অগ্ন্যাশয়
অগ্ন্যাশয় (ইংরেজি: Pancreas) মেরুদণ্ডী প্রাণীদের পরিপাক ও অন্তঃক্ষরা তন্ত্রের অন্তর্গত একটি মিশ্র গ্রন্থি, অর্থাৎ এর মধ্যে অন্তঃক্ষরা ও বহিঃক্ষরা দুইরকম গ্রন্থিই আছে। এর বহিঃক্ষরা অংশ পরিপাক তন্ত্রের একটি গ্রন্থি, যেটি থেকে নির্গত অগ্ন্যাশয় নালী পিত্তনালীর সঙ্গে যুক্ত হয়ে ক্ষুদ্রান্ত্রের ডিউডেনামের মধ্য অংশে উন্মুক্ত হয়। এর অন্তঃক্ষরা অংশের নাম ল্যাঙ্গারহান্স কোষপুঞ্জ (Islet of Langerhans আইলেট অফ ল্যাঙ্গারহান্স; আইলেট = ছোটো দ্বীপ, অর্থাৎ বহিঃক্ষরা অংশগুলির মধ্যে মধ্যে বিক্ষিপ্ত অন্তঃক্ষরা কোষগুচ্ছগুলি) যার বিটা কোষ ইনসুলিন, আলফা কোষ গ্লুকাগন, ডেল্টা কোষ সোমাটোস্টাটিন হরমোন নিঃসরণ করে।
মানবদেহের অগ্ন্যাশয়ের দৈর্ঘ্য ১৫-২৫ সেন্টিমিটার এবং ওজন ৬৫ থেকে ৭৫ গ্রাম। এর শীর্ষাংশ ডুওডেনামের অর্ধবৃত্তাকার বাঁকের মধ্যে অবস্থিত ও বাকী অংশ উদরগহ্বরের পেছনে প্রসারিত। ফলে এটা দেখতে অনেকটা লাতিন J বর্ণের মত।
অগ্ন্যাশয়ের অন্তঃক্ষরা গ্রন্থগুলি যে হরমোনগুলি নিঃসরণ করে, সেগুলি রক্তের শর্করা মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। তাই অগ্ন্যাশয়ের কোন রোগে এই সব কোষ কার্যকারিতা হারিয়ে ফেললে ডায়াবেটিস রোগ দেখা দেয়।
কলাস্থান
সম্পাদনাঅণুবীক্ষণ যন্ত্রের নিচে পর্যবেক্ষণ করলে, অগ্ন্যাশয়ের একটি রঞ্জিত প্রস্থচ্ছেদ-এ দুই ধরনের প্যারেনকাইমাল কোষ দেখা যায়।হালকা রং-এ রঞ্জিত কোষ গুলো কে বলা হয় "আইলেটস অব ল্যাংগারহ্যান্স"।এগুলো হরমোন তৈরী করে এবং অন্তঃক্ষরা কার্যাবলীর অন্তরগত।
অন্তঃক্ষরা অংশ
সম্পাদনাকোষের নাম | অন্তঃক্ষরা উৎপাদ | কোষপুঞ্জের % | কাজ |
বিটা কোষ | ইনসুলিন এবং অ্যামাইলিন | ৫০-৮০% | রক্তে শর্করার পরিমাণ কমায় |
আলফা কোষ | গ্লুকাগণ | ১৫-২০% | রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়ায় |
ডেল্টা কোষ | সোমাটোস্ট্যাটিন | ৩-১০% | অন্তঃক্ষরা গ্রন্থিকে কাজে বাধা দেয় |
পিপি কোষ | অগ্ন্যাশয়িক পলিউপেপ্টাইড | ১% | বহিঃক্ষরা গ্রন্থিকে কাজে বাধা দেয় |
