হেলিওস্টেট

একটি যন্ত্র যার অন্তর্ভুক্তে থাকে একটি আয়না, যা একটি পূর্ব নির্ধারিত লক্ষ্যের দিকে প্রতিফলিত

হেলিওস্টেট (গ্রিক ভাষায় সূর্যের প্রতিশব্দ, হেলিওস হতে উদ্ভুত) হল এমন একটি যন্ত্র যার মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যে সূর্যের আলো প্রতিফলিত করা যায়। আকাশে সূর্যের অবস্থান পরিবর্তনের সাথে সাথে হেলিওস্টেটের অভ্যন্তরে অবস্থিত সমতল প্রতিফলক কাচকে ঘোরানো যায়। লক্ষ্যটি হেলিওস্টেট হতে দূরে অবস্থানরত কোনো বস্তু কিংবা মহাকাশে কোনো নির্দিষ্ট দিক হতে পারে। এটি করার জন্য, আয়নার প্রতিফলক পৃষ্ঠটিকে সমান্তরালে রাখা হয় সূর্যের দিক এবং আয়না থেকে নিরীক্ষিত লক্ষ্যের মধ্যবর্তী কোণের দ্বিখন্ডকের সাথে। হেলিওস্টেটের সাপেক্ষে লক্ষ্যটি প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে নিশ্চল থাকায় আলো সর্বদা একটি নির্দিষ্ট দিকে প্রতিফলিত হয়। সমসাময়িক সূত্র হেলিওস্টেটা অনুসারে, যেহেতু এটা প্রথমে বলা হয়েছিল, উদ্ভাবিত হয় উইলিয়াম'স গ্র্যাভিসেন্ড (১৬৮৮-১৭৪২) দ্বারা। অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বী জিওভান্নি অ্যালফানসো বোরেলি (১৬০৮ - ১৬৭৯) এবং ড্যানিয়েল গ্যাব্রিয়েল ফারেনহাইট (১৬৮৬ - ১৭৩৬)।

 ভিয়েতনামের যন্ত্র নির্মাণকারী একলিং( ১৮৫০) দ্বারা হেলিওস্টেট।

বর্তমানে অধিকাংশ হেলিওস্টেট ব্যবহার করা হয় দিনের আলো ও কেন্দ্রীভূত সৌরশক্তির মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য। রান্নার কাজে চুলা হিসেবেও হেলিস্টেট ব্যবহৃত হয়। পরীক্ষামূলকভাবে কিছু হেলিওস্টেটকে সৌর টেলিস্কোপে স্থিতিশীল রশ্নি প্রতিফলিত করার কাজেও ব্যবহার করা হয়েছে। লেজার বা বৈদ্যুতিক বাতি প্রচলনের আগে বৈজ্ঞানিক গবেষণায় তীব্র ও স্থিতিশীল আলোক রশ্নি উৎপাদনেও যন্ত্রটি ব্যবহৃত হত। 

অধিকাংশ আধুনিক হেলিওস্টেটসমূহ কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত হয়। হেলিওস্ট্যাটের কম্পিউটারে এর অবস্থানের অক্ষাংশ-দ্রাঘিমাংশ এবং সময় ও তারিখ দেয়া থাকে। এর মাধ্যমে জ্যোতির্বিদ্যা বিষয়ক তত্ত্ব (যেমন কম্পাস বেয়ারিং এবং উচ্চতা) ব্যবহার করে প্রতিফলক কাঁচে সূর্যের অবস্থান নির্ণয় করে। এরপর লক্ষ্যবস্তুর অবস্থান প্রদান করলে, হেলিস্টেটের কম্পিউটার সূর্যের অবস্থানের সাপেক্ষে লক্ষ্যের সমদ্বিখণ্ডক কোণ খুঁজে বের করে এবং এর মোটর, অধিকাংশ সময় স্টেপার মোটরে নিয়ন্ত্রন সংকেত পাঠিয়ে হেলিওস্টেটের প্রতিফলক কাঁচকে সূর্যের সাথে লক্ষ্যবস্তুর সাথে সঠিক বিন্যাসে স্থাপন করে। প্রতিফলক কাঁচটিকে এই অবস্থায় রাখার জন্য একাধিকবার উল্লিখিত ধাপগুলো পুনরাবৃত্তি করা হয়।

বড় স্থাপনা যেমন,অনেক আয়নার  সমন্বয়ে গঠিত হেলিওস্টেটের ক্ষেত্রগুলোসহ সৌর-তাপীয় পাওয়ার স্টেশন। সাধারণত,এরকম ক্ষেত্রে সবগুলো আয়না নিয়ন্ত্রিত হয় একটি একক কম্পিউটার দ্বারা।

সেখানে পুরনো ধরনের হেলিওস্টেট আছে যেগুলোতে কম্পিউটার ব্যবহার করা হয় না,যা আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় হাতে বা ঘটিকাযন্ত্রের কল দ্বারা,বা আলো-সেন্সর দ্বারা।এখন এইগুলো বেশ বিরল। 

সৌর ট্র্যাকার বা সূর্য-ট্র্যাকার থেকে হেলিওস্টেটের আলাদা করা উচিত যাতে সরাসরি আকাশে সূর্যের দিকে নির্দেশ করে।তবে কিছু পুরনো ধরনের হেলিওস্টেট সোলার ট্র্যাকারকে সংঘবদ্ধ করে,অতিরিক্ত উপাদানের সাথে একসঙ্গে সূর্য-আয়না-লক্ষ্য কোণ দ্বিখন্ডিত করে।

সাইডেরোস্টেড হল একটি অনুরূপ যন্ত্র ,যা সূর্যকে নয় বরং নিমজ্জিত তারকাকে অনুসরণ করার জন্য ডিজাইন করা হয়।

ফ্রান্সের থেমিস পরীক্ষামূলক স্টেশনে একটি হেলিওস্টেট। আয়নাটি অল্টাজিমাউথ পর্বতের উপর ঘুরে। 
দুটি সৌর-তাপ বিদ্যুৎ প্রকল্প  ডেগেট,ক্যালিফোর্নিয়ার নিকটে।হেলিওস্টেটগুলোর ক্ষেত্রের মধ্যে অবস্থিত প্রত্যেকটা আয়না প্রতিনিয়ত রিসিভার টাওয়ারের সামনের দিকে আলোকরশ্মি প্রতিফলিত করে।
স্পেনের সিভেলের নিকটে এই ১১ মেগাওয়াট পিএস ১০। ছবিটি যখন তোলা হয় ,বাতাসের ধুলো এই সমকেন্দ্রি আলো তৈরি করে।     
ওডেইলোতে ফ্রান্সের পিরেনিস-ওরিয়েন্টেলসের এই সৌরচুল্লির তাপমাত্রা ৩,৫০০ °সে (৬,৩৩০ °ফা) পর্যন্ত পৌছাতে পারে।  

বড়-মাপের প্রকল্প সম্পাদনা

একটি সৌর-তাপীয় পাওয়ার প্ল্যান্টে(স্পেনের সৌর প্রকল্প বা পিএস ১০ প্ল্যান্টের মত) হেলিওস্টেটের একটি বিশাল ক্ষেত্র  একক সংগ্রাহকের সম্মুখে সূর্যের ক্ষমতাকে  ফোকাস করে একটি মাধ্যমকে(যেমন পানি বা গলিত লবণ) উত্তপ্ত করে।একটি তাপ এক্সচেঞ্জারে মাঝারি ভ্রমণের মাধ্যমে পানিকে উত্তপ্ত করে বাষ্প উৎপাদন করে এবং তারপর স্টিম টারবাইনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে।

একটি ক্ষেত্রের মধ্যে কিছুটা অন্যরকমভাবে  সাজানো হেলিওস্টেটগুলোকে পরীক্ষামূলক সৌরচুল্লি হিসেবে ব্যবহার করা হয়,যেমন ফ্রান্সের ওডেইলোতে একসময় ছিল।হেলিওস্টেটের সবগুলো আয়না একটি বড় প্যারাবলয়ডালের মধ্যে দিয়ে সঠিকভাবে সমান্তরাল আলোকরশ্মি পাঠায় যা তাদেরকে একটি সুনির্দিষ্ট ফোকাস এনে দেয়।সূর্যালোক সমান্তরাল অক্ষ বরাবর প্রতিফলিত হওয়ার জন্য আয়নাগুলোকে প্যারাবলয়েডের অক্ষের খুব কাছাকাছি রাখতে হবে,তাই হেলিওস্টেটগুলোর ক্ষেত্র সংকীর্ণ হতে হবে।একটি বদ্ধ লুপ নিয়ন্ত্রণ সিস্টেম ব্যবহার করা হয়।যদি কোনো হেলিওস্টেট কিছুটাও বেকে যায় সেটা সেন্সর নির্ধারণ করে। যদি এরকম হয়,তাহলে তারা এটা ঠিক করার জন্য সংকেত পাঠায়।

এটা প্রস্তাব করা হয়েছে যে, উৎপন্ন উচ্চ তাপমাত্রা পরিবেশবান্ধবভাবে পানিকে ভেঙ্গে হাইড্রোজেন উৎপাদনে ব্যবহার করা যেতে পারে।

ছোট মাপের প্রকল্প সম্পাদনা

ছোট হেলিওস্টেটগুলো দিনের আলো এবং গরম করার জন্য ব্যবহার করা হয়।সৌরশক্তিকে কেন্দ্রীভূত করার জন্য একটি একক লক্ষ্যে অনেকগুলো বড় হেলিওস্টেটের পরিবর্তে ,আকারে সাধারণত ১ বা ২ বর্গমিটারের একটি একক হেলিওস্টেট অ-কেন্দ্রীভূত সূর্যালোককে প্রতিফলিত করে একটি উইন্ডো বা স্কাইলাইটের মাধ্যমে।একটি ছোট হেলিওস্টেট, দুই অক্ষের উপর চলে(উপরে/নিচে এবং বামে/ডানে)সূর্যের ধ্রুব গতির ভারসাম্য বজায় রাখার জন্যে।এভাবে,নির্দিষ্ট লক্ষ্যে সূর্যালোক প্রতিফলিত হয়ে থাকে(যেমন-উইন্ডো)।

 

গেনজাইম সেন্টার, কর্পোরেটের সদরদপ্তর গেনজাইম করপোরেশন,ম্যাসাচুসেটস,কেমব্রিজ এ ছাদের উপরে হেলিওস্টেট ব্যবহার করে,১২-তলার বারান্দায় সরাসরি সূর্যালোক প্রবেশের মাধ্যমে।

২০০৯ সালের একটি নিবন্ধে,ব্রুস রোর প্রস্তাব করেন যে,ছোট হেলিওস্টেটগুলো সৌর বিদ্যুৎ টাওয়ার সিস্টেমের মত ব্যবহার করা যেতে পারে।শত শত একর দখল করার পরিবর্তে,একটি অনেক ছোট এলাকা্র মধ্যে সিস্টেমটিকে সেট করা যাবে,যেমন বাণিজ্যিক ভবনগুলোর সমতল ছাদে। এই প্রস্তাবিত সিস্টেমটি ব্যবহার করা হবে সৌরশক্তি দিয়ে  একটি বিল্ডিংকে উত্তপ্ত এবং ঠান্ডা করতে,বা তাপীয় শিল্পে প্রসেসিংয়ের ইনপুট সরবরাহ করতে যেমন খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণে।  

 

নকশা সম্পাদনা

ট্র্যাকিং বিকল্প সম্পাদনা

আরও দেখুন সম্পাদনা

  • নবায়নযোগ্য শক্তি
  • সোলার সেল
  • সৌর কুকার
  • সৌর শক্তি
  • সৌর তাপ শক্তি
  • সোলার ট্র্যাকার
  • হেলিওগ্রাফ, অনুরূপ একটি অ-ট্র্যাকিং ডিভাইস, যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা