হরেলা হল ভারতের উত্তরাখন্ড রাজ্য এবং হিমাচল প্রদেশের কিছু অঞ্চলে পালিত একটি হিন্দু উৎসব। এই উৎসবটি উত্তরাখণ্ডের কুমায়ূন অঞ্চলে খুবই জনপ্রিয় এবং এটি হরেলা নামে পালিত হয়। এই নামটি গাড়োয়ালের কিছু জায়গায় ব্যবহার করা হলেও, এটি সাধারণভাবে ব্যবহার করা হয় না, কারণ উৎসবটি সেখানে মোল-সংক্রান্তি বা রাই-সগ্রান হিসাবে পালিত হয়।[১] এটিকে কাংড়া, শিমলা এবং সিরমৌর অঞ্চলে হরিয়ালী/রিহ্যালি এবং হিমাচল প্রদেশের জুব্বাল ও কিন্নর অঞ্চলে দখরাইন বলা হয়। হিন্দু পঞ্জিকা অনুসারে এই উৎসবটি শ্রাবণ মাসের প্রথম দিনে পালিত হয়। এই উৎসবটি বর্ষাকালের (মৌসুমি বায়ু) সূচনাকে চিহ্নিত করে।[২] মানুষ ভাল ফসল এবং সমৃদ্ধির জন্য প্রার্থনা করে।[৩] হরেলা মানে "সবুজের দিন", এবং এই অঞ্চলের কৃষি-ভিত্তিক সম্প্রদায় এটিকে অত্যন্ত শুভ বলে মনে করে, কারণ এটি তাদের ক্ষেতে বপন চক্রের সূচনা করে। এই উৎসবকে উপলক্ষ করে একাধিক কৌথিগ/থোল/মেলারও আয়োজন করা হয়।

বিশ্বাস সম্পাদনা

প্রাথমিকভাবে বিশ্বাস করা হয় যে, নব্যপ্রস্তরযুগের যে উর্বরতা উৎসবগুলিকে ভগবান শিব এবং দেবী পার্বতীর বিবাহের ধর্মীয় উদযাপন হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছিল, তার মধ্যেই হরেলা উৎসবের সম্ভাব্য উৎস রয়েছে।[৪]

হরেলা উৎসব চৈত্র উদযাপন সম্পাদনা

চৈত্র হরেলা হিন্দু পঞ্জিকা অনুযায়ী চৈত্র মাসের (এপ্রিলের মাঝামাঝি) প্রথম দিন পালিত হয়। নির্ধারিত তারিখের দশ দিন আগে, পরিবারের প্রধান ৭ বা ৫ ধরনের বীজ বালতিতে বপন করেন। তারপর তাদের উপর জল ছিটিয়ে দেওয়া হয়। নির্ধারিত সময়ের পরে, কিন্তু প্রকৃত উদযাপনের আগে, বাড়ির ছোটদের দিয়ে একটি নকল বিবাহ অনুষ্ঠান সম্পন্ন করা হয়। এর পরে সকলে শিব এবং দেবী পার্বতীর মূর্তি পূজা করেন।<[৫]

হরেলা উৎসব শ্রাবণ উদযাপন সম্পাদনা

শ্রাবণ হল ঐতিহ্যবাহী হিন্দু মাসের নাম যা গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে জুলাই-আগস্ট মাসে আসে। শ্রাবণ উৎসব চৈত্রের চেয়ে বেশি জনপ্রিয় কারণ মাসটি বর্ষাকাল এবং ভগবান শিব ও পার্বতীর বিবাহের সময়। জুলাই এবং আগস্ট মাস বর্ষার মাস এবং এটি ফসলের বৃদ্ধির সময় উদযাপন করার একটি উপযুক্ত উপলক্ষ। এই দিনে লোকেরা গনেশ, গৌরী ও মহেশ্বরের এবং ভগবান শিবের সাথে যুক্ত অন্যান্যদের ছোট ছোট মাটি/লাল মাটির মূর্তি (দিকরা) তৈরি করে। বিভিন্ন মন্দিরে ভগবান শিবের শ্রদ্ধায় এই মূর্তিগুলির পূজা করা হয় এবং আনুষ্ঠানিক প্রার্থনার আয়োজন করা হয়। সকলের জন্য এটি একটি ছুটির দিন, এমনকি ভারবাহী ষাঁড়দের দিয়েও এই দিন কোন কাজ করানো হয়না। লোকেরা তাদের মস্তক সজ্জিত করে সদ্য কাটা হরেলার পাতা (বপন করা ফসলের অঙ্কুর) দিয়ে এবং তাদের আত্মীয় এবং বন্ধুদের কাছেও পাঠায়।[৫]

কুমায়ূনে এর তাৎপর্য এবং উদযাপন সম্পাদনা

কুমায়ূনে হরেলার একটি বড় তাৎপর্য রয়েছে। এটি নতুন ফসল এবং বর্ষাকালের প্রতীক। হরেলা উৎসবের একটি ধ্বনি হল "পরিবেশ বাঁচাও"। উত্তরাখণ্ডের স্কুলগুলি প্রায়ই তাদের ছাত্রদের বাড়িতে, স্কুলে বা স্থানীয় কর্মকর্তাদের সহায়তায় চারা রোপণ করতে উৎসাহিত করে। কুমায়ূনে, নবরাত্রির সময় দুটি উদযাপন হয়, – প্রথমটি হয় চৈত্র নবরাত্রির সময় চৈত্র মাসে, এবং দ্বিতীয়টি শারদ নবরাত্রির সময় আশ্বিন মাসে। এটিকেও হরেলার সাথে যুক্ত বলে মনে করা হয়। এর পরে আসে ভাইতৌলি বা ভিতৌলি, যখন পরিবারের মেয়েদের উপহার দেওয়া হয়।[৬]

গাড়োয়াল এবং হিমাচল-প্রদেশে তাৎপর্য সম্পাদনা

গাড়োয়াল এবং হিমাচল প্রদেশে, লোকেরা তাদের গ্রামের দেবতাকে একটি খোলা জায়গায় নিয়ে যায় এবং মূর্তির সামনে নাচ গান করে। যেহেতু দেবতারা বেশিরভাগই বর্ষাকালে ভ্রমণ করেন না, তাই বর্ষা শুরুর আগে সমস্ত দেবতার শোভাযাত্রা তাদের মূল-গ্রামে ফিরে আসে, এবং সেখানেই উদযাপন হয়। গাড়োয়ালে, এই দিনে কোন ব্যক্তি, পরিবার বা সম্প্রদায়ের দ্বারা গাছের চারা রোপণের ঐতিহ্য রয়েছে।

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "When is harela in 2021?"। সংগ্রহের তারিখ ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২ 
  2. Uttar Pradesh। 22-23। United Provinces of Agra and Oudh (India) Information Directorate। ১৯৬৪। পৃষ্ঠা 92। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জুলাই ২০১৩ 
  3. "Harela: The Farm Festival of Uttaranchal"। Asian Agri-history। Asian Agri-History Foundation। ২০০৫। পৃষ্ঠা 221–224। 
  4. Dharma Pal Agrawal (২০০৭)। The Indus civilization: an interdisciplinary perspective। Aryan Books International। পৃষ্ঠা 213, 219। আইএসবিএন 978-81-7305-310-8। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জুলাই ২০১৩ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  5. >"Harela festival traditional practices and activities"। সংগ্রহের তারিখ ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২ 
  6. Ramesh Chandra Bisht (২০০৮)। International Encyclopaedia of Himalayas (5 Vols. Set)। Mittal Publications। পৃষ্ঠা 247। আইএসবিএন 978-81-8324-265-3 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা