হাইনরিখ অটো ভিলান্ড

হাইনরিখ অটো ভিলান্ড (৪ঠা জুন, ১৮৭৭ – ৫ই আগস্ট, ১৯৫৭) ছিলেন একজন জার্মান রসায়নবিদ যিনি প্রাণরসায়ন ক্ষেত্রে অগ্রণী অবদান রাখেন। পিত্ত অম্লের আণবিক কাঠামো ও কোলেস্টেরল নিয়ে গবেষণার জন্য জার্মানির প্‌ফর্ত্স‌হাইম শহরে জন্মগ্রহণ করা ভিলান্ড ১৯২৭ সালে রসায়নে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।[১][২]

হাইনরিখ অটো ভিলান্ড
হাইনরিখ অটো ভিলান্ড
জন্ম(১৮৭৭-০৬-০৪)৪ জুন ১৮৭৭
মৃত্যু৫ আগস্ট ১৯৫৭(1957-08-05) (বয়স ৮০)
জাতীয়তাজার্মান
মাতৃশিক্ষায়তনমিউনিখ লুডভিগ ম্যাক্সিমিলিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়
পরিচিতির কারণপিত্ত অম্ল নিয়ে গবেষণা
পুরস্কার
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন
কর্মক্ষেত্ররসায়ন
প্রতিষ্ঠানসমূহমিউনিখের প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ১৯১৩–১৯২১,
ফ্রাইবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয় ১৯২১–২৫,
মিউনিখ লুডভিগ ম্যাক্সিমিলিয়ান বিশ্ববিদ্যালয় ১৯২৫–
ডক্টরাল উপদেষ্টাজোহানেস থিয়েল
ডক্টরেট শিক্ষার্থীলিওপল্ড হর্নার,
রল্ফ হুইজেন

ভিলান্ডের গবেষণা গুরুত্বপূর্ণ জৈব যৌগের সংশ্লেষণ এবং জীবদেহে উৎসেচক প্রক্রিয়াগুলি সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান উন্নত করতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ভিলান্ড উচ্চশিক্ষায়তনে বিভিন্ন পদে অধীষ্ঠ ছিলেন। মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয়েও অধ্যাপনা করেন। তবে শুধু নোবেল বিজয়ী গবেষণাই নয়, ২০শ শতকের প্রথমার্ধে প্রাণরসায়ন ও জৈব রসায়ন ক্ষেত্রগুলিতে বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের পথনির্দেশক হিসেবেও তিনি সমানভাবে স্মরণীয়। ২য় বিশ্বযুদ্ধের কারণে বৈজ্ঞানিক গবেষণার পরিবেশ প্রতিকূল হওয়া সত্ত্বেও ভিলান্ড তাঁর গবেষণা চালিয়ে যান এবং কুইনাইনের সংশ্লেষণ ও ব্যাকটেরিয়ারোধক (অ্যান্টিবায়োটিক) সংক্রান্ত গবেষণায় অবদান রাখেন।


কর্মজীবন সম্পাদনা

 
হাইনরিখ অটো ভিলান্ড এর ভাস্কর্য

১৯০১ সালে ভিলান্ড জোহানেস থিয়েলের অধীনে গবেষণারত অবস্থায় মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয়ে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন।[৩] ১৯০৪ সালে তিনি তাঁর হ্যাবিলিয়েশন (স্ব-সংযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতা) শেষ করেছিলেন, তারপরে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা অব্যাহত রাখেন। ১৯০৭ সাল থেকে শুরু করে তিনি বোহরিঙ্গার ইনজেলহিমের পরামর্শক ছিলেন।[৪] ১৯১৪ সালে তিনি জৈব রসায়নের বিশেষ বিষয়ের জন্য সহযোগী অধ্যাপক এবং মিউনিখের রাজ্য পরীক্ষাগারের জৈব বিভাগের পরিচালক হন। ১৯১৭ থেকে ১৯১৮ অবধি, নিয়মিত সামরিক পরিষেবা বিকল্প হিসাবে, ভিলান্ড দালেমে ফ্রিৎস হেবারের এর নেতৃত্বে থাকা ফ্রিৎস হেবার ইনস্টিটিউট অফ দ্য ম্যাক্স প্লানক সোসাইটি তে কাজ করেছিলেন। [৫] সেখানে তিনি অস্ত্র গবেষণায় জড়িত ছিলেন, উদাহরণস্বরূপ, কৃত্রিম ভাবে মাস্টার্ড গ্যাস তৈরির নতুন পথের সন্ধান করছিলেন। অ্যাডামসাইটের প্রথম সংশ্লেষণেও তাঁকে কৃতিত্ব দেওয়া হয়।


১৯১৩ সাল থেকে ১৯২১ সাল পর্যন্ত তিনি মিউনিখের প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ছিলেন। এরপরে তিনি লুডভিগ গ্যাটারম্যানের উত্তরসূরি হিসাবে ফ্রাইবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে আসেন (তিনি গ্যাটারম্যানের বিখ্যাত রন্ধন পুস্তকের দায়িত্বও গ্রহণ করেছিলেন)। ফ্রাইবুর্গে তিনি ব্যাঙের বিষ এবং পিত্ত অম্ল নিয়ে কাজ শুরু করেন। বোহরিঙ্গার ইনজেলহিমের সহযোগী হয়ে তিনি মরফিন এবং স্ট্রিকনিনের মতো কৃত্রিম অ্যালকালয়েডগুলি নিয়ে কাজ করেছিলেন।১৯২৫ সালে ভিলান্ড মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়নের অধ্যাপক হিসাবে রিচার্ড ভিলস্টাটারের স্থলাভিষিক্ত হন।[৬][৭]


১৯৪১ সালে, ভিলান্ড বিষাক্ত আলফা-আমানিটিনকে বিচ্ছিন্ন করতে সক্ষম হন, এই বিষাক্ত পদার্থটি বিশ্বের অন্যতম বিষাক্ত ছত্রাক আমানিটা ফ্যালোয়েডস এর প্রধান সক্রিয় উপাদান।

নুরেম্বার্গ আইন চালু হবার পর "জাতিগতভাবে বোঝা" মানুষদের রক্ষার্থে, বিশেষ করে ইহুদি শিক্ষার্থীদের রক্ষার জন্য ভিলাণ্ড সফলতার সঙ্গে চেষ্টা করেছিলেন। যে সমস্ত শিক্ষার্থীকে "জাতিগতভাবে বোঝা" হওয়ার কারণে বহিষ্কার করা হয়েছিল, তাঁরা হাইনরিখ ভিলান্ডের দলে রসায়নবিদ বা "গাস্টে ডেস গেইমেরাটস" (বেসরকারী উপদেশকের অতিথি) হিসাবে থাকতে পারতেন। কার্ট হুবারের বিধবা স্ত্রী ক্লারা হুবারের জন্য অর্থ সংগ্রহ করতে গিয়ে, ভিলান্ডের এক ছাত্র, হান্স কনরাড লিপেল্ট পরে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছিলেন।

পরিবার সম্পাদনা

হাইনরিখের বাবা থিওডর ভিলান্ড (১৮৪৬-১৯২৮) রসায়নে ডক্টরেট এবং ফার্মাসিস্ট ছিলেন। তিনি ফরঝেইমে একটি স্বর্ণ ও রৌপ্য শোধনাগারের মালিক ছিলেন।[৫] হাইনরিখ ভিলান্ড, বোহরিঙ্গার ইনগেলহিমের প্রতিষ্ঠাতা, আলবার্ট বোহরিঙ্গারের স্ত্রী হেলিন বোহরিঙ্গারের সম্পর্কিত ভাই ছিলেন। ১৯১৫ সাল থেকে ১৯২০ সালের শেষ পর্যন্ত, তিনি বোহরিঙ্গার ইনগেলহিমের উপদেষ্টা ছিলেন এবং এই সময়ে তিনি কোম্পানির প্রথম বৈজ্ঞানিক বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

হাইনরিখ ভিলান্ডের কন্যা ইভা ভিলান্ড ১৪ই মে ১৯৩৭ সালে ফিওডর লিনেন কে বিবাহ করেছিলেন।

হাইনরিখ ভিলান্ড পুরস্কার সম্পাদনা

১৯৬৪ সাল থেকে, বার্ষিক হাইনরিখ ভিলান্ড পুরস্কার প্রদান করা হচ্ছে। প্রথমে রসায়ন, জৈব রসায়ন, ফিজিওলজি এবং লিপিড ও সম্পর্কিত পদার্থগুলির ক্লিনিকাল ঔষধ সম্পর্কিত গবেষণার প্রচার করার জন্য এই পুরস্কার দেওয়া হত। আজকাল জৈবিকভাবে সক্রিয় অণু এবং পদ্ধতি নিয়ে অসামান্য গবেষণার জন্য এই পুরস্কার দেওয়া হয়। পুরস্কারের ক্ষেত্রগুলি হল রসায়ন, জৈব রসায়ন এবং শারীরবৃত্তীয় ও তাদের ক্লিনিকাল গুরুত্ব। পুরস্কারটি সর্বাধিক মূল্যবান আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান পুরস্কারগুলির মধ্যে একটি এবং ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সফলতার সঙ্গে এই পুরস্কার দিয়ে আসা হচ্ছে। হাইনরিখ ভিলান্ড পুরস্কারটির অর্থায়ন ২০০০ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত বোহরিঙ্গার ইনজেলহিম করেছে। ২০১১ সাল থেকে, এটির অর্থায়ন করছে বোহরিঙ্গার ইনজেলহিম ফাউন্ডেশন সংস্থা। পুরস্কারপ্রাপকদের সর্বদা একটি স্বতন্ত্র বোর্ড কর্তৃক নির্বাচিত করা হয়। ২০১৪ সাল থেকে এটির মূল্যমান হয়েছে ১০০,০০০ ইউরো।[৮]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Karrer, P. (১৯৫৮)। "Heinrich Wieland 1877-1957"। Biographical Memoirs of Fellows of the Royal Society4: 341–352। এসটুসিআইডি 72627789ডিওআই:10.1098/rsbm.1958.0026 
  2. Bernhard Witkop (১৯৯৩)। "Remembering Heinrich Wieland (1877-1957) portrait of an organic chemist and founder of modern biochemistry"Medicinal Research Reviews12 (3): 195–274। এসটুসিআইডি 32468158ডিওআই:10.1002/med.2610120303পিএমআইডি 1578969 
  3. "Wieland, Heinrich Otto"। সংগ্রহের তারিখ ১৬ অক্টোবর ২০২০ 
  4. "Heinrich Wieland (1877 – 1957) – "The ingenious consultant""। ১৭ অক্টোবর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ অক্টোবর ২০২০ 
  5. Interconnections and Independence: Heinrich Wieland (1877–1957) and His Era Elisabeth Vaupel Angew. Chem. Int. Ed. 2007, 46, 9154–9179 ডিওআই:10.1002/anie.200702255
  6. "Heinrich Wieland - Biography" 
  7. Haslewood, G. A. (১৯৫৭)। "Prof. H. O. Wieland"। Nature180 (4584): 462–463। ডিওআই:10.1038/180462a0 পিএমআইডি 13464859বিবকোড:1957Natur.180..462H 
  8. "Heinrich Wieland Prize"। Boehringer Ingelheim Stiftung। সংগ্রহের তারিখ ২ জুন ২০১৭ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা