হাবীবুর রহমান (কবি)

বাংলাদেশী সাহিত্যিক

হাবীবুর রহমান (১ জুলাই, ১৯২৩ - ১৭ জুন, ১৯৭৬) ছিলেন একজন বাংলাদেশি সাংবাদিক, কবি এবং শিশুসাহিত্যিক। তিনি একটি কাব্যগ্রন্থ, একটি সম্পাদনা, নয়টি শিশুসাহিত্য এবং চারটি অনুবাদ গ্রন্থ রচনা করেন। শিশুসাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি ১৯৬৪ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। হাবীবুর রহমান স্মৃতি পরিষদ থেকে তার স্মরণে 'কবি হাবীবুর রহমান শিশুসাহিত্য পুরস্কার' প্রদান করা হয়।

হাবীবুর রহমান
হাবীবুর রহমান.jpg
জন্ম(১৯২৩-০৭-০১)১ জুলাই ১৯২৩
বর্ধমান, পশ্চিমবঙ্গ, ব্রিটিশ ভারত (বর্তমান ভারত)
মৃত্যু১৭ জুন ১৯৭৬(1976-06-17) (বয়স ৫২)
ঢাকা, বাংলাদেশ
পেশাশিক্ষক, সাংবাদিক, কবি
ভাষাবাংলা
জাতীয়তাব্রিটিশ ভারতীয়, বাংলাদেশী
শিক্ষাপ্রবেশিকা
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানপ্রেসিডেন্সি কলেজ
ধরনকবিতা, শিশুসাহিত্য
উল্লেখযোগ্য রচনাবলিআগডুম বাগডুম
লেজ দিয়ে চেনা যায়
উল্লেখযোগ্য পুরস্কারবাংলা একাডেমি পুরস্কার
সক্রিয় বছর১৯৪৩-১৯৭৬

জীবনীসম্পাদনা

প্রারম্ভিক জীবনসম্পাদনা

হাবীবুর রহমান ১৯২৩ সালের ১ জুলাই তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের (বর্তমান ভারত) পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোট থানার পালিশ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। কলকাতার হেয়ার স্কুল থেকে প্রবেশিকা পাস করেন। পরে ভর্তি হন প্রেসিডেন্সি কলেজে, কিন্তু আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে তার পড়াশুনা বন্ধ হয়ে যায়।[১]

কর্মজীবনসম্পাদনা

রহমানের কর্মজীবন শুরু হয় ১৯৪৩ সালে আসানসোলের এক কয়লা খনিতে শ্রমিক হিসেবে। পরে কিছুদিন কলকাতার মডেল হাই স্কুলে শিক্ষকতা করেন।[২] ১৯৪৭ সালে তিনি দৈনিক আজাদ পত্রিকায় যোগ দেন। দেশ ভাগের পরে ১৯৪৮ সালে তিনি ঢাকায় চলে আসেন। এসময় দৈনিক আজাদ স্থানান্তরিত হয়ে ঢাকায় আসলে তিনি এই পত্রিকার সহসম্পাদকের দ্বায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে তিনি দৈনিক সংবাদ (১৯৫১), সাপ্তাহিক কাফেলা, মাসিক সওগাত, মহিলা সাপ্তাহিক বেগম পত্রিকায় গুরুত্বপূর্ণ পদে দ্বায়িত্ব পালন করেন।[৩]

পত্রিকায় সম্পাদনা ছাড়াও তিনি কয়েকটি দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন। তিনি ১৯৫৫ থেকে ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত মার্কিন প্রকাশনা সংস্থা সিলভার বার্ডেট কোম্পানিতে কাজ করেন, ১৯৫৯ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত ইউসিসে কাজ করেন এবং ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত ফ্রাঙ্কলিন বুক প্রোগ্রামসের বাংলা বইয়ের অনুবাদ সম্পাদক হিসেবে কাজ করেন। পরে তিনি ১৯৭৪ থেকে ১৯৭৬ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত জাতীয় গ্রন্থ কেন্দ্রের সহকারী পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। রহমান দৈনিক সংবাদের ছোটদের সাহিত্য পাতা খেলাঘর-এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ছিলেন এবং তিনি 'ভাইয়া' নামে এই পাতা পরিচালনা করতেন। এছাড়া 'বাগবান' নামে দৈনিক আজাদের ছোটদের পাতা 'মুকুলের মাহফিল' পরিচালনা করতেন।[১]

সাহিত্যজীবনসম্পাদনা

পত্রিকায় সম্পাদনার পাশাপাশি রহমান সাহিত্যচর্চা শুরু করেন। তার রচিত কাব্যগ্রন্থ উপাত্ত ১৯৬২ সালে প্রকাশিত হয়। একই বছর তিনি অনুবাদ করেন চীনা প্রেমের গল্প, জন কেনেডি, জীবনের জয়গান, পাল তুলে দাও এবং সম্পাদন করেন কিশোর সংকলন সপ্তডিঙ্গা[৩] এছাড়া তিনি আগডুম বাগডুম, লেজ দিয়ে যায় চেনা, বনে-বাদাড়ে, পুতুলের মিউজিয়াম শিশুসাহিত্য রচনা করেন।[২]

মৃত্যুসম্পাদনা

হাবীবুর রহমান ১৯৭৬ সালের ১৭ জুন ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।[৩]

গ্রন্থতালিকাসম্পাদনা

কাব্যগ্রন্থ
  • উপাত্ত (১৯৬২)
সম্পাদনা
  • কিশোর সংকলন সপ্তডিঙ্গা (১৯৬২)
শিশুসাহিত্য
  • আগডুম-বাগডুম (প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ড, ১৯৬২)
  • সাগর পারের রূপকথা (১৯৬২)
  • বিজন বনের রাজকন্যা (১৯৬১)
  • লেজ দিয়ে যায় চেনা (১৯৬৩)
  • বনে বাদাড়ে (১৯৬৩)
  • পুতুলের মিউজিয়াম (১৯৬৩)
  • গল্পের ফুলঝুরি (১৯৬৩)
  • হীরা মতি পান্না (১৯৬৭)
  • বনমোরগের বাসা (১৯৭৫)
অনুবাদ
  • চীনা প্রেমের গল্প (১৯৬২)
  • জন কেনেডি (১৯৬২)
  • জীবনের জয়গান (১৯৬২)
  • পাল তুলে দাও (১৯৬২)

সম্মাননা ও স্মারকসম্পাদনা

হাবীবুর রহমান ১৯৬৪ সালে শিশুসাহিত্যে অবদানের জন্য বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন।[৪] তার স্মরণে হাবীবুর রহমান স্মৃতি পরিষদ থেকে 'কবি হাবীবুর রহমান শিশুসাহিত্য পুরস্কার' প্রদান করা হয়।[৫]

আরও দেখুনসম্পাদনা

তথ্যসূত্রসম্পাদনা

  1. হক, মাহবুবুল। "রহমান, হাবীবুর"বাংলাপিডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জুলাই ২০১৭ 
  2. "কবি শিশুসাহিত্যিক হাবীবুর রহমান"দৈনিক কালের কণ্ঠ। ১২ জুন ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জুলাই ২০১৭ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  3. "স্ম র ণ : কবি হাবীবুর রহমান"দৈনিক নয়া দিগন্ত। ১৭ জুন ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জুলাই ২০১৭ 
  4. "বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার"বাংলা একাডেমি। ৮ জুলাই ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জুলাই ২০১৭ 
  5. "কবি হাবীবুর রহমান শিশুসাহিত্য পুরস্কার ঘোষণা"দৈনিক প্রথম আলো। ৪ এপ্রিল ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জুলাই ২০১৭ 

বহিঃসংযোগসম্পাদনা

  • {{বাংলাপিডিয়া}} টেমপ্লেটে আইডি অনুপস্থিত ও উইকিউপাত্তেও তা উপস্থিত নেই।