনসর বর্ণনার মাধ্যমে যেকেউ আরো সংক্ষেপে ইএফই কে লেখতে পারে,
যেটি একটি দ্বিতীয় র্যাঙ্কের প্রতিসম টেনসর যা মেট্রিকের একটি ফাংশন॥ ইএফই কে তখন লেখা যায়,
জ্যামিতিক একক যেখানে G = c = 1 ব্যবহার করে, একে আবারো লেখা যায়,
বামপাশের রাশিমালা মেট্রিকে নির্ধারিত স্থানকাল বক্রতাকে বর্ণনা করে; ডানপাশের রাশিমালা বর্ণনা করে ঐ স্থানকালে বস্তু/শক্তিকে।
এই সমীকরণগুলোই স্থানকালের ভেতর দিয়ে মুক্তভাবে পড়ন্ত বস্তুর গতি বর্ণনাকারী জিওডেসিক সমীকরণের[৭] সাথে যৌথভাবে সাধারণ আপেক্ষিকতার গাণিতিক ভিত্তির গোড়াপত্তন করে।
চিহ্নের প্রথা
সম্পাদনাউপরে উল্লেখিত ইএফই মিজনার, থোর্ণ, এবং হুইলার[৮] কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত একটি আদর্শ অবস্থা। রচয়িতাগণ নিচের তিনটি চিহ্ন (S1, S2, S3) অনুসারে বিদ্যমান সকল ধরনের প্রথা বিশ্লেষণ এবং শ্রেণিবিন্যাস করেছেনঃ
উপরের তৃতীয় চিহ্নটি রিক্কি টেনসরের প্রথা বেছে নেওয়ার সাথে সম্পর্কিতঃ
এই সংজ্ঞানুসারে, মিজনার,থোর্ণ, এবং হুইলার এদের (+++) হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করেছেন, যেখানে ওয়াইনবার্গ(১৯৭২)[৯] এর ক্ষেত্রে এটি(+--),পীবলস(১৯৮০) এবং এফস্টাথিও(১৯৯০) (-++), যখন পীকক(১৯৯৪),রিনডলার(১৯৭৭),এটওয়াটার(১৯৭৪), কলিন্স মার্টিন ও স্কোয়ারস(১৯৮৯) অনুযায়ী (-+-)।
আইনস্টাইন সহ অন্যান্য লেখকগণ রিক্কি টেনসরের সংজ্ঞায় একটি ভিন্ন চিহ্নের ব্যবহার করেছেন ফলাফলস্বরূপ যা ডানপক্ষের ধ্রুব পদটিকে ঋণাত্মক রাখে।
মহাজাগতিক পদটির চিহ্ন(অত্যন্ত ছোট) উভয়ই সংস্করণেই পরিবর্তন হবে, মি-থো-হু (-+++)মেট্রিক চিহ্ন প্রথার বদলে যদি(+---) মেট্রিক চিহ্ন প্রথা ব্যবহৃত হয়।
সমতূল্য প্রতিপাদন
সম্পাদনাইএফই এর উভয়পক্ষে মেট্রিকের সাপেক্ষে ট্রেস নিয়ে পাই,
যেখানে D হল স্থানকাল মাত্রা। এই রাশিমালাকে এভাবেও লেখা যায়,
এর সাথে যদি −+১/২gμν গুণ করে ইএফই সমীকরণে বসানো যায়,তবে নিচের তূল্য "ট্রেস-রিভার্স" অবস্থাটি পাওয়া যায়,
উদাহরণস্বরূপ, D = 4 এর জন্য সমীকরণটি পরিণত হয়,
