হাসান হাসানজাদেহ আমোলী

রানী ইসলামী দার্শনিক ও ধর্মতত্ত্ববিদ

হাসান হাসান-জাদেহ আমোলী (ফার্সি: حسن حسن‌زاده آملی: ১০ ফেব্রুয়ারি, ১৯২৯[] - ২৫শে সেপ্টেম্বর, ২০২১) ছিলেন একজন ইরানি শিয়া ধর্মতত্ত্ববিদ, যিনি তার রহস্যবাদী প্রবণতা এবং ইসলামী দর্শনের জন্য বিখ্যাত ছিলেন।[][] শিয়া ধর্মীয় শিক্ষাকেন্দ্রগুলোতে দর্শনের পাঠদানের প্রচলিত বিরোধিতা অতিক্রম করা ধর্মযাজকদের মধ্যে তিনি অন্যতম ছিলেন।[] তিনি দর্শন, রহস্যবাদ, গণিত, জ্যোতির্বিদ্যা, ফার্সি ও আরবি সাহিত্যের উপর অনেক বই রচনা করেছেন। ধর্ম, যুক্তি ও রহস্যবাদের সমন্বয় ঘটিয়ে তিনি মোল্লা সদরার মতোই ইসলামী দার্শনিক ঐতিহ্যের ব্যাখ্যা করেছেন। তার বইগুলোর মধ্যে রয়েছে শার্হ ফুসুস আল-হিকাম, তাশিহ নাহজ আল-বালাগা, ইনসান দার উর্ফ-ই ইরফান, তাশিহ কালিলা ওয়া দিমনা।

আল্লামা হাসান হাসান-জাদেহ আমোলী
২০১৩ সালে নিজের স্মরণসভায় হাসানজাদেহ আমোলী
ব্যক্তিগত তথ্য
জন্ম
হাসান হাসানজাদেহ তাবারি আমোলি

(১৯২৮-০২-১২)১২ ফেব্রুয়ারি ১৯২৮
মৃত্যু২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১(2021-09-25) (বয়স ৯৪)
আমোল, ইরান
ধর্মইসলাম
জাতীয়তাইরানীয়
জাতিসত্তামাজান্দারানি
আখ্যাশিয়া
ব্যবহারশাস্ত্রজাফরি
ধর্মীয় মতবিশ্বাসউসুলি

তিনি শনিবার, ২৫শে সেপ্টেম্বর ২০২১, ৯৩ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।[] ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি তার জানাজায় অংশগ্রহণ করেন।[] ২০০৩ সালে হাসানজাদেহ আমোলিকে "ইরানের অমর ব্যক্তিত্ব" হিসেবে নির্বাচিত করা হয়েছিল।[] হাসানজাদেহ-আমোলি ছিলেন ইরানী রক্ষণশীল রাজনীতিবিদ বাকের লারিজানির শ্বশুর।[]

আল্লামা হাসানজাদেহ আমোলি ১৯২৮ সালের ১২ই ফেব্রুয়ারি ইরানের লারিজান অঞ্চলের ইরা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৪ সালে তিনি ইসলামী ধর্মতাত্ত্বিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা শুরু করেন।[]

মাত্র ২২ বছর বয়সে, ১৯৫০ সালে, তিনি তেহরানে উচ্চশিক্ষার জন্য যান। সেখানে তার শিক্ষকদের মধ্যে ছিলেন আয়াতুল্লাহ আগা সৈয়দ আহমদ লাভাসানি, আল্লামা শা'রানি, মারভি স্কুলের আল্লামা মির্জা আবুলহাসান শা'রানি তেহরানি, আল্লামা রাফেই কাজভিনি, আয়াতুল্লাহ ঘোমশেই, আয়াতুল্লাহ মোহাম্মদ তাঘি আমোলি প্রমুখ।[]

এই সময়ে তিনি ব্যাখ্যাশাস্ত্র (তাফসীর), গণিত, জ্যোতির্বিদ্যা, এবং চিকিৎসাশাস্ত্র অধ্যয়ন করেন। ১৯৬৩ সালে তিনি কম শহরে চলে যান এবং শিক্ষকতা শুরু করেন। পাশাপাশি, ১৭ বছর ধরে তিনি আল্লামা তাবাতাবাইয়ের ছাত্র ছিলেন। তিনি সৈয়দ মুহাম্মদ হাসান ইলাহির দার্শনিক ও আধ্যাত্মিক বক্তৃতাগুলিতেও অংশ নিয়েছিলেন। এসব বক্তৃতাকে হাসানজাদেহ তার নৈতিক বিকাশের প্রধান অনুপ্রেরণা হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি গুপ্তবিদ্যা, দর্শন ও আধ্যাত্মবিদ্যায় পারদর্শী সৈয়দ মাহদী কাজী তাবাতাবাইয়ের কাছেও শিক্ষালাভ করেছিলেন, যিনি সৈয়দ আলী কাজী তাবাতাবাইয়ের পুত্র।[]

আল্লামা হাসানজাদেহ আমোলি কুরআনকে ঐশী জ্ঞানের উৎস বলে মনে করেন। নাহজুল বালাগা, সহিফা আল-সাজাদিয়া, উসুল কাফি, বিহার আল-আনোয়ার এবং অন্যান্য কাহিনী-সংকলন কুরআন থেকে উৎসারিত বলে তার বিশ্বাস। তার মতে, ভ্রান্তিহীন ইমামদের বাণীগুলো কুরআন থেকেই উদ্ভূত।[১০] হাসানজাদেহ মনে করেন কুরআন, দর্শন এবং আধ্যাত্মবিদ্যা আলাদা বিষয় নয়; ধর্মীয় সত্য এবং আধ্যাত্মিকতা আসলে একই জিনিস, যা আল্লাহর জ্ঞান।[১০]

 
ইরানের ইরা গ্রামে অবস্থিত হাসান হাসানজাদেহ আমোলীর গ্রামের বাড়ি, যেখানে তিনি সমাহিত আছেন।

হাসানজাদেহ আমোলী ছিলেন একজন সুবিখ্যাত ইরানি পণ্ডিত এবং বহুবিদ্যাবিশারদ। ফিকাহ (ইসলামী আইনশাস্ত্র), দর্শন, নীতিশাস্ত্র, রহস্যবাদ, ধর্মীয় জ্ঞান, ধর্মতত্ত্ব, হাদিস ও রিজাল, কুরআনের ব্যাখ্যা, গণিত ও জ্যোতির্বিদ্যা, আরবি ও ফার্সি সাহিত্য, প্রাকৃতিক বিজ্ঞান, প্রাচীন চিকিৎসা, রহস্যময় ও গূঢ় বিজ্ঞানের মতো ক্ষেত্রে তাঁর গভীর জ্ঞান ছিল। তাঁর উল্লেখযোগ্য কিছু কাজ হলো:[১১][১২]

  • হিযার-ও-ইক কালিমা
  • হিযার-ও-ইক নূকতা
  • দুরুস-ই মা'রিফাত নাফস
  • ইলাহিনামা
  • দিওয়ান-ই আশআ'র
  • ইনসান-ই কামিল আয দিদগাহ-ই নাহজ আল-বালাগা
  • ইনসান দার 'উরফ-ই 'ইরফান
  • সাদ-ও-দাহ এশারেহ
  • উইলায়াত তাকওয়িনি
  • ওয়াহদাত আয নিগাহ 'আরিফ ওয়া হাকিম
  • গাশতি দার হারকাত
  • রিসালা নূর 'আলা নূর দার যিকর ওয়া যাকির ওয়া মাযকুর
  • রিসালা আনাহু আল-হাক
  • শারহ-ই আসফার
  • চিকিৎসা ও দেহচ্ছেদ

তাঁর কিছু বইয়ের অনুবাদ এবং ব্যাখ্যা যেমন "দ্য বিগিনিং অ্যান্ড দ্য এন্ড", "১০০ ওয়ার্ডস" এখানে পাওয়া যেতে পারে:

রাজনীতি

সম্পাদনা

আমোলী আয়াতুল্লাহ খোমেনী এবং তার উত্তরসূরি আলী খামেনির একজন স্পষ্টবাদী সমর্থক ছিলেন। তিনি 'ইনসান দার 'উরফ-ই ইরফান' (রহস্যবাদের দৃষ্টিকোণ থেকে মানুষ) বইটি আলী খামেনির উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করেছিলেন।[][১৩] ১৯৬৩ সালের ৬ জুনের আগে তিনি আয়াতুল্লাহ খোমেনির সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং তার নির্দেশে আমোলের রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যক্তিদের অবহিত করেন।[] ইসলামী বিপ্লবের বিজয়ের পূর্ববর্তী মাসগুলিতে তিনি সক্রিয়ভাবে মাযান্দারান প্রদেশের ধর্মযাজক সমিতির সভায় অংশগ্রহণ করতেন। তিনি 'পবিত্র যুদ্ধ' (ইরান-ইরাক যুদ্ধ) চলাকালীন সময়েও রণক্ষেত্রে উপস্থিত ছিলেন।[১৪]

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "A scholar and mystic who stood by the people and the revolution in word and deed" 
  2. Eskandar Sadeghi-Boroujerdi (২০১৯)। Revolution and its Discontents: Political Thought and Reform in Iran। Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 333। আইএসবিএন 9781108426343 
  3. Gregory L. Bock (২০১৯)। The Philosophy of Forgiveness। III: Forgiveness in World Religions। Vernon Press। পৃষ্ঠা 79। আইএসবিএন 9781622735532 
  4. Mehrzad Boroujerdi (১৯৯৬)। Iranian Intellectuals and the West: The Tormented Triumph of Nativism। Syracuse University Press। পৃষ্ঠা 95আইএসবিএন 978-0-8156-0433-4 
  5. "Announcing a week of public mourning in Amol" 
  6. "The prayer of the Supreme Leader of the Revolution on the body of Ayatollah Hassanzadeh Amoli" 
  7. "Immortal figures of Iran" 
  8. Selim Celal (২২ জানুয়ারি ২০১৮), "ANALYSIS - How strong is Larijani block in Iran?", Anadolu Agency, সংগ্রহের তারিখ ১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ 
  9. "A scholar and mystic who stood by the people in word and deed" 
  10. "Ayatollah Hassanzadeh Amoli Hakim, mystic, writer and mathematician \"Conversation and Interview\"" 
  11. "Works and writings of Hassanzadeh Amoli"। ৬ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ মার্চ ২০২৪ 
  12. "Bibliography of Allameh Hassanzadeh Amoli" 
  13. Hassanzadeh Amoli, Man in the Mysticism of Mysticism, 2001, p.7 
  14. "The presence of Allameh Hassanzadeh Amoli in the meetings of the militant clerics on the eve of the victory of the revolution"