স্মৃতিপ্রস্থান সূত্র

স্মৃতিপ্রস্থান সূত্র বা সতিপট্‌ঠান সুত্ত, সূত্র পিটকের মজ্ঝিমনিকায়ের অন্তর্গত। এটি মূলপর্যায় বর্গের মূল পঞ্চাশ সূত্রের দশম সূত্র। এই সূত্রটির উপর ভিত্তি করে দীঘনিকায়ে ২২তম সূত্র, মহাস্মৃতিপ্রস্থান সূত্রটি প্রবর্তিত হয়। এই সূত্রে মূলত বিপশ্যনা ধ্যান এর পদ্ধতি ও প্রক্রিয়া আলোচনা করা হয়েছে। বৌদ্ধ ধর্মে ধ্যানের পদ্ধতি ও প্রক্রিয়ার উপরে প্রবর্তিত বহু সূত্রের মধ্যে স্মৃতিপ্রস্থান সূত্রটি অন্যতম, এবং নির্বাণ লাভের জন্য একে উৎকৃষ্ট উপায় হিসেবে বলা হয়েছে ...নির্বাণ লাভ করার জন্য, এই চার ধরনের ভাবনা বা ধ্যানই একমাত্র উত্‌কৃষ্ট উপায়।[১][২]

ধ্যানে মগ্ন বৌদ্ধ ভিক্ষু।

উৎস সম্পাদনা

সময়কাল সম্পাদনা

গৌতম বুদ্ধ ত্রিপিটকের সকল সূত্রের প্রবর্তক হলেও তার সময়কাল থেকে সূত্রগুলো মহাসংগীতির আধ পর্যন্ত যথাযথভাবে লিপিবদ্ধ করে রাখা হয়নি। তার মহাপরিনির্বাণের তিন মাস পর , রাজগৃহের নিকটবর্তী সপ্তপর্ণী গুহায় প্রথম বৌদ্ধ সংগীতি অনুষ্ঠিত হয়, এবং পৃষ্ঠপোষকতা ছিলেন সম্রাট অজাতশত্রু । ভিক্ষুগণ তথা সঙ্ঘ, তখন থেকে ত্রিপিটক সংরক্ষণ করে এসেছে।

অনুবাদ সম্পাদনা

স্মৃতিপ্রস্থান সূত্রের অনানুষ্ঠানিক বাংলা অনুবাদের নিদর্শন অনেক রয়েছে। তবে সর্বজন বিদিত, যা একাডেমিক লিটারেচারে গ্রহণযোগ্য, এরকম অনুবাদ সর্বপ্রথম করেছেন বেণীমাধব বড়ুয়া, বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে।

মূলভাব সম্পাদনা

মজ্ঝিম নিকায়ের ১০ম, স্মৃতিপ্রস্থান সুত্রে, গৌতম বুদ্ধ মানসিক প্রশান্তির চার ধরনের ভিত্তির কথা উল্লেখ করেছেন; ১) কায়া, ২) বেদনা (অনুভূতি), ৩) চিত্ত (মন), ও ৪) ধর্ম (বুদ্ধের শিক্ষা)।[৩]

১) কায়াঃ

  • শ্বাস-প্রশ্বাসের উপর মনোনিবেশ করে ধ্যান (আনাপানা স্মৃতি);
  • সকল প্রকারের দেহের অবস্থায় (দাঁড়ানো, হাঁটা, বসা ও উদম) মনোনিবেশ করে ধ্যান;
  • দৈহিক ক্রিয়াকর্মে (খাওয়া, বস্ত্র পরিধান, শৌচ কাজ করা ইত্যাদি) মনোনিবেশ করে ধ্যান;
  • দেহ যেসকল ধাতু (কঠিন পদার্থ, তরল পদার্থ, বায়বীয় পদার্থ, শক্তি বা ক্যালরি) নিয়ে গঠিত, সেগুলোর উপর মনোনিবেশ করে ধ্যান;
  • শবাগার, তথা মৃত্যুর পর মানুষের দৈহিক পরিবর্তনের উপর মনোনিবেশ করে ধ্যান;
  • মানসিক পরিস্থিতির উপর (সুখ, দুঃখ ইত্যাদি) মনোনিবেশ করে ধ্যান;

২) (অনুভূতি) বেদনাঃ

  • আনন্দদায়ক, নিরানন্দদায়ক, বা দুটির কোনটিই নয়, এমন অনুভূতির উপর মনোনিবেশ করে ধ্যান;
  • মনের অনুভূতির ( লোভ, লোভহীন, হিংসা, অহিংসা, মোহাচ্ছন্ন, মোহ মুক্ত, একাগ্র চিত্ত, বিক্ষিপ্ত চিত্ত, মহৎ, অমহত্‌, উত্তর, অনুত্তর, সমাহিত, অ-সমাহিত, বদ্ধ, মুক্ত) উপর মনোনিবেশ করে ধ্যান;

৩) চিত্তঃ

  • কামাচ্ছন্ন বা কাম মুক্ত, তার উপর মনোনিবেশ করে ধ্যান;
  • ক্রোধাচ্ছন্ন বা ক্রোধ মুক্ত, তার উপর মনোনিবেশ করে ধ্যান;
  • স্তান-মিদ্ধে (অলস, অতিঘুম, অতিভোজন) আচ্ছন্ন বা মুক্ত, তার উপর মনোনিবেশ করে ধ্যান;
  • অহংকারী বা নিরহংকারী, তার উপর মনোনিবেশ করে ধ্যান;
  • বিচিকিৎসা(মানসিক দোটানা)-তে আচ্ছন্ন বা মুক্ত, তার উপর মনোনিবেশ করে ধ্যান;

৪) (গৌতম বুদ্ধের শিক্ষা) ধর্মঃ

  • পঞ্চ-উপাদান-স্কন্ধ (কোন কিছু দেখা, তার জন্য সৃষ্ট মানসিক অনুভূতি, মানসিক অনুভূতির উপলব্ধি, সেই উপলব্ধির কারণে সৃষ্ট মানসিক প্রতিক্রিয়া, সেই মানসিক প্রতিক্রিয়ার নিবারনের ইচ্ছা), তার উপর মনোনিবেশ করে ধ্যান;
  • ছয় অভ্যন্তর ও ছয় বাহিরায়তন (দেখা, শোনা, গন্ধ, স্বাদ, স্পর্শ ও ধর্ম), তার উপর মনোনিবেশ করে ধ্যান;
  • সপ্তবোধাঙ্গ ( স্মৃতি, ধর্মবিচয়, বীর্য, প্রীতি, প্রশদ্ধি, সমাধি, উপেক্ষা), তার উপর মনোনিবেশ করে ধ্যান;
  • চতুরার্য সত্য, তার উপর মনোনিবেশ করে ধ্যান

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. https://suttacentral.net/mn10/bn/barua
  2. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২১ জুন ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ জুন ২০১৯ 
  3. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২১ জুন ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ জুন ২০১৯