একে আবার "ট্রেস-রিভার্স" করলে আসল ইএফই পাওয়া যায়। "ট্রেস-রিভার্স" গঠনটি কিছুক্ষেত্রে অধিক সুবিধা তৈরী করে( উদাহরনস্বরূপ,দুর্বল-ক্ষেত্র সীমায় কোন প্রকার উল্লেখযোগ্য সূক্ষ্মতার পরিবর্তন না করে এর ডানপক্ষের gμν এর পরিবর্তে মিনস্কৌকি মেট্রিক ব্যবহার করা যায়)।
মহাজাগতিক ধ্রুবক
সম্পাদনাআইনস্টাইন তার সমীকণে মেট্রিক এর সমানুপাতিক একটি মহাজাগতিক ধ্রুবক অন্তর্ভূক্ত করতে সমীকরণে কিছুটা পরিবর্তন আনেন,
যেহেতু,Λ একটি ধ্রুবক, তাই, শক্তির সংরক্ষণশীলতা নীতি বিঘ্নিত হচ্ছেনা।
মূলত মহাজাগতিক ধ্রুবক পদটি আইনস্টাইন এনেছিলেন স্থির বিশ্ব(যা প্রসারিত বা সংকোচিত কিছুই হচ্ছে না) প্রতিষ্ঠার জন্য। এরূপ চেষ্টা ফলপ্রসূ হয়নি কেননাঃ
- এই তত্ত্ব দ্বারা বর্ণিত মহাবিশ্ব অস্থায়ী, এবং
- এডুইন হাবল এর পর্যবেক্ষণ প্রমাণ করে যে আমাদের মহাবিশ্ব প্রসারমান।
তাই, আইনস্টাইন (তার) জীবনের সবচে বড় ভুল উল্লেখ করে Λ কে পরিত্যাগ করেন।[১০]
আইনস্টাইনের মহাজাগতিক ধ্রবক পদটি নিয়ে আসা সত্ত্বেও, এধরনের কোন পদ সমীকরণে কোন অসঙ্গতি সৃষ্টি করেনি। বহুবছর ধরে সার্বজনীনভাবে মহাজাগতিক ধ্রুবক পদটি প্রায় ০ বিবেচনা করা হয়েছে। কিন্তু আধুনিক উন্নত জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক কলাকৌশলে ত্বরণশীল মহাবিশ্ব[১১][১২] ব্যাখ্যার জন্য এর ধনাত্মক মানের প্রয়োজনীয়তা উঠে আসে।
যদিও আইনস্টাইন মহাজাগতিক ধ্রুবককে একটি স্বাধীন মাপকাঠি হিসেবে ভেবে নিয়েছিলেন, কিন্তু স্ট্রেস-এনার্জী টেনসরের অংশ হিসেবে লেখলে, ক্ষেত্র-সমীকরণে অন্যপাশেও এর পদ বসতে পারেঃ
লব্ধি শূন্যস্থান শক্তি(vacuum energy) ধ্রুব এবং লেখা যায়
অর্থাৎ,মহাজাগতিক ধ্রুবকের অস্তিত্ব একটি অশূন্য শূণ্যস্থান শক্তির সমতূল্য আর তাই, সাধারণ আপেক্ষিকতত্ত্বে 'মহাজাগতিক ধ্রুবক' এবং 'শূন্যস্থান শক্তি' এ দুটি পদ পারস্পারিক রূপান্তর যোগ্য।
বৈশিষ্ট্যাবলী
সম্পাদনাশক্তি ও ভরবেগের সংরক্ষণশীলতা
সম্পাদনাসাধারণ আপেক্ষিকতা স্থানীয় শক্তি ও ভরবেগের সংরক্ষণশীলতার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ যা এভাবে প্রকাশিত,
- .
