হেলেন সুজম্যান

দক্ষিণ আফ্রিকান রাজনীতিবিদ

হেলেন সুজম্যান, ওএমসিজি, ডিবিই (ইংরেজি: Helen Suzman; জন্ম: গাভ্রন্‌স্কি; ৭ নভেম্বর ১৯১৭ - ১ জানুয়ারি ২০০৯) একজন দক্ষিণ আফ্রিকান বর্ণ-বৈষম্যমূলক পৃথকীকরণের বিরোধী সক্রিয়কর্মী ও রাজনীতিবিদ ছিলেন। তিনি বর্ণ-বৈষম্যমূলক পৃথকীকরণের চরম সময়ে দক্ষিণ আফ্রিকার ন্যাশনাল পার্টির নিয়ন্ত্রণাধীন সংসদে ৩৬ বছর উদারপন্থী ও মধ্য-বামপন্থী বিরোধী দলের প্রতিনিধিত্ব করেন।

হেলেন সুজম্যান
১৯৫০-এর দশকের শেষভাগে সুজম্যান
হৌটনের সংসদ সদস্য
কাজের মেয়াদ
১৫ এপ্রিল ১৯৫৩ – ৬ সেপ্টেম্বর ১৯৮৯
পূর্বসূরীএরিক বেল
উত্তরসূরীটনি লিওন
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্মহেলেন গাভ্রন্‌স্কি
(১৯১৭-১১-০৭)৭ নভেম্বর ১৯১৭
জার্মিস্টন, ট্রান্সভাল, ইউনিয়ন অব সাউথ আফ্রিকা
মৃত্যু১ জানুয়ারি ২০০৯(2009-01-01) (বয়স ৯১)
জোহানেসবার্গ, গোটেং, দক্ষিণ আফ্রিকা
রাজনৈতিক দলইউনাইটেড
প্রগ্রেসিভ
প্রগ্রেসিভ রিফর্ম
প্রগ্রেসিভ ফেডারেল
ডেমোক্র্যাটিক
ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স
দাম্পত্য সঙ্গীমোজেস সুজম্যান
সন্তান
আত্মীয়স্বজনজ্যানেট সুজম্যান (ভাইঝি)
প্রাক্তন শিক্ষার্থীভিটভাটারস্র্যান্ট বিশ্ববিদ্যালয়
স্বাক্ষর

তার সংগঠিত সম্মেলন থেকে ১৯৫৯ সালে প্রগ্রেসিভ পার্টি প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৬০ সদস্য-বিশিষ্ট সংসদে তিনি ১৩ বছর একমাত্র সংসদ সদস্য ছিলেন। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকান সংসদে ধারাবাহিকভাবে ও দ্ব্যর্থহীনভাবে সকল বর্ণ-বৈষম্যমূলক পৃথকীকরণ আইনের বিরোধিতা করা একমাত্র সদস্য ছিলেন।

সুজম্যান নেলসন ম্যান্ডেলার বিপ্লবী নীতি সম্পর্কে তার আপত্তি থাকা সত্ত্বেও ম্যান্ডেলাসহ নিষিদ্ধ আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের সদস্যদের কারাগারের অবস্থার উন্নতিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেন এবং সরকারী সেন্সরশিপ এড়াতে এবং বর্ণবৈষম্যের অপব্যবহার সম্পর্কে গণমাধ্যমকে তথ্য দেওয়ার জন্য তার সংসদীয় বিশেষাধিকার ব্যবহার করার জন্যও পরিচিত ছিলেন। বর্ণবৈষম্য প্রতিরোধে অবদানের জন্য তিনি দুবার শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত হন।

প্রারম্ভিক জীবন ও শিক্ষা সম্পাদনা

সুজম্যান ১৯১৭ সালের ৭ই নভেম্বর জোহানেসবার্গ শহরের অদূরে অবস্থিত ছোট খনি উত্তোলনকারী শহর জার্মিস্টনে জন্মগ্রহণ করেন। তার জন্মনাম হেলেন গাভ্রন্‌স্কি। তার পিতা স্যামুয়েল গাভ্রন্‌স্কি ও মাতা ফ্রিদা দক্ষিণ আফ্রিকায় লিথুয়ানীয় ইহুদি অভিবাসী ছিলেন।[১][২] তার জন্মের কিছুক্ষণ পর তার মাতা মারা যান।[৩]

সুজম্যান ১৯৩৩ সালে জোহানেসবার্গের পার্কটাউন কনভেন্ট থেকে মেট্রিকুলেশন পাশ করেন। তিনি ভিটভাটারস্র্যান্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে বাণিজ্য বিষয়ে ভর্তি হন। ১৯ বছর বয়সে তিনি ৩৩ বছর বয়সী প্রখ্যাত ডাক্তার মোজেস সুজম্যানকে বিয়ে করেন। তাদের দুই কন্যা ছিল। তিনি ১৯৪১ সালে অর্থনীতি ও অর্থনৈতিক ইতিহাস নিয়ে স্নাতক সম্পন্ন করতে পুনরায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। স্নাতক সম্পন্ন করার পর তিনি গভর্নর জেনারেলের যুদ্ধ তহবিলে কাজ করেন এবং ওয়ার সাপ্লাই বোর্ডের পরিসংখ্যানবিদ হিসেব কাজ করেন। ১৯৪৫ সালে তিনি ভিটভাটারস্র্যান্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন।[৪][৩]

স্বীকৃতি ও উত্তরাধিকার সম্পাদনা

সুজম্যান অক্সফোর্ড, কেমব্রিজ, হার্ভার্ড, ও ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়-সহ বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২৭টি সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেছেন।[৩] তিনি দুইবার শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত হন[৫] এবং বিশ্বের বিভিন্ন ধর্মী ও মানবাধিকার সংস্থা থেকে অসংখ্য পুরস্কার অর্জন করেন। দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ ১৯৮৯ সালে তাকে অর্ডার অব দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ারের সম্মানসূচক ডেম কমান্ডারে ভূষিত করেন।[৬]

১৯৮৭ সালে কিংস্টন আপ হাল তাকে ফ্রিডম অব দ্য সিটি হিসেবে ভূষিত করে।[৭] ১৯৯৭ সালে নেলসন ম্যান্ডেলা তাকে অর্ডার ফর মেরিটোরিয়াস সার্ভিস, ক্লাস ওয়ান, গোল্ডে ভূষিত করেন। গ্রেট সাউথ আফ্রিকান্স টেলিভিশন ধারাবাহিকের ভোটে তাকে ২৪তম সেরা দক্ষিণ আফ্রিকান হিসেবে নির্বাচিত হন।

২০০৮ সালে তিনি আমেরিকান ফিলোসফিক্যাল সোসাইটির সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন।[৮] ২০১১ সালের মার্চ মাসে লাইবেরিয়া সুজম্যানের সম্মানে ডাকটিকেট প্রকাশ করে এবং তাকে আফ্রিকার অন্যতম কিংবদন্তি বীর হিসেবে আখ্যায়িত করে।

মৃত্যু সম্পাদনা

সুজম্যান ২০০৯ সালের ১লা জানুয়ারি ৯১ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।[৬] নেলসন ম্যান্ডেলা ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহীন আখমাত ড্যাঙ্গর বলেন সুজম্যান "একজন মহান দেশপ্রেমিক ও বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে নির্ভীক যোদ্ধা ছিলেন।"[৯] তার সম্মানে দক্ষিণ আফ্রিকায় পতাকা অর্ধ-নমিত ছিল।[১০]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Tran, Mark (১ জানুয়ারি ২০০৯)। "Anti-apartheid campaigner Helen Suzman dies at 91"দ্য গার্ডিয়ান। London। সংগ্রহের তারিখ ২৮ মার্চ ২০২৩ 
  2. "Obituary: Helen Suzman"বিবিসি নিউজ। ১ জানুয়ারি ২০০৯। সংগ্রহের তারিখ ২৮ মার্চ ২০২৩ 
  3. "Archived copy" (পিডিএফ)। ৩ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ মার্চ ২০২৩ 
  4. "Archived copy" (পিডিএফ)। ৬ এপ্রিল ২০১৬ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ মার্চ ২০২৩ 
  5. "King's confers first Honorary Degree"। King's College London। ১০ জুন ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ জানুয়ারি ২০০৯ 
  6. "Anti-apartheid icon Suzman dies"বিবিসি নিউজ। ২ জানুয়ারি ২০০৯। সংগ্রহের তারিখ ২৮ মার্চ ২০২৩ 
  7. Shoesmith, Kevin (২৩ নভেম্বর ২০১৭)। "Bee Lady gets highest honour and she's humble as ever about it" 
  8. "APS Member History"search.amphilsoc.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৫-০৩ 
  9. "South African Activist Helen Suzman Dies"সিবিএস নিউজ। ১ জানুয়ারি ২০০৯। সংগ্রহের তারিখ ২৮ মার্চ ২০২৩ 
  10. "Flags to fly at half-mast to honour Suzman – IOL News"। সংগ্রহের তারিখ ২৮ মার্চ ২০২৩ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা

বিধানসভার আসন
পূর্বসূরী
এরিক বেল
হৌটন এস্টেটের সংসদ সদস্য
১৯৫৩-১৯৮৯
উত্তরসূরী
টনি লিওন