অর্ধ-রাষ্ট্রপতিশাসিত শাসনব্যবস্থা
একটি অর্ধ-রাষ্ট্রপতিশাসিত শাসনব্যবস্থা বা দ্বৈত-নির্বাহী শাসনব্যবস্থা বলতে এমন এক ধরনের সরকার ব্যবস্থাকে বোঝায়, যাতে একজন রাষ্ট্রপতি একজন প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর মন্ত্রীসভার সাথে সহাবস্থান করেন এবং শেষোক্ত দুইটি রাষ্ট্রের আইনসভার কাছে জবাবদিহি করেন। একটি সংসদীয় প্রজাতন্ত্রের সাথে এই সরকার ব্যবস্থাটির পার্থক্য হল এই যে এটিতে জনগণের ভোটে নির্বাচিত একটি রাষ্ট্রপ্রধান থাকেন যিনি কেবলমাত্র একজন আনুষ্ঠানিক প্রতিমা নন। অন্যদিকে একটি রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকার ব্যবস্থা থেকে এটির পার্থক্য হল এই যে যদিও মন্ত্রীসভা রাষ্ট্রপতি দ্বারা পদপ্রাপ্ত হয়, তার পরেও সেটি আইনসভার কাছে জবাবদিহি করে, রাষ্ট্রপতির কাছে নয়; আইনসভা একটি অনাস্থা প্রস্তাবের মাধ্যমে জোরপূর্বক মন্ত্রীসভাকে পদত্যাগে বাধ্য করতে পারে।[১][২][৩][৪]
|
২ সাংবিধানিকভাবে বহুদলীয় প্রজাতন্ত্র হিসেবে বিবেচিত বেশ কয়েকটি রাষ্ট্রকে অন্যান্য রাষ্ট্র কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্র হিসাবে চিহ্নিত করে থাকে। এই মানচিত্রটি বাস্তবত (কার্যত) গণতন্ত্রের মাত্রা অনুযায়ী নয় বরং সাংবিধানিক (আইনত) অবস্থার ভিত্তিতে তৈরি।
জার্মানির দুই বিশ্বযুদ্ধ মধ্যবর্তী ভাইমার প্রজাতন্ত্র (১৯১১-১৯৩৩) ও ১৯১৯ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত ফিনল্যান্ডকে অর্ধ-রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকার ব্যবস্থার দুইটি প্রথম দিকের উদাহরণ হিসেবে গণ্য করা যায়। কিন্তু "অর্ধ-রাষ্ট্রপতিশাসিত" পরিভাষাটি সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন ফরাসি সাংবাদিক উ্যবের ব্যোভ-মেরি (Hubert Beuve-Méry), ১৯৫৯ সালে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে।[৫] এরপর ১৯৭৮ সালে ফরাসি রাষ্ট্রবিজ্ঞানী মোরিস দ্যুভের্জে (Maurice Duverger) রচিত একটি গ্রন্থ পরিভাষাটিকে আরও জনপ্রিয় করে তোলে।[৬] উভয়েই ১৯৫৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ও অদ্যাবধি (২০২২) বিদ্যমান ফ্রান্সের ৫ম প্রজাতন্ত্রটিকে বর্ণনা করতে গিয়ে এই পরিভাষাটি ব্যবহার করেন।[১][২][৩][৪]
সংজ্ঞা
সম্পাদনামোরিস দ্যুভের্জে-র আদি সংজ্ঞা অনুযায়ী একটি অর্ধ-রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকার ব্যবস্থাতে রাষ্ট্রপতিকে অবশ্যই জনগণের ভোটে নির্বাচিত হতে হবে, তাঁর তাৎপর্যপূর্ণ ক্ষমতা থাকবে এবং তিনি নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য কার্যনির্বাহ করবেন।[৭] আধুনিক সংজ্ঞাগুলিতে বলা হয় যে এই ব্যবস্থায় রাষ্ট্রপ্রধানকে নির্বাচিত হতে হবে, এবং স্বতন্ত্র ও সংসদীয় আস্থার উপর নির্ভরশীল একজন প্রধানমন্ত্রী নির্বাহী বিভাগকে নেতৃত্ব দেবেন।[৭]
আরও দেখুন
সম্পাদনা- সরকার ব্যবস্থা অনুযায়ী দেশের তালিকা
- সংসদীয় ব্যবস্থা
- রাষ্ট্রপতিশাসিত ব্যবস্থা
- অর্ধ-সংসদীয় ব্যবস্থা
টীকা
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ Duverger (১৯৮০)। "A New Political System Model: Semi-Presidential Government"। European Journal of Political Research (quarterly)। 8 (2): 165–187। ডিওআই:10.1111/j.1475-6765.1980.tb00569.x ।
The concept of a semi-presidential form of government, as used here, is defined only by the content of the constitution. A political regime is considered as semi-presidential if the constitution which established it, combines three elements: (1) the president of the republic is elected by universal suffrage, (2) he possesses quite considerable powers; (3) he has opposite him, however, a prime minister and ministers who possess executive and governmental power and can stay in office only if the parliament does not show its opposition to them.
- ↑ ক খ Veser, Ernst (১৯৯৭)। "Semi-Presidentialism-Duverger's concept: A New Political System Model" (পিডিএফ)। Journal for Humanities and Social Sciences। 11 (1): 39–60। ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ আগস্ট ২০১৭।
- ↑ ক খ Duverger, Maurice (সেপ্টেম্বর ১৯৯৬)। "Les monarchies républicaines" [The Republican Monarchies] (পিডিএফ)। Pouvoirs, revue française d'études constitutionnelles et politiques (ফরাসি ভাষায়)। নং 78। Paris: Éditions du Seuil। পৃষ্ঠা 107–120। আইএসএসএন 0152-0768। আইএসবিএন 2-02-030123-7। ওসিএলসি 909782158। ১ অক্টোবর ২০১৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৬।
- ↑ ক খ Bahro, Horst; Bayerlein, Bernhard H.; Veser, Ernst (অক্টোবর ১৯৯৮)। "Duverger's concept: Semi-presidential government revisited"। European Journal of Political Research (quarterly)। 34 (2): 201–224। ডিওআই:10.1111/1475-6765.00405।
The conventional analysis of government in democratic countries by political science and constitutional law starts from the traditional types of presidentialism and parliamentarism. There is, however, a general consensus that governments in the various countries work quite differently. This is why some authors have inserted distinctive features into their analytical approaches, at the same time maintaining the general dichotomy. Maurice Duverger, trying to explain the French Fifth Republic, found that this dichotomy was not adequate for this purpose. He therefore resorted to the concept of 'semi-presidential government': The characteristics of the concept are (Duverger 1974: 122, 1978: 28, 1980: 166):
1. the president of the republic is elected by universal suffrage,
2. he possesses quite considerable powers and
3. he has opposite him a prime minister who possesses executive and governmental powers and can stay in office only if parliament does not express its opposition to him. - ↑ Le Monde, 8 January 1959.
- ↑ Duverger, Maurice (১৯৭৮)। Échec au roi। Paris: A. Michel। আইএসবিএন 9782226005809।
- ↑ ক খ Elgie, Robert (২ জানুয়ারি ২০১৩)। "Presidentialism, Parliamentarism and Semi-Presidentialism: Bringing Parties Back In" (পিডিএফ)। Government and Opposition। 46 (3): 392–409। এসটুসিআইডি 145748468। ডিওআই:10.1111/j.1477-7053.2011.01345.x।
উৎসপঞ্জি
সম্পাদনা- Bahro, Horst; Bayerlein, Bernhard H.; Veser, Ernst (অক্টোবর ১৯৯৮)। "Duverger's concept: Semi–presidential government revisited"। European Journal of Political Research (quarterly)। 34 (2): 201–224। ডিওআই:10.1111/1475-6765.00405।
- Beuman, Lydia M. (২০১৬)। Political Institutions in East Timor: Semi-Presidentialism and Democratisation। Abingdon, Oxon: Routledge। আইএসবিএন 978-1317362128। এলসিসিএন 2015036590 – Google Books-এর মাধ্যমে।
- Canas, Vitalino (২০০৪)। "The Semi-Presidential System" (পিডিএফ)। Zeitschrift für Ausländisches öffentliches Recht und Völkerrecht। 64 (1): 95–124।
- Duverger, Maurice (১৯৭৮)। Échec au roi। Paris: A. Michel। আইএসবিএন 9782226005809।
- Duverger, Maurice (জুন ১৯৮০)। "A New Political System Model: Semi-Presidential Government"। European Journal of Political Research (quarterly)। 8 (2): 165–187। ডিওআই:10.1111/j.1475-6765.1980.tb00569.x।
- Elgie, Robert (2011). Semi-Presidentialism: Sub-Types And Democratic Performance. Comparative Politics. (Oxford Scholarship Online Politics), Oxford University Press আইএসবিএন ৯৭৮০১৯৯৫৮৫৯৮৪
- Frye, Timothy (অক্টোবর ১৯৯৭)। "A Politics of Institutional Choice: Post-Communist Presidencies" (পিডিএফ)। Comparative Political Studies। 30 (5): 523–552। এসটুসিআইডি 18049875। ডিওআই:10.1177/0010414097030005001।
