সৈয়দ মনসুর আলী

বীর বিক্রম খেতাবপ্রাপ্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের মুক্তিযোদ্ধা

সৈয়দ মনসুর আলী (জন্ম: অজানা - মৃত্যু: ২০০২ ) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর বিক্রম খেতাব প্রদান করে। [১]

সৈয়দ মনসুর আলী
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব ব্রিটিশ ভারত (১৯৪৭ সাল পর্যন্ত)
 পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর বিক্রম

জন্ম ও শিক্ষাজীবন সম্পাদনা

সৈয়দ মনসুর আলীর পৈতৃক বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলার কুড়িগ্রাম পৌরসভার অন্তর্গত ঘোষপাড়ায়। তার বাবার নাম সৈয়দ সাহাবান আলী এবং মায়ের নাম জহিরুন নেছা। তার স্ত্রীর নাম শাহিদা বেগম। তাদের এক মেয়ে ও এক ছেলে।

কর্মজীবন সম্পাদনা

সৈয়দ মনসুর আলী পাকিস্তান বিমানবাহিনীতে ফ্লাইট সার্জেন্ট পদে চাকরি করতেন। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন পাকিস্তানে (তখন পশ্চিম পাকিস্তান)। সে সময়ে তিনি ছুটিতে বাড়িতে ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে ভারতে যান। পরে ৬ নম্বর সেক্টরের সাহেবগঞ্জ সাব-সেক্টরে সরাসরি যুদ্ধ করেন। স্বাধীনতার পর সৈয়দ মনসুর আলী বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে আর যোগ দেননি। পরে তিনি রাজনীতিতে যোগ দেন এবং তিন মেয়াদে কুড়িগ্রাম পৌরসভার নির্বাচিত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা সম্পাদনা

১৯৭১ সালে অক্টোবরের শেষ দিকে একদল মুক্তিযোদ্ধা এখানে অবস্থান নেন কুড়িগ্রাম জেলার সদর উপজেলার পূর্বদিকে যাত্রাপুর। এটি ব্রহ্মপুত্র নদের চরাঞ্চল। মু্ক্তিযোদ্ধাদের এ দলটি আশপাশের এলাকায় কয়েকটি অপারেশন করেন। তাদের নেতৃত্বে ছিলেন সৈয়দ মনসুর আলী। অপারেশনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল কুড়িগ্রাম থেকে উলিপুরগামী ট্রেন ধ্বংস। কুড়িগ্রাম থেকে সড়ক ও রেলপথ মোগলবাছার ওপর দিয়ে উলিপুর হয়ে চিলমারী পর্যন্ত বিস্তৃত। মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী নিরাপত্তার কারণে সড়কের চেয়ে রেলপথকেই বেশি নিরাপদ মনে করত। তখন তারা নিজেদের যাতায়াত, রসদ ও অন্যান্য মালামাল পরিবহনের কাজ রেলপথেই সারত। নভেম্বরের মাঝামাঝি মনসুর আলী সহযোদ্ধাদের নিয়ে মোগলবাছা ইউনিয়নের ওপর দিয়ে যাওয়া রেলপথের অর্জুনমালায় রেলসেতুতে বিস্ফোরক স্থাপন করেন। এতে ট্রেনের কয়েকটি বগি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অনেক পাকিস্তানি ও তাদের সহযোগী হতাহত হয়। ২ নভেম্বর যাত্রাপুর বাজারে তিনজন পাকিস্তানি সেনা ও নয়জন রাজাকার এলে তাদের আক্রমণ করে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল। তারা সবাই সংঘর্ষে নিহত হয়। এরপর ওই এলাকার সব রাজাকারকে জনগণের সহায়তায় ৯ নভেম্বর আত্মসমর্পণে বাধ্য করা হয়। সেদিন সেখানে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। এদিকে যাত্রাপুরে সংঘর্ষের খবর পেয়ে কুড়িগ্রাম থানার ঘোগাদহ ইউনিয়নের প্রায় ৩০০ রাজাকার স্বেচ্ছায় তাদের হাতিয়ারসহ সৈয়দ মনসুর আলীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। এই আত্মসমর্পণের খবর আশপাশ এলাকার রাজাকারদের মনে বিরাট প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে রাজাকাররা দলে দলে আত্মসমর্পণ করতে থাকে। কুড়িগ্রাম শহরের নিকটবর্তী মোগলবাছা ইউনিয়নে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ঘাঁটি ছিল। সৈয়দ মনসুর আলী মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে তিনবার পাকিস্তানিদের আক্রমণ করেন। তৃতীয়বারের সংঘর্ষের সময় উলিপুরগামী ট্রেনের দুটি বগি ডিনামাইট দিয়ে বিচ্ছিন্ন করে দেন তারা। এতে প্রায় ৩৫ জন পাকিস্তানি সেনা ও তাদের সহযোগী হতাহত হয়। মোগলবাছা ইউনিয়নের অর্জুনমালায় রেলসেতুর নিচে আমরা ডিনামাইট ফিট করেছিলাম মুক্তিযোদ্ধাদের এ দলটি। পাকিস্তানি সেনাবাহীসহ ট্রেন ওই স্থান অতিক্রম করার সময় ডিনামাইট বিস্ফোরিত হয়। এ অপারেশনে মীর নামের একজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ৭ ডিসেম্বর ভারতীয় সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার যোশির নির্দেশে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী যৌথভাবে কুড়িগ্রাম শহরে আক্রমণ করে। যৌথবাহিনীর দুরপাল্লা ও ভারী কামানের গোলাবর্ষণের মধ্য দিয়ে আক্রমণের সূচনা হয়। কিন্তু পাকিস্তানিরা তেমন প্রতিরোধ না করে পালিয়ে যায়। [২]

পুরস্কার ও সম্মাননা সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ: ০৩-১২-২০১২[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (দ্বিতীয় খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। মার্চ ২০১৩। পৃষ্ঠা ১৪৬। আইএসবিএন 9789849025375