হুঁশিয়ারি ঘণ্টাবাদক

হুঁশিয়ারি ঘণ্টাবাদক বা গোপন তথ্য ফাঁসকারী বলতে এমন কোনও ব্যক্তি বা কর্মচারীকে বোঝায় যিনি কোনও সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার দ্বারা বা সেটির ভেতরে সংঘটিত তথাকথিত কোনও বেআইনি, অনৈতিক, নিষিদ্ধ, অনিরাপদ, ক্ষতিকর বা প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ড, দুষ্কৃতি বা কর্তব্যে অবহেলার গোপন তথ্য ফাঁস করে দেন।[১] হুঁশিয়ারি ঘণ্টাবাদকরা বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ বা বহিঃস্থ যোগাযোগ প্রণালীর আশ্রয় নিয়ে তাদের তথ্য বা অভিযোগগুলি জ্ঞাপন করতে পারেন। একটি গবেষণা মতে ৮৩% হুঁশিয়ারি ঘণ্টাবাদকই প্রতিষ্ঠানের ভেতরেই কোনও তদারক, মানব সম্পদ বিভাগ বা কোনও নিরপেক্ষ তৃতীয় পক্ষের কাছে প্রতিবেদন দেন এবং আশা করেন যে প্রতিষ্ঠানটি সমস্যাটির ব্যাপারে পদক্ষেপ নেবে ও সেটি সংশোধন করবে। তবে কিছু কিছু হুঁশিয়ারি ঘণ্টাবাদক তার প্রতিষ্ঠানের বহিঃস্থ কোনও সংস্থার সাথে যেমন সংবাদমাধ্যম, সরকার বা দায়িত্বপ্রাপ্ত আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে অভিযোগগুলি নিয়ে আসতে পারেন এবং এভাবে জনস্বার্থে গোপন তথ্য উন্মোচন বা দৃষ্টিগোচর করে জনগণকে হুঁশিয়ার করতে পারেন।[২] গোপন তথ্য ফাঁসের ঘটনাটি বেসরকারি খাত বা সরকারি খাত --- উভয় খাতেই ঘটতে পারে। হুঁশিয়ারি ঘণ্টাবাদক ব্যক্তি সাংবাদিকদের কাছে স্বনামে বা বেনামে এই তথ্যগুলি ফাঁস করতে পারেন। এভাবে অন্যথায় যে তথ্যগুলি গোপন থাকত, সেগুলি সর্বসাধারণের এখতিয়ারে চলে আসে। তাই হুঁশিয়ারি ঘণ্টাবাদকরা একটি মূল্যবান জনসেবামূলক কাজ করে থাকেন।

হুঁশিয়ারি ঘণ্টাবাদকের প্রতিশোধের স্বীকার হওয়ার ঝুঁকি মাথায় রাখতে হয় এবং তাদেরকে প্রায়শই হুঁশিয়ারি ঘণ্টাবাদনের জন্য চড়া দাম দিতে হয়। প্রতিশোধের সবচেয়ে সাধারণ রূপটি হল চাকুরি থেকে হঠাৎ অব্যাহতি দেওয়া। তবে আরও বেশ কিছু কাজকে প্রতিশোধমূলক হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে, যেমন কাজের ভার অত্যধিক বৃদ্ধি পাওয়া, আকস্মিকভাবে কর্মঘণ্টা ব্যাপক হ্রাস পাওয়া, কর্মসম্পাদনে বাধাপ্রদান বা পরপীড়নের শিকার হওয়া।[৩] অনেক দেশে হুঁশিয়ারি ঘণ্টাবাদকদেরকে সুরক্ষা প্রদানের জন্য ও হুঁশিয়ারি ঘণ্টাবাদনমূলক কর্মকাণ্ড নিয়মকানুনের মধ্যে আনার জন্য আইন আছে। এই আইনগুলি সরকারি ও বেসরকারি খাতে হুঁশিয়ারি ঘণ্টাবাদনের ব্যাপারে সাধারণত ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করে থাকে।

হুঁশিয়ারি ঘণ্টাবাদকরা সবসময় তাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে পারেন না। তাদের দাবিগুলি বিশ্বাসযোগ্য ও সফল হতে হলে তাদেরকে অবশ্যই সেগুলির সপক্ষে জোরালো সাক্ষ্যপ্রমাণ দিতে হয়, যাতে সরকার বা অন্য কোনও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ সেই সাক্ষ্যপ্রমাণগুলি ব্যবহার করে বা তদন্ত করে ঐ দাবিগুলি "প্রমাণ" করতে পারে ও দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং/বা সরকারি সংস্থাগুলিকে শায়েস্তা করতে পারে।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Harcup, Tony (২০১৪), A Dictionary of Journalism, Oxford University Press, পৃষ্ঠা 331 
  2. Chalouat, Iheb; Carrión-Crespo, Carlos; Licata, Margherita। "Law and practice on protecting whistle-blowers in the public and financial services sectors" (পিডিএফ)। International Labour Office, Geneva। সংগ্রহের তারিখ ১৭ মার্চ ২০২১ 
  3. Vandekerckhove, Wim (২০০৬)। Whistleblowing and Organizational Social Responsibility: A Global Assessment.। Ashgate।