১৯৫০-এর আসাম-তিব্বত ভূমিকম্প

১৯৫০-এর আসাম-তিব্বত ভূমিকম্প,[৪] আসাম ভূমিকম্প নামেও পরিচিত,[৪] যেটি ১৫ ই আগস্টে ঘটেছিল এবং স্থায়িত্বকাল ছিল ৮.৬। ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল মিশমি পাহাড়, চীনা ভাষায় যার পরিচিতি কিলিংগং পর্বতমালা (祁灵公山) নামে। এটি দক্ষিণের কঙ্গরী গারপো এবং হিমালয়-এর ঠিক পূর্ব দিকে উত্তর-পূর্ব সীমান্ত সংস্থা-র একটি অংশ এবং ভারতে-এর অন্তর্গত আসাম রাজ্যে ছিল। ম্যাকম্যাহন লাইন-এর দক্ষিণে এবং বর্তমানে অরুণাচল প্রদেশ নামে পরিচিত এই অঞ্চলটি, এখন চীন ও ভারতের মধ্যে বিতর্কিত অংশ।

১৯৫০-এর আসাম-তিব্বত ভূমিকম্প
১৯৫০-এর আসাম-তিব্বত ভূমিকম্প তিব্বতীয় মালভূমি-এ অবস্থিত
১৯৫০-এর আসাম-তিব্বত ভূমিকম্প
ইউটিসি সময়১৯৫০-০৮-১৫ ১৪:০৯:৩৪
আইএসসি ইভেন্ট৮৯৫৬৮১
ইউএসজিএস-এএনএসএসকমক্যাট
স্থানীয় তারিখ১৫ আগস্ট ১৯৫০ (1950-08-15)
স্থানীয় সময়সন্ধ্যা ৭:৩৯ আইএসটি
মাত্রা৮.৬ ṃ [১]
গভীরতা১৫ কিমি (৯.৩ মা) [১]
ভূকম্পন বিন্দু২৮°২২′ উত্তর ৯৬°২৭′ পূর্ব / ২৮.৩৬° উত্তর ৯৬.৪৫° পূর্ব / 28.36; 96.45 [১]
ধরনস্ট্রাইক-স্লিপ [২]
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাতিব্বত, আসাম
সর্বোচ্চ তীব্রতাএকাদশ (এক্সট্রিম) [৩]
হতাহত৪,৮০০

ভারতীয় প্রমাণ সময়, মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭:৩৯ মিনিটে আসাম (ভারত) এবং তিব্বত (চীন) উভয়স্থানেই এই ধ্বংসাত্মক ভূমিকম্পে প্রায় ৪,৮০০ মানুষ নিহত হয়েছিল। সাবডাকশন-এর কারণে সাধিত ভূমিকম্পের চেয়ে এই মহাদেশীয় সংঘর্ষ-এ ঘটা ভূমিকম্পটি সবচেয়ে বড় ব'লে রেকর্ড হয়েছে এবং জানা গেছে ভূমিকম্পে পুরো অঞ্চল জুড়ে বিকট শব্দ হয়েছিল।

ভূতত্ত্ব সম্পাদনা

উত্তর-পূর্ব ভারতের ভূমিকম্পের ইতিহাস আরও উদ্ঘাটনের প্রয়াসে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকক্যাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট এবং ইনস্টিটিউট অফ ফিজিক্স, ভুবনেশ্বর-এর বিজ্ঞানীরা ক্ষেত্র গবেষণা পরিচালনা করেছিলেন। এই গবেষণায় পাললিক পাখার কমপক্ষে বারোটি খানাখন্দের ভিতরে এবং বুড়ী দিহিং নদী উপত্যকায়, শিল এবং বালি আগ্নেয়গিরি সহ মাটির তরলতার চিহ্ন আবিষ্কৃত হয়, যা পূর্বের ভূমিকম্পের ক্রিয়াকলাপ দ্বারা গঠিত হয়েছিল। রেডিওকার্বন ডেটিং চিহ্নিত করে, এই জমে থাকার ঘটনা প্রায় ৫০০ বছরের পুরানো, যা ১৫৪৮ সালে রেকর্ড করা ভূমিকম্পের সাথে মিলে যায়।[৫]

