লাসা

তিব্বতের রাজধানী শহর
(Lhasa থেকে পুনর্নির্দেশিত)

লাসা (/ˈlɑːsə/;[১] প্রমিত তিব্বতীয়: {{{1}}} [l̥ɛː˥˥.sa˥˥], আক্ষ.'ঈশ্বরের স্থান') হল প্রশাসনিক স্তরের শহর লাসার নগর কেন্দ্র এবং দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের প্রশাসনিক রাজধানী[২] লাসা শহরের অভ্যন্তরীণ শহুরে এলাকা চেংগুয়ান জেলা (সরলীকৃত চীনা: 城关区; প্রথাগত চীনা: 城關區; ফিনিন: Chéngguān Qū)-এর প্রশাসনিক সীমানার সমতুল্য, যা বৃহত্তর প্রশাসনিক স্তরের লাসা শহরের অংশ।

শিনিং-এর পর লাসা তিব্বতীয় মালভূমিতে অবস্থিত দ্বিতীয় জনঘনত্বপূর্ণ শহুরে এলাকা এবং ৩,৬৫৬ মিটার (১১,৯৯০ ফু) উচ্চতায় অবস্থিত শহরটি বিশ্বের অন্যতম উচ্চতা বিশিষ্ট শহর। শহরটি ১৭দশ শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে তিব্বতের ধর্মীয় এবং প্রশাসনিক রাজধানী। এটিতে তিব্বতি বৌদ্ধদের সাংস্কৃতিকভাবে উল্লেখযোগ্য অনেক স্থান রয়েছে; যেমন: পোতালা প্রাসাদ, জোখাং মন্দির এবং নরবুলিংকা প্রাসাদ

নামকরণ সম্পাদনা

তিব্বতি ভাষায় লাসা দ্বারা আক্ষরিক অর্থে বুঝায় "ঈশ্বরের স্থান" (ལྷ lha, ঈশ্বর; sa, স্থান)। আক্ষরিক অর্থে চীনা ভাষায় চেংগুয়ান দ্বারা আক্ষরিক অর্থে বুঝায় "শহরের প্রবেশদ্বার" (চীনা: 城关; ফিনিন: Chéngguān)। প্রাচীন তিব্বতি নথি এবং শিলালিপি প্রমাণ করে যে স্থানটিকে রাসা (ར་ས),[৩] বলা হতো, যার অর্থ ছিল "ছাগলের স্থান"; কারণ এটি ছিল পশু পালনের স্থান।[৩] পরবর্তীতে তিব্বতের রাজধানী হিসাবে প্রতিষ্ঠার পরে এবং জোখাং মন্দিরের নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার পর, যেখানে বুদ্ধের একটি পবিত্র মূর্তি ছিলো, এর নাম লাসাতে পরিবর্তন করা হয়েছিল, যার অর্থ "ঈশ্বরের স্থান।"[৪][৫] ৮২২ খ্রিস্টাব্দে চীন ও তিব্বতের মধ্যে একটি চুক্তি সম্পাদনের সময় জোও মন্দির এলাকা উল্লেখ করার মাধ্যমে লাসা নামটি প্রথম লিপিবদ্ধ করা হয়।[৬] কিছু পুরানো ইউরোপীয় মানচিত্রে, যেখানে তিব্বতকে চিত্রিত করা হয়েছে, বারান্তোলা নামের একটি শহরের উল্লেখ পাওয়া যায়, যেটিকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে লাসা বলে চিহ্নিত করা হয়; অন্যান্য ক্ষেত্রে এটিকে কিংহাই প্রদেশের পশ্চিম অংশের আধুনিক বুলন্তাই/বলন্তে শহর বলে উল্লেখ করা হয়।

ইতিহাস সম্পাদনা

৭ম শতকের মাঝামাঝি সময়ে স্রোংত্সেন গাম্পো তিব্বত সাম্রাজ্যের নেতা হওয়ার পর ইয়ারলুং সাংপো নদী উপত্যকায় ক্ষমতা প্রদর্শন করতে থাকেন। পশ্চিমের ঝাংঝুং রাজ্যের সাথে সংঘর্ষের ফলে তিনি তার রাজধানী দক্ষিণ - পশ্চিমের ইয়ারলুং উপত্যকার চংয়ি কাউন্টির চিংওয়া তাক্ছে প্রাসাদ হতে সরিয়ে রাসা (লাসা)-য় নিয়ে আসেন, যেখানে ৬৩৭ খ্রিস্টাব্দে মারপরি পর্বতে তিনি সর্বপ্রথম একটি স্থাপনা নির্মাণ শুরু করেন, যেটি বর্তমানে পোতালা প্রাসাদ নামে পরিচিত।


ভূগোল সম্পাদনা

সমুদ্র পৃষ্ঠ হতে লাসার উচ্চতা প্রায় ৩,৬০০ মি (১১,৮০০ ফু)[৭] এবং তিব্বত মালভূমির ঠিক কেন্দ্রভাগে অবস্থিত লাসাকে চতুর্পাশে ঘিরে থাকা পর্বতগুলো ৫,৫০০ মি (১৮,০০০ ফু) পর্যন্ত উচ্চতা বিশিষ্ট। এখানকার বাতাস সমুদ্র সমতলের তুলনায় মাত্র ৬৮ শতাংশ অক্সিজেন বহন করে।[৮] ইয়ারলুং সাংপো (ব্রহ্মপুত্র) নদীর উপনদী লাসা নদীটি শহরের দক্ষিণাংশ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

জলবায়ু সম্পাদনা

অত্যধিক উচ্চতার কারণে লাসার জলবায়ু শীতল অর্ধ-শুষ্ক (কোপেন : বিএসকে) ও মৌসুমী বায়ু প্রভাবিত আর্দ্র মহাদেশীয় জলবায়ু (কোপেন : ডিডব্লিউবি) -এর মিশ্ররূপ। এখানে বাৎসরিক ৩০০০ ঘন্টা সূর্যকিরণ পাওয়া যায়। গড়ে −০.৩ °সে (৩১.৫ °ফা) তাপমাত্রা বিশিষ্ট জানুয়ারি সবচেয়ে শীতল মাস এবং গড়ে ১৬.৭ °সে (৬২.১ °ফা) তাপমাত্রা বিশিষ্ট জুন উষ্ণতম মাস; তবে জুলাই মাসে রাতের তাপমাত্রা সর্বোচ্চ হয়।[৯]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Lhasa"Lexico UK English DictionaryOxford University Press। মে ১৮, ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  2. "Illuminating China's Provinces, Municipalities and Autonomous Regions"। China.org.cn। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৫-১৭ 
  3. "Lhasa and the Soul of Tibet"www.stephenbatchelor.org (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২০-০৮-০৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১০-০৯ 
  4. Anne-Marie Blondeau and Yonten Gyatso, 'Lhasa, Legend and History,' in Françoise Pommaret-Imaeda (ed.)Lhasa in the seventeenth century: the capital of the Dalai Lamas, BRILL, 2003, pp.15–38, pp.21–22.
  5. John Powers, Introduction to Tibetan Buddhism, Snow Lion Publications, 2007, p.144.
  6. Anne-Marie Blondeau and Yonten Gyatso, 'Lhasa, Legend and History,' pp.21–22.
  7. National Geographic Atlas of China. (2008), p. 88. National Geographic, Washington D.C. আইএসবিএন ৯৭৮-১-৪২৬২-০১৩৬-৩.
  8. Dorje (1999), p. 68.
  9. 中国地面国际交换站气候标准值月值数据集(1971-2000年) (চীনা ভাষায়)। China Meteorological Administration। ২০১৩-০৯-২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৫-০৪ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা