হিমাচল প্রদেশের ইতিহাস
হিমাচল প্রদেশের অবস্থান উত্তর ভারতে এবং এটি ভারতের ১৮তম রাজ্য।
১৯৪৮ সালে চিফ কমিশনারের প্রদেশ হিসেবে হিমাচল প্রদেশ ইউনিয়ন অব ভারতে প্রতিষ্ঠিত হয়। শিমলার পার্শ্ববর্তী পাহাড়ি জেলা ও পূর্ব-পাঞ্জাব রাজ্যের দক্ষিণের পাহাড়ি এলাকাগুলো এই প্রদেশের অন্তর্গত। ২৬শে জানুয়ারি ১৯৫০ সালে ভারতের সংবিধান বাস্তবায়নের মাধ্যমে হিমাচল সি শ্রেণির রাজ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়। হিমাচল প্রদেশ ১লা নভেম্বর ১৯৫৬ সালে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত হয়। ১৮ই ডিসেম্বর ১৯৭০ সালে হিমাচল প্রদেশ রাজ্য আইন সংসদে পাশ হয় এবং ২৫শে জানুয়ারি ১৯৭১ সালে হিমাচল প্রদেশ নতুন রাজ্য হিসেবে আত্নপ্রকাশ করে। এর ফলে হিমাচল ভারতের ১৮তম রাজ্য হিসেবে যুক্ত হয়। পূর্বে এই অঞ্চলটি ছাম্বা, বিলাসপুর, ভাগল ও ধামি নামে বিভিন্ন ছোট ছোট রাজ্যে বিভক্ত ছিল। ১৮১৫-১৮১৬ সালের গুর্খা যুদ্ধের পর এটি বৃটিশ ভারতের অংশ হয়।
স্বাধীনতাপূর্ব ইতিহাসসম্পাদনা
প্রাগৈতিহাসিকসম্পাদনা
২০ লক্ষ বছর আগে হিমাচল প্রদেশের পাদদেশে মানুষ বসবাসের কিছু প্রমাণ পাওয়া। কঙ্গরার বঙ্গনা উপত্যকা, নালাগড়ের সিরসা উপত্যকা, এবং সিরমোরের মার্কান্ডা উপত্যকায় আদিম মানুষ বসবাসের প্রমাণ মিলেছে। রাজ্যের পাদদেশে সিন্ধু সভ্যতার লোকেরা বাস করত যা খ্রিস্টপূর্ব ২২৫০ থেকে ১৭৫০ সালের মধ্যে বিকশিত হয়েছিল। সিন্ধু সভ্যতার পূর্বে এখানে কোলি, হোলি, ডুম ও ছনালরা বসবাস করত। আর্য রাজা দেবদাস ও কিরাতের রাজা শম্ভারের বিখ্যাত যুদ্ধের কথা রিকভেদে উল্লেখ আছে। আধুনিক হিমাচলের মধ্য হিমালয়ান অঞ্ছলে রাজা শম্ভারের ৯৯ টি দূর্গ ছিল, ৪০ বছর স্থায়ী যুদ্ধে তিনি পরাজিত হন।
মধ্যযুগীয় ইতিহাসসম্পাদনা
৮৮৩ খ্রিস্টাব্দে কাশ্মীরের শাসক শঙ্কর ভার্মা হিমাচল প্রদেশ পর্যন্ত তার প্রভাব বিস্তার করেন। ১০০৯ খ্রিস্টাব্দে এই রাজ্যটি মাহমুদ গজনীর আক্রমণের শিকার হয়, যিনি সেসময় উত্তর ভারতের বিভিন্ন মন্দির থেকে সম্পদ লুন্ঠন করেছিলেন। ১০৪৩ খ্রিস্টাব্দে রাজপুতরা এই অঞ্চলের শাসনভার গ্রহণ করেন।
১৭৭৩ খ্রিস্টাব্দে কাতোচ মহারাজা দ্বিতীয় সনসার চাঁদের অধীনে রাজপুতেরা এলাকাটি নিয়ন্ত্রণ করেন। ১৮০৪ খ্রিস্টাব্দে মহারাজা রণজিৎ সিংয়ের আক্রমণে রাজপুতদের ক্ষমতা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়।
ছোট রাজ্যটি উত্তর ভারতে মুসলিম আগ্রাসনের পূর্ব পর্যন্ত এক বিশাল পরিমাণে স্বাধীনতা উপভোগ করেছিল। বিভিন্ন সময়ে মুসলিম শাসকদের আক্রমণের শিকার হয় পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত এই এলাকাটি। দশম শতকের শুরুতে মাহমুদ গজনী কংরা জয় করেন। তিমুর এবং সিকান্দার লোদিও নিচু পাহাড়ি এলাকাগুলো পেরিয়ে বিভিন্ন দূর্গ দখল করেছিলেন এবং অনেক যুদ্ধ করেছেন।
১৭৬৮ খ্রিস্টাব্দে গোর্খা নামক এক যুদ্ধবাজ উপজাতি নেপালের ক্ষমতায় আসে। তারা তাদের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করে এবং দখলকৃত এলাকা বৃদ্ধি করতে থাকে।