স্থানীয় শক্তি-ভরবেগ সংরক্ষণশীলতা প্রতিপাদন ব্যবকলনীয় বিয়াংকী অভেদ কে সংক্ষেপে লেখলে(contraction) দাঁড়ায়,
মেট্রিক টেনসরের কোভ্যারিয়েন্ট হিসেবে ধ্রুব থাকার ধর্মকে ব্যবহার করে, যেমনgαβ;γ = 0,
রীম্যান টেনসরের এই বিপরীত প্রতিসাম্যতা উপরের রাশিমালার দ্বিতীয় পদকে এভাবে লেখার অনুমোদন দেয়ঃ
যা নিচের রাশিমালার সমতূল্য
রিক্কি টেনসরের সংজ্ঞা ব্যবহার করে
অতঃপর, মেট্রিকটিকে আবার সংক্ষেপণ করে,
এটা পেতে,
রিক্কি কার্ভেচার টেনসর এবং স্কেলার কার্ভেচার তখন দেখায়,
যাকে লেখা যেতে পারে
gεδ এর চূড়ান্ত কন্ট্র্যাকশন করলে আমরা পাই,
যা, সূচকগুলো সামান্য পুনর্লিখনের পর, ব্র্যাকেটের ভেতরের পদের প্রতিসাম্যতা এবং আইনস্টাইন টেনসরের সংজ্ঞানুসারে, আমাদের দেয়,
ইএফই ব্যবহার করলে, তাৎক্ষণিকভাবে আমরা পাই,
যা স্থানীয় স্ট্রেস-এনার্জী সংরক্ষনশীলতা প্রকাশ করে। এই সংরক্ষনশীলতা একটি ভৌত প্রয়োজনীয়তা। এই ক্ষেত্র সমীকরণ দিয়ে আইনস্টাইন শক্তির নিত্যতা নীতির সাধারণ আপেক্ষিকতত্ত্বের সঙ্গতি নিশ্চিত করেন।
অরৈখিকতা
সম্পাদনাঅরৈখিকতা সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্বকে পদার্থবিজ্ঞানের অন্যান্য তত্ত্ব থেকে পৃথক করেছে। উদাহরণস্বরূপ, তড়িৎ এবং চুম্বকক্ষেত্রে, এবং আধান ও তড়িত-প্রবাহ বণ্টনের ক্ষেত্রে তড়িৎ-চুম্বকত্বের ম্যাক্সওয়েল সমীকরণ একটি রৈখিক সমীকরণ। ওয়েভফাংশনের ক্ষেত্রে কোয়ান্টাম মেকানিক্স এর শ্রোডিঙ্গার সমীকরণও রৈখিক সমীকরণের আরেকটি উদাহরণ।
অনুষঙ্গ নীতি
সম্পাদনাদুর্বল মহাকর্ষ ক্ষেত্রে এবং ধীরগতির ক্ষেত্রে আসন্ন মান ব্যবহার করে ইএফই হতে নিউটনের মহাকর্ষ আইন প্রতিপাদন করা যায়। মূলত, ইএফই তে ধ্রুবক G কে আনা-ই হয়েছে এ দুটি বিষয় ধরে নিয়ে।
নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র প্রতিপাদন নিউটনীয়ান মহাকর্ষ স্কেলার ক্ষেত্রের তত্ত্ব থেকে Φ কে মহাকর্ষ বিভব হিসেবে লেখা যেতে পারে, যা জুল পার কেজি এককে
যেখানে ρ হল ঘণত্ব. একটি মুক্তভাবে পড়ন্ত বস্তুর কক্ষপথ নিচের সমীকরণকে সিদ্ধ করে,
টেনসর রূপে লেখলে, দাঁড়ায়
সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্বে, এই সমীকরণ গুলো ট্রেস-রিভার্স হিসেবে আইনস্টাইন ক্ষেত্র সমীকরণ দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়,
ধ্রুবক K এর জন্য জিওডেসিক সমীকরণ
আমরা ধরে নিই কণাটির গতিবেগ প্রায় শূন্যের কাছাকাছি
এবং তাই,
এই মেট্রিক এবং এর অন্তরকলন প্রায় অপরিবর্তনীয় তাই মিনস্কৌকি মেট্রিক থেকে এর বর্গের ব্যবধান অত্যন্ত ক্ষুদ্র। জিওডেসিক সমীকরণে স্থানের উপাংশে এই বিষয়গুলো ধরে নিলে দাঁড়ায়,
এখানে +dt/dτ এর দুটি ফ্যাক্টর দ্বারা ভাগ করা হয়েছে। যা একে নিউটনীয়ান প্রতিরূপে কমিয়ে আনবে। জানা আছে,
আমাদের অনুমিতি অনুযায়ী, বল α = i এবং টাইম (0) ডেরিভেটিভ শূন্য. তাহলে এটি সরলীকৃত হবে,
যা নিম্নোক্ত সমীকরণ দ্বারা সিদ্ধ হয়
একে আইনস্টাইন সমীকরণে রূপ দিতে, আমাদের শুধু দরকার সময়-সময় উপাংশ
অল্প গতিবেগ এবং স্থির ক্ষেত্র সংক্রান্ত আসন্নতা সূচিত হবে,
তাহলে,
এভাবে
রিক্কি টেনসরের সংজ্ঞানুসারে,
আমাদের সরলীকরণ অনুমিতি সমূহ Γ এর বর্গকে সরিয়ে দেয়
উপর্যুক্ত সমীকরণদ্বয় একত্র করে,
যা নিউটনীয়ান ক্ষেত্র সমীকরণে পর্যবসিত হয়
যা হবে যদি
শূন্যস্থানের সমীকরণ
সম্পাদনাযদি বিবেচনাধীন কোন নির্দিষ্ট অঞ্চলের জন্য স্ট্রেস-এনার্জী টেনসর Tμν শূন্য হয়, তবে ঐ ক্ষেত্রের সমীকরণ শূন্যস্থান সমীকরণে পরিণত হয়। ট্রেস-রিভার্স সমীকরণে Tμν=0 বসিয়ে শূন্যস্থান সমীকরণ লেখা যায়,
অশূন্য মহাজাগতিক ধ্রুবকের বেলায়, সমীকরণটি দাঁড়ায়,
শূন্যস্থান সমীকরণের সমাধান শূন্যস্থান সমাধান(vacuum solution) হিসেবে পরিচিত। সোয়ার্জচাইল্ড সমাধান এবং কের সমাধান কিছু উল্লেখযোগ্য সমাধানের উদাহরণ।
রিক্কি টেনসর, Rμν=0 সংবলিত বহুধার রিক্কি বহুধার এবং মেট্রিক সমানুপাতিক রিক্কি টেনসর সংবলিত বহুধার আইনস্টাইন বহুধার হিসেবে পরিচিত।
আইনস্টাইন-ম্যাক্সওয়েল সমীকরণ
সম্পাদনাযদি মুক্ত স্থানে তড়িত-চুম্বকীয় ক্ষেত্রের শক্তি-ভরবেগ টেনসর Tμν হয়, যেমন যদি তড়িত-চুম্বকীয় স্ট্রেস-এনার্জী টেনসর
ব্যবহৃত হয়, তাহলে আইনস্টাইন সমীকরণকে বলা হয় আইনস্টাইন-ম্যাক্সওয়েল সমীকরণ(গতানুগতিক আপেক্ষিকতায় মহাজাগতিক ধ্রুবক Λ শূন্য ধরে)ঃ
উপরন্তু মুক্ত স্থানে কোভ্যারিয়েন্ট ম্যাক্সওয়েল সমীকরণও প্রযোজ্যঃ
যেখানে সেমিকোলন কোভ্যারিয়েন্ট ব্যবকলন নির্দেশ করে, এবং ব্র্যাকেট অপ্রতিসাম্যতা নির্দেশ করে। প্রথম সমীকরণ দ্বি-রূপ F এর ৪-ডাইভার্জেন্স শূণ্য এবং দ্বিতীয় সমীকরণটি এর বহিঃব্যবকলন শূন্য নির্দেশ করে। সাম্প্রতিক গবেষণায়, পয়েনকেয়ার লেমা অনুযায়ী, কোন স্থানাংক ব্যবস্থায় একটি তড়িচ্চুম্বক ক্ষেত্র বিভব Aα পাওয়া সম্ভব যা নিম্নোক্ত,
