অর্চি (সংস্কৃত: अर्ची, অর্চি, অর্থ "আরাধিত") একজন রাণী এবং হিন্দু পুরাণে লক্ষ্মীর পার্থিব অবতার[১] ভাগবত পুরাণ অনুসারে,[২] অর্চি তার স্বামী রাজা পৃথু সহ বেন এর থেকে আবির্ভূত হয় এবং তাদের প্রত্যেকেই যথাক্রমে লক্ষ্মী ও বিষ্ণুর অবতার।[৩]

লক্ষ্মীর সাথে বিষ্ণু

সহধর্মিণী হিসেবে, তিনি সন্ন্যাসের জন্য তার স্বামীকে অনুসরণ করে বনে গিয়েছিলেন। যখন তিনি (পৃথু) মারা যান, তিনি তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার চিতায় কর্তব্যের সাথে নিজেকে সপে দেন:

রানী প্রয়োজনীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করলেন এবং জলের অর্পণ করলেন। নদীতে স্নান করার পরে, তিনি বিভিন্ন গ্রহ ব্যবস্থায় আকাশে অবস্থিত বিভিন্ন দেবদেবীকে প্রণাম করেছিলেন। তারপর তিনি অগ্নি প্রদক্ষিণ করলেন এবং স্বামীর পদ্মচরণ ভাবতে ভাবতে তার অগ্নিতে প্রবেশ করলেন।

— শ্রীমদ-ভাগবতম (ভাগবৎ পুরাণ) (সর্গ ৪, অধ্যায় ২৩, শ্লোক ২২)

পৌরাণিক বর্ণনা সম্পাদনা

ভাগবত পুরাণে বলা হয়েছে যে পৃথু এবং অর্চির জন্মের আগে, দ্রুয়ার বংশধর বেনকে ঋষিরা হত্যা করেছিল কারণ তার কর্ম ধর্মীয় শিক্ষা থেকে বিচ্যুত হয়েছিল এবং সে রাজা হওয়ার যোগ্য ছিল না। বেন সন্তানহীন অবস্থায় মারা যায়, তাই ঋষিরা বেনের মৃতদেহ নেয় এবং একটি বিশেষ আচারে একে মন্থন করেন। বেনের শরীর থেকে বামন প্রাণী (বেনের খারাপ চরিত্র) বেরিয়ে আসার পর,[৪] পৃথু এবং অর্চি আবির্ভূত হয়, যারা যথাক্রমে বিষ্ণু (মহাবিশ্বের রক্ষণাবেক্ষণকারী দেবতা) এবং লক্ষ্মীর (মঙ্গল ও সমৃদ্ধির দেবী) অবতার।[৪][৫]

পৃথু অর্চিকে বিয়ে করে তারা বিশ্বের রাজা ও রাণী হয়েছিলেন। তাদের বিজিতাস্ব, হরিয়াক্ষ, ধূম্রকেশ, বৃক এবং দ্রাবিণ না নামে পাঁচ পুত্র ছিল। পৃথু তার পদ থেকে অবসর গ্রহণের পর, তিনি সন্ন্যাসীর জীবন গ্রহণ করেন এবং বনে নির্জনে বসবাস শুরু করেন। অর্চি তাকে অনুসরণ করেন বিশ্বস্তভাবে। বনে তারা উপবাস ও ধ্যান করত। পৃথু শান্তিপূর্ণভাবে মারা গেলেও, অর্চি তখনও জীবিত এবং সচল ছিল। তিনি তার স্বামীর দেহ সৎকারের জন্য একটি পাহাড়ে কাঠের স্তূপ করেছিলেন। তারপর তিনি আগুনে কাঠ জ্বালিয়েছিলেন, দেহ পোড়ানোর আচার হিসাবে।[৬][৭] অতঃপর সে জ্বলন্ত আগুনে নিজেকে নিক্ষেপ করেন।[৮] পৃথু এবং অর্চির আত্মাকে একটি স্বর্গীয় বাহন দিয়ে সর্বোচ্চ গ্রহে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।[৯]

আরো দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Srikrishna Prapnnachari। The Crest Jewel: Srimadbhagwata Mahapuran with Mahabharata। Srikrishna Prapnnachari। পৃষ্ঠা 94–100। আইএসবিএন 9788175258556 
  2. "Śrīmad-Bhāgavatam (Bhāgavata Purāṇa)"  Trans. by A. C. Bhaktivedanta Swami Prabhupada: 4, 15, 1—6; 4, 23, 19—29
  3. Tapasyananda, Swami। Srimad Bhagavata – Volume 1 (ইংরেজি ভাষায়)। Sri Ramakrishna Math(vedantaebooks.org)। 
  4. Dharmakshetra। "THE BHAGAVATA PURANA"। ২০১০-১০-২৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-১১-০১ 
  5. Bhaktivedanta VedaBase। "Srimad Bhagavatam 4.15.6"। ২০০৮-১১-২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-১১-০১ 
  6. Bhaktivedanta VedaBase। "Srimad Bhagavatam 4.23.20" টেমপ্লেট:Pranala mati
  7. Bhaktivedanta VedaBase। "Srimad Bhagavatam 4.23.21" টেমপ্লেট:Pranala mati
  8. Bhaktivedanta VedaBase। "Srimad Bhagavatam 4.23.29" টেমপ্লেট:Pranala mati
  9. Bhaktivedanta VedaBase। "Srimad Bhagavatam 4.23.26" টেমপ্লেট:Pranala mati