গোর্খারা নেপাল পেরিয়ে এই এলাকাটিও দখলে এগিয়ে আসে। ধীরে ধীরে গোর্খারা সিরমোর ও সিমলাকে একত্রিত করে। বড় কাজি (জেনারেলের সমতুল্য) অমর সিং থাপার নেতৃত্বে জোর্খারা কংরা আক্রমণ করে। ১৮০৬ খ্রিস্টাব্দে গোর্খারা কংরার শাসক সনসার চাঁদকে পরাজিত করতে সমর্থ্য হয়। তবে গোর্খারা কংরা দূর্গটি দখল করতে পারেনি যা ১৮০৯ সালে মহারাজা রঞ্জিত সিংয়ের অধীনে এসেছিল।
বৃটিশ শাসনসম্পাদনা
এরপর শুরু হয় অ্যাংলো গোর্খা যুদ্ধ। তারা তারাই গোত্রের সাথে এক হয়ে বৃটিশদের বিরুদ্ধে সরাসরি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে এবং বৃটিশরা তাদের সাতলুজ প্রদেশ থেকে বিতারিত করে। এভাবে বৃটিশরা পাহাড়ি এলাকার নেতৃত্বে আসে। ১৯ শতকের শুরুতে ১৮১৫-১৬ সালের গোর্খা যুদ্ধের পর বৃটিশরা সিমলাকে একত্রিত করে। ১৯৪৮ সালে ৩১টি পার্বত্য প্রদেশের একত্রিত করণের মাধ্যমে হিমাচল কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হয়ে উঠে এবং ১৯৬৬ সালে আরো কিছু এলাকা যুক্ত হয়। [১]
বৃটিশদের বিরুদ্ধে ১৮৫৭ সালে রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয় ও সামরিক অসন্তোষের কারণে বিদ্রোহের উৎপত্তি হয় যা স্বাধীন ভারত সৃষ্টির প্রথম আন্দোলন। পার্বত্য এলাকাগুলোর মানুষ রাজনীতি নিয়ে অন্য এলাকার মানুষদের মত সচেতন নয়। [২] তারা কমবেশি নিষ্ক্রিয় ছিল এবং বুশার ব্যতীত তাদের শাসকেরাও তেমনি ছিলেন।
তাদের কেউ কেউ বিদ্রোহের সময় ব্রিটিশ সরকারকে সহায়তাও করেছিলেন। তাদের মধ্যে ছাম্বা, বিলাসপুর, ভাগল ও ধামির শাসকেরা ছিলেন অন্যতম। বুশারের শাসকেরা বরং ব্রিটিশ বিরোধী মনোভাব দেখিয়েছিলেন।
পাহাড়ের বৃটিশ শাসিত অঞ্চলগুলি ১৮৮৮ সালে রানী ভিক্টোরিয়ার ঘোষণার পরে ব্রিটিশ ক্রাউনের অধীনে এসেছিল। ব্রিটিশ শাসনামলে শম্ভা, মান্ডি ও বিলাসপুর বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নতি সাধন করেছিল। প্রথম বিশযুদ্ধ চলাকালীন প্রায় সমস্ত পার্বত্য শাসকেরা আনুগত্য বজায় রেখেছিলেন এবং জনবলসহ ব্রিটিশদের যুদ্ধ প্রয়াসে অবদান রেখেছিলেন। কঙ্গরা, নুরপুর, শম্ভা, সুকেট, মান্ডি এবং বিলাসপুর এর মধ্যে অন্যতম।
স্বাধীনতা উত্তর ইতিহাসসম্পাদনা
স্বাধীনতার পর ১৯৪৮ সালে চিফ কমিশনারের প্রদেশ হিসেবে হিমাচল প্রদেশ গঠিত হয়। ২৬শে জানুয়ারি ১৯৫০ সালে ভারতের সংবিধান বাস্তবায়নের মাধ্যমে হিমাচল সি শ্রেণির রাজ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়। হিমাচল প্রদেশ ১লা নভেম্বর ১৯৫৬ সালে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত হয়। ১৮ই ডিসেম্বর ১৯৭০ সালে হিমাচল প্রদেশ রাজ্য আইন সংসদে পাশ হয় এবং ২৫শে জানুয়ারি ১৯৭১ সালে হিমাচল প্রদেশ নতুন রাজ্য হিসেবে আত্নপ্রকাশ করে। এর ফলে হিমাচল ভারতের ১৮তম রাজ্য হিসেবে যুক্ত হয়।
গ্রেটার নেপাল সৃষ্টির লক্ষ্যে কিছু লোক নেপালের দখলকৃত রাজ্যগুলো ফিরে পাওয়ার জন্য দাবি জানিয়েছিলেন যা ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অধীনে ছিল। এই দাবির পক্ষে এখনো এই অঞ্চলে সমর্থন বিদ্যমান রয়েছে।
তথ্যসূত্রসম্পাদনা
- ↑ "History of Himachal Pradesh"। Suni System (P) Ltd.। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৪-২৮।
- ↑ "History of Himachal Pradesh"। himachalpradeshindia.com। ২০ অক্টোবর ২০০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ অক্টোবর ২০০৬।