এখানে কমা আংশিক ব্যবকলন নির্দেশ করছে। একে কখনো কখনো কোভ্যারিয়েন্ট ম্যাক্সওয়েল সমীকরণ, যা থেকে এর প্রতিপাদন সম্ভব,[১৩] এর সমতূল্য চিন্তা করা হয়। যাইহোক, এই সমীকরণের সার্বজনীন সমাধানও রয়েছে যদিও তাতে সার্বজনীন বিভব যথেষ্ট সুসংজ্ঞায়িত নয়।[১৪]
সমাধান
সম্পাদনাআইনস্টাইন ক্ষেত্র সমীকরণগুলোর সমাধানগুলোই হল স্থানকালের মেট্রিক। স্থানকালে কোন বস্তুর প্রাথমিক গতি বর্ণনা সহ এই মেট্রিকগুলো স্থানকালের গঠন বর্ণনা করে থাকে। যেহেতু ক্ষেত্র সমীকরণ গুলো অরৈখিক, তাই (আসন্ন কিছু বিষয় ধরে নেওয়া ছাড়া)সবসময় তাদের সম্পূর্ণ সমাধান পাওয়া যায়না। উদাহরণস্বরূপ, দুটি বৃহৎ ভর সম্পন্ন বস্তু দ্বারা সৃষ্ট স্থানকালের(উদাহরণ হিসেবে বলা যায় এদের মধ্যে বাইনারী নক্ষত্র ব্যবস্থার তাত্ত্বিক মডেলও আছে) জন্য কোন সম্পূর্ণ সমাধান নেই। যাইহোক, এধরনের ঘটনায় কিছু আসন্ন বিষয় ধরে নেওয়া হয়। এগুলো সাধারণত পোস্ট নিউটনিয়ান অ্যাপ্রোক্সিমেশান হিসেবে পরিচিত। এমনকি আবার কিছু এমন ক্ষেত্রও আছে যেখানে ক্ষেত্র সমীকরণগুলো সম্পূর্ণভাবে সমাধান করা সম্ভব হয়েছে এবং এগুলো প্রকৃত সমাধান[১৫] হিসেবে পরিচিত।
আইনস্টাইন ক্ষেত্র সমীকরণ এর প্রকৃত সমাধান নিয়ে গবেষণা এবং অধ্যয়ন জ্যোতির্বিজ্ঞানের অনেকগুলো কার্যক্রমের একটি। এটি কৃষ্ণগহ্বর এর ভবিষ্যদ্বানী সৃষ্টিতে এবং মহাবিশ্বের বিবর্তনের বিভিন্ন মডেল তৈরি করতে আমাদের সাহায্য করে।
যেকেউ এলিস ও ম্যাককলাম কর্তৃক প্রদর্শিত অর্থোনরম্যাল ফ্রেইম পদ্ধতিতে আইনস্টাইন ক্ষেত্র সমীকরণের প্রকৃত সমাধানগুলো অধ্যয়ন করতে পারেন।[১৬] এ প্রক্রিয়ায় আইনস্টাইন ক্ষেত্র সমীকরণগুলো একগুচ্ছ যুগ্ম, অরৈখিক, সাধারণ ব্যবকলনীয় সমীকরণে পরিণত হয়। Hsu এবং Wainwright[১৭] কর্তৃক বর্ণনা অনুযায়ী, আইনস্টাইন ক্ষেত্র সমীকরণগুলোর স্ব-অভিন্ন সমাধানগুলো কোন একটি গতিশীল সিস্টেম তৈরীর নির্দিষ্ট কিছু বিন্দু।
LeBlanc[১৮] এবং Kohli ও Haslam[১৯] কর্তৃক এই পদ্ধতি অনুসারে নতুন কিছু সমাধান আবিষ্কৃত হয়েছে।
সরলীকৃত ইএফই
