সেলমা লাগেরলফ

১৯০৯ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী সুয়েডীয় সাহিত্যিক

সেলমা ওতিলিয়ানা লভিসিয়া লাগেরলফ (নভেম্বর ২০, ১৮৫৮ - মার্চ ১৬, ১৯৪০) সুয়েডীয় ঔপন্যাসিক যিনি সুইডেনের অধিবাসীদের অতীত জীবন নিয়ে উপন্যাস রচনায় ছিলেন সিদ্ধহস্ত। তিনি ১৯০৯ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। তিনি নোবেল বিজয়ী প্রথম মহিলা।[১] তার নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তির কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে: "তার লেখনির মহৎ আদর্শ, সুতীব্র কল্পনাশক্তি এবং আধ্যাত্মিক উপলব্ধির স্বীকৃতি স্বরুপ।"[২] তিনি সুয়েডীয় ভাষায় সাহিত্য রচনা করতেন।

সেলমা লাগেরলফ
সেলমা লাগেরলফ, ১৯০৮ সালের একটি চিত্র
সেলমা লাগেরলফ, ১৯০৮ সালের একটি চিত্র
জন্মনভেম্বর ২০, ১৮৫৮
মারবাকা, ভার্মলান্ড, সুইডেন
মৃত্যু১৬ মার্চ ১৯৪০(1940-03-16) (বয়স ৮১)
মারবাকা, ভার্মলান্ড, সুইডেন
পেশালেখক
জাতীয়তাসুয়েডীয় সুইডেন
সেলমা লাগেরলফের ভাস্কর্য, সনে

জীবনী সম্পাদনা

সেলমা লাগেরলফ ১৮৫৮ সালের ২০ নভেম্বর তিনি সুইডেনের মারবাকা অঞ্চলের ভার্মল্যান্ড শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা এরিক গুস্তাফ লাগেরলফ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছিলেন। তাদের সামান্য স্থাবর সম্পত্তিও ছিল যা থেকে মোটামুটি একটা আয় নিয়মিত ঘরে আসতো। এভাবেই তাদের পরিবারের জীবিকার ব্যবস্থা হতো। মাত্র তিন বছর বয়সের সময় লাগেরলফ পক্ষাঘাতের কারণে পঙ্গু হয়ে যান। এরপর আর কখনও খুব একটা চলাচল করতে পারেন নি। তিনি ছোটবেলায় বাবা, মা, ঠাকুরমা ও প্রিয় সেবিকা কায়েসোর কাছ থেকে মজার মজার গল্প শুনতেন আর কোন গল্প বা কবিতার বই পেলে সাথে সাথে পড়ে ফেলতেন। পঙ্গুত্বের কারণে ছোটবেলা তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সম্ভব হয়নি, ঘরে বসে গৃহশিক্ষকের কাছে পড়াশোনা করেছেন। শারীরিকভাবে পঙ্গু হলেও মানসিকভাবে কখনই ভেঙে পড়েননি সেলমা।

১৮৮২[৩] সালে তিনি স্কুলে শিক্ষকতা করার প্রত্যাশায় সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমের "রয়্যাল উইমেন্‌স সুপিরিয়র ট্রেনিং একাডেমি" থেকে প্রশিক্ষণ নেন। দুর্ভাগ্যবশত, এ বছরই তার বাবা মারা যায়। পারিবারিক ঋণের বোঝা বইতে তারা সক্ষম ছিলেন না। অগত্যা প্রায় সব সম্পত্তি বিক্রি করে দিতে হয়। এসময় সেলমা পরিবারের দায়িত্ব নেন, ভেঙে পড়েননি একটুকুও। ১৮৮৫ লান্ড্‌সক্রোনায় অবস্থিত একটি স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন। ১৮৯৫ সাল পর্যন্ত এই স্কুলের শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এ সময়ের মধ্যে ইডান নামক একটি সুয়েডীয় পত্রিকায় গল্প লেখার প্রতিযোগিতার আহ্বান জানানো হয়। এখানে গল্প লিখেই সেলমা লেখালেখি জীবনের সূচনা ঘটান। উক্ত প্রতিযোগিতায় তার গল্প প্রথম স্থান অধিকার করেছিল। এরপর থেকে প্রায়শই বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি করতেন। ১৮৯৫ সালে শিক্ষকতা ত্যাগের পর পুরোদমে লেখালেখি শুরু করেন।

লেখালেখির মাধ্যমে তিনি বিশেষ জনপ্রিয় ও বিখ্যাত হয়ে উঠেন। এসময় বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেন যার মধ্যে রয়েছে ইতালি, মিশরপ্যালেস্টাইন। তার রচনার উপর এই সফরগুলো বিশেষ প্রভাব বিস্তার করেছিল। তার পারিবারিক কোন জীবন ছিলনা। কারণ একটি প্রেমে ব্যর্থ হওয়ায় কখনই বিয়ে করেননি। দীর্ঘ রোগ ভোগের পর তিনি ১৯৪০ সালের ১৬ মার্চ মৃত্যুবরণ করেন।[৪]

সাহিত্যকর্ম সম্পাদনা

সেলমা লাগেরলফের প্রথম বই দ্য স্টোরি অফ গোস্টা বার্লিং প্রকাশিত হয় ১৮৯১ সালে। দুই খণ্ডের এই বইটি ছিল ভার্মল্যান্ডের লোককাহিনীর একটি গীতিধর্মী বর্ণনাকেন্দ্রিক উপস্থাপনা। এই বই রচনার ক্ষেত্রে তিনি স্কটীয় লেখক টমাস কার্লাইল কর্তৃক প্রভাবিত হয়েছিলেন। ১৮৯৮ সালে এই বইটির ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশিত হয়। তার দ্বিতীয় গ্রন্থের নাম ইনভিজিব্‌ল লিংক যা ছিল একটি গল্পসংগ্রহ। ১৮৯৪ সালে প্রকাশিত এই গ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশিত হয় ১৮৯৯ সালে। ১৮৯৫ সালের পর তিনি লেখালেখিকে একমাত্র পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন। ইতালি ভ্রমণের পর তিনি দ্য মিরাক্‌ল্‌স অফ এন্টি ক্রাইস্ট বইটি লিখেন যা ১৮৯৮ সালে প্রকাশিত হয়। প্যালেস্টাইন সফর শেষে রচনা করেন জেরুজালেম: আই ডালারেন। দুই খণ্ডের এই উপন্যাসটি ১৯০১-১৯০২ সালে লিখিত ও প্রকাশিত হয়েছিল। এর কাহিনী ছিল সুইডেনের একটি প্রাদেশিক ধর্মীয় আন্দোলন যার ফলে লোকজন সেখান থেকে প্যালেস্টাইনে স্থানান্তরিত হওয়ার সুযোগ পায়।[৫]

লাগেরলফের অন্য বিখ্যাত উপন্যাসের নাম এডভেঞ্চার অফ নিল্‌স যা মূলত রূপকথাধর্মী। মিশর ভ্রমণের প্রভাব পড়েছিল এই বইটিতে। তার সাহিত্য মূলত সুয়েডীয় লোককাহিনীর উপর ভিত্তি করে রচিত যার বিশেষ আকর্ষণীয় দিক হল বাস্তবতা এবং নির্মল বিশুদ্ধতা। তার সাহিত্যের চরিত্রগুলোকে বেশ সাধারণ বলে মনে হয়, অর্থাৎ চরিত্রগুলো তাদের কাজের ক্ষেত্রে অনেকটাই সাদামাটা। তিনি খারাপের উপর ভালোর বিজয় দেখাতে পছন্দ করতেন। কোন ঘটনার বর্ণনামূলক বহিঃপ্রকাশে তিনি যেকোন সুয়েডীয় সাহিত্যিককে ছাড়িয়ে যেতে সক্ষম।[৬]

পুরস্কার ও সম্মাননা সম্পাদনা

রচনাবলী সম্পাদনা

উপন্যাস সম্পাদনা

  • গোস্টা বার্লিংয়ের গল্প, ১৮৯১; ১৮৯৪ সালে ইংরেজিতে অনূদিত
  • অদৃশ্য সংযোগ, ১৮৯৪; ১৮৯৯ সালে ইংরেজিতে অনূদিত
  • জেরুসালেম, ২ খণ্ড, ১৯০১-০২; ১৯১৫-১৮ তে অনূদিত
  • লিলজেক্রোনার বাড়ি, ১৯১১
  • নির্বান্ধব মানুষেরা, ১৯১৮
  • লোয়েন্‌সকোল্ডদের আংটি, ১৯২৫-২৮

ছোটগল্প সংকলন সম্পাদনা

  • এক সুয়েডীয় বাস্তভিটা থেকে, ১৮৯৯
  • নিল নদের চমৎকার রোমাঞ্চ অভিযান, ২ খণ্ড, ১৯০৬-০৭; ১৯০৭-এ অনূদিত

শিশু সাহিত্য সম্পাদনা

  • মানব ও দানবেরা, ২ খণ্ড, ১৯১৫, ১৯২১

আত্মজীবনী সম্পাদনা

  • মারবাকা (১৯২২; ১৯২৪-এ অনূদিত)
  • আমার বাল্যস্মৃতি, ১৯৩০
  • সেলমা লাগেরলফের ডায়েরি, ১৯৩২

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. নোবেল বিজয়ী সাহিত্যিকরা। আবুল বাশার ফিরোজ রচিত এই বইটি প্রকাশ করেছে ঐতিহ্য প্রকাশনী। সেখানে সেলমা লাগেরলফ নামে নিবন্ধ রয়েছে।
  2. ইংরেজি উইকিপিডিয়া থেকে নোবেল পুরস্কারের কারণের বাংলা অনুবাদ।
  3. নোবেল বিজয়ী সাহিত্যিকরা। আবুল বাশার ফিরোজ রচিত এই বইয়ে লাগেরলফের জীবনীর উপর ভিত্তি করেই এখানে জীবনী অংশটি রচিত হয়েছে। ১৮৮২ সালটিও সেখান থেকে নেয়া।
  4. নোবেল বিজয়ী সাহিত্যিকরা। আবুল বাশার ফিরোজ রচিত এই বইটি প্রকাশ করেছে ঐতিহ্য প্রকাশনী।
  5. মাইক্রোসফ্‌ট এনকার্টা ২০০৬। সেখানে প্রতিটি বইয়ের ইংরেজি নাম ও খানিকটা পরিচয় প্রকাশনা তথ্য দেয়া আছে।
  6. মাইক্রোসফ্‌ট এনকার্টা ২০০৬। লাগেরলফের সাহিত্য ধারা সম্বন্ধে এনকার্টায় যা বলা হয়েছে তার উপর ভিত্তি করেই এই কয়েকটি পঙ্‌ক্তি।
  7. মাইক্রোসফ্‌ট এনকার্টা ২০০৬। Selma Ottiliana Lovisa Lagerlöf নামক নিবন্ধটি দেখুন।

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা

পূর্বসূরী
Albert Theodor Gellerstedt
সুয়েডীয় একাডেমি,
আসন নং ৭

১৯১৪-১৯৪০
উত্তরসূরী
Hjalmar Gullberg