যৌন পৃথকীকরণ
যৌন পৃথকীকরণ (ইংরেজি: Sexual differentiation) হল একটি লিঙ্গ পার্থক্যবিহীন জাইগোটের মাঝে নারী বা পুরুষের মধ্যকার পার্থক্যসূচক বৈশিষ্ট্যগুলো সুস্পষ্টরূপে বেড়ে ওঠার প্রক্রিয়া। নারী এবং পুরুষ জাইগোট থেকে ফেটাসে পরিণত হয়, এরপর নবজাতক, শিশু, কিশোর এবং এভাবে একপর্যায়ে প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে ওঠে, এর সঙ্গে যৌন ও লিঙ্গীয় পার্থক্যগুলো বিভিন্ন ধাপে বিকাশ লাভ করে: এগুলো হল জিন, ক্রোমোজোম, গোনাড, হরমোন, শারীরস্থান এবং মনস্তত্ত্ব।
যৌন পার্থক্যকরণ | |
---|---|
শারীরস্থান পরিভাষা |
যৌন পার্থক্যের পরিসীমা অনেক বিস্তৃত এবং বিভিন্ন অঙ্গসংস্থানিক পার্থক্যকরণ এতে অন্তর্ভুক্ত। যৌন বিভাজনসূচক পার্থক্যগুলো সেই সকল পরিবর্ধন যেগুলো শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট যৌনতার বৈশিষ্ট্যকে প্রকাশ করে। যৌন বিভাজনসূচক এসকল পার্থক্যগুলোর মধ্যে রয়েছে যৌন-বিশেষায়িত অঙ্গ যেমন ডিম্বাশয়, জরায়ু অথবা যৌনাঙ্গ বিশিষ্ট মূত্রনালি। অপরদিকে, যৌন-দ্বিরূপক পার্থক্যগুলো তাদের মৌলিক বৈশিষ্ট্য (যেমন যৌনাঙ্গের আকার)। এদের মধ্যে কিছু হল মূলত পরিসংখ্যানিক পার্থক্য, যেগুলো নারী পুরুষের মাঝে একে অপরের সম্পূরক।
তবে, মানব জনসংখ্যাতে যৌন বিভাজনসূচক পার্থক্যগুলো সকল ক্ষেত্রে পরিপূর্ণরুপে দেখা যায় না। কিছু মানুষ আছে যারা জন্মগতভাবে ব্যতিক্রম (জরায়ু বিশিষ্ট পুরুষ অথবা এক্সওয়াই ক্যারিয়োটাইপ বিশিষ্ট (এক্সওয়াই গোনাডাল ডিজজেনেসিস) নারী), অথবা যারা জৈবিক এবং/অথবা আচরণগতভাবে উভয়লিঙ্গের বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে।
নির্দিষ্ট জিন, হরমোন, শারীরস্থান এবং সামাজিক শিক্ষার মাধ্যমে যৌন পার্থক্য গড়ে ওঠে। এদের মধ্যে কিছু পার্থক্য সম্পূর্ণরূপে শারীরিক (জারায়ু বা শিশ্নের উপস্থিতি) আর কিছু পার্থক্য নিশ্চিতভাবে সামাজিক শিক্ষা ও রীতিনীতির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত (যেমন নারী পুরুষের চুলের দৈর্ঘ্য)। যদিও কিছু পার্থক্য যেমন লিঙ্গ পরিচয়, জৈবিক ও সামাজিক উভয় বৈশিষ্ট্যের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকে (প্রকৃতি ও প্রতিপালন)।
মানব যৌনতার পার্থক্যকরণের এই ধাপগুলো অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীদের ন্যায় প্রায় একইরকম এবং এতে জিন হরমোন ও শারীরিক কাঠামোর ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া বিজ্ঞানীরা সফলভাবে বুঝতে সক্ষম হয়েছেন। ফেটাসের প্রথম ছয় সপ্তাহে, বাহ্যিকভাবে ভ্রুনের কোন যৌন বৈশিষ্ট্য থাকেনা, শুধুমাত্র জেনেটিক যৌনতার পার্থক্যই এতখন উপস্থিত থাকে। ক্রোমোজোমের বিশেষ জিন যৌনাঙ্গের পার্থক্য সৃষ্টি করে, যা হরমোনের পার্থক্য তৈরির মাধ্যমে দৈহিক পার্থক্য তৈরি করে, এবং তা মনস্তাত্ত্বিক এবং আচরণগত পার্থক্য তৈরি করে, এদের মধ্যে কিছু পার্থক্য জন্মগত এবং কিছু পার্থক্য সামাজিক পরিবেশ কর্তৃক সৃষ্ট।
যৌনতা নির্ধারণ ব্যবস্থা
সম্পাদনামানুষ, বহু স্তন্যপায়ী, পতঙ্গ এবং অন্যান্য প্রাণিতে এক্সওয়াই যৌনতা নির্ধারণ প্রক্রিয়া উপস্থিত থাকে। মানুষের ৪৬টি ক্রোমোজোম রয়েছে, যার মধ্যে দুটি সেক্স ক্রোমোজোম, নারীতে এক্সএক্স (XX) এবং পুরুষে এক্সওয়াই (XY)। এটা সুস্পষ্টরূপে প্রমাণিত যে, ওয়াই ক্রোমোজোম এমন একটি জিন বহন করে যা শুক্রাশয় গঠনকে পরিচালনা করে থাকে (যাকে টিডিএফ বলা হয়)। ওয়াই ক্রোমোজোমের স্বল্পদৈর্ঘ্য অংশের যৌন নির্ধারক অঞ্চলে এসআরওয়াই নামক একটি জিন রয়েছে, যা শুক্রাশয় প্রস্তুতকারী উপাদান (টেস্টিস ডিটারমাইনিং ফ্যাক্টর) হিসেবে একটি প্রোটিন উৎপাদন করে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে, যা ডিএনএ উৎপাদনের মাধ্যমে যৌনাঙ্গের খাঁজে উপস্থিত কোষগুলোকে একত্রে শুক্রাশয়ে রূপান্তরিত করে। ল্যাবে ব্যবহৃত ট্রান্সজেনিক এক্সএক্স ইঁদুরে (এবং কিছু এক্সএক্স পুরুষ মানুষে), এসআরওয়াই জিন একাই যৌন পার্থক্য তৈরির জন্য যথেষ্ট হয়ে থাকে।
মানুষ
সম্পাদনামানুষের যৌন পার্থক্যের বিকাশে বিভিন্ন প্রক্রিয়া অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এর মধ্যে পৃথক যৌনাঙ্গের বিকাশ, আভ্যন্তরীণ যৌনাঙ্গের নালিপথ, স্তন, দেহের লোম অন্যতম যেগুলো লিঙ্গ চিহ্নিতকরণে অবদান রাখে।[১]
যৌন পার্থক্যের ক্রমবিকাশ মানবদে জাতিতে উপস্থিত এক্সওয়াই যৌনতা-নির্ধারণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শুরু হয়, এবং একটি যৌনপার্থক্যবিহীন জাইগোটে নারী পুরুষের জিনগত পার্থক্য বিকাশে বিভিন্ন জটিল জৈবনিক কার্যক্রম দায়ী। অস্বাভাবিক যৌন বিকাশ, এবং অস্বাভাবিক যৌনাঙ্গও জেনেটিক ও হরমোনগত উপাদানের কারণে হতে পারে।[২]
যৌনাঙ্গ ব্যতিরেকে শরীরের অন্যান্য অংশের পৃথকীকরণ গৌণ যৌন বৈশিষ্ট্য তৈরি করে। কঙ্কাল কাঠামোর দ্বিরূপতা শিশুকাল থেকেই বিকশিত হতে থাকে, এবং কৈশোরে তা আরও স্পষ্ট হয়। প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে যে, কঙ্কালের কাঠামোনির্ভর আচরণের সঙ্গে যৌন অভিমুখিতার সম্পর্ক রয়েছে, যা শৈশবের শুরুতেই দ্বিরূপকভাবে বিকশিত হয়ে ওঠে (যেমন উচ্চতা অনুপাতে হাতের দৈর্ঘ্য); কিন্তু তা সে সকল আচরণের সঙ্গে সম্পর্কিত নয় যেগুলো বয়:সন্ধিকালে দ্বিরূপকভাবে বেড়ে ওঠে - উদাহরণস্বরূপ কাঁধের প্রস্থ।[৩]
মানুষ ও অন্যান্য প্রাণী
সম্পাদনামস্তিষ্কের পার্থক্যকরণ
সম্পাদনাঅধিকাংশ প্রাণিতে, ভ্রূণ বা নবজাতক মস্তিষ্কে যৌন হরমোন নির্গমনের পার্থক্য মস্তিষ্কের গঠন ও কার্যপ্রণালীতে সেই সকল উল্লেখযোগ্য পার্থক্য তৈরি করে, যেগুলো প্রাপ্তবয়স্ক প্রাজননিক আচরণের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত।
মানুষের ক্ষেত্রেও আঁকই ঘটনা ঘটে থাকে, নারী ও পুরুষ ভরুন ও নবজাতকে যৌন হরমোনগুলোর মাত্রা পৃথক হয়, এবং উভয়ের মস্তিষ্কেই এন্ড্রোজেন গ্রাহক এবং ইস্ট্রোজেন গ্রাহকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। বেশ কিছু যৌন-বিশেষায়িত জিন যেগুলো সেক্স স্টেরয়েডের উপর নির্ভরশীল নয় সেগুলো নারী ও পুরুষ মানব মস্তিষ্কে ভিন্নভাবে কাজ করে। দুই বছর বয়স থেকেই যৌনতাভেদে মস্তিষ্কের কাঠামোগত পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়, প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ও নারীতে করপাস ক্যালোসাম (নারীতে বড়) এবং প্রতি অর্ধমস্তিষ্ককে আভ্যন্তরীণভাবে সংযোগকারী ফ্যাসিকুলি (পুরুষে বড়), নির্দিষ্ট হাইপোথ্যালামিক নিউক্লিয়াস এবং এস্ট্রাডিয়লের কার্যক্রমে গোনাডোট্রপিনের প্রতিক্রিয়াসূচক সাড়াদান।তথ্যসূত্র প্রয়োজন
দেহে যদি পুরুষ যৌনাঙ্গ প্রস্তুতকারী জিন অনুপস্থিত থাকে তবুও মস্তিক এক অর্থে নারী মস্তিষ্কে রূপান্তরিত হওয়া বলতে যা বোঝায় সেই দিকে ধাবিত হয় না। পুরুষ মস্তিষ্কের যথাযথভাবে পৃথকীকরণের জন্য টেস্টোস্টেরনের মত আরও অনেক হরমোনের প্রয়োজন পড়ে। ভ্রুনের বিকাশের সময় প্রকাশিত একটি জীনের কারণে েসকল হরমোন নিঃসৃত হয়।[৪]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ [পূর্ণ তথ্যসূত্র প্রয়োজন][স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ] http://www.gfmer.ch/Books/Reproductive_health/Human_sexual_differentiation.html[]
- ↑ Kučinskas, Laimutis; Just, Walter (২০০৫)। "Human male sex determination and sexual differentiation: Pathways, molecular interactions and genetic disorders"। Medicina। 41 (8): 633–40। পিএমআইডি 16160410। ৬ এপ্রিল ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ জুন ২০১৬।
- ↑ Martin, James T; Nguyen, Duc Huu (২০০৪)। "Anthropometric analysis of homosexuals and heterosexuals: Implications for early hormone exposure"। Hormones and Behavior। 45 (1): 31–9। ডিওআই:10.1016/j.yhbeh.2003.07.003। পিএমআইডি 14733889।
- ↑ Siiteri, PK; Wilson, JD (জানু ১৯৭৪)। "Testosterone formation and metabolism during male sexual differentiation in the human embryo."। The Journal of Clinical Endocrinology and Metabolism। 38 (1): 113–25। ডিওআই:10.1210/jcem-38-1-113। পিএমআইডি 4809636।
অধিক পঠন
সম্পাদনা- Baum, Michael J. (২০০৬)। "Mammalian animal models of psychosexual differentiation: When is 'translation' to the human situation possible?"। Hormones and Behavior। 50 (4): 579–88। ডিওআই:10.1016/j.yhbeh.2006.06.003। পিএমআইডি 16876166।
- Crouch, RA (১৯৯৮)। "Betwixt and between: The past and future of intersexuality"। The Journal of clinical ethics। 9 (4): 372–84। পিএমআইডি 10029838।
- । ডিওআই:10.1136/adc.2006.09831।
|শিরোনাম=
অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য)Missing or empty|title=
(help)[dead link] - Phoenix, C. H.; Goy, R. W.; Gerall, A. A.; Young, W. C. (১৯৫৯)। "Organizing Action of Prenatally Administered Testosterone Propionate on the Tissues Mediating Mating Behavior in the Female Guinea Pig"। Endocrinology। 65 (3): 369–382। ডিওআই:10.1210/endo-65-3-369।
- Wallen, Kim (২০০৫)। "Hormonal influences on sexually differentiated behavior in nonhuman primates"। Frontiers in Neuroendocrinology। 26 (1): 7–26। ডিওআই:10.1016/j.yfrne.2005.02.001। পিএমআইডি 15862182।
- Wilson, BE; Reiner, WG (১৯৯৮)। "Management of intersex: A shifting paradigm"। The Journal of clinical ethics। 9 (4): 360–9। পিএমআইডি 10029837।
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- Human Sexual Differentiation by P. C. Sizonenko
- The Ciba Collection of Medical Illustrations: Vol.2, Reproductive System ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১২ তারিখে by Frank H. Netter, M.D. comparing female and male reproductive systems development and anatomy
- Development of the Female Sexual & Reproductive Organs আর্কাইভইজে আর্কাইভকৃত ১১ এপ্রিল ২০১৩ তারিখে – illustrations comparing female and male genitalia during the early development