১৯৭০ ভোলা ঘূর্ণিঝড়
১৯৭০ সালের অত্যন্ত তীব্র ভোলা ঘূর্ণিঝড় ছিল একটি শক্তিশালী ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড় যা ১৯৭০ সালের ১২ই নভেম্বর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ-এর) দক্ষিণাঞ্চলে আঘাত হানে। এ পর্যন্ত রেকর্ডকৃত ঘূর্ণিঝড়সমূহের মধ্যে এটি সবচেয়ে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় এবং এটি সর্বকালের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর প্রাকৃতিক দুর্যোগের একটি।[২] এ ঝড়ের কারণে প্রায় ৫ লাখ মানুষ প্রাণ হারায়।[৩][৪] যার অধিকাংশই গাঙ্গেয় বদ্বীপের সমুদ্র সমতলের ভূমিতে জলোচ্ছ্বাসে ডুবে মারা যান। এটি ১৯৭০ সালের উত্তর ভারতীয় ঘূর্ণিঝড় মৌসমের ৬ষ্ঠ ঘূর্ণিঝড় এবং মৌসমের সবচেয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ছিল। এটি সিম্পসন স্কেলে ৩য় মাত্রার ঘূর্ণিঝড় ছিল।
অত্যন্ত তীব্র ঘূর্ণিঝড় (আইএমডি স্কেল) | |
---|---|
শ্রেণী ৩ (স্যাফির-সিম্পসন মাপনী) | |
গঠন | ৭ই নভেম্বর, ১৯৭০ |
বিলুপ্তি | ১৩ই নভেম্বর, ১৯৭০ |
সর্বোচ্চ গতি | ৩-মিনিট স্থিতি: ১৮৫ কিমি/ঘণ্টা (১১৫ mph) ১-মিনিট স্থিতি: ২০৫ কিমি/ঘণ্টা (১৩০ mph) |
সর্বনিম্ন চাপ | ৯৬৬ hPa (mbar); ২৮.৫৩ inHg |
হতাহত | ৩০০,০০০–৫০০,০০০[১] (ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়ে প্রানঘাতীর রেকর্ড) |
ক্ষয়ক্ষতি | $86.4 মিলিয়ন (১৯৭০ $) |
প্রভাবিত অঞ্চল | ভারত, পূর্ব পাকিস্তান |
১৯৭০-এ উত্তর ভারত মহাসাগরের ঘূর্ণিঝড় মৌসুমের অংশ |
আবহাওয়া ইতিহাস
সম্পাদনাঘূর্ণিঝড়টি বঙ্গোপসাগরে ৮ই নভেম্বর সৃষ্ট হয় এবং ক্রমশ শক্তিশালী হতে হতে এটি উত্তর দিকে অগ্রসর হতে থাকে। ১১ই নভেম্বর এটির গতিবেগ সর্বোচ্চ ঘণ্টায় ১৮৫ কিমি (১১৫ মাইল) এ পৌঁছায় এবং সে রাতেই তা উপকূলে আঘাত করে। জলোচ্ছ্বাসের কারণে পূর্ব পাকিস্তানের দক্ষিণ উপকূলীয় অঞ্চল ও দ্বীপসমূহ প্লাবিত হয়। এতে ওইসব এলাকার বাড়ি-ঘর, গ্রাম ও শস্য স্রোতে তলিয়ে যায়। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ছিল তজুমদ্দিন উপজেলা, সেখানে ১৬৭০০০ জন অধিবাসীর মধ্যে ৭৭০০০ জনই (৪৬%) প্রাণ হারায়।
পরিণাম
সম্পাদনাসরকারের ব্যর্থতা
সম্পাদনাপাকিস্তানের সামরিক সরকার এমন ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পরও জরুরি ত্রাণকার্য পরিচালনায় গড়িমসি করে। ঘূর্ণিঝড়ের পরও যারা বেঁচে ছিল তারা মারা যায় খাবার–পানির অভাবে। ঘূর্ণিঝড়ের এক সপ্তাহ পরে রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া খান স্বীকার করে সরকার দুর্যোগের ভয়াবহতা বুঝতে না পারার কারণেই ত্রাণকার্য সঠিকভাবে পরিচালনা করা সম্ভব হয়নি।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
রাজনৈতিক প্রভাব
সম্পাদনাঘূর্ণিঝড়ে বিপর্যস্ত মানুষগুলোর প্রতি পাকিস্তান সরকারের এমন নিষ্ঠুরতা দেখে পূর্ব পাকিস্তানের সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। ২৪শে নভেম্বর এক সভায় মাওলানা ভাসানী পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে অদক্ষতার অভিযোগ তোলেন এবং অবিলম্বে তার পদত্যাগ দাবি করেন। তৎকালীন বিরোধীদল আওয়ামী লীগ নির্বাচনে বিপুল ভোটে প্রাদেশিকভাবে জয়লাভ করে এবং ঘটনাপ্রবাহে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একটি প্রাকৃতিক ঘটনা একটি দেশে স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়।[৫][৬][৭][৮]
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Paula Ouderm (৬ ডিসেম্বর ২০০৭)। "NOAA Researcher's Warning Helps Save Lives in Bangladesh"। National Oceanic and Atmospheric Administration। ২০০৮-০৫-১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০১-২৪।
- ↑ Disaster; East Pakistan: Cyclone May Be The Worst Catastrophe of Century
- ↑ "NOAA Researcher's Warning Helps Save Lives in Bangladesh"। ১৭ মে ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ মে ২০১৩।
- ↑ "Remembering the great Bhola cyclone"। Dhaka Tribune। ২০১৯-১১-০৮। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১১-১৭।
- ↑ Olson, Richard (২১ ফেব্রুয়ারি ২০০৫)। "A Critical Juncture Analysis, 1964–2003" (পিডিএফ)। USAID। ১৪ এপ্রিল ২০০৭ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ এপ্রিল ২০০৭।
- ↑ Staff writer (১৮ নভেম্বর ১৯৭০)। "Copter Shortage Balks Cyclone Aid"। New York Times।
- ↑ Durdin, Tillman (১১ মার্চ ১৯৭১)। "Pakistanis Crisis Virtually Halts Rehabilitation Work In Cyclone Region"। New York Times।
- ↑ Staff writer (২৩ নভেম্বর ১৯৭০)। "East Pakistani Leaders Assail Yahya on Cyclone Relief"। New York Times। Reuters।
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- ’৭০-এর ভয়াল ঘূর্ণিঝড় ও ঐতিহাসিক নির্বাচনের স্মৃতিকথা - বাংলাদেশ প্রতিদিন