- Goetz, Klaus H. (২০০৬)। Heywood, Paul; Jones, Erik; Rhodes, Martin; Sedelmeier, সম্পাদকগণ। Developments in European politics। Power at the Centre: The Organization of Democratic Systems। Basingstoke England New York: Palgrave Macmillan। পৃষ্ঠা 368। আইএসবিএন 9780230000414।
- Lijphart, Arend (১৯৯২)। Parliamentary versus presidential government। Oxford New York: Oxford University Press। আইএসবিএন 9780198780441।
- Nousiainen, Jaakko (জুন ২০০১)। "From Semi-presidentialism to Parliamentary Government: Political and Constitutional Developments in Finland"। Scandinavian Political Studies (quarterly)। 24 (2): 95–109। আইএসএসএন 0080-6757। ওসিএলসি 715091099। ডিওআই:10.1111/1467-9477.00048।
- Passarelli, Gianluca (ডিসেম্বর ২০১০)। "The government in two semi-presidential systems: France and Portugal in a comparative perspective" (পিডিএফ)। French Politics। 8 (4): 402–428। আইএসএসএন 1476-3427। এসটুসিআইডি 55204235। ওসিএলসি 300271555। ডিওআই:10.1057/fp.2010.21। ২ অক্টোবর ২০১৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২।
- Rhodes, R. A. W. (১৯৯৫)। "From Prime Ministerial power to core executive"। Rhodes, R. A. W.; Dunleavy, Patrick। Prime minister, cabinet, and core executive। New York: St. Martin's Press। পৃষ্ঠা 11–37। আইএসবিএন 9780333555286।
- Roper, Steven D. (এপ্রিল ২০০২)। "Are All Semipresidential Regimes the Same? A Comparison of Premier-Presidential Regimes" । Comparative Politics। 34 (3): 253–272। জেস্টোর 4146953। ডিওআই:10.2307/4146953।
- Sartori, Giovanni (১৯৯৭)। Comparative constitutional engineering: an inquiry into structures, incentives, and outcomes (2nd সংস্করণ)। Washington Square, New York: New York University Press। আইএসবিএন 9780333675090।
- Shoesmith, Dennis (মার্চ–এপ্রিল ২০০৩)। "Timor-Leste: Divided Leadership in a Semi-Presidential System"। Asian Survey (bimonthly)। 43 (2): 231–252। আইএসএসএন 0004-4687। ওসিএলসি 905451085। ডিওআই:10.1525/as.2003.43.2.231। ১৪ এপ্রিল ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২।
- Shugart, Matthew Søberg (সেপ্টেম্বর ২০০৫)। "Semi-Presidential Systems: Dual Executive and Mixed Authority Patterns" (পিডিএফ)। Graduate School of International Relations and Pacific Studies। United States: University of California, San Diego। ১৯ আগস্ট ২০০৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা।
- Shugart, Matthew Søberg (ডিসেম্বর ২০০৫)। "Semi-Presidential Systems: Dual Executive And Mixed Authority Patterns" (পিডিএফ)। Graduate School of International Relations and Pacific Studies, University of California, San Diego। French Politics। 3 (3): 323–351। আইএসএসএন 1476-3427। ওসিএলসি 6895745903। ডিওআই:10.1057/palgrave.fp.8200087 ।
- Shugart, Matthew Søberg; Carey, John M. (১৯৯২)। Presidents and assemblies: constitutional design and electoral dynamics। Cambridge England New York: Cambridge University Press। আইএসবিএন 9780521429900।
- Veser, Ernst (১৯৯৭)। "Semi-Presidentialism-Duverger's concept: A New Political System Model" (পিডিএফ)। Journal for Humanities and Social Sciences। 11 (1): 39–60। ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২।
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- Governing Systems and Executive-Legislative Relations. (Presidential, Parliamentary and Hybrid Systems), United Nations Development Programme (n.d.). ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১০ তারিখে
- J. Kristiadi (এপ্রিল ২২, ২০০৮)। "Indonesia Outlook 2007: Toward strong, democratic governance"। The Jakarta Post। PT Bina Media Tenggara। ২১ এপ্রিল ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- The Semi-Presidential One, blog of Robert Elgie
- Presidential Power ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৩ মে ২০২০ তারিখে blog with posts written by several political scientists, including Robert Elgie.