অরবিন্দ মুখোপাধ্যায়

ভারতীয় চলচ্চিত্র পরিচালক

অরবিন্দ মুখোপাধ্যায় (ইংরেজি: Aurobinda Mukhopadhyay)(জন্ম: ১৮ জুন, ১৯১৮ — মৃত্যু: ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬) বিখ্যাত ভারতীয় বাঙালি চলচ্চিত্র পরিচালক ও চিত্রনাট্যকার। বাংলার খ্যাতনামা সাহিত্যিক  বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায় (বনফুল) তাঁর অগ্রজ  ছিলেন।[]

অরবিন্দ মুখোপাধ্যায়
জন্ম১৮ জুন,১৯১৮
মৃত্যু১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬
কলকাতা
নাগরিকত্বভারত কলকাতা, ভারত
পরিচিতির কারণচলচ্চিত্র পরিচালক ও চিত্রনাট্যকার
দাম্পত্য সঙ্গীপ্রতিমা মুখোপাধ্যায়
সন্তানঅভিজিৎ মুখোপাধ্যায় (পুত্র)

সর্বজিৎ মুখোপাধ্যায় (পুত্র)

অমা মুখোপাধ্যায় (কন্যা)
পিতা-মাতাডাঃ সত্যচরণ মুখোপাধ্যায় (পিতা)
মৃণালিনী দেবী (মাতা)
পুরস্কারফিল্মফেয়ার এডওয়ার্ড

জন্ম ও শিক্ষা জীবন

সম্পাদনা

অরবিন্দ মুখোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দের ১৮ জুন  পিতা ডাঃ সত্যচরণ মুখোপাধ্যায়ের কর্মক্ষেত্র ও স্থায়ী বাসস্থান বিহারের পূর্ণিয়া বিভাগের কাটিহার জেলার মণিহারীতে। মাতা মৃণালিনী দেবী। ভ্রাতা বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়৷ এঁদের আদি পৈতৃক  নিবাস ছিল পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার শিয়াখালা গ্রাম। তাঁদের পরিবার "কাঁটাবুনে মুখুজ্জ্যে" নামে পরিচিত ছিল৷[] অরবিন্দের পড়াশোনা কাটিহারে। স্থানীয় স্কুল থেকে ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে  ম্যাট্রিক পাশ করার পর চলে আসেন শান্তিনিকেতনে। সেই সময় কলাভবনে তার সহপাঠী ছিলেন সত্যজিৎ রায়। বিজ্ঞানের ছাত্র ছিলেন তিনি কিন্তু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পরামর্শ মতো সাহিত্য পাঠ করতেন। নাটক গল্প ইত্যাদিতে তার আগ্রহ বাড়তে থাকে। শান্তিনিকেতনে বিজ্ঞান-পাঠ শেষ করে ভর্তি হন  ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজে। কিন্তু মন পড়ে থাকে নাটক, গল্প সিনেমায়। তৃতীয় বর্ষে কলেজের ভিতরেই তার পরিচালিত নাটক দেখে অন্নদাশঙ্কর রায় বলেন -

" ঢুলু, তোমার আর্টের লাইনে যাওয়াই ভালো। ওটাই তোমার ঠিক জায়গা।"

প্রসঙ্গত 'ঢুলু' ছিল অরবিন্দের ডাক নাম। পরবর্তীকালে চলচ্চিত্র জগতে তিনি 'ঢুলুদা' বা 'ঢুলুবাবু ' নামেই পরিচিত হন। কলকাতা'য় ডাক্তারি পরীক্ষা দিতে এসে বিমল রায়ের  "উদয়ের পথে' সিনেমা দেখে আরো বেশি উৎসাহিত হন

চলচ্চিত্র জীবন

সম্পাদনা

শেষপর্যন্ত চতুর্থ বর্ষের  ডাক্তারি পড়ায় ইতি টেনে চলে এলেন চলচ্চিত্র জগতে। প্রথমে অর্ধেন্দু মুখোপাধ্যায়ের সহকারী হিসাবে কাজ শুরু  করেন ।  পরে কলকাতার বীরেন সরকারের    নিউ থিয়েটার্সে যোগ দেন বিমল রায়ের অ্যাসিস্টান্ট হিসাবে। সেখানেহৃষিকেশ মুখোপাধ্যায় তার সহকর্মী ছিলেন। পরে নিজেই বড়দা বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়ের (বনফুল) গল্প নিয়ে 'কিছুক্ষণ' ছবিটি করেন। প্রথম ছবির পরিচালনাতেই মুন্সিয়ানার ছাপ রেখেছিলেন। ছবিটি রাষ্ট্রপতি পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত হয়। এরপর একের পর এক ছবি করেছেন তিনি। আহ্বান, নতুন জীবন, পিতাপুত্র, নায়িকার ভূমিকায়, ধন্যি মেয়ে, নিশিপদ্ম, মৌচাক অগ্নীশ্বর' র মতো ছবি আজও তাঁকে স্মরণীয় করে রেখেছে। তিনি মোট ২৬ টি পূর্ণদৈর্ঘ্যের ছবি, তিনটি টেলিফিল্ম ও একটি ধারাবাহিকের পরিচালনা করেন। বাংলার 'নিশিপদ্ম' ছবিটি হিন্দিতে 'অমর প্রেম'র চিত্রনাট্য তিনি রচনা করেন এবং ফিল্মফেয়ার এডওয়ার্ড পান।

পরিচালিত চলচ্চিত্রের তালিকা

সম্পাদনা
  • কিছুক্ষণ (১৯৫৯)
  • আহ্বান (১৯৬১)
  • নতুন জীবন (১৯৬৬)
  • পিতাপুত্র (১৯৬৯)
  • নায়িকার ভূমিকায় (
  • নিশিপদ্ম (১৯৭০)
  • ধন্যি মেয়ে (১৯৭১)
  • মৌচাক (১৯৭৪)
  • অগ্নীশ্বর (১৯৭৫)
  • অজস্র ধন্যবাদ (১৯৭৬)
  • মন্ত্রমুগ্ধ (১৯৭৭)
  • পাকা দেখা (১৯৮০)
  • শহরের ইতিকথা (১৯৮৩)
  • অজান্তে (১৯৮৫)
  • শীলা* নদী থেকে সাগরে
  • হুলস্থুল
  • বর্ণচোরা
  • কেনারাম বেচারাম  

মৃত্যু

সম্পাদনা

শেষ জীবন অরবিন্দ মুখোপাধ্যায়ের শরীর ভাল যাচ্ছিল না। শয্যাশায়ী ছিলেন ২০১২ খ্রিস্টাব্দ হতে বার্ধক্যের কারণে। ২০১৬ খ্রিস্টাব্দের ১০ ই ফেব্রুয়ারি (২৬ শে মাঘ ১৪২২ বঙ্গাব্দ) বুধবার ৯৬ বৎসর বয়সে কলকাতায় নিজ বাসভবনে প্রয়াত হন ।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "সিনেমার জন্য ডাক্তারি ছেড়েছিলেন এই [[পরিচালক]]"। বিশেষ বিভাগ পত্রিকা। ২০১৭-০৬-০৩।  ইউআরএল–উইকিসংযোগ দ্বন্দ্ব (সাহায্য)
  2. বনফুল রচনাবলী (ষোড়শ খন্ড), বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়, গ্রন্থালয় প্রাইভেট লিঃ, কলিকাতা, প্রথম প্রকাশ ১৩৬২ বঙ্গাব্দ, পৃ. ৩