বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধা

১৯৭১ ইংরেজি সনে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের শোষণ ও অত্যাচারের হাত থেকে পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালী নাগরিকদের বাঁচানোর জন্যে যাঁরা জীবন বাজি রেখে মুক্তি-সংগ্রামে বিভিন্ন কর্মকান্ডে অংশ গ্রহণ করেছিলেন তাঁরা বাংলাদেশের মুুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সমধিক পরিচিত। তাঁদের সংগ্রামের ফলেই বর্তমান স্বাধীন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অস্তিত্ব সম্ভব হয়েছে। তবে রাজাকারদের জন্যে মুক্তিযোদ্ধারা বহু ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছিলেন। স্বাধীন বাংলাদেশ ঘটিত হবার পর কিছু রাজাকারের শাস্তি হয়েছে।[১][২][৩][৪]

১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে যাঁরা অস্ত্র হাতে সরাসরি পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন কেবল মাত্র তাদেরকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গণ্য করা হয় তা নয়। সেই সঙ্গে অস্থায়ী মুজিবনগর সরকারের মন্ত্রী, সরকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারী, ভারতের শরণার্থী শিবিরগুলোতে ত্রাণ বিতরণসহ যাঁরা বিভিন্ন সেবামূলক কাজে অংশ নিয়েছেন তারা, কলকাতায় স্থাপিত স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের পরিচালকমণ্ডলী, সাংবাদিক, ভাষ্যকার ও শিল্পী, প্রমুখকেও মুক্তিযোদ্ধা হিসাব তালিকাবদ্ধ করা হয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকালে যারা অস্ত্র হাতে মাঠ পর্যায়ে যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছিলেন তাদের চার ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। যথা:[৫]

(ক) তৎকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, ইপিআর, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর নিয়মিত সদস্যবৃন্দ। এরা আগে থেকেই অস্ত্র ব্যবহারে এমনকী সম্মুখ সমরাভিযানে প্রশিক্ষিত ছিলেন। ১৯৭১-এ মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে এরা পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধ শুরু করেছিলেন। এদের অধিকাংশই ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের ‘নিয়মিত বাহিনী’র সদস্য ছিলেন।

(খ) দ্বিতীয়ত: সাধারণ মানুষ যাঁরা বাংলাদশে ত্যাগ করে ভারতে গিয়েছিলেন এবং ভারতের প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে অস্ত্রচালনা, বিস্ফোরকদ্রব্যের ব্যবহার ও গেরিলাযুদ্ধের কলাকৌশলে প্রশিক্ষণ লাভের পর দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন এলাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সেগুলো ব্যবহার করেছিলেন। সংখ্যাই এরাই সর্বার্ধিক। এদের বলা হতো ‘গণবাহিনী’। সামরিক প্রশিক্ষণের পরই এদের হাতে অস্ত্র ও গোলাবারুদ দেয়া হয়েছিল। এদের মধ্যে ছিলেন কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র সহ সমাজের নানা স্তরের মানুষ।

(গ) টাঙ্গাইলের বঙ্গবীর আব্দুল কাদেরর সিদ্দীকীর (বীর উত্তম) নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত কাদেরিয়া বাহিনীর লোকজন। এদের অধিকাংশই প্রশিক্ষণের জন্য ভারতে যাননি। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ল্যান্স নায়েক কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে দেশের ভেতরই প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন;

(ঘ) কেবল ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মী, যাঁরা মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে নতুনভাবে ভারতে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, কিন্তু দেশাভ্যন্তরে না-ফিরে বাংলাদেশ-ভারতের সীমান্ত এলাকায় যুদ্ধ করেছেন। এদের পৃথকভাবে নাম দেওয়া হয়েছিল ‘মুজিব বাহিনী’।

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "মুক্তিযুদ্ধ - বাংলাপিডিয়া"bn.banglapedia.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৭-২২ 
  2. মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস – বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন
  3. "রাজাকার - বাংলাপিডিয়া"bn.banglapedia.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৭-২২ 
  4. "দৈনিক জনকন্ঠ || তিন বছরে কুখ্যাত ৬ যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি কার্যকর"দৈনিক জনকন্ঠ (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৭-২২ 
  5. "মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা ও সংখ্যা - প্রথম আলো"web.archive.org। ২০২০-০৭-২২। ২০২০-০৭-২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৫-২০ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা