ভূতত্ত্ব
ভূতত্ত্ব বা ভূবিদ্যা (ইংরেজি: Geology)[১] ভূবিজ্ঞানের একটি শাখা যেখানে পৃথিবী, পৃথিবীর গঠন, পৃথিবী গঠনের উপাদান সমূহ, পৃথিবীর অতীত ইতিহাস এবং এর পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা করা হয়। ভূতত্ত্ব শিক্ষা খনিজ ও প্রাকৃতিক সম্পদ উত্তোলন, পরিবেশ রক্ষার গুরুত্ব, অতীত আবহাওয়া ব্যাখ্যা করে ভবিষ্যতের আবহাওয়া জলবায়ু সম্পর্কে ধারণা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ভূতাত্ত্বিক সময়:
ভূতাত্ত্বিক সময় বলতে পৃথিবীর উৎপত্তি থেকে শুরু করে বর্তমান পর্যন্ত পুরো সময়কে বোঝায়। ভূতাত্ত্বিক সময় বা ভূতাত্ত্বিক সময়সীমা ব্যবহার করে ভূবিজ্ঞানীরা পৃথিবীতে এ পর্যন্ত সংঘটিত সকল ঘটনা এবং তাদের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের গবেষণা করে থাকেন।
ভূতত্ত্বের ক্ষেত্র
সম্পাদনাপৃথিবীর অভ্যন্তরীণ গঠন কতক গুলো স্তরে বিভক্ত। প্রায় ৬৩৭৮ কিমি নিচে রয়েছে এর কেন্দ্র। পৃথিবীর উপরিভাগ থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত প্রধান স্তর গুলো হল ০-৩৫ কিমি পুরু বাইরের ভূত্বক (crust), ৩৫-২৮৯০ কিমি পুরু ম্যান্টল (mantle), ২৮৯০-৬৩৭৮ কিমি পর্যন্ত কোর (Core)। ভূতাত্ত্বিক তথ্য উপাত্তের অধিকাংশই সংগৃহীত হয় সমগ্র পৃথিবীর উপরিভাগের কঠিন স্তর থেকে। পৃথিবীর উপরিভাগের স্তরের মাটি-পাথরের মাঝেই লুকিয়ে আছে এর ইতিহাস, ঐতিহ্যএবং সম্পদ। এই ইতিহাস সংগ্রহ এবং সম্পদ উত্তোলনই ভূতত্ত্বের প্রধান উদ্দেশ্য।
ভূতাত্ত্বিক উপকরণ
সম্পাদনাবেশিরভাগ ভূতাত্ত্বিক উপাত্ত এসেছে ভূ-নিম্ন উপাদানের গবেষণা থেকে। এই উপাদানমুহ প্রধানত দুইভাগে ভাগ করা যায়- শিলা ও অসংহত বস্তু।
শিলা
সম্পাদনাভূতত্ত্ব প্রধানত শিলা গবেষণার মাঝেই নিহিত। শিলা পৃথিবীর ভূতাত্ত্বিক ইতিহাস সংরক্ষণ করে। উৎপত্তি ও গঠন অনুসারে শিলাসমূহকে তিনটি প্রধান শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। এগুলো হল- আগ্নেয় শিলা, পাললিক শিলা ও রুপান্তরিত শিলা। শিলাচক্রের মাধ্যমে তাদের মধ্যকার সম্পর্ক বোঝা যায়। (চিত্র দেখুন)
লাভা বা ম্যাগমা কঠিন হয়ে আগ্নেয় শিলা তৈরি হয়। আগ্নেয় শিলা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে অন্যত্র স্থানান্তরিত হয় এবং সংবদ্ধ হয়ে পাললিক শিলা তৈরি হয়। এই শিলা আবার তাপ ও চাপের প্রভাবে খনিজের পরিমাণ পরিবর্তন হয়ে রুপান্তরিত শিলায় পরিণত হতে পারে। আবার এই তিন ধরনের শিলাই অত্যধিক তাপে গলিত হয়ে ম্যাগমায় রুপান্তরিত হতে পারে। এই ম্যাগমা থেকে পুনরায় আগ্নেয় শিলা তৈরি হতে পারে।
ভূতত্ত্ববিদরা শিলা অধ্যয়নের জন্য ঐ শিলা কি কি খনিজ সমন্বয়ে গঠিত তা নির্ণয় করে। খনিজ সমুহের বিভিন্ন বৈশিষ্ট নির্ণয়ের জন্য নানাবিধ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। নমুনা পরীক্ষণের বৈশিষ্টগুলো হল-
ঔজ্জ্বল্যতা(Lustre): তল হতে প্রতিফলিত আলোর পরিমাণ। উজ্জলতা দুই রকমের- ধাতব ও অধাতব।
রঙ(Color): রঙ অনুসারে খনিজসমুহকে বিভিন্ন দলে ভাগ করা হয়।
রেখা(Streak): পোরসেলিন ফলকে আঁচর কেটে রেখাপাত করা হয়। এর রঙ দিয়ে খনিজ চেনা যায়।
দ্রঢ়িমা(Hardness): আঁচর কাটতে বাধার পরিমাণ।
দ্রড়িমা | সূচক খনিজ |
---|---|
১ | ট্যাল্ক |
২ | জিপসাম |
৩ | ক্যালসাইট |
৪ | ফ্লোরাইট |
৫ | অ্যাপাটাইট |
৬ | অরথোক্লেস |
৭ | কোয়ার্টজ |
৮ | টোপাজ |
৯ | কোরান্ডাম |
১০ | ডায়মন্ড(হিরা) |
আপেক্ষিক গুরুত্ব(Specific Gravity): নির্দিষ্ট আয়তনের ভর।
বুদবুদ(Effervescence): হাইড্রক্লোরিক এসিডের প্রভাবে বুদবুদ সৃষ্টি।
চৌম্বকত্ব(Magnetism): চুম্বকের সাহেয্যে চুম্বক অথবা অচুম্বক পদার্থ নির্ণয়।
গন্ধ(Odor): খনিজের স্বতন্ত্র গন্ধ থাকতে পারে। যেমন: সালফার।
অসংহত বস্তু
সম্পাদনাভূতত্ত্ববিদরা গবেষণা ক্ষেত্রে শিলাচূর্ণ(অজমাটবদ্ধ) অধ্যয়ণ করে।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "geology"। Online Etymology Dictionary।
- ↑ "GeoMan's Mineral Identification Tests"। jersey.uoregon.edu। ২০১৭-০৫-০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৫-০১।