ভূমিকম্প সম্পাদনা

হিমালয় ও হেঙ্গডুয়ান পর্বতমালার মধ্যবর্তী পার্বত্য অঞ্চলে এই শক্তিশালী ভূমিকম্প ঘটেছিল। ভূমিকম্পটি ভারত এবং তিব্বতের মধ্যের ম্যাকম্যাহন লাইন-এর ঠিক দক্ষিণে ঘটেছিল এবং উভয় অঞ্চলেই এর বিপর্যয়কর প্রভাব পড়েছিল। বর্তমানে এই অঞ্চলটি চীন তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল-এর জায়্যু এবং মেদোগ-এর অংশ হিসাবে এবং ভারত অরুণাচল প্রদেশ-এর লোহিত জেলার অংশ হিসাবে দাবি করে। সিসমোলজিকাল পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রগুলির সূচনার পর থেকে এই মহা ভূমিকম্পের গণনা করা মাত্রা ৮.৬, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে বিবেচিত হয়।

এটি বিংশ শতাব্দীর ষষ্ঠ বৃহত্তম ভূমিকম্প ছিল।[৬] কোনও সাবডাকশন বা মহাসাগরীয় বিভাজনে সৃষ্টি হয় নি, এমন জানা বৃহত্তম ভূমিকম্পর নমুনা এটি। পরিবর্তে দুটি মহাদেশীয় পাতের সংঘর্ষ-এর কারণে এই ভূমিকম্প হয়েছিল।

আফটারশক ছিল অসংখ্য; তাদের মধ্যে অনেকগুলি ৬ এবং তার বেশি মাত্রার ছিল এবং যথাযথ ভালভাবে কেন্দ্রস্থল-এর দূরবর্তী কেন্দ্র থেকে যথেষ্ট রেকর্ড করা হয়েছিল। এই জাতীয় তথ্য থেকে, ভারতীয় সিসমোলজিকাল সার্ভিস পূর্ব প্রান্তের কাছে মহা ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল সহ প্রায় ৯০ ডিগ্রি থেকে ৯৭ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশে এই ক্রিয়াকলাপের একটি বিশাল ভৌগোলিক বিস্তার প্রতিষ্ঠা করেছে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

প্রভাব সম্পাদনা

১৯৫০ সালের আসাম-তিব্বতের ভূমিকম্পের ফলে আসাম ও তিব্বত উভয়ই বিধ্বস্ত হয়। আসামে ১,৫২৬ জন নিহতের ঘটনা রেকর্ড করা হয়[৭] এবং তিব্বতে আরও ৩,৩০০ জন নিহত হওয়ার খবরে[৮] মোট মৃতের সংখ্যা হয় প্রায় ৪,৮০০ জন।

মিসমি পাহাড় এবং তার আশেপাশের বনজঙ্গলে প্রচুর শিলা প্রপাত মুক্ত হয়ে পরিবর্তন এনেছিল। আবোর পাহাড়ে, ভূমিধ্বসের কারণে ১৫৬ জন হতাহত সহ, ৭০ টি গ্রাম ধ্বংস হয়ে যায়। ভূমিধ্বস, ব্রহ্মপুত্র-র শাখা নদীগুলিকে অবরুদ্ধ করে দেয়। দিবং উপত্যকায় একটি ভূমিধ্বস হ্রদ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়ে ফেটে গিয়েছিল, কিন্তু সুবনসিরি নদীর তীরে আরেকটি ৮ দিনের ব্যবধানে উন্মুক্ত হয়ে গিয়ে, তার ৭ মি (২৩ ফু) উঁচু স্রোত বেশ কয়েকটি গ্রামকে ডুবিয়ে দিয়ে ৫৩২ জনের প্রাণ কেড়ে নেয়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

১৮৯৭ সালের ভূমিকম্প-এর চেয়ে সম্পদ ক্ষয়ক্ষতির দিক দিয়ে আসাম আরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। চরম কম্পন বাদেও, ভূমিকম্পের পরে নদীগুলিতে উঁচু করে বালি, কাদা, গাছ আর সমস্ত ধরনের আবর্জনা নেমে এসে বন্যার সৃষ্টি করে। মেইজোসিসমল অঞ্চলে উড়ে এসে বৈমানিকরা টপোগ্রাফিতে বিশাল পরিবর্তনের কথা জানান। এগুলি মূলত বিপুল ভূমিধ্বস-এর কারণে ঘটেছিল, যার কয়েকটি ছবিও তোলা হয়েছিল।

তিব্বতে, হেইনরিচ হারের, লাসায় প্রচন্ড কম্পন এবং পৃথিবী থেকে জোরালো মচকানোর শব্দ শুনেছেন।[৯] কয়েক দিন ধরে লাসায় আফটারশক অনুভূত হয়েছিল। তিব্বতের রিমাতে,(এখনকার জায়য়ু শহর), ফ্র্যাঙ্ক কিংডন-ওয়ার্ড-এর মুখে, প্রবল ঝাঁকুনি, বিপুল ধ্বস এবং স্রোতের কথা শোনা যায়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] তৎকালীন উত্তর বার্মা-র পুটাওতে বসবাসরত আমেরিকান মিশনারি হেলেন মিয়ের্স মুরস বাড়িতে চিঠি লিখেছেন মূল ঝাঁকুনি, তারপর অসংখ্য আফটারশক এবং পৃথিবী থেকে বের হওয়ার শব্দ নিয়ে।[১০]

আরও কিছু পশ্চিমা আফটারশক, বেশ কয়েক দিন পরে অসামে মূল কম্পনের চেয়ে আরও বেশি অনুভূত হয়েছিল। এর কারণে জনৈক সাংবাদিকদের এই বিশ্বাস দৃঢ় হয়, পরবর্তী কম্পনটি আরও 'বড়' ছিল এবং এটি সর্বকালের বৃহত্তম ভূমিকম্প হবে হয়ত। মৌলিক ধারণা - মাত্রা (ম্যাগনিচিউড) এবং তীব্রতা (ইনটেসিটি) নিয়ে বিভ্রান্তির এটি একটি আদর্শ উদাহরণ। মূল ভূমিকম্পের সময় কিংডন-ওয়ার্ড এবং আরও অনেকের শোনা অসাধারণ শব্দগুলি বিশেষভাবে তদন্ত করা হয়েছে। নরওয়ে এবং ইংল্যান্ডের মতো সুদূরে সিইচি পর্যবেক্ষণ করা হয়েছিল। (p. 63–64.)

ভবিষ্যতের হুমকি সম্পাদনা

২০০১ ভূজ ভূমিকম্প-এর প্রতিক্রিয়া হিসাবে সায়েন্স-এ একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছিল। সেখানে হিসাব করে বলা হয়েছিল, হিমালয়-এর ৭০ শতাংশ অংশ আগামীতে অত্যন্ত শক্তিশালী ভূমিকম্পের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারে। এই পূর্বাভাসটি করা গেছে, ঐ অঞ্চলের ঐতিহাসিক রেকর্ডগুলির গবেষণা থেকে। ধারণা করা গেছে, ১৯৫০ সালের মেদোগ ভূমিকম্পের ফলে একটি বিশাল ভূমিকম্প হওয়ার জন্য যথেষ্ট পরিমাণে পিছলে যাওয়ার ঘটনা ঘটে গেছে।[১১] ২০১৫ সালে, হিমালয় একটি ৭.৮-মাত্রার ভূমিকম্প দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল থেকে আরও পশ্চিমে নেপালে।

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. ISC (২০১৫), ISC-GEM Global Instrumental Earthquake Catalogue (1900–2009), Version 2.0, International Seismological Centre 
  2. USGS। "M8.6 - eastern Xizang-India border region"United States Geological Survey 
  3. USGS (সেপ্টেম্বর ৪, ২০০৯), PAGER-CAT Earthquake Catalog, Version 2008_06.1, United States Geological Survey 
  4. "Historic Earthquakes, Assam - Tibet"United States Geological Survey। নভেম্বর ১০, ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ২৪, ২০১২ 
  5. Reddy, D.V.; Nagabhushanam, P.; ও অন্যান্য (সেপ্টেম্বর ২০০৯)। "The great 1950 Assam Earthquake revisited: Field evidences of liquefaction and search for paleoseismic events"। Tectonophysics474 (3): 463–472। ডিওআই:10.1016/j.tecto.2009.04.024বিবকোড:2009Tectp.474..463R 
  6. "Largest Earthquakes in the World Since 1900"United States Geological Survey। সেপ্টেম্বর ২০, ২০১১। ৭ নভেম্বর ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ডিসেম্বর ১৭, ২০১০ 
  7. "Significant Earthquake INDIA-CHINA"National Geophysical Data Center। আগস্ট ১৫, ১৯৫০। সংগ্রহের তারিখ নভেম্বর ২৪, ২০১৬ 
  8. "8·15墨脱地震"Baidu। Baidu। সংগ্রহের তারিখ ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭ 
  9. Harrer, Heinrich (১৯৫৩)। Seven Years in Tibet। Putnam। 
  10. Myers Morse, Helen (২০০৩)। Once I Was Young। Terre Haute, Indiana। পৃষ্ঠা 167–171। 
  11. "Quake in Himalayas: US & Indian experts differ"। The Statesman। সেপ্টেম্বর ৬, ২০০১।