হারং হুরং

বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলের একটি প্রাচীন সুড়ঙ্গের নাম

হারং-হুরং (সিলেটি:ꠢꠣꠞꠋ ꠢꠥꠞꠋ) হচ্ছে বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলের একটি প্রাচীন সুড়ঙ্গের নাম।[১] হারং-হুরং শব্দ দুটি সিলেটি প্রাচীন আঞ্চলিক ভাষার শব্দ। সিলেটি ভাষায় ‘হারং’ শব্দের অর্থ হচ্ছে সাঁকো বা বিকল্প পথ আর ‘হুরং’ মানে ‘সুড়ঙ্গ’। অর্থাৎ ‘হারং হুরং’ শব্দ দ্বারা বিকল্প সুড়ঙ্গ পথ বোঝায়।[২] কথিত আছে যে, ১৩০৩ সালে রাজা গৌড় গৌবিন্দ যখন হজরত শাহজালাল (র.)-এর সিলেট আগমনের খবর পান, তখন তার সৈন্যবাহিনীসহ পেঁচাগড় গিরিদুর্গের এই সুড়ঙ্গপথ দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার পর নিরুদ্দেশ হয়ে যান।[৩]

হারং হুরং গুহা
মালনীছড়া, দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে পুরনো চা বাগান, যেখানে হারং হুরং গুহা অবস্থিত।
অবস্থানসিলেট জেলা, বাংলাদেশ

ব্যুৎপত্তি সম্পাদনা

হুরং হলো সুড়ঙ্গ শব্দের সিলেটি অপভ্রংশ এবং সিলেট ও সুনামগঞ্জের অনেক এলাকায় সাঁকো অর্থেই হারং শব্দটি ব্যবহার হয়ে থাকে। সুতরাং সাঁকো বলতে যদি প্রতিবন্ধকতা ডিঙিয়ে কোন আড়াআড়ি বা বিকল্প পথ বোঝানো হয়, তাহলে হারং-হুরং অর্থ হবে কোথাও যাবার বিকল্প সুড়ঙ্গ পথ।[৪] এই সুড়ঙ্গটিকে বাগানের লোকেরা গৌর গবিন্দ রাধা গুহা নামে চিনে; যেখানে প্রতি শনি এবং মঙ্গলবার পূজা দেয়া হয়।[৫]

অবস্থান সম্পাদনা

উপমহাদেশের প্রথম বাণিজ্যিক চা বাগান মালনীছড়ার গহীনে ‘হারং হুরং’ সুড়ঙ্গ অবস্থিত।[৬] হারং হুরং সুড়ঙ্গটি তেলাহাটির দক্ষিণে হিলুয়াছড়া চা বাগানের ১৪নং সেকশনের পাশে অবস্থিত।[৫]

লোক কাহিনী সম্পাদনা

সুড়ঙ্গটি প্রায় সাতশত বছর বা তারও বেশি আগেকার সময়ের। ফলে এটাকে কেন্দ্র করে স্থানীয়দের মাঝে নানা লোককাহিনী প্রচলিত রয়েছে। অনেকের ধারণা এ সুড়ঙ্গটি জৈন্তা পর্যন্ত বিস্তৃত। যেসব ব্যক্তি গুহাটিতে প্রবেশ করেছেন, তাদের কেউই জীবিত বের হয়ে আসেনি বলে জনশ্রুতি আছে। আর যদিও বা কেউ বের হয়েছে তবে কিছুদিনের মধ্যে অপ্রকৃতস্থ হয়ে সে মারা গিয়েছে।[১]ভারতের তিনজন তান্ত্রিক এখানে প্রবেশ করেছিলেন। তাদের মধ্যে মাত্র একজন ফিরে এসেছেন আর খুব অল্পদিন বেঁচে ছিলেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনিও স্বাভাবিক ছিলেন না।[১] সিলেটের একজন ধনাঢ্য ব্যবসায়ী খননের উদ্যোগ নেন, কিন্তু তিনি অস্বাভাবিক স্বপ্ন দেখে সংস্কারকাজ মাঝপথে বন্ধ করে দেন।[২] এই গ্রামের এক বৃদ্ধ যৌবনকালে ঢুকেছিল। ভিতরে কিছু একটা দেখে সে ভয়ে বেড়িয়ে আসে। এরপর থেকে লোকটি পাগল, তেলিহাটির বিখ্যাত কবিরাজও তার চিকিৎসা করতে পারেনি।[৭]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "গন্তব্য হারং হুরং,"। এনটিভি বিডি। ১৭ আগস্ট ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ডিসেম্বর ২০১৭ 
  2. "প্রাচীন সুড়ঙ্গ হারং হুরং"দৈনিক জনকণ্ঠ। ৪ নভেম্বর ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ১৩ এপ্রিল ২০২০ 
  3. "'হারং হুরং' সুড়ঙ্গে"Bangla Tribune। ২ এপ্রিল ২০১৬। ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ এপ্রিল ২০২০ 
  4. "হারং-হুরং কিংবা শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত"সিলেটের ডাক। ১৬ নভেম্বর ২০১৬। ১৬ জুন ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ডিসেম্বর ২০১৭ 
  5. "গন্তব্য হারং হুরং"ইত্তেফাক। ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ১৩ এপ্রিল ২০২০ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  6. "'হারং হুরং' অভিযান"। দৈনিক কালেরকণ্ঠ। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ডিসেম্বর ২০১৭ 
  7. "প্রকৃতির আমন্ত্রণে হারং হুরংয়ে"। Dailybdnews.net। সংগ্রহের তারিখ ১৩ এপ্রিল ২০২০