সেলিনা হায়াৎ আইভী

বাংলাদেশের প্রথম নারী মেয়র

সেলিনা হায়াৎ আইভী (জন্ম ৫ জুন ১৯৬৬) বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একজন রাজনীতিবিদ এবং নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ছিলেন। তিনি ২০০৮ সাল থেকে সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত বিলুপ্ত নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ছিলেন। তিনি বাংলাদেশের সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নারী মেয়র।

ডাক্তার
সেলিনা হায়াৎ আইভী
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১ম মেয়র
কাজের মেয়াদ
১ ডিসেম্বর ২০১১ – ১৯ আগস্ট ২০২৪
উত্তরসূরীশূন্য
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম (1966-06-05) ৫ জুন ১৯৬৬ (বয়স ৫৮)
নারায়ণগঞ্জ, পূর্ব পাকিস্তান
(বর্তমান বাংলাদেশ)
রাজনৈতিক দলবাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
দাম্পত্য সঙ্গীকাজী আহসান হায়াত
পুরস্কারঅনন্যা শীর্ষ দশ পুরস্কার- ২০১৬

প্রারম্ভিক জীবন

সম্পাদনা

আইভী ১৯৬৬ সালের ৫ জুন নারায়ণগঞ্জের একটি রাজনৈতিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।[] তার পিতার নাম আলী আহাম্মদ চুনকা এবং মাতা মমতাজ বেগম। আলী আহাম্মদ চুনকা বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে জয় লাভ করে মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।[] পরিবারের পাঁচ সন্তানের মধ্যে আইভী জ্যেষ্ঠ। তিনি দেওভোগ আখড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় হতে শিক্ষা জীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি নারায়ণগঞ্জ প্রিপারেটরী স্কুলে ভর্তি হন এবং ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। অতঃপর তিনি মর্গ্যান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৭৯ সালে ট্যালেন্টপুলে জুনিয়র স্কলারশিপ পান এবং ১৯৮২ সালে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় স্টারমার্কসহ উত্তীর্ণ হন।[]

এরপর তিনি ১৯৮৫ সালে রাশিয়া সরকারের বৃত্তি নিয়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানে শিক্ষা গ্রহণের জন্য ওডেসা পিরাগোব মেডিক্যাল ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন এবং ১৯৯২ সালে এমবিবিএস ডিগ্রি লাভ করেন। পরবর্তীতে ১৯৯২-৯৩ সালে ঢাকা মিডফোর্ট হাসপাতালে ইন্টার্নি সম্পন্ন করেন। কর্মজীবনে তিনি ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত মিডফোর্ট হাসপাতালে এবং ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ হাসপাতালে অনারারি চিকিৎসক হিসেবে কাজ করেন।[]

রাজনৈতিক জীবন

সম্পাদনা

আইভী শিক্ষার্থী থাকাবস্থায় পিতার সাথে রাজনীতে যুক্ত হন। ১৯৯৩ সালে তিনি নারায়ণগঞ্জ শহর আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদিকা ছিলেন। ২০০৩ সালে অনুষ্ঠিত পৌর চেয়ারম্যান নির্বাচনে অংশগ্রহণ জয়লাভ করে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার প্রথম নারী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। বর্তমানে তিনি নারায়ণগঞ্জ শহর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি আলী আহাম্মদ চুনকা ফাউন্ডেশন এবং নারায়ণগঞ্জ হার্ট ফাউন্ডেশন-এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং তিনি স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ)-এর নারায়ণগঞ্জ জেলার আহ্বায়কের দায়িত্বে আছেন।[]

২০১১ সালের ৩০ অক্টোবর নারয়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তিনি মেয়র হিসেবে জয়লাভ করেন। ২৭ নভেম্বর তিনি বাংলাদেশের প্রথম নারী সিটি কর্পোরেশন মেয়র হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন এবং ১ ডিসেম্বর দায়িত্ব গ্রহণ করেন।[][] ২০১৬ সালের ২২ ডিসেম্বর দ্বিতীয় নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে পুনরায় নির্বাচিত হন। ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি মেয়র হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে শপথ গ্রহণ করেন।[]

১৬ জানুয়ারি ২০২২ নির্বাচনে তৃৃতীয়বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হন।[]

২০২২ সালের ২২ আগষ্টের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী সেলিনা হায়াৎ আইভী প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা ভোগ করবেন।[]

১৯ আগস্ট ২০২৪ সালে তিনি দেশের ১২টি সিটি কর্পোরেশনের মেয়রকে অপসারণ করে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়।[]

ব্যক্তিগত জীবন

সম্পাদনা

আইভী ১৯৯৫ সালের ১৫ নভেম্বর রাজবাড়ী নিবাসী কাজী আহসান হায়াৎ-এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।[] এই দম্পতির দুই পুত্র সন্তান, কাজী সাদমান হায়াৎ সীমান্ত ও কাজী সারজিল হায়াৎ অনন্ত।[]

সম্মাননা

সম্পাদনা

রাজনীতিতে বিশেষ অবদানের জন্য ২০১৬ সালে তিনি অনন্যা শীর্ষ দশ সম্মাননায় ভূষিত হন।[]

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী"নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ 
  2. "V for Ivy"The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১১-১০-৩১। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-১১-০৮ 
  3. "আইভী শপথ নেবেন আজ"প্রথম আলো। ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ 
  4. "নারায়ণগঞ্জ সিটির প্রথম মেয়র আইভী"। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-১১-০৮ 
  5. "দ্বিতীয় মেয়াদে শপথ নিলেন মেয়র আইভী"সমকাল। ২৫ জানুয়ারি ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ 
  6. "আইভীর হ্যাট্রিক"। 
  7. News, Somoy। "মন্ত্রী পদমর্যাদা পেলেন ঢাকার দুই মেয়র | বাংলাদেশ"Somoy News। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৮-২২ 
  8. "এবার ১২ সিটির মেয়র অপসারণ"দৈনিক কালবেলা। ১৯ আগস্ট ২০২৪। ১৯ আগস্ট ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ আগস্ট ২০২৪ 
  9. "অনন্যা শীর্ষ দশ সম্মাননা প্রদান"ভোরের কাগজ। ২২ আগস্ট ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০