কোষপুঞ্জগুলি গুচ্ছ গুচ্ছ অন্তঃক্ষরা কোষ ও এদের মধ্যে জালের মত বিস্তৃত কৈশিক নালীর নেটওয়ার্ক নিয়ে গঠিত। কোষপুঞ্জের কৈশিকণালীগুলির প্রাচীরে সার বেঁধে অন্তঃক্ষরা কোষগুলি অবস্থিত। বেশির ভাগ অন্তঃক্ষরা কোষের সাথে রক্তনালীর সরাসরি সংযোগ আছে। অন্তঃক্ষরা কোষগুলি যেন "ব্যস্তভাবে নিজেদের হরমোন উৎপাদন করে যাচ্ছে এবং আশেপাশের অন্যান্য অগ্ন্যাশয় কোষগুলিকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করছে, যেন সেগুলি দেহের একেবারে ভিন্ন কোন অংশে অবস্থিত।" ("...busily manufacturing their hormone and generally disregarding the pancreatic cells all around them, as though they were located in some completely different part of the body." [২])
ইনসুলিন এর কাজ
সম্পাদনা(১) কার্বোহাইড্রেট বিপাক নিয়ন্ত্রণ: এই হরমোন যকৃত ও পেশী-কলায় গ্লুকোজ থেকে গ্লাইকোজেন সংশ্লেষে সাহায্য করে।
(২) প্রোটিন বিপাক নিয়ন্ত্রণ:ইনসুলিন বিভিন্ন অ্যামিনো-অ্যাসিড একত্রিত করে প্রোটিন গঠনে সাহায্য করে।
(৩) চর্বি বিপাক নিয়ন্ত্রণ: ইনসুলিনের প্রভাবে গ্লুকোজ, ল্যাকটিক অ্যাসিড ইত্যাদি থেকে চর্বি ও স্নেহদ্রব্য উৎপন্ন হতে পারে।
(৪) মধুমেহ বা ডায়াবেটিস রোগ: ইনসুলিন কম ক্ষরিত হলে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যায়। তখন মূত্রের সঙ্গে গ্লুকোজ বেরিয়ে আসে। এই অবস্থাকে মধুমেহ বা ডায়াবেটিস রোগ (Diabetes mellitus) বলা হয়।
(৫) গ্লুকোজ অবশোষণে সাহায্য: রক্ত থেকে বিভিন্ন কলার কোষে গ্লুকোজ অবশোষণে ইনসুলিন সাহায্য করে।
(৬) গ্লুকোজ জারণ: ইনসুলিন কোষের মধ্যে গ্লুকোজের জারণ বাড়িয়ে দেয়।
(৭) কিটোন বস্তু প্রস্তুতিতে বাধা: ইনসুলিনের সাহায্যে চর্বি সম্পূর্ণভাবে জারিত হয়, ফলে কিটোন বস্তু (যেমন, অ্যাসিটো-অ্যাসিটিক অ্যাসিড, অ্যাসিটোন ইত্যাদি) প্রস্তুত হতে পারে না।
(৮) উৎসেচক নিয়ন্ত্রণ: ইনসুলিন যকৃৎ-কোষের মধ্যে কয়েকটি গ্লুকোজ বিপাকের উৎসেচককে নিয়ন্ত্রণ এমন কি পরিবর্তন করতে পারে।
(৯) STH-এর সঙ্গে সম্পর্ক: প্রোটিন সংশ্লেষ এবং বৃদ্ধির সময় ইনসুলিন এবং সোমাটোট্রফিক হরমোন (STH) যৌথভাবে একসঙ্গে কাজকরতে পারে।[৩]
গ্লুকাগন এর কাজ
সম্পাদনাঅগ্ন্যাশয় এর ল্যাঙ্গারহ্যান্ন্সের দ্বীপগ্রন্থির আলফা-কোষ থেকে নিঃসৃত গ্লুকাগন (Glucagon) গ্রাইকোজেনকে গ্লুকোজে পরিণত করতে এবং রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Physiology at MCG 6/6ch2/s6ch2_30
- ↑ The Body, by Alan E. Nourse, in the Time-Life Science Library Series, p. 171.
- ↑ মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান, দ্বিতীয় খণ্ড: তুষারকান্তি ষন্নিগ্রহী, শ্রীভূমি পাবলিশিং কোম্পানি, কলকাতা, বছর:১৯৮৬, পৃঃ ৪৯