সম্পাদনাইএফই এর অরৈখিকতা এর প্রকৃত সমাধান খুজে পাওয়া কঠিন করে দিয়েছে। ক্ষেত্র সমীকরণগুলোর সমাধান করার একটি পদ্ধতি হল কিছু আসন্নতা ব্যবহার করা, যেমন, মহাকর্ষ সৃষ্টিকারী কোন বস্তু(সমূহ) থেকে অনেক দূরে মহাকর্ষ ক্ষেত্র দুর্বল এবং স্থানকালের মিনস্কৌকি স্থানে পরিণত হওয়া ধরে নেওয়া। বিচ্যুতির দ্বিঘাত বা আরো উচ্চঘাতসমূহ বাদ দিয়ে মেট্রিক কে তখন মিনস্কৌকি মেট্রিকের সমষ্টিরূপে লেখা যায়।
এধরনের সরলীকরণ প্রক্রিয়া মহাকর্ষীয় বিকিরণের মত কিছু ঘটনা অনুসন্ধানে ব্যবহৃত হয়।
বহুপদী রূপ
সম্পাদনাবিপরীত মেট্রিক টেনসর ধারণ করায়, ইএফই কে যেকেউ অ-বহুপদী হিসেবে চিন্তা করতে পারে। যাইহোক, সমীকরণগুলোকে এমন ভাবে সাজানো যেতে পারে যেন তারা শুধুমাত্র মেট্রিক টেনসরই ধারণ করতে পারে, বিপরীত মেট্রিক নয়। প্রথমত, চার মাত্রায় মেট্রিকের নির্ণায়ক এভাবে লেখা যেতে পারেঃ
লেবি-চিভিতা প্রতীক ব্যবহার করে; চার মাত্রায় মেট্রিকের বিপরীত মেট্রিক এভাবে লেখা হয়ে থাকেঃ
যতক্ষণ না পর্যন্ত হরের পদটি সম্পূর্ণরূপে চলে যাচ্ছে, বিপরীত মেট্রিকের এইসংজ্ঞাকে সমীকরণগুলোয় প্রতিস্থাপণ করে ও পরবর্তীকালে উভয়পক্ষে det(g) দ্বারা গুণ করতে থাকলে, মেট্রিক টেনসর এবং এর প্রথম ও দ্বিতীয় ব্যবকলনগুলো বহুপদী সমীকরণে রূপান্তরিত হয়। ক্ষেত্রের উপযুক্ত পুনর্সংজ্ঞায়নের মাধ্যমে প্রক্রিয়াটি, যা হতে সমীকরণগুলো প্রতিপাদিত হয়েছে, বহুপদী আকারে লেখা যায়।[২০]
আরও দেখুন
সম্পাদনাটীকা
সম্পাদনা- ↑ Einstein, Albert (1916). "The Foundation of the General Theory of Relativity". Annalen der Physik. 354 (7): 769. Bibcode:1916AnP...354..769E. doi:10.1002/andp.19163540702. Archived from the original on 2012-02-06.
- ↑ Einstein, A. (১৯১৬)। "Die Grundlage der allgemeinen Relativitätstheorie"। Annalen der Physik (জার্মান ভাষায়)। 354 (7): 769–822। ডিওআই:10.1002/andp.19163540702।
- ↑ Einstein, Albert (November 25, 1915). "Die Feldgleichungen der Gravitation" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৭ অক্টোবর ২০১৬ তারিখে. Sitzungsberichte der Preussischen Akademie der Wissenschaften zu Berlin: 844–847. Retrieved 2006-09-12.
- ↑ Misner, Charles W. (১৯৭৩)। Gravitation। Kip S. Thorne, John Archibald Wheeler। New York। পৃষ্ঠা ৯১৬। আইএসবিএন 0-7167-0334-3। ওসিএলসি 585119।
- ↑ Spacetime and Geometry – An Introduction to General Relativity. pp. 151–159. আইএসবিএন ০-৮০৫৩-৮৭৩২-৩.
- ↑ Grøn, Øyvind; Hervik, Sigbjorn (2007). Einstein's General Theory of Relativity: With Modern Applications in Cosmology (illustrated ed.). Springer Science & Business Media. p. 180. আইএসবিএন ৯৭৮-০-৩৮৭-৬৯২০০-৫. Extract of page 180
- ↑ Weinberg, Steven (1993). Dreams of a Final Theory: the search for the fundamental laws of nature. Vintage Press. pp. 107, 233. আইএসবিএন ০-০৯-৯২২৩৯১-০.
- ↑ Misner, Thorne এবং Wheeler 1973
- ↑ Weinberg 1972
- ↑ Gamow, George (April 28, 1970). My World Line : An Informal Autobiography. আইএসবিএন ০-৬৭০-৫০৩৭৬-২. Retrieved 2007-03-14.
- ↑ Wahl, Nicolle (2005-11-22). "Was Einstein's 'biggest blunder' a stellar success?". Archived from the original on 2007-03-07. Retrieved 2007-03-14.
- ↑ Turner, Michael S. (May 2001). "Making Sense of the New Cosmology". Int.J.Mod.Phys. A17S1. 17: 180–196. arXiv:astro-ph/0202008Freely accessible. Bibcode:2002IJMPA..17S.180T. doi:10.1142/S0217751X02013113.
- ↑ Brown, Harvey (2005). Physical Relativity. Oxford University Press. p. 164. আইএসবিএন ৯৭৮-০-১৯-৯২৭৫৮৩-০.
- ↑ Trautman, Andrzej (1977). "Solutions of the Maxwell and Yang-Mills equations associated with hopf fibrings". International Journal of Theoretical Physics. 16 (9): 561–565. Bibcode:1977IJTP...16..561T. doi:10.1007/BF01811088..
- ↑ Stephani, Hans; D. Kramer; M. MacCallum; C. Hoenselaers; E. Herlt (2003). Exact Solutions of Einstein's Field Equations. Cambridge University Press. আইএসবিএন ০-৫২১-৪৬১৩৬-৭.
- ↑ Ellis, GFR and MacCallum, M, "A class of homogeneous cosmological models", Comm. Math. Phys. Volume 12, Number 2 (1969), 108-141.
- ↑ Hsu, L and Wainwright, J, "Self-similar spatially homogeneous cosmologies: orthogonal perfect fluid and vacuum solutions", Class. Quantum Grav. 3 (1986) 1105-1124"
- ↑ LeBlanc, V.G, "Asymptotic states of magnetic Bianchi I cosmologies", 1997 Class. Quantum Grav. 14 2281
- ↑ Kohli, Ikjyot Singh and Haslam, Michael C, "Dynamical systems approach to a Bianchi type I viscous magnetohydrodynamic model", Phys. Rev. D 88, 063518 (2013)
- ↑ Einstein's Field Equations in Polynomial Form
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- Charles Misner; Kip S Thorne; John Archibald Wheeler (১৯৭৩), Gravitation, San Francisco: W. H. Freeman, পৃষ্ঠা 501ff, আইএসবিএন 0-7167-0344-0
- Weinberg, Steven (১৯৭২), Gravitation and Cosmology, John Wiley & Sons, Inc, আইএসবিএন 0-471-92567-5
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- Hazewinkel, Michiel, সম্পাদক (২০০১), "Einstein equations", Encyclopedia of Mathematics, Springer Science+Business Media, আইএসবিএন 978-1-55608-010-4
- Caltech Tutorial on Relativity — A simple introduction to Einstein's Field Equations.
- The Meaning of Einstein's Equation — An explanation of Einstein's field equation, its derivation, and some of its consequences
- Video Lecture on Einstein's Field Equations by MIT Physics Professor Edmund Bertschinger.
- Arch and scaffold: How Einstein found his field equations Physics Today November 2015, History of the Development of the Field Equations
- The Einstein field equation on the wall of the Museum Boerhaave in downtown Leiden ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৮ জানুয়ারি ২০১৭ তারিখে